“পরিবেশ বিপর্যয়ে ভয়াবহ পরিণতি ও মনুষ্যত্বের দায়”

রাজধানী টাইমসের সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

প্রকৃতির কোলেই মানব প্রজাতির উদ্ভব বিকাশ। প্রকৃতি আমাদের বাঁচিয়ে রাখছেন আলো-বাতাস দিয়ে। প্রকৃতি আমাদের মাঝে সুগন্ধি ছাড়াচ্ছে, আমাদের মুগ্ধ করে রাখছে, প্রকৃতির সৌন্দর্যে আমরা বিমোহিত হয়ে সুখ এবং তৃপ্তি লাভ করছি। প্রকৃতিবিরোধী ক্রম অভ্যস্থতা আচরণ নির্দেশক হিসেবে কাজ করে। মানুষ নিজেই প্রকৃতির অতি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। মানুষ প্রকৃতির প্রতি স্বাভাবিকভাবেই নির্ভরশীল। যখন আমি প্রকৃতির কাছে যাই, মনটাকে হারিয়ে ফেলি, খুঁজে পাই আমার আত্মাকে। প্রকৃতি জীবনেরই অংশ এই বাস্তবতাকে মেনে নিয়ে সামনে এগুতে পারলে প্রকৃতি আমাদের জন্য আশির্বাদ হয়ে আসবে। প্রাকৃতিক পরিবেশ হলো জীবিত ও প্রাণহীন প্রকৃতিগতভাবে পরিবেষ্টিত ঘটমান সমস্ত জিনিস, এক্ষত্রে এর অর্থ কৃত্রিম নয়। মানব জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে প্রকৃতির অবদান অপরিসীম। কিন্তু আমরা প্রকৃতির সেই অকৃত্রিম দানকে অস্বীকার করে নিজেদের হীন স্বার্থে প্রকৃতি এবং পরিবেশের ওপর আমানুষিক হয়ে ধ্বংসযজ্ঞ চালাই।

প্রকৃতি ও মানুষের সঙ্গে সম্পর্ক যুক্ত করে সামনে এগিয়ে যাওয়া দরকার। বিজ্ঞানভিত্তিক নীতি গ্রহণ করে পৃথিবীর বড় বিপর্যয় থেকে নিজেদের উদ্ধার করে অগ্রযাত্রা চালিয়ে যেতে হবে। বাস্তুসংস্থানের দরকার। জৈবিক দিক আছে। সেখানে উৎপাদক আছে, ভোক্তা আছে এবং পচনকারী আছে। অন্যদিকে অজৈবিক বা ভৌত বাস্তুসংস্থান হলো- পানি, বাতাস, ভূমি, সূর্য, খনিজ পদার্থ। এ দুটি সম্পর্ক যদি ভেঙে যায়, তাহলে এ পৃথিবীটিকে থাকা দুরূহ হয়ে যায়। আরেকটি যুক্ত হয়েছে জলবায়ু পরিবর্তনের ধাক্কা। নতুন গাছ লাগানো ও প্রাকৃতিক বনায়ন ধরে রাখতে হবে।
কিন্তু হায়, এই মানবসমাজের অমানবিক আমরা নানা ঘাত প্রতিঘাতে ধরণির ঐশ্বরিক সৌন্দর্যকে এতটাই বিপর্যস্ত করে তুলেছি যে প্রকৃতির খুব কাছে যেয়েও মন আর আত্মাকে বোঝার মতো মানবিক বোধ আজ মৃত প্রায় বিকেলে।

ক্ষমতা, শিক্ষা অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির অহংকার মানুষকে নিয়ে গেছে এক মিথ্যার মহাজাগতিক স্রোতে ভাসিয়ে ভাসিয়ে অন্ধকারের পথে। প্রকৃতির বিরুদ্ধে গিয়ে কোনো কিছু করতে গেলে তার ফল ভয়ানক হয়, সে কথা অনেক দিন ধরেই বলা হচ্ছে। বিশ্বজোড়া জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাতে ঘটে চলা লাগামহীন বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধি, ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস, আকস্মিক বন্যা, জীববৈচিত্র্যও ফসল হানি এর সবই তার প্রমাণ। উন্নয়ন পরিকল্পনা প্রকৃতির সঙ্গে মিলেমিশে না করলে প্রকৃতি তার উল্টো ফল দেবেই। এর সত্যতা নিয়েও কেউ প্রশ্ন তুলতে পারে না। কয়েক দিন আগে পার্বত্য অঞ্চলে পাহাড়ধসে ব্যাপক প্রাণহানির ঘটনা আমরা সবাই জানি। পাহাড়ধসের ঘটনা এ দেশে নতুন নয়। অপরিকল্পিতভাবে পাহাড় কেটে বসতি স্থাপন ও বনায়ন ধ্বংসের পরিণতিই এই পাহাড়ধস।

