অপরিপক্ক তরমুজে ছয়লভ বাজার

রাজধানী টাইমসের সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

বরিশালে চড়া দামের পর এবার অপরিপক্ক তরমুজ কিনে ঠকছেন ক্রেতারা। গরমের মধ্যে রোজায় রসালো ফলটির চাহিদা ও দাম বেশি থাকায় আড়তে অপরিপক্ক তরমুজ সরবরাহ করছে ফড়িয়ারা।

কমদামে দেশের বিভিন্ন প্রান্তের কৃষকের কাছ থেকে সংগৃহীত এসব অপরিপক্ক তরমুজ নির্দিষ্ট পরিমাণ ‘কমিশনের’বিনিময়ে খুচরা ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করছেন আড়তদাররা। এতে ব্যবসায়ীরা লাভ গুনলেও বাড়ি নিয়ে কাটার পর লালের বদলে তরমুজের ভেতরের রঙ সাদা দেখে হতাশ হচ্ছেন ক্রেতারা।

বিক্রেতাদের এমন কর্মকান্ডকে আইন অনুযায়ী প্রতারণা বললেও কোনো ধরণের ব্যবস্থা নিতে পারছেন না সংশ্লিষ্টরা। এক্ষেত্রে সরাসরি কেউ অভিযোগ করছেন না। অপরিপক্ক তরমুজ কিনে প্রতারিত হয়ে ফেসবুকে ছবিসহ পোস্ট দিচ্ছেন অনেকে। আবার গণমাধ্যমেও এ নিয়ে সংবাদ প্রকাশ হচ্ছে। আবার অভিযোগ করলেও অপরিপক্ক তরমুজ নির্দিষ্ট কোন বিক্রেতার কাছ থেকে কিনেছেন, সেটি প্রমাণে ক্রেতা ব্যর্থ হওয়ায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া যাচ্ছে না।

বিজ্ঞাপন

জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের বরিশালের কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক সুমি রাণী মিত্র জানান, প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী যথাযথ পণ্য সরবরাহ না করাটা একটি অপরাধ। একজন ক্রেতা পাকা তরমুজ কিনবেন বলেই দাম পরিশোধ করেন। এক্ষেত্রে অপরিপক্ক বা কাঁচা তরমুজ সরবরাহ করাটা ভোক্তা অধিকার আইন অনুযায়ী প্রতারণা।

তিনি আরো জানান, অপরিপক্ক তরমুজ কিনে প্রতারিত কেউ তাদের দপ্তরে অভিযোগ করলে ব্যবস্থা নেবেন। তবে এক্ষেত্রে তরমুজ কেনার রশিদ থাকতে হবে। সেটি না থাকলে কোনো বিক্রেতার বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণ ও ব্যবস্থা নেয়া যায় না।

গরম ও রোজায় তরমুজের চাহিদা ঊর্ধ্বমুখী হবে এমনটি আঁচ করতে পেরে আড়তে তরমুজ বরিশাল ব্যবসায়ীরা। পটুয়াখালী, কুয়াকাটা,কলাপাড়া, থেকে আড়তে তরমুজ নিয়ে আসে ফড়িয়ারা। নির্দিষ্ট পরিমাণ কমিশনের বিনিময়ে আড়তদাররা এসব তরমুজ পিস হিসেব খুচরা ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করেন। এক্ষেত্রে একদম ছোট আকৃতির ১০০টি তরমুজ ১২ হাজার টাকা বিক্রি করা হয়। এসব তরমুজের একেকটির ওজন তিন কেজির ওপর। মাঝারি আকৃতির তরমুজের ১০০ টির দাম ২৫ থেকে ৩০ হাজার। এগুলোর প্রতিটির ওজন ৬ থেকে ৭ কেজি। আড়তে সবচেয়ে বড় আকৃতির ৮ থেকে ১০ কেজি ওজনের তরমুজের দাম তিন’শ থেকে সাড়ে তিন’শ টাকা।

বিজ্ঞাপন

তবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের জরিমানা ও গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচুর আলোচনা সমালোচনার পরও তরমুজের লাগামহীন দাম নিয়ন্ত্রণ করা যায়নি। এখনো চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে। সেই সাথে প্রচুর চাহিদার কারণে আড়ত ও খুচরা ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানে অপরিপক্ক তরমুজে সয়লাব। উচ্চদামে ক্রেতাদের কাছে অপরিপক্ক তরমুজ গছানো চলছে।

বরিশাল উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা উত্তম ভৌমিক বলেন, চারা রোপণের ৬০ থেকে ৬৫ দিন পর তরমুজ পরিপক্ক হয়। এর আগে তরমুজ তোলা হলে সেগুলো পুরোপুরি পাকে না। ভেতরে লাল ও সাদা মিলিয়ে থাকে।

তিনি জানান, তরমুজ কেনার সময় চাপ দিয়ে দেখতে হয় ‘ঢ্যাপ ঢ্যাপ’ শব্দ হয় কি না। যেসব তরমুজের খোসার ওপর মসৃণ ও রঙ উজ্জল থাকে সেগুলো সাধারণত পাকা হয় না। এ ছাড়া যেসব তরমুজ গোলাকৃতির হয় লম্বাটে ধরণের চেয়ে সেগুলো বেশি মিষ্টি।

বেসরকারি একটি ব্যাংকের কর্মকর্তা শরীফ আহমেদ জানান, ইফতারিতে খাওয়ার জন্য বরিশালে বাজার থেকে পিচ দরে ২০০ টাকা দিয়ে একটি তরমুজ কিনে বাড়ি নিয়ে গিয়ে কেটে দেখেন ভেতরে অধিকাংশ কাঁচা। তরমুজের বিচিগুলোও অপরিপক্ক।

