৫২ বছরে আমরা

রাজধানী টাইমসের সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশ, চেতনার বাংলাদেশ, ত্রিশ লক্ষ শহিদের রক্ত , ২লক্ষ মা-বোনের সম্ভ্রম আর অসংখ্য মানুষের সীমাহীন দুঃখ-কষ্ট, সহযোগিতায় অর্জিত বাংলাদেশ। হাঁটি হাঁটি পা পা করে বিজয়ের ৫২ বছরে পা দিয়েছি। আন্দোলন-সংগ্রাম, ত্যাগ-আত্মত্যাগের দীর্ঘ ধারাবাহিকতায় ধর্মনিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক সমাজ ও রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার সংকল্পকে ধারণ করে সশস্ত্র যুদ্ধ জয়ের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠা। গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষ দর্শনের ভিত্তিতে একাত্তরের বিজয়ে আশাবাদী হয়ে উঠেছিল দেশবাসী। কিন্তু দেশবাসীর দুর্ভাগ্য, দু’বারের স্বাধীনতায় সমষ্টিগত মানুষের স্বাধীনতা নিশ্চিত হয়নি। ক্ষমতার হাত বদল ছাড়া কার্যত কোনো পরিবর্তনই সূচিত হয়নি। চারিদিকে দুর্নীতি, লুটপাট, আমলাতান্ত্রিক জটিলতা আর সেই সাথে চলছে দেশপ্রেম আর দেশাত্ববোধের আকাল।

এই ৫২ বছরের অর্জন অপ্রাপ্তির হিসেব করা দরকার আগামীর পরিকল্পনা গ্রহণ এবং বাস্তবায়নের জন্য। ৫২ বছরে আমরা নিজস্ব স্যাটেলাইটের মালিক হয়েছি, মেট্রোরেলের মালিক হয়েছি, টানেলের মালিক হয়েছি, রিভার ড্রাইভ এর মালিক হয়েছি, পদ্মা সেতুর মালিক হয়েছি, আধুনিক বিমান বন্দর পেয়েছি, জিডিপি বৃদ্ধি পেয়েছে, অনেক আন্তর্জাতিক পুরষ্কার পেয়েছি , সমুদ্রসীমা বৃদ্ধি পেয়েছে ইত্যাদি। অনেক অর্জন যেমন হয়েছে ঠিক তেমনি ব্যর্থতার গল্পটাও অনেক ভারী। যা প্রতি দিনের ঘটনা আমাদেরকে চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা থেকে ৫২ বছরে আমরা অনেক দূর সরে এসেছি। বৈষম্যহীন সমাজ ব্যবস্থা মুক্তিযুদ্ধের মূল চেতনা থাকলেও আমরা এখন চরম বৈষম্যমূলক সমাজ ব্যবস্থায় বসবাস করছি। গরীব মানুষ দিন দিন গরীব মানুষ আরো গরীব হচ্ছে, নিঃস্ব হচ্ছে। আর ধনীরা দিন দিন আরো আরো ধনী হচ্ছে। তারা দেশে তাদের টাকার পাহাড়ের চাপ কমাতে দেশের অর্থনীতি ও উন্নয়নকে পঙ্গু করে দিয়ে বিদেশে টাকা পাচার করছে। বিলাসী –আয়েশী জীবন-যাপন করছে।