বিজ্ঞাপন

প্রকৃতির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে মানুষ তার জীবনধারণ ও উন্নয়ন পরিকল্পনা করতে না পারার কারণ এসব বিপর্যয়। মানুষ সর্বশ্রেষ্ঠ প্রজাতি। এই বিশ্বাস থেকেই মানুষ প্রকৃতিকে নিয়ন্ত্রণ করার নামে ধ্বংস করে চলেছে। কিন্তু শ্রেষ্ঠতার মানে যে ধ্বংস নয়, বরং সংরক্ষণের সেই বোধ মানুষের মনে জাগ্রত হচ্ছে না। এর ফলাফল আমরা পাচ্ছি অহর্নিশি। প্রকৃতি ছাড়া মানুষ সুখী-স্বাস্থ্যবান হতে পারে না। মানুষের কল্যাণ ও সমৃদ্ধি, বিশেষ করে দরিদ্র মানুষের জন্য প্রকৃতির অবদানকে আমাদের সামাজিক অগ্রতির মাপকাঠিতে অন্তর্ভুক্ত করা হয় না। যত দিন পর্যন্ত তা করা না হবে, তত দিন যতই আমরা উচ্চপর্যায়ের বৈঠক আর আলোচনা করি না কেন, তা কোনো কাজে আসবে না।
জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ না হলে হতে পারে ভংঙ্কর বিপদ। বাস্তুতান্ত্রিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে জীববৈচিত্র্য বিশেষ ভূমিকা পালন করে। একই বাস্তুতন্ত্রের বিভিন্ন জনগোষ্ঠী পরস্পর নির্ভরশীল হয়ে বসবাস করে। তাই প্রজাতির বৈচিত্র্য যত বাড়বে বা প্রজাতির সংখ্যা যত বাড়বে, সেই বাস্তুতন্ত্রের ভারসাম্য তথা স্থিতিশীলতা তত বাড়বে। উদ্ভিদ, প্রাণী ও অণুজীবসহ পৃথিবীর গোটা জীবসম্ভার মূলত তাদের অন্তর্গত জীন ও সেগুলির সমন্বয়ে গঠিত বাস্তুতন্ত্র। তিনটি বিভিন্ন পর্যায়ে এগুলি বিবেচ্য, বংশানুসৃত বৈচিত্র্য, প্রজাতিগত বৈচিত্র্য ও বাস্তুতন্ত্রের বৈচিত্র্য। জীববৈচিত্র্য প্রাণির বিলুপ্তি ঠেকাতে সহায়তা যোগায়, প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষায় সাহায্য করে। মানুষ বৈচিত্রময় উদ্ভিদ প্রজাতি থেকে কেবল খাদ্যসামগ্রী পায় তাই নয়; ওষুধ, কাঠ, কাগজ, তন্তু, রবার, আঠা, রজন, ট্যানিন, ফুলফল ইত্যাদিও পায়। তেমনই বৈচিত্রময় প্রাণি প্রজাতি থেকে মাছ মাংস, দুগ্ধ সামগ্রী, চামড়া, পালক, উল, লাক্ষা, মধু ইত্যাদি সংগ্রহ করে। আবার, বিভিন্ন জীবাণুর নিয়ন্ত্রিত ব্যবহারের মাধ্যমেও বিভিন্ন শিল্পসামগ্রী উৎপাদন করা যায়। এককথায় খাদ্য ও স্বাস্থ্য রক্ষার জন্য মানুষ জীববৈচিত্র্যের ওপর প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে নির্ভরশীল।

