ঋতু পরিক্রমায় বর্ষার বাদল ধারা আর কদম- কেয়ার সৌন্দর্য্যকে বিদায় জানিয়ে শুরু হয়েছে সৌন্দর্য মন্ডিত শরৎ কাল। সুশোভিত শিউলি, শাপলা, শালুক, পদ্ম, কাশফুল আর শুভ্র সাদা মেঘের ভেলা,শরতের বিমোহিত প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের রূপের মহিমার অপরূপ সাজে সজ্জ্বিত হয়ে আবর্তিত হয় বাঙালির হাজার বছরের শারদীয় দুর্গোৎসব।
দিনের শুরুতে শ্রী শ্রী চন্ডিপাঠের মধ্য দিয়ে দেবী দুর্গার মর্ত্যলোকে আগমনের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। মঙ্গলবার পঞ্চমীতে সায়ংকাল তথা সন্ধ্যায় বন্দনা পূজা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
বোধন শব্দের অর্থ জাগরণ বা চৈতন্যপ্রাপ্ত। শরৎকালের দুর্গাপূজায় এই বোধন করার বিধান রয়েছে। বিভিন্ন পুরাণ অনুসারে ভগবান রামচন্দ্র শরৎকালে রাক্ষসরাজ রাবণকে বধের উদ্দেশ্যে দুর্গাপূজা করেন। তিনি অকালে এই বোধন করেন বলেই এটি অকালবোধন নামে খ্যাত। তবে বসন্তকালে চৈত্র মাসে যে দুর্গাপূজা বা বাসন্তীপূজা অনুষ্ঠিত হয়, তাতে বোধনের প্রয়োজন হয় না।
আজ বোধন শেষে আজ বুধবার মহাষষ্ঠীতে ষষ্ঠীবিহিত পূজা, আমন্ত্রণ ও অধিবাসের মধ্য দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হবে দুর্গাপূজা। তিথি অনুযায়ী আজ বুধবার সন্ধ্যায় অনুষ্ঠিত হবে দুর্গতিনাশিনী দেবী দুর্গার বোধন, আমন্ত্রণ ও অধিবাস। মন্দির ও মণ্ডপে বোধনের ঘট স্থাপন । ভক্তের ভক্তি, নিষ্ঠা আর পূজার আনুষ্ঠানিকতায় মাতৃরূপে দেবী দুর্গা অধিষ্ঠিত হবেন মণ্ডপে মণ্ডপে।
লোকনাথ পঞ্জিকা অনুযায়ী, আজ ৯ অক্টোবর মহাষষ্ঠী, ১০ অক্টোবর মহাসপ্তমী, ১১ অক্টোবর মহাষ্টমী ও ১২ অক্টোবর মহানবমী এবং ১৩ অক্টোবর বিজয়া দশমীতে প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে সমাপ্তি ঘটবে শারদীয় দুর্গোৎসবের।
এবছরে দেবী দুর্গার আগমন হবে দোলায় বা পালকিতে। ওই পালকি বা দোলায় দেবীর আগমন বা গমন হলে ফলাফল হয় মড়ক। দেবী দুর্গার ২০২৪ সালে মর্ত্যে আগমন যেহেতু দোলায় হচ্ছে, তার ফলাফল হতে পারে মড়ক। যা শুভ ইঙ্গিত নয়। এছাড়াও দেবী স্বর্গে গমন করবেন ঘোটকে বা ঘোড়ায়। শাস্ত্র মতে দেবীর গমন বা আগমন ঘোটকে হলে ফলাফল ছত্রভঙ্গ হয়। সেই নিরিখে ২০২৪ সালে দেবীর গমন ঘোড়ায় হওয়ার জেরে ফলাফল ছত্রভঙ্গ হতে পারে। শাস্ত্রমতে এই ঘোটকে গমনের ফলে সামাজিক ও রাজনৈতিক এলোমেলো অবস্থাকে ইঙ্গিত করে। এটি যুদ্ধ, বিগ্রহ, আশান্তি, বিপদেবের ইঙ্গিত দিয়ে থাকে।
এ বছর রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর সনাতন ধর্মাবলম্বীদের ঘর-বাড়ি,ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় ও দেশের বিভিন্ন এলাকায় বন্যাসহ দ্রব্যমূল্যের উর্দ্ধগতির কারণে মানুষের জীবনমানের ব্যাপক পরিবর্তন হওয়ায় সারাদেশে নানা ধরনের আবেগ- উৎকন্ঠার মধ্যদিয়ে সনাতনীদের সর্ব বৃহৎ ধর্মীয় শারদীয় দূর্গোৎসব উদযাপন হচ্ছে।