আর অন্যদিকে দেশের মোট জনসংখ্যার চারভাগের এক ভাগ মানুষ একবেলা উপশ করে কাটায় খাবার জোগার করতে না পেরে। পরিস্থিতি অনেকটাই এমন যে উন্নয়নের অভাব হয় না কিন্তু অভাবের উন্নয়ন হয় না। প্রতি মাসে চাল ব্যবসায়ীরা জনগণের পকেট কেটে নিচ্ছে দুইশত চব্বিশ কোটি টাকা। এই ক্ষেত্রে পিছিয়ে নেই ডাল, তেল, আলু-পেয়াজ, আদা-রসুন, শিক্ষা উপকরণ ব্যবসায়ীসহ অন্যান্য ব্যবসায়ীরা। বাজারে এমন কোন পণ্য নেই যার মূল্য কয়েক গুণ বৃদ্ধি পায় নি। সবাই নেমেছে অসুস্থ প্রতিযোগিতায়। জনগণের পকেট কেটে দেশের অর্থনীতিকে সংকটের মুখে ফেলে দিতে পারলেই যেন তারা সফল। অর্থনীতিতে অপসংস্কৃতির চর্চা চলছে দীর্ঘদিন ধরে। এমন কোন পণ্য নেই যে পণ্যের দাম মাত্রারিক্তভাবে কয়েকগুণ বৃদ্ধি পায় নি। যেনো আমরা তাদের প্রতিরোধে নিরুপায়। ক্ষুধার তাড়নায় এ্বং মহাজন ও এনজিও’র কিস্তি পরিশোধ করতে না পেরে অনেকে আত্মহত্যার পথ বেঁছে নিয়েছে, আবার অনেকে সন্তানকে বিক্রি করে দিচ্ছেন।

বিজ্ঞাপন

ঘুষখোর, দুর্নীতিবাজ, ঋণখেলাপী, বিদেশে টাকা পাচারকারী, কালোটাকার মালিকরা দেশের অর্থনীতি এবং উন্নয়নকে গভীর সংকটের মুখে ফেলে দিয়েছে। দেশ থেকে অস্বাভাবিক হারে টাকা পাচার বেড়েছে। গত ১৬ বছরে দেশ থেকে পাচার হয়ে গেছে অন্তত ১১ লাখ কোটি টাকা। একই সময়ে দেশে কালোটাকার অঙ্ক দাঁড়িয়েছে প্রায় ৮৯ লাখ কোটি টাকা ওপরে। বর্তমানে বাংলাদেশ থেকে বছরে গড়ে প্রায় ৭০ হাজার কোটি টাকা পাচার হয়ে যায়। সে হিসাবে ২০১৬ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত ছয় বছরে পাচার হয়েছে চার লাখ ২০ হাজার কোটি টাকা। ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) বলছে, বাংলাদেশ থেকে টাকা পাচারে যে তথ্য আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো প্রকাশ করছে, সেটাও আংশিক। বাস্তবে পরিমাণ আরো অনেক বেশি। অনেক বিদেশি বাংলাদেশে কাজ করেন।

