বেকার যুবক যুবতীদের স্বপ্ন দেখাচ্ছে পেকিন হাঁস

রাজধানী টাইমসের সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

রাজশাহীর বেকার যুবক যুবতিদের স্বপ্ন দেখাচ্ছে উন্নতজাতের বেইজিং বা পেকিন হাঁস। এ হাঁস পালন করে ইতোমধ্যে অনেক যুবত-যুবতিরা স্বাবলম্বী হয়েছেন। সেই সাথে দেশী হাঁসের চাহিদাও মেটাচ্ছে এই বেইজিং বা পেকিন হাঁস। দেশি হাঁসের চেয়ে এ হাঁস পালনে খরচ, অল্প দিনে মাংস ও ডিম হওয়ায় পেকিন হাঁস পালনে আগ্রহী হয়ে উঠছেন রাজশাহীর বেকার নারী-পুরুষরা। সম্পুর্ন কৃত্রিম উপায়ে বাচ্চা উৎপাদন, স্বল্প জায়গায় খামার করে এ হাঁস পালন করে অল্প দিনেই স্বাবলম্বী হওয়া সম্ভব বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। এ কারণে বেকার নারী-পুরুষরা স্বল্প পুজিঁতে এ হাঁস পালন করে বেকারত্ব দুর করার পাশাপাশি পুরণ হচ্ছে মাংস ও আমিষের চাহিদা।

রাজশাহীর পবা, মোহনপুর, তানোর ও বাগমারা উপজেলায় এ হাঁস বাণিজ্যিকভাবে পালন শুরু হয়েছে। এ চারটি উপজেলায় প্রায় শতাধিক খামারে পালন হচ্ছে পেকিন হাঁস। মূলত এই হাঁস পালনের সুযোগ সৃষ্টি করে দিয়েছে রাজশাহীর মোহনপুরের জাহানাবাদ এলাকায় প্রতিষ্ঠিত শতফুল এনজিও। সমন্বিত কৃষি ইউনিট (প্রাণি সম্পদ খাত) পল্লী কর্মসহায়ক ফাউন্ডেশনের অর্থয়ানে এনজিও শতফুল এ কার্যক্রম বাস্তবায়ন করছে।

বর্তমান রাজশাহীতে দেশী হাঁসের মাংস ও ডিমের চাহিদা অনেক। এই দেশি হাঁসকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে বিভিন্ন ধরনের রেষ্টুরেন্ট ও হোটেল। দেশি হাঁসের চাহিদা বেশি থাকায় এর দামটাও বেশ চড়া। এরই প্রেক্ষিতে উন্নতজাতের বেইজিং বা পেকিন হাঁস রাজশাহীতে দেশী হাঁসের চাহিদা পুরণ করছে।

বিজ্ঞাপন

পেকিন হাঁসের খামার ঘুরে দেখা গেছে, এ হাঁস দেখতে অনেকটাই দেশী হাঁসের মত। আকার বা গায়ের রং দেশি হাঁসের মতই সাদা। প্রথমে দেখলে বোঝার উপায় নেই এটি বিদেশী হাঁস। পেকিন হাঁস দুই ধরনের। একটি ডিম উৎপাদনের জন্য পালন করা হয়, অন্যটি মাংসের জন্য। এ হাঁস মাত্র ৫০ দিনের মধ্যে খাওয়ার উপযোগি হয়। উৎপাদন খরচও কম। একটি হাঁস ৫০ দিন পালন করে বিক্রির উপযোগি করতে খরচ হয় সাড়ে তিন থেকে চারশ টাকা। আর এ হাঁস বাজারে বিক্রি হয় সাড়ে সাতশ থেকে আটশ টাকায়।

দেখে গেছে, উন্নতজাতের এ পেকিন হাঁস পালনে খুব বেশি জায়গার প্রয়োজন হয় না। স্বল্প জায়গায় খামার করে তার সাথে ড্রেনের মত নালা করে সেই নালায় পানি দিয়ে দিনে একবার গোসলের ব্যবস্থা করলেই হয়। খাবারও দেশি হাঁসের চেয়েও অনেক কম লাগে। বিশেষ করে এ হাঁস ৯০ দিনের মধ্যে ডিম দেয়া শুরু করে। দুই বছর পর্যন্ত এ হাঁস ডিম দিয়ে থাকে। এ হাঁস মোটাতাজা করণের জন্য বয়লার গোয়া ও ডিমের জন্য লেয়ার ফিড খাওয়ানো হয়।

