ঋতুরাজ বসন্ত নির্জীব প্রকৃতির বর্ণিল সাজ

রাজধানী টাইমসের সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

ফাল্গুনের হাত ধরেই প্রকৃতিতে ঋতুরাজ বসন্তের আগমন ঘটে। ঋতুচক্রে ফাল্গুন ও চৈত্র -এ দুই মাস বসন্তকাল। বসন্ত মানেই পূর্ণতা। বসন্ত মানেই নতুন প্রাণের সঞ্চার। বসন্ত মানেই একে অপরের হাত ধরে হাঁটা। বসন্ত ঋতু বাসন্তী রঙে মনকে সাজায়, মানুষকে করে আনমনা। বসন্তে শীতের নির্জীব প্রকৃতি যেন সহসাই জেগে ওঠে। কোকিলের কুহুতান, দখিনা বাতাস, ঝরাপাতার মর্মর শব্দ যেনো বসন্তের চিরায়ত রূপ।

২০১২ সালে প্রকাশিত এক গবেষণায় দেখা গেছে, বসন্তের সবুজ ও রঙিন প্রকৃতি মানুষের মস্তিষ্ককে সৃষ্টিশীল হতে প্রেরণা জোগায়। এরও আগে, ২০০৭ সালে বিজ্ঞানীরা বলেছিলেন, বসন্তে যে হলুদ রঙের ফুলের প্রাচুর্য দেখা যায়, তা প্রাণকে তারুণ্য উপহার দেয়। কবিগুরু বসন্তকে যৌবনের ঋতু বলেছেন। বসন্ত ঋতুতে সবচেয়ে বেশি পাখির গান শোনা যায়। আর এই গানের দলের নেতৃত্ব দেয় সুরেলা কণ্ঠের কোকিল। উঁচু গাছের মগডালে বসে, নিজেকে আড়াল করে চারদিক কুহু কুহু ডাকে মুখরিত করে তোলে। কোকিলের গানে বিমোহিত হয় মানুষের মন, বিরহী মন মূহুর্তেই হয়ে ওঠে উতলা।

বসন্তে ফাল্গুনের হাওয়ার দোল লাগে বাংলার নিসর্গ প্রকৃতিতে। রাজার আগমনে চারদিকে যেমন সাজ সাজ রব শুরু হয়ে যায়, তেমনি বসন্তের আগমনে প্রকৃতিও নতুন সাজে সেজে ওঠে। প্রাণচাঞ্চল্য দেখা দেয় প্রকৃতিতে। ফুলে ফুলে রঙিন হয়ে উঠে প্রকৃতির সবুজ অঙ্গন। মাঘের শেষ দিক থেকে গাছে গাছে চোখে পড়ে আমের মুকুল। খোলসে থাকা কৃষ্ণচূড়া, রাধাচূড়া তখন সৌন্দর্যের সৌরভ ছড়াতে থাকে। ফুলের মনমাতানো রূপ, রস আর সৌন্দর্যে মাতাল হয়ে যায় মধুমক্ষী, পাখি আর পতঙ্গ। মৌমাছির গুঞ্জনে মুখরিত হয়ে ওঠে ফুল বাগান। ফুলে ফুলে বসে তারা মধু পান করে। মৃদুমন্দ বাতাসে ভেসে আসা ফুলের সৌরভ বসন্তের আগমনের জানান দেয়। শীতের জীর্ণতা সরিয়ে ফুলে ফুলে সেজে ওঠে প্রকৃতি। গাছে গাছে নতুন স্নিগ্ধ সবুজ কচি পাতা জানান দেয় নতুন লগ্নের। ফাল্গুনের আগমনে পলাশ, শিমুল গাছে দেখা যায় আগুনের খেলা। গাছে গাছে শোনা যায় পাখির কিচির মিচির শব্দ। মাঠে-ঘাটে মনের আনন্দে উড়ে বেড়ায় ফড়িং আর রঙ্গিন প্রজাপ্রতি। বসন্তে সর্বত্রই চোখে পড়ে সাজ সাজ রব।

