জরিমানার টাকা দ্বিগুণ করায় সাত কলেজ শিক্ষার্থীদের ক্ষোভ, তীব্র সমালোচনা

0

জরিমানার টাকা দ্বিগুণ করে পুনঃভর্তি হয়ে পরীক্ষা দেয়ার সুযোগ দেয়া হয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত সরকারি সাত কলেজের শিক্ষাবর্ষের মেয়াদোত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের।

২০১৭-১৮, ২০১৮-১৯ ও ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের মেয়াদোত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের ৩০ হাজার টাকা থেকে ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত জরিমানা ও ফরমপূরণের ফি দিয়ে ২০২৩ সালের প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় বর্ষের পরীক্ষায় অংশ নেয়ার সুযোগ দেয়া হয়েছে। প্রতি বছরের জন্য পুনঃভর্তির জরিমানা নির্ধারণ করা হয়েছে ১০ হাজার টাকা। যা আগে ৫ হাজার টাকা ছিল বলে জানিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। এ নিয়ে সাত কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় রুপান্তর চাই নামে একটি প্লাটফর্মের শিক্ষার্থীরা ব্যাপক ক্ষোভ প্রদর্শন করছে।

ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থী আব্দুর রহমান বলেন, পৃথিবীর অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ পেশা হচ্ছে ব্যবসা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত সরকারি সাত কলেজ নিয়ে ব্যবসা করছে। বিচ্ছিন্নভাবে আরেকজনের ব্যবসা আপনি, আমি বন্ধ করতে পারবো না ! সবাই একত্রিত হয়ে বন্ধ করতে হবে। এককভাবে কেউ বন্ধ করতে গেলেও পিয়ন হওয়া লাগে। পড়াশোনা চলাকালীন পিয়ন হওয়া সম্ভব না। আসন্ন ছুটির কয়েকটি দিন একটু ফ্রেশ হন। এরমধ্যে কমিশন গঠনের সিদ্ধান্ত না এলে, সবাই মানসিক প্রস্তুতি নিন। সময় সব বলে দিবে।

বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের শিক্ষার্থী জাফরিন আক্তার বলেন, আপনি শিক্ষাকে মৌলিক অধিকার বলছেন, অথচ একে ধীরে ধীরে দুষ্প্রাপ্য করে তুলছেন। বিশেষ করে সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের জন্য। আবার আপনারাই বলছেন যে সাত কলেজ সরকারি হওয়ায় এখানে নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তানেরা লেখা পড়ার সুযোগ পাচ্ছে। যারা অনিয়মিত শিক্ষার্থী থাকে তারা বাকিদের তুলনায় কিছুটা পিছিয়ে থাকে। একজন অনিয়মিত শিক্ষার্থীকে ৭ তারিখে এসে জানানো হলো যে তাকে ১৭ তারিখের মধ্যে ৩০ হাজার টাকা অতিরিক্ত ফি প্রদান করতে হবে। এটাই কি সুযোগ? এটা শিক্ষার্থীবান্ধব কোনো সিদ্ধান্ত হতে পারে না। ফর্ম ফিলাপ চলমান, এখন নতুন করে এই হারে অনিয়মিত ফি বাড়ানোর মানে টা কি? কেন আমাদের জন্য নিয়মগুলোকে এত জবাবদিহিতাবিহীন করা হচ্ছে? সাত কলেজ কোনো ব্যবসায়িক আয়ের উৎস না।

সোহরাওয়ার্দী কলেজের শিক্ষার্থী আওলাদ জিসান বলেন, দেখুন আমরা বারবার বলে যাচ্ছি ঢাবি সাত কলেজ কে ২০১৭ সালে অধিভুক্ত করেছে শুধুমাত্র বাণিজ্যর জন্য, যা তারা আজকে আবার ও প্রমাণ করেছে এ নোটিশের মাধ্যমে। ঢাবির অত্যন্ত মেধাবী ও মহানুভব প্রসাশনের কাছে আমার ছোট্ট জানতে চাওয়া- আপনারা কি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান চালাচ্ছেন নাকি সতেরো দশকের ঔপনিবেশিক শাসন চালাচ্ছেন?
বৃটিশ কলোনিয়াল শাসন যুগের ইতিহাস আমরা হাজার বার পড়েছি, কিন্তু এই সুশীলতার মুখোশের আড়ালে থাকা ঢাবির ঔপনিবেশের খবর কি কেউ রাখি?

গতবছর ফর্ম পূরণের সময় যেই জরিমানার পরিমাণ ছিল ৫,০০০ টাকা এক লাফে এক বছরের মাথায় তা বানায় দিলেন ১০,০০০ টাকা৷ অর্থনৈতিক বৈষম্যর কারণে অনেক শিক্ষার্থী মানসিক ভারসাম্য ও হারিয়ে ফেলে।তাই সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের কথা বিবেচনা করে রাষ্ট্রের সার্বিক পরিস্থিতি গতিশীল রাখার জন্য।

একটি পূর্ণাঙ্গ সায়ত্ত্বশাসিত বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য সাত কলেজের শিক্ষক-শিক্ষার্থী এবং রাষ্ট্রের বুদ্ধিজীবিদের নিয়ে অতি শীগ্রই একটি শিক্ষা কমিশন গঠন করে এর নিরসন করবে মাননীয় শিক্ষা উপদেষ্টা মহোদয় এ আমাদের দৃঢ় বিশ্বাস।

উল্লেখ্য, ৫ই আগস্ট সরকারের পটপরিবর্তনের পর বিভিন্ন বৈষম্য এবং সমস্যাগুলোকে সামনে এনে এই প্লাটফর্মের শিক্ষার্থীরা বিভিন্নভাবে সাত কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয়ের রুপান্তরের চেষ্টা করে যাচ্ছেন। এ লক্ষ্যে প্রধান উপদেষ্টা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, ইউজিসি চেয়ারম্যান বরাবর স্মারকলিপিও প্রদান করেছেন।

এ সম্পর্কিত আরও খবর