তানোরে দু’শিক্ষকের বিরুদ্ধে ৭৫ লাখ টাকা লোপাটের অভিযোগ

0

রাজশাহীর তানোর পাইলট মডেল হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক মাইনুল ইসলাম সেলিম ও সহকারী প্রধান শিক্ষক রেজাউল ইসলাম রেজার বিরুদ্ধে প্রায় পৌনে এককোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে।

আওয়ামী লীগের প্রভাববিস্তার এবং সাবেক এমপি ও উপজেলা চেয়ারম্যানের নাম ভাঙিয়ে তারা এসব টাকা লোপাট করেছেন বলে গুঞ্জন রয়েছে।

এদিকে গত ১৪ সেপ্টেম্বর স্কুলের এক সহকারী শিক্ষক বাদি হয়ে প্রধান ও সহকারী প্রধান শিক্ষককে বিবাদী করে রাজশাহী জেলা প্রশাসক (ডিসি), চেয়ারম্যান রাজশাহী শিক্ষাবোর্ড, দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদুক) রাজশাহী ও তানোর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সহ বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ করেছেন।

লিখিত অভিযোগে বলা হয়েছে, বিগত ২০১৯ সাল থেকে স্কুল মার্কেটের দোকান ঘরের ভাড়া বিদ্যালয়ের ব্যাংক হিসাব নম্বরে (নং-৪৬২৩০০১০০০৪১২) জমা দেওয়ার নিয়ম। কিন্তু জমা না দিয়ে তারা আত্মসাৎ করেছেন প্রায় ১১ লাখ টাকা। এছাড়াও প্রশংসাপত্র প্রতি ৫শ’ টাকা করে গ্রহন করা হলেও তাঁর কোন হিসাব নেই। টাকার পরিমান প্রায় ৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা। ওদিকে বিগত ২০১৯ সাল থেকে জেএসসি এবং এসএসসি পরীক্ষার্থীদের রেজিস্ট্রেশন ফরম পূরণে অতিরিক্ত অর্থ আদায় করেন যার পরিমাণ প্রায় ৪ লাখ ৮০ হাজার টাকা। প্রধান ও সহকারী প্রধান শিক্ষক যোগসাজশে এসব টাকা আত্মসাত করেছেন।

এছাড়াও বিগত ২০১৯, ২০২০, ২০২১, ২০২২ ও ২০২৩ শিক্ষাবর্ষে দুইটি করে পরীক্ষায় শিক্ষার্থীদের নিকট হইতে ৩০০ টাকা হারে সেশন চার্জ ও পরীক্ষার ফি ৩০০ টাকা হারে মোট ৬০০ টাকা করে আদায় করা হয়। যার পরিমাণ ৩ লাখ টাকা। প্রধান ও সহকারী প্রধান শিক্ষক এসব টাকা আত্মসাৎ করেছেন।এছাড়াও সরকারী অনুদানের প্রায় ৬ লাখ টাকা তারা আত্মসাৎ করেছেন।

অন্যদিকে পরীক্ষা কেন্দ্র হইতে প্রতি পরীক্ষা যেমন জেএসসি-এসএসসি হইতে বিদ্যালয়ের আয়ের সমুদয় অর্থ প্রধান ও সহকারী প্রধান শিক্ষক আত্মসাত করেন। যাহার পরিমান ৬ লাখ টাকা। বিদ্যালয়ের ভেন্যু ব্যবহারকারীদের নিকট হইতে প্রাপ্ত অর্থ প্রধান শিক্ষক আত্মসাৎ করেন যার পরিমাণ প্রায় ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা। এছাড়াও উপজেলা ও জেলা পরিষদ থেকে ১০ লাখ টাকা প্রাপ্ত বরাদ্দের কোন হদিস নাই। এবং