বিজ্ঞাপন

‘ফুল ফুটুক আর নাই ফুটুক, আজ বসন্ত’ কবি সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের এই অমিয় বাণীটি ঋতুরাজ বসন্তকে আলিঙ্গনের আহ্বান জানায়। বসন্তে চারদিক বাহারি ফুলের সৌন্দর্য আর সৌরভে মুখরিত হয়ে ওঠে। গাছে গাছে সবুজ কচি পাতা, মৌমাছির গুঞ্জন, বর্ণিল নানা জাতের ফুল আর মুকুলের মিষ্টি মধুর ঘ্রাণ মানুষের মনকে উদাস করে তোলে। বসন্তের দূত কোকিলের সুমধুর কুহুকুহু ডাক ব্যাকুল করে তোলে অনেক বিরহী অন্তর। বসন্তকাল এলেই মনে পড়ে যায় রবীন্দ্রনাথের সেই সুপরিচিত গান ‘আহা আজি এ বসন্তে, এত ফুল ফুটে, এত বাঁশি বাজে, এত পাখি গায়..।’ বসন্তে স্নিগ্ধ সবুজ কচিপাতার সঙ্গে বাতাসের গভীর মিতালি চলে। গাছে গাছে ফোটে হরেক রকমের ফুল। এসব ফুলের সৌন্দর্যে চারিপাশে উৎসবের রোমাঞ্চ বয়ে যায়। পলাশ, শিমুল রক্তিম সৌন্দর্যের পাপড়ি মেলে বসন্তের আগমনের বার্তা দেয়। পলাশ ফুলকে বসন্তের বার্তা বাহক বলা হয়। ‘রাঙ্গা হাসি রাশি রাশি অশোক পলাশে..’ পলাশের রূপে মুগ্ধ হয়ে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এই কবিতাটি লিখেছিলেন।

বসন্তের আগমনে প্রকৃতিতে যেমন দোলা লাগে তেমনি মানব মনেও দোলা লাগে। প্রিয়জনের সঙ্গে মিলনের সাধ জাগে। যে কথা হয়নি বলা তা বলতে ইচ্ছা করে। বসন্তের আগমনে তরুণ হৃদয়ে লাগে প্রশান্তির ছোঁয়া। চারিদিকে যেন সাজ সাজ রব চোখে পড়ে। নতুন কচিপাতার দোলায় দুলে প্রকৃতি, দুলে আবেগী মন। নতুন প্রাণে লাগে ফাগুনের সতেজ হাওয়া। ঋতুরাজ বসন্ত প্রত্যেকের হৃদয়কে ব্যাকুল করে তোলে। বসন্তের আগমন মানেই তরুণ হৃদয়ে নতুন প্রাণের সঞ্চার। বসন্তের বাতাসও যেন শরীরে ভালবাসার পরশ বুলিয়ে দেয়। মন আনচান করে দেয়। তাইতো বাউল কবি গেয়ে উঠে- ‘বসন্ত বাতাসে সই গো, বসন্ত বাতাসে, বন্ধুর বাড়ির ফুলের গন্ধ আমার বাড়ি আসে..।’ গ্রামের মেঠোপথ, নদীর পাড়, গাছ-গাছালি মাঠভরা ফসলের ক্ষেত বসন্তের রঙে রঙিন হয়ে ওঠে। দুচোখ যেদিকে যায় সেদিকেই চোখে পড়ে এমন দৃশ্যপট।

গ্রামবাংলার চিরাচরিত বসন্তের রূপ একসময় শহরেও দেখা যেতো। কিন্তু আজকাল নগরায়ন ও শিল্পায়নের ফলে অবাধে কাটা পড়ছে শত প্রজাতির হাজারো ফুল-ফলের গাছ। এ কারণে শহরে বসন্তের সেই চিরচেনা রূপ, রস, সৌন্দর্য আগের মতো তেমন দেখা যায় না।