বর্তমানে সবুজ উদ্ভিদের ধ্বংস হওযা বিশ্ব উষ্ণায়নের প্রধান কারণ। আমাদের বেঁচে থাকার একমাত্র অবলম্বন পরিবেশ প্রকৃতি । কিন্তু প্রতিনিয়ত এ পরিবেশকে আমরা নানাভাবে দূষিত করে আসছি। বিশ্বজুড়ে এখন পরিবেশ দূষণের মাত্রা ভয়াবহ। পরিবেশদূষণের উল্লেখযোগ্য কারণের মধ্যে রয়েছে অত্যাধিক হারে জনসংখ্যা বৃদ্ধি, অপরিকল্পিত নগরায়ণ, নির্বিচারে বৃক্ষনিধন ও বনভূমি উজাড়, প্রাকৃতিক সম্পদের অপব্যবহার, দ্রুত শিল্পায়ন, সার ও কীটনাশকের মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহার, শিল্প-কলকারখানার বর্জ্য, গাড়ির বিষাক্ত ধোঁয়া, ওজোন স্তরের ক্ষয়, অ্যাসিড বৃষ্টি, অপরিকল্পিত গৃহনির্মাণ, দারিদ্র্য, প্রসাধনসামগ্রী, প্লাস্টিক দ্রব্যের ব্যবহার ইত্যাদি।

মানুষ একদিন প্রকৃতিকে জয় করার নেশায় মত্ত হয়েছিল। প্রকৃতিকে জয় করেও মানুষের সেই নেশার অবসান হলো না। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির কল্যাণে মানুষ জলে, স্থলে, মহাশূন্যে আধিপত্য বিস্তার শুরু করল। কিন্তু মানুষের এই বিজয় মানুষকে এক পরাজয়ের মধ্যে ফেলে দিল। আজ আমরা এক ভয়ংকর সংকটের মুখোমুখি। এ সংকট বিশেষ কোনো দেশের নয়, বিশেষ কোনো জাতিরও নয়। এ সংকট আজ বিশ্বজুড়ে। বিশ্বের পরিবেশ আজ নানাভাবে দূষিত। এই দূষণ আজ ভয়ংকর ভবিষ্যতের দিকে আমাদের নিয়ে যাচ্ছে। বাতাসে প্রতিবছর ২২ কোটি টন কার্বন মনোক্সাইড সঞ্চিত হচ্ছে। বায়ুমন্ডলে কার্বন ডাই-অক্সাইড, সালফার ডাই–অক্সাইড, নাইট্রাস অক্সাইড গ্যাসের আনুপাতিক হার ক্রমেই বাড়ছে। এর ফলে বৃষ্টির জলে অ্যাসিডের পরিমাণ বেশি হচ্ছে। এই অ্যাসিড বর্ষণ অরণ্যে মহামারির সৃষ্টি করছে। খাদ্যশস্যকে বিষাক্ত করছে। দ্রুতগতিতে ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে সবুজ অরণ্য। সারা বিশ্বে বর্তমান ৮০ শতাংশ হলো গ্রীষ্মমন্ডলীয় অরণ্য। এর মধ্যে প্রতি মিনিটে ২১ হেক্টর কৃষিযোগ্য জমি বন্ধ্যা হয়ে গেছে। প্রতি বছর ৭৫ লাখ হেক্টর জমি মরুভূমি হয়ে যাচ্ছে। প্রতি মিনিটে ৫০ হেক্টর উর্বর জমি বালুকাকীর্ণ হয়ে যাচ্ছে। পরিবেশদূষণের জন্য পৃথিবীতে ৮০ শতাংশ নিত্যনতুন রোগের সৃষ্টি হচ্ছে। বাংলাদেশে প্রতিবছর যত মানুষের মৃত্যু হয়, তার ২৮ শতাংশই মারা যায় পরিবেশদূষণজনিত রোগব্যাধির কারণে। কিন্তু সারা বিশ্বে এ ধরনের মৃত্যুর গড় হার মাত্র ১৬ শতাংশ।

