বর্তমান সরকার সারাদেশে যেখানে অনিয়ম, ঘুষ,দুর্নীতি বন্ধে শুদ্ধি অভিযান পরিচালনা করছে, সোচ্চার রয়েছে নতুন করে স্বাধীন বাংলাদেশের বৈষম্য বিরোধী শিক্ষার্থীরা, সেখানে মানিকগঞ্জের শিবালয়ের অক্সফোর্ড স্কুল এন্ড কলেজের প্রধান শিক্ষক এম,এ মতিন খানের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ দিয়ে বিপাকে পড়েছে শিক্ষার্থীরা।
অভিযোগ উঠিয়ে নেয়ার জন্য বিভিন্নভাবে চাপ প্রয়োগ করা হচ্ছে কমলমতি শিক্ষার্থীদেরকে। এতে হয়রানির শিকার হয়ে চরম মানসিক দুশ্চিন্তা ও নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে বলে অভিযোগ করেছে শিক্ষার্থীরা। তাদের প্রতি এরকম আচরন অব্যহত থাকলে লেখা-পড়া ব্যহত হওয়াসহ ভবিষৎ জীবন নিয়ে মহা চিন্তায় পড়েছেন অভিভাবকরা।
শিক্ষার্থীদের অভিযোগে জানা গেছে, মানিকগঞ্জ জেলার শিবালয় অক্সফোর্ড স্কুল এন্ড কলেজের প্রধান শিক্ষক এম,এ,মতিন খানের বিরুদ্ধে বিদ্যালয়ের অর্থ ও সম্পত্তি আত্মসাৎসহ নানাবিধ দুুর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ এনে ও তার পদত্যাগ এবং সুবিচার চেয়ে গত ২ সেপ্টেম্বর শিবালয় উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবরে লিখিত অভিযোগ করে উক্ত বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। এ প্রেক্ষিতে ছয় সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটিও গঠণ করা হয়েছে।
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ উঠিয়ে নেওয়ার জন্য প্রধান শিক্ষকের কয়েকজন অনুগত শিক্ষক এবং বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির প্রভাবশালী সাবেক সভাপতিকে দিয়ে শিক্ষার্থী ও তাদের পিতা-মাতাকে ভয়ভীতি দেখিয়ে নানাবিধ চাপ প্রয়োগ করা হচ্ছে। এতে তারা মানসিকভাবে চরম হয়রানি ও নির্যাতনের শিকার হয়ে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন।
এছাড়া প্রধান শিক্ষকের ধামাধরা ওই সকল শিক্ষকগণ ভয়ভীতি দেখিয়ে জোরপূর্বক শিক্ষার্থীদের নিকট থেকে সাদা কাগজে স্বাক্ষর নেওয়ারও পায়তারা করছে। এ পরিস্থিতিতে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা মানসিকভাবে নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। উক্ত শিক্ষকগণ এরকম আচরণ অব্যাহত রাখলে লেখা-পড়া ব্যহত হওয়াসহ পারিবারিক অশান্তি ও মানসিকভাবে হেয় প্রতিপন্ন হওয়ার আশংকা করছেন তারা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শিবালয় উপজেলার অক্সফোর্ড স্কুল এন্ড কলেজের প্রধান শিক্ষক মতিনের বিরুদ্ধে অভিযোগের যেন শেষ নেই। অর্থ-আত্মসাৎ, জালিয়াতির মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানের জমি নিজের নামে লিখে নেওয়া, শিক্ষকদেরকে স্কুল ফান্ড থেকে বেতন না দেওয়া, উন্নয়ন ফান্ডের নামে শিক্ষকদের কাছ থেকে অর্থ আদায়, শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতি, বিবিধ নামে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ফি