গত বছর সারা দেশে ৩২ হাজার ৪০৮টি এবং ঢাকা মহানগরে ২৪৮টি মণ্ডপে পূজা হলেও এ বছর সারা দেশে ৩১ হাজার ৪৬১ মণ্ডপে শারদীয় দুর্গাপূজা উদযাপিত হচ্ছে। এর মধ্যে ঢাকায় ২৫২টি মণ্ডপে পূজা অনুষ্ঠিত হবে।গত বছরের তুলনায় এ বছর ৯৪৭ টি পূজা কম অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
গতবছর যশোর জেলায় ৭৩৩টি মন্দির-মন্ডপে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হলেও এ বছর যশোরে ৬৫২টি পূজা মন্দির ও মন্ডপে পূজা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। অর্থাৎ যশোরে গতবছরের চেয়ে ৮১ টি পূজা কম আয়োজন করা হয়েছে এবং
এবছর যশোরে সদর উপজেলায় ১৫৭টি, শার্শায় ২৮টি, ঝিকরগাছায় ৪৮টি, মণিরামপুরে ৯২টি, কেশবপুরে ৯৩টি, চৌগাছায় ৩৬টি, বাঘারপাড়ায় ৮৩টি, অভয়নগরে ১১৫টি মন্দিরে এবার দূর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। মধ্যে সদর উপজেলার ১০টি, কেশবপুর উপজেলায় ৭টি, মণিরামপুরে ছয়টি, চৌগাছায় ১৩টি, ঝিকরগাছায় আটটি, বাঘারপাড়ায় ১৪টি, শার্শায় চারটি ও অভয়নগরে ১৯টি মন্ডপ কমেছে।
যশোরের ৬৫২ টি পূজামন্ডপে আজ থেকে শুরু হওয়া শারদীয় দুর্গা পূজার সকল প্রস্তুতি ইতোমধ্যেই সম্পন্ন হয়েছে। সার্বিক নিরাপত্তা রক্ষায় ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী। শঙ্কামুক্ত ও উৎসবমুখর পরিবেশেই উদযাপিত হবে দুর্গোৎসব। দুর্গোৎসব নির্বঘ্নে সম্পন্ন করার জন্য যশোরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিশেষ মহড়াও অনুষ্ঠিত হয়েছে।
শারদীয় দুর্গাপূজাকে শঙ্কামুক্ত ও উৎসবমুখর পরিবেশে উদযাপনে আইন-প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো এরই মধ্যে মাঠে নেমে পড়েছে। আয়োজক কমিটির সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রক্ষা করছেন আইন -প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যরা।
গতকাল সংবাদ সম্মেলনে পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক তপন কুমার ঘোষ জানান, জেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনের সাথে যৌথভাবে পূজা উদযাপন পরিষদ ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে। লালদীঘির পাড় হরিসভা মন্দিরে একটি কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। সেখান থেকে প্রতিটি মন্দির ও মন্ডপের কার্যক্রম সার্বক্ষণিক মনিটরিং করা হবে।
এ ছাড়া বরাবরের মতো পৌরসভার ব্যবস্থাপনায় লালদীঘিতে প্রতিমা নিরঞ্জনের ব্যবস্থা থাকছে। জেলায় এবার ৬৫২ মন্ডপে পূজা অনুষ্ঠিত হবে।
গতবছর এ সংখ্য ছিল ৭৩৩। আর্থিক সংকট, সম্প্রতি রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর জনমানসে সৃষ্ট অস্থিরতা এবং অভয়নগর-মনিরামপুর-কেশবপুরে ভবদহের কারণে স্থায়ী জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হওয়ায় এবার পূজা কম হচ্ছে বলে জানানো হয়।