বিজ্ঞাপন

বাঙালির জীবনে বসন্তের উপস্থিতি অনাদিকাল থেকেই। বসন্তের বন্দনা আছে কবিতা, গান, নৃত্য আর চিত্রকলায়। সাহিত্যের প্রাচীন নিদর্শনেও বসন্ত ঠাঁই করে নিয়েছে নানা অনুপ্রাস ও উপমায়। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর থেকে শুরু করে আধুনিককালের বাউল-কবিদের মনকে বার বার দুলিয়েছে ঋতুরাজ বসন্ত। মূলত, বাংলা পঞ্জিকা বর্ষের শেষ ঋতু বসন্তের প্রথম দিনকে বাঙালি পালন করে ‘পহেলা ফাল্গুন-বসন্ত উৎসব’ হিসেবে। বাঙালির নিজস্ব সার্বজনীন প্রাণের উৎসবে এ উৎসব এখন গোটা বাঙালির কাছে ব্যাপকভাবে সমাদৃত হচ্ছে।

বসন্তে বাহারি রঙের নানান ধরনের ফুল চোখে পড়লেও গাঁদা ফুলের রঙকেই তরুণ-তরুণীরা পোশাকে বেশি ধারণ করে। খোঁপায় শোভা পায় গাঁদা ফুলের মালা। গাছে গাছে মুকুলের সৌরভ আর পিঠাপুলির উৎসব গ্রামে বসন্তের আমেজে ভিন্ন মাত্রা যোগ করে । গ্রাম্যজীবনে বসন্তকে আরো নিবিড়ভাবে বরণ করা হয়। গাঁয়ের বধূদের মাঝেও এখন বসন্তের ছোঁয়া বেশ চোখে পড়ে । গাঁয়ের বধূরা আঙিনা লেপে বরণ করে নেয় ফাগুনকে। তুলে রাখা হলদে শাড়িও বের করে। মূলত, ঋতুরাজ বসন্ত সবার হৃদয়েই দোলা দেয়।

মো. আশরাফুল ইসলাম
প্রাবন্ধিক ও কলামিস্ট

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল rajdhanitimes24.com এ লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয়- মতামত, সাহিত্য, ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার ছবিসহ লেখাটি পাঠিয়ে দিন rajdhanitimes24@gmail.com  এই ঠিকানায়।

শীর্ষ সংবাদ:
বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের দিকে তাকালে আমাদের লজ্জা হয়: শাহবাজ শরিফ দীর্ঘ তাপপ্রবাহে রেকর্ড, কতদিন থাকবে জানাল অধিদপ্তর বৃষ্টি চেয়ে রানীশংকৈলে ‘ইসতিসকার’ নামাজে মুসল্লিদের বিশেষ দোয়া গাজীপুরে তাপদাহে ঝরছে লিচুর গুটি, দিশেহারা চাষিরা আপনারা শুধু ভোটার, আপনাদের কথা বলার অধিকার নেই: উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থী চার নির্দেশনা দিয়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার প্রজ্ঞাপন ধর্ষণের অভিযোগে মাদ্রাসা শিক্ষকের ১০ বছর সশ্রম কারাদণ্ড বৃষ্টির জন্য সালাতুল ‘ইসতিসকার’ নামাজ ও বি‌শেষ দোয়া বাণিজ্যিকভাবে আঠাবিহীন বারোমাসি কাঁঠাল চাষে ভাগ্য খুলেছে সবুজের বিদ্যুৎ বিভ্রাটের বৃত্তে আটকা ভোলার জনজীবন! একদিনের ব্যবধানে আবারও কমলো সোনার দাম মোবাইলে ডাটার মেয়াদ চায় না ৯৮ শতাংশ মানুষ এফডিসিতে মারামারি, বেশ কয়েকজন সাংবাদিক আহত গাজীপুরে বৃষ্টি প্রার্থনায় ইসতিকার নামাজ আদায় লালমোহনে আবাসনের ঘর জবরদখলের অভিযোগ রাজশাহীতে পদ্মায় গোসলে নেমে তিন শিশুর মৃত্যু বাগেরহাটে দোকান ঘর ভেঙ্গে খাদে পরিবহন, নিহত ১ নবীনগরে চলে না ১ টাকা ও ২ টাকার কয়েন! উপজেলা পরিষদ নির্বাচন: প্রথম ধাপে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত ২৬ প্রার্থী ড্রামের ভোজ্যতেল ব্যবহারের প্রতিবাদে বাগেরহাটে মানববন্ধন ও স্মারকলিপি