এফডিআর এর অবস্থা জানা যায় নাই। একই সংগে মালোপাড়া শাখা, রাজশাহী অগ্রণী ব্যাংক হইতে উত্তোলিত টিউশন ফি-এর অর্ধেক টাকা প্রধান শিক্ষক হাতে রেখে বন্টন করেন এবং সেই অর্ধেক টাকা নিজেই আত্মসাৎ করে। স্কুল মার্কেটের দোকান ঘরের জামানত এর টাকা গ্রহন পূর্বক প্রধান শিক্ষক একাই আত্মসাত করেন। যার পরিমান ১৫ লাখ টাকা। তাছাড়া সাবেক এমপি এবং উপজেলা চেয়ারম্যানের আত্মীয় পরিচয়ে ২০১৯ সালের ১৩ মে অত্র বিদ্যালয়ে দায়িত্ব গ্রহণ করে আওয়ামী রাজত্ব কায়েম করেন।

এদিকে পাশ করা ছাত্র/ছাত্রীদের প্রশংসাপত্র, সার্টিফিকেট ও মার্কসীট প্রদানে ৩০০-২০০ টাকা হারে আদায় ও আত্মসাত করেন প্রধান শিক্ষক।যার পরিমাণ ৪ লাখ টাকা।

অন্যদিকে তিনি নিজে প্রধান শিক্ষক হবেন এই মর্মে সাবেক এমপির নিকট প্রতিশ্রুতি প্রদান পূর্বক সরকারী করনের জন্য কোনরূপ ব্যবস্থা না করা হয় এই মর্মে অঙ্গীকার করে অত্র বিদ্যালয় প্রধান শিক্ষক হিসাবে নিয়োগ পান।এছাড়াও জোরপূর্বক স্কুল সরকারী হবে মর্মে তৎকালীন সহকারী প্রধান শিক্ষক মাইনুল ইসলাম সেলিম সকল শিক্ষকের নিকট হইতে মোট ৩ লাখ ৭৫ হাজার টাকাগ্রহণ করেন। কিন্তু পরবর্তীতে তানোর পাইলট মডেল উচ্চ বিদ্যালয় সরকারী হয়নি। কিন্ত্ত সাবেক এমপি ওমর ফারুক চৌধুরী ইফতার মাহফিলে সেই টাকা খরচ করা হয়।

অন্যদিকে সাবেক প্রধান শিক্ষক এর নিকট হইতে ১ লাখ ৮০ হাজার টাকা গ্রহণ করে আত্মসাৎ করেন প্রধান শিক্ষক মাইনুল ইসলাম সেলিম।

প্রসঙ্গত, ইতিপূর্বে প্রধান শিক্ষক ও সহকারী প্রধান শিক্ষক এর রিরুদ্ধে জেলা প্রশাসক, রাজশাহী, জেলা দুর্নীতি দমন কমিশন , জেলা শিক্ষা অফিসার, উপ-পরিচালক রাজশাহী অঞ্চল, চেয়ারম্যান শিক্ষা বোর্ড রাজশাহী, বিদ্যালয় পরিদর্শক, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক,উপজেলা নিবাহী কর্মকতা ইউএনও এবং উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার বরাবরে অভিযোগ দাখিল করা হয়েছে। কিন্ত্ত সাবেক এমপি ও উপজেলা চেয়ারম্যানের অদৃশ্য হস্তক্ষেপের কারণে তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা করা যায়নি বলে জানান অভিযোগকারী।

এবিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মিনহাজুল ইসলাম বলেন, অভিযোগ হয়ে থাকলে তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

এবিষয়ে জানতে চাইলে প্রধান শিক্ষক মাইনুল ইসলাম সেলিম সব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, তার বিরুদ্ধে একটি কুচক্রী মহল অপপ্রচার করছে।

এবিষয়ে সহকারী প্রধান শিক্ষক রেজাউল ইসলাম বলেন, এসব আগের অভিযোগ, তিনি বলেন, আর্থিক বিষয়টি প্রধান শিক্ষক ও সভাপতি দেখেন। এখানে তার সম্পৃক্ত থাকার সুযোগ নাই,তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ সম্পুর্ণ বানোয়াট ও ভিত্তিহীন।

এ সম্পর্কিত আরও খবর