মোহনপুর উপজেলার পেকিন হাঁস পালনকারী নাসরিন আক্তার বলেন, একটা সময় আমার সংসার চলতো না। দিনমজুরের কাজ করে সংসার চালাতে হতো। কিন্তু শতফুল এনজিওর মাঠ কর্মীর পরামশ্যে আমি পেকিন হাঁন পালনের শুরু করি। শতফুল এনজিও থেকে এ হাঁস পালনে প্রশিক্ষণ নেই।

বিজ্ঞাপন

প্রথমে মাত্র ৬০টি হাঁস দিয়ে খামার শুরু করি। মাত্র তিন শতক জমিতে আমি খামার করেছি। গত দুই বছর ধরে পেকিন হাঁস পালন ও বাচ্চা উৎপাদন করে আমার সংসারে এসেছে স্বচ্ছলতা। আমার খামারে কাজ করছেন নারী-পুরুষ মিলে তিনজন। যদিও এ হাঁস পালনে তেমন জনবলও প্রয়োজন পড়ে না। তিনি বলেন, বাজারে এ হাঁস বিক্রির জন্য তোলা হলে ক্রেতারা দেশি হাঁস মনে করেই কিনেন। বর্তমান এ হাঁসের পরিচিত বাড়ায় বাজারে দেশি হাঁসের পরিবর্তে পেকিন হাঁস খুঁজেন ক্রেতারা। অনেকেই খামার থেকেও কিনে নিয়ে যান। কারণ এ হাঁসের মাংস দেশি হাঁসের মাংসের মতই সুস্বাদু।

মোহনপুরের তশোপাড়াগ্রামের বিপুল হাসান বলেন, একটা সময় কাজ কাম না থাকায় সংসার নিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছিলাম। প্রতিবেশিদের স্বল্প পরিসরে পেকিন হাঁস পালন দেখে আমি এনজিও শতফুলে যোগাযোগ করি। তারা আমাকে প্রশিক্ষণ দেন। আমি মাত্র ১শ’টি হাঁস দিয়ে শুরু করি। ছোট খামার থেকে এখন আমার একটি বড় খামারে রুপ নিয়েছে। শুধু মাংসের জন্য নয়, আমি ডিমের জন্য হাঁসে পালন করছি। এ হাঁস পালন করে আমার সংসারে আর কোনো অভাব নেই। তিনি বলেন, এ হাঁস পালন করে একজন বেকার অল্প দিনেই স্বাবলম্বী হওয়া সম্ভব।

যুবক হামিউল ইসলাম, বাড়ির পরিত্যাক্ত জায়গায় আমি একশ হাঁস দিয়ে খামার শুরু করি। ক্ষুদ্র পরিসরে হলেও বর্তমান আমার হাসের পরিমাণ আড়াইশর বেশি। এই হাঁস পালন অনেকটাই লাভজনক বলেও জানান তিনি।

শতফুল এনজিও’র সহকারী পরিচালিক জান্নাতুল ফেরদৌস জানান, আমরা গ্রামে গ্রামে বেকার নারী পুরুষদের এই হাঁস পালনে উদ্বুদ্ধ করে থাকি। প্রশিক্ষণ দেই। বাইরে থেকে এ হাঁসের বাচ্চা আমদানি করতে হয় না। খামারে উৎপাদন হয় এ পেকিন হাঁসের বাচ্চা। সেখান থেকে নতুন খামারীরা বাচ্চা নিয়ে যান। এ হাঁসের রোগ বালাইও অনেক কম। আমাদের পাশাপাশি রাজশাহী প্রাণী সম্পদ অধিদপ্তর খামারিদের দেখভাল করেন।