বিজ্ঞাপন

সাম্প্রতিককালে মানবসভ্যতার উন্নয়নের ফলে প্রাকৃতিক পরিবেশের ক্রমাবনতি সব প্রাণের অস্তিত্বের জন্য মারাত্মক হুমকি। অপরিকল্পিত নগরায়ণ ও শিল্পায়ন, প্রাকৃতিক সম্পদের যথেচ্ছ ব্যবহার, পরিবেশ সম্পর্কিত অসচেতনতা, প্রাতিষ্ঠানিক সুশাসন ও সুষ্ঠু নজরদারির অভাবে বাংলাদেশের বিভিন্ন নগর-গ্রাম ও আঞ্চলিক এলাকায় বিপন্ন হচ্ছে প্রাণ-প্রকৃতি এবং ধ্বংস হচ্ছে জীববৈচিত্র্য। প্রাণ-প্রকৃতি পরিবেশ ধ্বংস করে উন্নয়ন টেকসই হতে পারে না, সুষ্ঠু পরিকল্পনা থাকলে ও রাজনৈতিক দৃঢ়তা থাকলে পরিবেশ-প্রতিবেশকে সমুন্নত রেখে উন্নয়ন কর্মকান্ড পরিচালনা করা সম্ভব।পরিবেশগত বিপর্যয়ের ঘটনাগুলো পর্যালোচনার মাধ্যমে বিআইপির সমীক্ষায় পরিলক্ষিত হয় যে, পরিবেশ ও প্রতিবেশ দূষণের শতকরা ৭০ ভাগ ঘটনার ক্ষেত্রে পরিবেশ অধিদপ্তরের দায় আছে, শতকরা ৫০ ভাগ ঘটনায় স্থানীয় প্রশাসনের দায় পরিলক্ষিত হয়। অনুরূপভাবে এ ধরনের পরিবেশ দূষণের ঘটনা বিশ্লেষণে নগর কর্তৃপক্ষ, পৌরসভা ও সিটি করপোরেশনে ৫০ শতাংশ, শিল্প-কারখানা, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও পণ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান ৫০ শতাংশ, বন বিভাগ ৩০ শতাংশ, সুষ্ঠু পরিকল্পনার অভাব ৬০ শতাংশ ও জনগণের উদাসীনতার ৪০ শতাংশ ক্ষেত্রেই দায় রয়েছে।

প্রকৃতি কখনো প্রতিহিংসাপরায়ণ হয় না। মানুষ যেমন হয়। প্রকৃতি কখনো অভিসম্পাত করে না। মানুষ যেমন করে। প্রকৃতির কখনো লোভী হয় না। মানুষ যেমন হয়। প্রকৃতি হয় শান্ত-স্নিগ্ধ-অপ্রতীম।

ওয়ার্ডসওয়ার্থ বলেছেন, প্রকৃতি কখনো হৃদয় আর ভালোবাসার সঙ্গে ধোঁকা দিতে পারে না। সিএনএনের খবরে বলা হয়েছে লিও ডি ওয়াটস নামে এক ব্রিটিশ ব্যবসায়ী বাতাস বিক্রি করে হাজার হাজার ডলার কামিয়েছেন। প্রতি বোতল বাতাসের দাম ধরা হয়েছে ১১৫ মার্কিন ডলার।

মানুষ তার ক্ষুদ্র স্বার্থে নদী দূষণ করছে,নদী দখল, খাল দখল, বিল দখল, নদী দূষণ, পরিবেশ দূষণ, ইটভাটার কালো ধোঁয়া ও শিল্পকারখানার বিষাক্ত বর্জ্য- ধোঁয়া বাতাসকে বিষাক্ত করে তুলেছে। বাাঁর জন্য বিশুদ্ধ বাতাস আজ দুঃসাধ্য হয়ে উঠেছে। পাহাড় কেটে বন কেটে উজাড় করে দিচ্ছে কায়েমী স্বার্থবাদী কিছু মানুষ। আমরা আজ অসহায় হয়ে পরেছি ওদের কাছে। যেন জীবনটা ওদের কাছ থেকে ঋণ নেওয়া। এ থেকেই বোঝা যায় যে প্রকৃতিকে অবহেলা করতে থাকলে এ রকম ভয়ানক ফল আরও বেশি ভোগ করতে হবে ভবিষ্যতে। অন্তর্ভুক্তিমূলক, ন্যায্য ও টেকসই সমাজ নির্মাণে প্রকৃতির ভূমিকাকে অস্বীকার করা হবে বোকামি। প্রকৃতিকে অবহেলা করতে থাকলে মানবজাতির শ্রেষ্ঠত্বের বদলে তার ধ্বংসের পথেই আমরা এগিয়ে যাব। এর ফলে নিশ্বাসের বাতাস যেমন কিনতে হবে, তেমনি পাহাড়ধসে জীবননাশও ঠেকানো যাবে না।বড় বড় নদীগুলো আজ পানিশূন্য হয়ে পড়েছে। নদীর বুক চিরে জেগে উঠেছে ধু ধু বালুচর। আর সে বালুচরে শোভা পাচ্ছে বাড়িঘর। আর কৃষক সেখানে শুরু করেছেন কৃষি আবাদ।

