মিটার রিচার্জে চাপতে হচ্ছে২২০ ডিজিট, গ্রাহকের ভোগান্তি বেড়েই চলেছে। সাধারণত আবাসিক মিটার রিচার্জ করার ক্ষেত্রে, টোকেনে এক লাইনে ২০টি সংখ্যা থাকে, যেটি মিটার চেপে রিচার্জ করেন গ্রাহক। কিন্তু মূল্য পরিবর্তন হওয়ার সময় এটি বেড়ে ১২টি লাইন হয়েছে। ডিজিটের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২২০-এ। এতে করে গ্রাহককে বিদ্যুতের প্রিপেইড মিটার রিচার্জ নিয়ে গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার ময়মনসিংহ পল্লী বিদ্যুত সমিতি-২ এর মাওনা জোনাল অফিসের আওতায় হাজারো প্রিপেইড মিটারের গ্রাহকদের ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।
শুধু তাই নয়, টানা তিনবার ডিজিট চাপতে ভুল হলে, মিটার লক হয়ে যায়, রিচার্জ না হওয়া, হঠাৎ বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধসহ নানা সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন এমন অভিযোগ ভুক্তভোগীদের। তবে এটি দীর্ঘমেয়াদি কোনো সমস্যা নয়, বিদ্যুতের দাম পরিবর্তন হলেই শুধু মাত্র এমনটি ঘটছে বলে দাবি কর্তৃপক্ষের।
ময়মনসিংহ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-২ এর মাওনা জোনাল অফিস কর্তৃপক্ষ জানায়, বিদ্যুতের দাম পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে বেড়েছে প্রিপেইড মিটার রিচার্জের টোকেনের সংখ্যা। এ কারণে আবাসিক ও বাণিজ্যিক মিটারের ক্ষেত্রে এই ডিজিটের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ২২০টিতে, যা সাধারণত অন্য সময়ে থাকে ২০টি। আর এই নিয়মকে রীতিমতো ব্যাপক ভোগান্তির কারণ বলে মনে করছেন সাধারণ গ্রাহকরা।
ময়মনসিংহ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-২ এর মাওনা জোনাল অফিসের দেয়া তথ্য মতে, শিল্প অধ্যুষিত এই এলাকায় ব্যক্তি, বানিজ্যিক ও শিল্প পর্যায়ে গ্রাহক সংখ্যা প্রায় এক লাখ দশহাজার। এর মধ্যে বিগত ২০২১সালে এই এলাকার ৪২হাজার গ্রাহকের এনালগ বিলিং মিটার পরিবর্তন করে প্রিপেইড মিটার স্থাপন করা হয়। স্থাপন করার এক বছর পর থেকেই নানা সমস্যা তৈরী হচ্ছে। বর্তমানে ৪০হাজার ৫৩২টি মিটার চালু রয়েছে। চালুকৃত মিটারের মধ্যে ডিজেল প্লান্টের তৈরী ৫হাজার মিটারে সমস্যা তৈরী হয়েছে বেশী।
উপজেলার তেলিহাটি ইউনিয়নের টেপিরবাড়ী গ্রামের ৬৫ বছর বয়সী স্কুল শিক্ষক শামসুল হক বলেন, একসঙ্গে ২২০ ডিজিট চাপতে গিয়ে হাত অনেক কষ্ট হচ্ছে। দুই-একটি ডিজিট ভুল হলে রিচার্জ সম্পূর্ণ হচ্ছে না। পরবর্তীতে পুনরায় আবার প্রথম থেকে শুরু করতে হচ্ছে। যা খুবই কষ্টসাধ্য।
মাওনা এলাকার বাসিন্দা আকরাম বলেন, ২০ ডিজিট হোক আর ২২০ ডিজিট হোক তা চাপতে ভোগান্তি পোহাতে হয় গ্রাহককে। এই নিয়ম না করে মোবাইল রিচার্জের মতো পদ্ধতি চালুর দাবি জানান তিনি।
তালতলী এলাকার বাসিন্দা আলমগীর হোসেন বলেন, ইদানিং আমার মিটার রিচার্জে এমন ১০ থেকে বারোটা টোকেন আসে। যার সবগুলো চেপে মিটার রিচার্জ করতে হয়। যদি এমন সংখ্যা চাপতে হয়, তাহলে ডিজিটালাইজড করে লাভ কী, প্রশ্ন এই গ্রাহকের।
এদিকে, প্রিপেড মিটারের রির্চাজের নামে গ্রাহকদের ভোগান্তিকে অযৌক্তিক বলছে বিভিন্ন জনপ্রতিনিধিরা। গ্রাহক সুবিধার বৃদ্ধির কথা বলে প্রিপেইড মিটার স্থাপন করা শুরু হলেও এখন অনেকটা মুখ থুবড়ে পড়ার উপক্রম হয়েছে এ কার্যক্রম। উল্টো গ্রাহক হয়রানী স্থাপন করা প্রিপেইড মিটারগুলো এখন অনেকটা গলার কাটা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
প্রিপেইড মিটার গ্রাহকদের আরও অভিযোগ, প্রিপেইড মিটারের সেবার জন্য জনবল সংকটে হয়রানী বেড়েছে। অভিযোগ কেন্দ্রে অভিযোগ দিলেও তা সিরিয়ালে পরে থাকে। দুই এক মাস পর পর ২২০টি সংখ্যা চেপে টাকা রিচার্জ করতে হয়। এছাড়াও মিটার লক হয়ে গেলে তা ঠিক করতে কয়েকদিন লেগে যায়। যখন তখন ব্যাটারি চলে যায় অভিযোগ করলে তা ঠিক করতে কয়েকদিন লাগায় এসময়টা গ্রাহকদের অন্ধকারে কাটাতে হয়। বিনামূল্যে ব্যাটারি পরিবর্তন সহ এ সেবার নিয়ম থাকার পরও এসব সেবা নিতে ১হাজার টাকা পর্যন্ত লাগছে। টাকা না দিলে সিরিয়ালের কথা বলে দিনের পর দিন ফেলে রাখা হয় অভিযোগ।
মাওনা উত্তরপাড়া এলাকার হুমায়ুন কবির অভিযোগ করেন, এসব মিটারের ব্যাটারী চলে যায়, বিনামূল্যে লাগাতে গেলে অফিস কয়েকদিন অপেক্ষা করতে বলে। এসময় তো অন্ধকারে বসে থাকা যায় না। যদিও তার এ সমস্যায় ৫শত টাকা দিলে বাহিরের লোক এসে তাৎক্ষনিক লাগিয়ে দিয়ে গেছে।
মাওনা জোনাল অফিসের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার খোন্দকার মাহমুদুল হাসান বলেন, বিভিন্ন কারণে ১হাজার ৪৬৮টি মিটার রিমুভ করা হয়েছে। বর্তমানে মিটার ক্রয়ের সরকারী অনুমোদন না থাকায় তা স্থাপন বন্ধ রয়েছে। ভবিষ্যতে স্মার্ট মিটার মিটার স্থাপন করা হবে।