ফলের দোকান ও আড়ত ঘুরে ব্যবসায়ীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, শুরুতে তরমুজ বিক্রি বেশি হলেও এখন ব্যবসায় ভাটা পড়েছে। বেশি দামের কারণে একমাত্র সামর্থ্যবানরা ছাড়া সব শ্রেণির ক্রেতারা তরমুজ কিনছেন না। এতে তাদের ব্যবসায়ে মন্দা দেখা দিয়েছে। আড়তদারদের কেউ কেউ অকপটে স্বীকার করেছেন তাদের সংগ্রহে থাকা তরমুজ বিক্রি না হওয়ায় নষ্টের আশঙ্কা করছেন।

বরিশাল ফল ব্যবসায়ী রাজু আহমেদ বলেন, বড় বড় আকৃতির তরমুজ কিনে তাদের এখানকার অনেক আড়ত ব্যবসায়ী বিপাকে পড়েছেন। খুচরা বাজারে বিক্রি না হওয়ায় সেসব তরমুজ আড়তে পড়ে আছে। তরমুজ পচনশীল। আরো কিছুদিন এভাবে পড়ে থাকলে পচে নষ্ট হয়ে যাবে।

তিনি আরো জানান, পিস হিসেবে তরমুজ বিক্রির কোনো সুযোগ নেই। সমিতির পক্ষ থেকে কেজি দরে তরমুজ বিক্রি না করতে ব্যবসায়ীদের চিঠি দেয়া হয়েছে। তারপরও কেউ সেটি শুনছেন না। দশ রোজার পর থেকে ফলের চাহিদা আরো কমে যাবে। তখন ফল ব্যবসায়ীরা বসে বসে কান্নাকাটি করবেন। খুচরা

ব্যবসায়ীরা কেজি দরে বিক্রি করায় তরমুজের বাজারে অস্থিরতা শুরু হয়েছে। এতে ব্যবসায়ে এখন খারাপ প্রভাব পড়ছে।

পোর্টরোড পাইকারী বাজারের বিসমিল্লাহ ফল ভান্ডারের পরিচালক আব্দুল কাদের অপরিপক্ক তরমুজ বিক্রির ব্যাপারে জানান, খুচরা বিক্রেতারা তরমুজ কিনতে এখানে ভিড় করছেন। পুরোপুরি পাকা না হলেও তারা তরমুজ কিনে নিয়ে যাচ্ছে। ভোক্তা পর্যায়ে খুচরা ব্যবসায়ীরা তরমুজ বিক্রি করেন। এক্ষেত্রে তারা দায়ী না।

বরিশাল সিনিয়র কৃষি বিপণন কর্মকর্তা রবিউল ইসলাম বলেন, অপরিপক্ক তরমুজ বিক্রি একদম অন্যায়। মনিটরিং করে এ ব্যাপারে অতি দ্রুত পদক্ষেপ নেবেন।

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল rajdhanitimes24.com এ লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয়- মতামত, সাহিত্য, ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার ছবিসহ লেখাটি পাঠিয়ে দিন rajdhanitimes24@gmail.com  এই ঠিকানায়।

শীর্ষ সংবাদ:
বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের দিকে তাকালে আমাদের লজ্জা হয়: শাহবাজ শরিফ দীর্ঘ তাপপ্রবাহে রেকর্ড, কতদিন থাকবে জানাল অধিদপ্তর বৃষ্টি চেয়ে রানীশংকৈলে ‘ইসতিসকার’ নামাজে মুসল্লিদের বিশেষ দোয়া গাজীপুরে তাপদাহে ঝরছে লিচুর গুটি, দিশেহারা চাষিরা আপনারা শুধু ভোটার, আপনাদের কথা বলার অধিকার নেই: উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থী চার নির্দেশনা দিয়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার প্রজ্ঞাপন ধর্ষণের অভিযোগে মাদ্রাসা শিক্ষকের ১০ বছর সশ্রম কারাদণ্ড বৃষ্টির জন্য সালাতুল ‘ইসতিসকার’ নামাজ ও বি‌শেষ দোয়া বাণিজ্যিকভাবে আঠাবিহীন বারোমাসি কাঁঠাল চাষে ভাগ্য খুলেছে সবুজের বিদ্যুৎ বিভ্রাটের বৃত্তে আটকা ভোলার জনজীবন! একদিনের ব্যবধানে আবারও কমলো সোনার দাম মোবাইলে ডাটার মেয়াদ চায় না ৯৮ শতাংশ মানুষ এফডিসিতে মারামারি, বেশ কয়েকজন সাংবাদিক আহত গাজীপুরে বৃষ্টি প্রার্থনায় ইসতিকার নামাজ আদায় লালমোহনে আবাসনের ঘর জবরদখলের অভিযোগ রাজশাহীতে পদ্মায় গোসলে নেমে তিন শিশুর মৃত্যু বাগেরহাটে দোকান ঘর ভেঙ্গে খাদে পরিবহন, নিহত ১ নবীনগরে চলে না ১ টাকা ও ২ টাকার কয়েন! উপজেলা পরিষদ নির্বাচন: প্রথম ধাপে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত ২৬ প্রার্থী ড্রামের ভোজ্যতেল ব্যবহারের প্রতিবাদে বাগেরহাটে মানববন্ধন ও স্মারকলিপি