শতফুল এনজিও’র নির্বাহী পরিচালক নাজিম উদ্দিন মোল্লা বলেন, রাজশাহীর উপজেলা পর্যায়ে অনেক শিক্ষিত নারী পুরুষ বেকার রয়েছে। আমরা এ পেকিন হাঁস পালনের মাধ্যমে তাদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করার চেষ্টা করছি। সরবকারী পৃষ্টপোষকতায় আমরা যুব সমাজকে কর্মেও দিকে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছি। তিনি বলেন, বেকার যুবক-যুবতিরা এ উন্নতজাতের পেকিন হাঁস পালন শুরু করার পর তারা আর চাকরির পেছনে ছুটছে না। প্রতিনিয়ত তারা খামারের পরিধি বাড়াচ্ছেন।

রাজশাহী জেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা ডাক্তার জুলফিকার বলেন, রাজশাহীতে ৯৪২টি হাঁসের খামার রয়েছে। এরমধ্যে এখন নতুন নতুন পেকিন হাঁসের খামার তৈরি হচ্ছে। আমরা নতুন এসব উদ্যোক্তাদের স্ববলম্বী হওয়ার জন্য মনিটরিং করছি। ভ্যাকসিন থেকে শুরু করে সব কিছুই আমরা দেখছি। যারা নতুন এ হাঁসের খামার করছে তাদের বিভিন্নভাবে পরামশ্যও দিচ্ছি। তিনি বলেন, দেশী হাঁসের বিকল্প হচ্ছে বেইজিং বা পেকিন হাঁস। এই হাঁস পালনে একজন যুবক অল্প দিনেই স্ববলম্বী হতে পারে।

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল rajdhanitimes24.com এ লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয়- মতামত, সাহিত্য, ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার ছবিসহ লেখাটি পাঠিয়ে দিন rajdhanitimes24@gmail.com  এই ঠিকানায়।

শীর্ষ সংবাদ:
পাইকগাছায় শারিরিক প্রতিবন্ধির ডিসিআরের জমি জবর দখলের অভিযোগ শেরপুরের দুই উপজেলায় ভোট গণনা চলছে “১৭ বছর পর সোহরাওয়ার্দী কলেজ ছাত্রদলের কমিটি ঘোষণা” একমাত্র ছেলের ওপর অভিমান করে বাবা-মায়ের বিষ পান দুমকীতে অবৈধ নির্বাচনী ক্যাম্প ভেঙে দিলেন ইউএনও ধান কাটার মৌসুমের কারণে ভোট কম পড়েছে : সিইসি কাউখালীতে বাড়ছে অপমৃত্যুর প্রবণতা তিন প্রার্থী আওয়ামী লীগের,ভোট দেওয়া নিয়ে ভীতিতে ভোটাররা নরসিংদী রাত পোহালেই নরসিংদীর দুই উপজেলায় ভোট কুমিল্লার নাঙ্গলকোট উপজেলার নির্বাচন স্থগিত গোদাগাড়ী উপজেলা নির্বাচনে দ্বিমুখী লড়াই,এগিয়ে জাহাঙ্গীর রোহিঙ্গাদের জন্য তহবিল সংগ্রহে আইওএমকে প্রধানমন্ত্রীর আহ্বান পদত্যাগ করলো ন্যাশনাল ব্যাংকের পর্ষদ, নতুন পর্ষদ গঠন ঝড় ও বজ্রপাতে মা-ছেলেসহ ৯ জনের মৃত্যু বিশ্বব্যাপী ক্যাম্পাসে ক্যাম্পাসে ছড়িয়ে পড়ছে ইসরায়েলবিরোধী বিক্ষোভ ঢাকাসহ ২৫ জেলায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ আজ রোহিঙ্গাদের ফেরাতে বাংলাদেশের পাশে আছে ইউরোপ : পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলছে শনিবার থেকে রাণীশংকৈল উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে প্রতীক পেলেন প্রার্থীরা, জমে উঠলো নির্বাচন গুইমারায় সর্বজনীন পেনশন স্কিমে অন্তর্ভুক্ত হলেন ইউএনও’র সহধর্মিণী ও বড় ভাই