জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির আয়োজনে আজ ২৫ মার্চ ২০২৪, সোমবার বেলা ১১.০০টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মিলনায়তনে ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ কালরাত্রিতে গণহত্যার শিকার শহিদদের স্মরণ এবং এই গণহত্যার স্বীকৃতি আদায়ের লক্ষ্যে ‘একাত্তরের গণহত্যা: ইতিহাসের দায় ও আমাদের দায়িত্ব’ শীর্ষক সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিশিষ্ট আইনজীবী অ্যাডভোকেট তারানা হালিম, এম.পি. বলেন, “জাতির পিতার রাজনৈতিক আদর্শ যদি সমাজে প্রতিফলিত হতো তাহলে আমাদের সমাজে সবাই রাজনীতিবীদই হতে চাইতো। স্বাধীনতা, মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধুর মাঝে কোনো বিভাজন নাই, এটা থাকা উচিত নয়-পরবর্তী প্রজন্মের কাছে আমাদের তুলে ধরতে হবে। স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধকে ছোট করলে আওয়ামী লীগ-কে ছোট করা হয়, একটা পক্ষের এধরণের বিকৃত চিন্তা চেতনার কারনে ইতিপূর্বে মিথ্যা ইতিহাস চর্চা হয়েছে। এই গোষ্ঠী আওয়ামী বিরুদ্ধাচারন করার জন্যই মুক্তিযুদ্ধে শহিদ ও সম্ভ্রমহানী নারীর সংখ্যার ভুল প্রচার করে থাকে, যে কারনে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে আমাদের বিভ্রান্তিতে পড়তে হয়। মুক্তিযুদ্ধের প্রশ্নে কোনো বিভেদ থাকতে পারে না এবং জাতির জনক সম্পর্কেও স্বাধীন বাংলাদেশে কোনো বিভেদ থাকতে পারে না।”
তিনি আরো বলেন, “বিশ্বের প্রতিটি প্রজন্ম প্রকৃত স্বত্তা খোঁজ করার জন্য হন্যে হয়ে ঘুরছে আর আমরা উল্টোটা করছি। আমাদের শিকড় জানতে হবে, ইতিহাস জানতে হবে। আমাদের দাবী তোলা উচিত যে, যারা স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় গণধর্ষনে মত্ত ছিল তার একটি তালিকা তৈরি এবং প্রকাশ করতে হবে।”
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. মো: জাকির হোসেনের সভাপতিত্বে সেমিনারে সম্মানিত অতিথি হিসেবে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. সাদেকা হালিম এবং বিশেষ অতিথি হিসেবে কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মোঃ হুমায়ুন কবীর চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন।
জবি উপাচার্য সাদেকা হালিম বলেন, “যারা স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় বিরোধীতা করেছিলেন তারাই রাজনৈতিক অপব্যাখ্যার মাধ্যমে সংখ্যাতাত্ত্বিক অপপ্রচার করেই যাচ্ছে। যার কারনেই দীর্ঘ ৫০ বছর পার হলেও আমরা আন্তর্জাতিক জেনোসাইডের স্বীকৃতি আনতে বাঁধার সম্মুখীন হচ্ছি।”
সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনকারী রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক ড. মোঃ আবুল কাশেম বলেন, “একাত্তরের গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি আদায়ের লক্ষে্য আমাদের জেনোসাইড পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। সামাজিক-সাংস্কৃতিক স্টেকহোল্ডারদেরে এবিষয়ে আরো সক্রিয় হতে হবে এবং জেনোসাইড বিষয়ে গবেষণা বৃদ্ধি করতে হবে। তরুণ প্রজন্মকে এগিয়ে আসতে হবে। আর জাতিসংঘ থেকে এখন যদি স্বীকৃতি নাও পাই অন্তত বিভিন্ন রাষ্ট্র থেকে স্বীকৃতি আদায় করতে হবে।”
মুখ্য আলোচক হিসেবে ইতিহাস বিভাগ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক ড. মো: আব্দুস সামাদ বলেন, “গণহত্যাকে অস্বীকার করা যাবে না – এই সংক্রান্ত আইন প্রনয়ন করা যেতে পারে।”
সেমিনারে স্বাগত বক্তব্য প্রদান করেন সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মোঃ আবুল হোসেন এবং সঞ্চালনার দায়িত্বে ছিলেন সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. ফারহানা জামান ও লোক প্রশাসন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক শামীমা আক্তার। অনুষ্ঠান শেষে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন জবি শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ড. শেখ মাশরিক হাসান।
এসময় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন অনুষদের ডিন, ইনস্টিটিউটের পরিচালক, বিভাগের চেয়ারম্যান, রেজিস্ট্রার, দপ্তরের পরিচালক, প্রক্টর, শিক্ষক-শিক্ষিকা, কর্মকর্তা, সাংবাদিক প্রতিনিধি এবং কর্মচারীবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।