ঝিনাইদহ-যশোরসহ দক্ষিন পশ্চিমাঞ্চলের বিভিন্ন স্থানে বিধিমালা (আইন) অমান্য করে স্থাপিত ইটভাটা গুলো বিধি নিষেধ মানছে না বলে অভিযোগ উঠেছে।
ঝিনাইদহে ৯০ টি ইটভাটার মধ্যে বৈধ ছাড়পত্র পাওয়া ইটভাটা হচ্ছে মাত্র ১০টি। এছাড়া অধিকাংশ ইট ভাটা গুলো বিধিমালাকে ডোন্টকেয়ার করে পরিবেশ ও বায়ূদুষন ঘটিয়ে জনস্বাস্থ্য হুমকির মধ্যে ঠেলে দিচ্ছে বলে শুশিল সমাজ জানায়েছেন।
জেলার সীমান্তবর্তি মহেশপুর উপজেলায় ইটভাটা রয়েছে ২১টি।অনুসন্ধানে জানা যায়,পরিবেশ আইন ১৯৯৫ (সংশোধিত/২০১০) ও ইট প্রস্তত ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রন) আইন ২০১৩ এর কোন বিধি মানছে না এসব ভাটা গুলো । বেপরোয়া ভাবেই পরিবেশে দূষন ঘটিয়ে লাখ লাখ মন কাঠ পোড়ানো হচ্ছে। বছরের পর বছর এভাবে চলে আসছে এসব ইটভাটার ব্যবসা। কিন্তু প্রশাসন নির্বিকার।
সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, ইট ভাটার মালিকরা প্রতিবারের মত এবারও ভাটার ইট উৎপাদন কাজ শুরু করেছেন। অধিকাংশ ভাটাতেই হাজার হাজার মন কাঠ জড়ো করা হয়েছে। তাছাড়া হাইওয়ের পাশে ভাটা নির্মান করার কোন অনুমতি না থাকলেও এ অঞ্চলের বহুসংখ্যক ভাটা হাইওয়ের পাশে স্থাপন করা হয়েছে।
ঝিনাইদহ থেকে হরিনাকুন্ড থেকে কালিগঞ্জ- -জীবননগর-চুয়াডাঙ্গা সড়কের পাশে অনেক গুলো ভাটা আইন না মেনেই গড়ে তোলা হয়েছে। বিধি অনুযায়ী কোন হাইওয়ের পাশে ইটভাটা স্থাপন করা যাবে না। ইট পোড়ানো আইনের ৪৬৫ এর উপধারায় স্পষ্ট উলেখ আছে আবাসিক এলাকায় উপজেলা সদর, ফলের বাগান বনাঞ্চল লোকালয় ও জনবসতি এলাকার তিন কিলোমিটারের মধ্যে ইটভাটা স্থাপন করা যাবে না। সর্বোচ্চ দেড় একর জমিতে এবং নদী ও খালের কিনারে ইটভাটা স্থাপনের আইন না মেনেই গড়ে তোলা হচ্ছে এসব ইটের ভাটা।
বিধান না মানলে শাস্তির বিষয়টি উল্লেখ থাকলেও তার কোন প্রয়োগ নেই। ইট পোড়ানো শুরু হলে ভাটার কালো ধুয়ায় আচ্ছন্ন হয়ে যায় পরিবেশ, বায়ূ দূষন,পরিবেশ দুষন ঘটলেও ভাটা স্থাপন কারিদের সেদিকে কোন পদক্ষেপ নেই। অভিযোগ রয়েছে, প্রতিবছর প্রশাসনের পক্ষ থেকে এসব ইট ভাটায় অভিযান চালিয়ে ভ্রাম্যমান আদালতের মাধ্যমে ৫০ হাজার থেকে এক/দুই লাখ টাকা জরিমানা আদায় করা হয়। জরিমানা গ্রহনের পর এসব ইটভাটা আবার একই অবস্থায় আইন অমান্য করেই সিজেন পার করে। জনসমালোচনা রয়েছে, প্রশাসন যেন ইটভাটা মালিকদের কাছে জরিমানা নিয়ে তাদের বেআইনী কার্যক্রম বৈধতার নবায়ন করে দেন প্রতি বছর।