তাঁরা আয়ের বড় একটা অংশ অবৈধভাবে বিদেশে পাঠান। এটাও অর্থপাচার। এই তথ্য কিন্তু বৈশ্বিক সংস্থাগুলো উল্লেখ করে না। তারা শুধু বাণিজ্যের আড়ালে অর্থপাচারের তথ্য দেয়। সামাজিক নিরাপত্তা আজ হুমকীর মুখে।অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসহ সব ধরনের বৈষম্য বেড়েছে। এসব পালটাতে হবে, ঝুঁকি হ্রাস করতে হবে। দেশ থেকে অর্থপাচার যেন থামছেই না। সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে অঙ্ক শুধু বেড়েই চলছে। গত বছর যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান গ্লোবাল ফিন্যানশিয়াল ইন্টিগ্রিটি (জিএফআই) এক প্রতিবেদনে বলেছিল, বিদেশে টাকা পাচারে দক্ষিণ এশিয়ায় দ্বিতীয় অবস্থানে বাংলাদেশ। প্রবাসী রেমিট্যান্স যোদ্ধারা দেশের অর্থনীতি ও উন্নয়নকে সচল রাখতে গুরুত্বপূর্ণ রাখলে প্রবাসে দেশের দূতাবাসের কর্মকর্তারা তাদের জীবনমান এবং চাকরির নিশ্চয়তার ক্ষেত্রে অনেকটাই উদাসীন আমরা তা প্রত্যক্ষ করি মিডিয়ায় প্রকাশিত সংবাদের মাধ্যমে। অর্থ পাচার দেশের অর্থনীতির জন্য অশনি সংকেত। অর্থ পাচার শুধু দেশের অর্থনীতিরই ক্ষতি করে না বরং দেশের উন্নয়ন প্রচেষ্টাকে ব্যাপকভাবে ব্যাহত করে। টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) myôzভাবে বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে বিদেশে অর্থ পাচার যে অন্যতম প্রতিবন্ধক তা নিয়ে অর্থনীতিবিদদের মধ্যে তেমন সন্দেহের অবকাশ নেই। সমীক্ষা অনুযায়ী, বাংলাদেশে ২৭ বছরে কালোটাকার গড় হার মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ৩৩ দশমিক ১ শতাংশ।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্য অনুযায়ী, ২০২১-২২ অর্থবছরের জিডিপির পরিমাণ ছিল স্থির মূল্যে ৩০ লাখ ৩৯ হাজার ২৭৩ কোটি টাকা। গড় কালোটাকা ৩৩ দশমিক ১ শতাংশ হলে, টাকার অঙ্কে তা ১০ লাখ ৫ হাজার ৯৯৯ কোটি ৩৬ লাখ টাকা। সুতরাং দেখা যাচ্ছে দেশের কালো টাকার পরিমাণ দেড় বছরের বেশি বাজেটের সমান। বিজয়ের ৫২ বছরে রাষ্ট্রের অনেক সম্পদ এবং সম্পত্তি ব্যক্তিগত দখলে চলে গেলেও কোন সরকারের আমলেই তা উদ্ধারের যথাযথ উদ্বেগ গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করতে দেখা যায় নি। ২০২১ সালে বাংলাদেশে ১০ হাজার ৮৩০ কোটি ১০ লাখ টাকার ঘুষ লেদেন হয়েছে। জমি ও পারিবারিক মামলায় গড়ে ৩৩ হাজার টাকা ঘুষ লেনদেন ।

বিজ্ঞাপন

সেবা ও অন্যান্য খাত মিলিয়ে বছরে এই ঘুষ লেনদেনের প্ররিমাণ প্রায় ৫০ হাজার কোটি টাকা। নদী খেকো, বন খেকো, পাহাড় ,খেকো, সমুদ্র খেকো, বালু খেকো, মাটি খেকোরা ইচ্ছেমত পরিবেশকে ধ্বংসের খেলায় মেতে উঠেছে তাদের নিজ নিজ স্বার্থে। তারা যেন দিন দিন অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠেছে। তাদের কাছে আমরা, সমাজ, রাষ্ট্র যেন অসহায়।

পাট উৎপাদন এবং পাটজাত পণ্য রপ্তানিতে এক সময় আমরা সারা বিশ্বে একক অবস্থানে থাকলেও এখন আমরা দ্বিতীয় অবস্থানে নেমে এসেছি। অন্যদিকে বিশ্বে পাট ও পাটজাত দ্রব্যের চাহিদা বৃদ্ধি পেয়েছে বহুগুণ। বাংলাদেশ জুট মিলস করপোরেশন (বিজেএমসি) নিয়ন্ত্রণাধীন ২৫টি পাটকলের মধ্যে ২৪টি বন্ধ রয়েছে বলে জানিয়েছেন বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী। বাকি একটি ভাড়ায় চলছে। তবে অব্যাহত লোকসানের কারণে ২০২০ সালের জুলাই মাসে সবগুলো পাটকল বন্ধ ঘোষণা করে সরকার। পাটকে আমাদের দেশে এক সময় বলা হতো সোনালি আঁশ। পাটকে আমাদের দেশে এক সময় বলা হতো সোনালি আঁশ। কৃষকের উৎপাদিত কৃষিপণ্যের মধ্যে তা ছিল এক মূল্যবান অর্থকরী ফসল। বিক্রি হতো চড়া দামে। দেশের প্রধান কয়েকটি রপ্তানি পণ্যের মধ্যে ছিল অন্যতম।

