চট্টগ্রাম নগরের জে এম সেন হলে পূজামণ্ডপের অনুষ্ঠান মঞ্চে ইসলামী সংগীত পরিবেশনের ঘটনায় বিচার বিভাগীয় তদন্তের দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ। আর এ ঘটনায় মহানগর কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সজল দত্তকে বহিষ্কার করা হয়েছে।
শুক্রবার (১১ আক্টোবর) বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি শ্রী বাসুদেব ধর ও সাধারণ সম্পাদক শ্রী সন্তোষ শর্মার এক যৌথ বিবৃতিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, এই অবাঞ্চিত ঘটনায় হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষ অত্যন্ত বেদনাহত হয়েছে। পূজা পরিষদ এই ঘটনার বিচার বিভাগীয় তদন্ত ও জড়িত ব্যক্তিদের চিহ্নিত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করছে।
এতে আরও বলা হয়েছে, পূজা উদযাপন পরিষদ দৃঢ়তার সঙ্গে বলেছে, শারদীয় দুর্গাপূজা যাতে সুষ্ঠুভাবে পরিচালিত হয় সেজন্য সরকার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। স্বাভাবিকভাবে এই ধরনের ঘটনা সুন্দর প্রচেষ্টাকে ব্যর্থ করে দিতে পারে। এ ব্যাপারে সরকার, সেনাবাহিনী, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, রাজনৈতিক দল ও ছাত্র সমাজকে এক হয়ে কাজ করতে হবে এবং দুর্বৃত্তদের প্রতিহত করতে হবে, এর কোনো বিকল্প নেই।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, পূজা উদযাপন পরিষদ ইতোমধ্যে দায়িত্ব যথাযথ ভাবে পালনে ব্যর্থতার অভিযোগে চট্টগ্রাম মহানগর কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে অব্যাহতি দিয়েছে এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান সুষ্ঠুভাবে পরিচালনায় ব্যর্থতার অভিযোগে মহানগর কমিটির যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক সজল দত্তকে বহিষ্কার করেছে।
এর আগে বৃহস্পতিবার রাতে নগরীর জে এম সেন হলে পূজামণ্ডপে সংগীত পরিবেশন করেন চট্টগ্রাম কালচারাল একাডেমির কয়েকজন শিল্পী। এ সংক্রান্ত একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। এতে ছয়জনকে পূজামণ্ডপের মঞ্চে দাঁড়িয়ে সংগীত পরিবেশন করতে দেখা যায়।
বাংলাদেশ পূজা উদযান পরিষদের চট্টগ্রাম মহানগর সাধারণ সম্পাদক হিল্লুর সেন উজ্জল কালবেলাকে বলেন, চট্টগ্রাম কালচারাল একাডেমির ব্যানারে তারা এই গান পরিবেশন করেন। দেশাত্মবোধক সংগীত পরিবেশনের কথা বলে তারা ইসলামিক সংগীত পরিবেশন করেন। এরপর সনাতন ধর্মাবলম্বীদের মনে ক্ষোভ ছড়িয়েছে। তাৎক্ষণিক সজল দত্তকে পূজা উদযাপন পরিষদের যুগ্ম সম্পাদক পদ থেকে বহিষ্কার করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। পাশাপাশি অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে প্রশাসন বাদী হয়ে মামলা করার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক ফরিদা খানম বলেন, ফেসবুকে ভিডিওটি দেখার সঙ্গে সঙ্গেই আমরা ঘটনাস্থলে পৌঁছাই। তাৎক্ষণিক সবার সঙ্গে কথা বলে পরিস্থিত নিয়ন্ত্রণে আনি। সবাইকে আইনগত সহযোগিতার বিষয়ে আশ্বস্ত করা হয়েছে।
চট্টগ্রাম মহানগর পূজা উদযাপন পরিষদের অন্যতম নেতা অ্যাডভোকেট নিখিল কুমার দাশ কালবেলাকে বলেন, শতশত পূজার্থীদের সামনে ধর্মীয় সংগীত পরিবেশন করায় ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে। তবে একটি সংগঠনের ব্যানারে সংগীতটি পরিবেশন করলেও তাদের চিহ্নিত করা যায়নি। আমরা আরও খোঁজ নিচ্ছি।
কোতোয়ালি থানার ওসি ফজলুল কাদের জানান, ঘটনার পরপরই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা হয়েছে।
চট্টগ্রাম মহানগর জামায়াতের নায়েবে আমির ও ছাত্রশিবিরের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি আ জ ম ওবায়দুল্লাহ বলেন, পূজা পরিষদের নেতারা একটি সাংস্কৃতিক সংগঠনকে আমন্ত্রণ দিয়ে নিয়ে গেছে। সংগঠনটি জামায়াত বা শিবিরের কারও নয়। এগুলো তো সম্প্রীতির সংগীত। যদিও এ ধরনের সংগীত পূজামণ্ডপে পরিবেশন না করলেও পারত সংগঠনটি।