আদায় করে কোষাগারে জমা না দেওয়াসহ অসংখ্য অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। এসব অভিযোগে তার বিরুদ্ধে একাধিক মামলাও হয়েছে। সিআর মামলা নং- সিআর ২০/২০২৬ ও রিট পিটিশন নং- ১১৮৭/২০১৭। এসব অপকর্মের জন্য ম্যানেজিং কমিটি কর্তৃক গত ১০ মার্চ ২০১৪ সালে বহিষ্কারও হয়েছিলেন তিনি। তার এসব অপকর্মে বিরুদ্ধে হাবিবুর রহমান নামের এক ব্যক্তি দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদুকেও) লিখিত অভিযোগ করেছেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ভুক্তভোগী শিক্ষকরা জানান বিগত ২২ মাস ধরে তারা স্কুল থেকে কোন বেতন-বোনাস পাচ্ছেন না। অথচ ৫শ’ টাকা করে শিক্ষার্থীদের নিকট থেকে নেয়া বিবিধ খাতের ৮ লক্ষাধিক টাকা স্কুল ফান্ডে জমা দেওয়া হয়নি বলে জানা গেছে। ২০২০ সালে সরকারি বিধি অমান্য করে উন্নয়ন ফান্ডের নামে ৩শ’ টাকা করে প্রায় ৫ লাখ টাকা আদায় করেন। করোনাকালিন সময়ে মাত্র ২/৩মাস বাদে বাকী সকল মাসের বেতন শিক্ষার্থীদের নিকট থেকে নেওয়া হলেও শিক্ষকদের কোন বেতন-বোনাস দেওয়া হয়নি।
উক্ত প্রধান শিক্ষক নিজ স্বার্থ সিদ্ধির জন্য বিগত ৬ মার্চ ২০১৯ সালে স্কুলের অভিভাবক নন এমন এক ব্যাক্তিকে নিয়ে অবৈধভাবে এডহক কমিটি বানিয়ে ওই সময়ে বিপুল পরিমান টাকা আত্মসাৎ করেছে বলে অভিযোগ রয়েছে। যা পৃথক দু’টি তদন্ত কমিটি’র প্রাথমিক তদন্তে প্রমাণিত হয়েছে।
স্কুলের সম্পত্তি নিয়ে জনৈক শংকর গংদের সাথে দীর্ঘ ২০০৩ থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত বিদ্যালয়ের লক্ষ লক্ষ টাকা খরচ করে মামলা পরিচালনা করে সেই সম্পত্তির বৃহৎ একটি অংশ তার নিজ ও আত্মীয়-স্বজনের নামে লিখে নিয়েছেন।
বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে সহকারী শিক্ষক (হিন্দু ধর্ম) হিসেবে রয়েছেন রেখা রাণী দত্ত। নিয়ম-কানুনের তোয়াক্কা না করে অবৈধভাবে তাকে বাদ দিয়ে বেতন-ভাতা বন্ধ করে দেন প্রধান শিক্ষক আব্দুল মতিন। তৎকালিন উপজেলা নির্বাহী অফিসার তার বেতন-ভাতাসহ যাবতীয় পাওয়ানা দিতে বললেও তিনি তা না দিয়ে নানা রকম তালবাহানা করছেন। ফলে চরম মানবেতর জীবন যাপন করছেন ওই শিক্ষক।
এব্যাপারে প্রধান শিক্ষক এম,এ মতিন তার বিরুদ্ধে আনিত সকল অভিযোগ অস্বীকার বলেন, বিবিধ খাতে যে ৫শ’ টাকা করে নেয়া হয়েছে তা স্কুলের ফান্ডে অবশ্যই জমা হয়েছে। স্কুলে যে সকল ব্যায় হয় তাতে স্কুল এখনও ৫ কোটি টাকা দেনা আছে বলে উল্লেখ করেছেন। শিক্ষকদেরকে স্কুল থেকে বেতন দেওয়া হয় না, দেওয়া হয় উৎসব ভাতা। দেনা থাকায় ভাতা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।
এব্যাপারে শিবালয় উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. বেলাল হোসেন বলেন, প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে একটি অভিযোগ পেয়েছি। সে বিষয়ে ৬ সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠণ করা হয়েছে। তদন্ত কাজ চলমান রয়েছে।