অন্যদিকে নদীখেকোরা রাষ্ট্রীয় শক্তি ব্যবহার করে নদী ও জলাশয়গুলো ভরাট করেছে। তারা সেখানে নির্মাণ করেছে বহুতল ভবন। সুইসগেট, ব্রিজ এবং বাঁধ নির্মাণ করে তারা হাজার হাজার খাল-বিলের অস্তিত্ব বিলীন করেছে। আর সেখানে নির্মিত হয়েছে ঘরবাড়ি, অফিস-আদালত ও কলকারখানা। পরিবেশ গবেষকদের মতে, প্রকৃতির সঙ্গে এ অন্যায্য আচরণই এ রকম দাবদাহ সৃষ্টির কারণ। এসব কারণেই জলবায়ুতে আজ মারাত্মক পরিবর্তন দেখা দিয়েছে। জলবায়ু, জীববৈচিত্র্য এবং ভূমির অবক্ষয় রোধকল্পে বিশ্বকে অবশ্যই প্রকৃতি জন্য অর্থাঅয়ন দ্বিগুণ করতে হবে। ২০৩০ সালের মধ্যে বৈশ্বিক উষ্ণতার মাত্রা ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে সীমাবদ্ধ রাখা, জীববৈচিত্র্যের ক্ষতি বন্ধ করা, ভূমি অবক্ষয় নিরপেক্ষতা অর্জন এবং আরও অনেক কিছুর মতো চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করার জন্য প্রকৃতি -ভিত্তিক সমাধানের জন্য বছরে ৪৮৪ বিলিয়ন ডলারের অর্থায়ন প্রয়োজন হবে।

বিগত ৫০ বছর ধরেই বাংলাদেশের নৌপথ ছিল অবহেলিত। দেশনায়ক রাজনীতিবিদ, আমলা ও কামলা-কারও মাঝেই এ পথ নিয়ে কোনো বিস্ময় পরিলক্ষিত হয়নি। অথচ পৃথিবীর মধ্যে অতি অল্পসংখ্যক রাষ্ট্রের মধ্যে এটি একটি মাত্র রাষ্ট্র, যার পুরোটাকেই নৌপথে সংযুক্ত করার ব্যাপক সুযোগ ছিল। কিন্তু বিগত ৫০ বছরের ধারাবাহিক উন্নয়নের চাপে উক্ত পথ এক-তৃতীয়াংশে নেমে এসেছে! বিপরীতে দেশে সড়কপথ বৃদ্ধি পেয়েছে কয়েকশ গুণ।

জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস এ বিপর্যয়ের জন্য মানুষের কর্মকান্ডকে দায়ী করেছেন। তিনি বলেছেন, মানুষ প্রকৃতির বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছে। মানুষ প্রাণিকুলের আবাসন ধ্বংস করছে। বন্যপ্রাণিরর বসবাসের জায়গার ওপর হস্তক্ষেপ করছে। ফলে বিক্ষিপ্ত এসব প্রাণি থেকেই উৎপত্তি হচ্ছে ভাইরাস। প্রকৃতিবিরুদ্ধ কাজ চলমান থাকলে করোনার চেয়েও শক্তিশালী ভাইরাসের প্রাদুুর্ভাব ঘটতে পারে, যা পৃথিবী থেকে মানবজাতিকে বিলুপ্ত করে দিতে পারে মর্মে তিনি সতর্কবার্তা উচ্চারণ করেছেন।