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মহেশপুরে এক ইট ভাটার মালিক জানান, মহেশপুর পৌর এলাকাসহ উপজেলায় ২১টি ইট ভাটা রয়েছে। সরকারী আইন মেনে কয়লা ব্যবহার চলছে মাত্র ৯টি ইট ভাটা। বকি গুলো চলছে প্রশাসনকে ম্যানেজ করে। ইট ভাটা গুলোর মধ্যে রয়েছে পৌর এলাকার গাড়াবাড়ীয়া বেলেমাঠ সড়কে সিটি গোল্ড ব্রিক্র, জলিলপুর নস্তী সড়কের পাশে জুয়েল ব্রিক্র, জলিলপুর মাঠপাড়ার মধ্যে র্যডো ব্রিক্র, যাদবপুর ইউনিয়নে রয়েছে ৩টি ইটের ভাটা, এর মধ্যে একটি বড় বাড়ী গ্রামের রাস্তার পাসে, একটি জলুলী গ্রামের রাস্তার মোড়ে, যাদবপুর, পুড়োপাড়া রাস্তার পাশে সেলিম ব্রিক্য্র, বকুনদিয়া গ্রামের রাস্তায় আলতাফ মিয়ার ভাটা, ভবননগর গ্রামের রাস্তায় লিটন মিয়ার ভাটা, গুড়দাহ গ্রামের রাস্তায় ওয়াহেদ মিয়ার ভাটা, নেপা গ্রামের রাস্তায় সিরাজুল মিয়ার ভাটা, কুল্লোপাড়ার রাস্তায় গড়ে ওঠা সুমন ব্রিক্য্র, মহেশপুর ভেবরা সড়কের পাশে বাগানমাঠ নামক স্থানে মহেশপুর ব্রিকস ও গুড়দাহ-শ্যামকুড় সড়কের পাশেই গড়ে ওঠা বিশ্বাস ব্রিক্সস। জলিলপুর নস্তী সড়কের পাশেই গড়ে ওঠা জুলেয় ব্রিকস এর মালিক মশিউর রহমান জানান সরকার পতি বছরই ইট ভাটাই কাঠ পোড়ানো যাবেনা মর্মে প্রজ্ঞাপন জারি করে।
সংশ্লিষ্ট সুত্রে জানা যায়, ঝিনাইদহ জেলায় মোট ইটভাটার সংখ্যা-১০০টি। ছাড়পত্র প্রাপ্ত বৈধ ইটভাটা-১০ টি, বৈধ জিগজ্যাগ কিলন পদ্ধতির ইটভাটা- ৯টি, বৈধ অটো ব্রিকস-১ টি। সর্বমোট অবৈধ ইটভাটা-৯০টি। অবৈধ জিগজ্যাগ কিলন পদ্ধতির ইটভাটা – ৩৫টি। অবৈধ ১২০ফুট চিমনী বিশিষ্ট ইটভাটা – ৩৬টি। অবৈধ ড্রাম চিমনী বিশিষ্ট ইটভাটা – ১৮টি। আবেদন নিষ্পত্তি প্রক্রিয়াধীন-১ টি অটো ব্রিকস (আজব অটো ব্রিকস) মহেশপুর থানার মোট ইটভাটার সংখ্যা- ২১টি।
বৈধ জিগজ্যাগ কিলন পদ্ধতির ইটভাটা- ৩টি। অবৈধ ইটভাটার সংখ্যা-১৮টি অবৈধ জিগজ্যাগ কিলন পদ্ধতির ইটভাটা – ৪টি। অবৈধ ১২০ ফুট চিমনী বিশিষ্ট ইটভাটা – ৪ টি। অবৈধ ড্রাম চিমনী বিশিষ্ট ইটভাটা -৯ টি।