পরিবেশ দূষণ রোধ করতে জীবমন্ডলের সার্বিক সংরক্ষণ ও কার্যকারিতা বজায় রাখার কারণে জীববৈচিত্র্য আবশ্যক। পরিবেশে অক্সিজেনের সরবরাহ বজায় রাখতে, বৃষ্টিপাত ঘটাতে উদ্ভিদের ভূমিকা অপরিহার্য। পরিবেশকে কেন্দ্র করে উন্নয়ন হবে, উন্নয়নকে কেন্দ্র করে পরিবেশ সাজানো যাবে না। জীববৈচিত্র্য রক্ষা করতেই হবে বর্তমান ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য। বর্তমানে উন্নয়নের যে ধারা- তা ধ্বংসাত্মক, মানুষ ও প্রকৃতিবিরোধী। উন্নয়নকে টেকসই করতে যথাযথ প্রক্রিয়া, যেমন- পরিবেশগত ও সামাজিক প্রভাব নিরূপণ, জনমত গ্রহণ, পর্যালোচনা এসব নিশ্চিত করতে হবে এবং এসব বিষয়ে আইন কঠোরভাবে মানতে হবে। তা না হলে আগামী প্রজন্মের জন্য আমরা বাসযোগ্য পৃথিবী রেখে যেতে পারব না। যা আমরা সৃষ্টি করতে পারি না, অর্থনীতির নামে তা ধ্বংসের কোনো অধিকার আমাদের নেই। আমাদের নিজেদের প্রয়োজনে, সুস্থভাবে বেঁচে থাকার জন্য প্রকৃতি এবং পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করতে হবে। প্রকৃতি এবং পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করতে আমাদের মানবিক হবে, মানবিক মূল্যবোধ, নৈতিকতা, মনুষ্যত্বকে জাগিয়ে তুলতে না পারলে আমরা ভয়াবহ বিপর্যয়ের মুখে পড়বো সেই দিন আমাদের আফশোস করা ছাড়া কিছুই থাকবে না । তাই এখন থেকেই সাবধানে পথ হাঁটতে হবে।

 

সুধীর বরণ মাঝি, শিক্ষক, হাইমচর সরকারি মহাবিদ্যালয়, হাইমচর, চাঁদপুর।

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল rajdhanitimes24.com এ লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয়- মতামত, সাহিত্য, ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার ছবিসহ লেখাটি পাঠিয়ে দিন rajdhanitimes24@gmail.com  এই ঠিকানায়।

শীর্ষ সংবাদ:
রোববার থেকে ফের তিন দিনের হিট অ্যালাট জার্রি! শ্রীনগরে বৃষ্টির জন্য ইসতেস্কার নামাজ আদায় গোয়ালন্দ বাজারে উপজেলা ছাত্রলীগের শরবত বিতরণ বাকৃবির সেরা ৫ গবেষককে অ্যাওয়ার্ড প্রদান হিটস্ট্রোকে শিক্ষকের মৃত্যু গোয়ালন্দে বৃষ্টির জন্য অঝোরে কাঁদলেন মুসুল্লিরা মতলবে বৃষ্টির জন্য ইস্তিসকা নামাজ আদায় দেশের সর্বোচ্চ ৪২.৬ ডিগ্রি তাপমাত্রায় পুড়ছে চুয়াডাঙ্গা লালমোহনে রহমতের বৃষ্টির জন্য ইসতিসকার নামাজ আদায় বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের দিকে তাকালে আমাদের লজ্জা হয়: শাহবাজ শরিফ দীর্ঘ তাপপ্রবাহে রেকর্ড, কতদিন থাকবে জানাল অধিদপ্তর বৃষ্টি চেয়ে রানীশংকৈলে ‘ইসতিসকার’ নামাজে মুসল্লিদের বিশেষ দোয়া গাজীপুরে তাপদাহে ঝরছে লিচুর গুটি, দিশেহারা চাষিরা আপনারা শুধু ভোটার, আপনাদের কথা বলার অধিকার নেই: উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থী চার নির্দেশনা দিয়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার প্রজ্ঞাপন ধর্ষণের অভিযোগে মাদ্রাসা শিক্ষকের ১০ বছর সশ্রম কারাদণ্ড বৃষ্টির জন্য সালাতুল ‘ইসতিসকার’ নামাজ ও বি‌শেষ দোয়া বাণিজ্যিকভাবে আঠাবিহীন বারোমাসি কাঁঠাল চাষে ভাগ্য খুলেছে সবুজের বিদ্যুৎ বিভ্রাটের বৃত্তে আটকা ভোলার জনজীবন! একদিনের ব্যবধানে আবারও কমলো সোনার দাম