রপ্তানি হতো নানা দেশে। দেশে একটি বড় অঙ্কের বৈদেশিক মুদ্রা আসত এর দ্বারা। তাই এর কদর ছিল সোনার মতো দামি। পাট নিয়ে এমন বহুমাত্রিক গবেষণার প্রয়োজন। বিশেষ করে এর উৎপাদন, নতুন নতুন পাটজাত দ্রব্য উৎপাদন এবং এর বাজারের সহজীকরণ বিষয়ে গবেষণার প্রয়োজন। আর বেসরকারি খোতে পাটকলের সংখ্যা ২৮১। এর মধ্যে নানা জটিলতায় বন্ধ রয়েছে ৫৬টি। এই পাটকে কেন্দ্র করে নারায়ণগঞ্জে গড়ে উঠেছিল এশিয়ার বৃহত্তম পাটকল আদমজী জুট মিল এবং এর বিস্তার ঘটেছিল দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে। হয়েছিল হাজার হাজার মানুষের কর্মসংস্থান। স্বাধীনতা-উত্তরকালে এই শিল্পে নেমেছে ধস। ব্যক্তিমালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানগুলো অতিরিক্ত মুনাফার মধ্য দিয়ে দিন দিন সম্প্রসারিত হলেও আমাদের প্রায় সবগুলো রাষ্টয়াত্ব প্রতিণ্ঠান লোকসানের শিকার।

কমনওয়েলথের সুপারিশ অনুযায়ী দেশের জাতীয় বাজেটের ২৫ ভাগ শিক্ষা খাতে বরাদ্দের কথা থাকলেও কোনো সরকারই তা আমলে নেয় না। মুক্তিযুদ্ধের মূল চেতনার সাথে সম্পর্কযুক্ত একটা শিক্ষানীতি এবং শিক্ষা কারিকুলাম এখনো আমরা পাইনি। শিক্ষা ক্ষেত্রে একধরনের অরাজকতা, হ-য-ব-র-ল অবস্থা দৃশ্যমান। এখানে মেধাবীদের তেমন একটা মূল্যায়ন করা হয়নি যেমনি ঠিক, তেমনি মেধাবীরাও দেশপ্রেমে উবুদ্ধ হয়ে দেশের জন্য কিছু করার ভাবনা থেকেও দূরে সরে গেছেন শুধুমাত্র নিজের কথা ভেবে। আবার এর বিপরীত চিত্রও আছে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় স্যাকুলার, বিজ্ঞানভিত্তিক, উন্নত চিন্তার মাতৃভাষা ভিত্তিক একই ধারার শিক্ষার কথা থাকলেও বাস্তবে চলছে বহু ধারার শিক্ষা। ফলে মানুষের মধ্যে জাতীয় কোন বিষয়ে ঐক্যের পরিবর্তে বিভক্তি তৈরি হচ্ছে। শিক্ষা উপকরণের মূল্য আজ সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে।

সাধারণ মানুষ আজ তাদের সন্তানদের খেলাপড়ার খরচ যোগাতে হিমশিম খাচ্ছে। কিছু মানুষের হীন স্বার্থের কারণে বিভিন্ন সময়ে শিক্ষকরা অপমানিত হয়েছেন। ছাত্র –শিক্ষকের সর্ম্পক অনেক অবনতি হয়েছে। অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নেই খেলার মাঠ, নেই খেলাধুলার সরঞ্জাম, খেলাধুলার পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা। প্রায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কোকারিকুলাম শিক্ষা উপেক্ষিত। শিক্ষার্থীদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশ বাধাগ্রস্থ হচ্ছে চরমভাবে। শিক্ষার এ অরাজকতা, হ-য-ব-র-ল অবস্থার নেতিবাচক প্রভাব সমাজের সকল ক্ষেত্রে নেতিবাচক প্রভাব বিস্তার করছে।

প্রকৃত মানুষ গড়ার শিক্ষা ব্যবস্থা আজ ধুলোয় লুন্ঠিত। প্রশ্নপত্র ফাঁস, পাঠ্যপুস্তকে একদলকে খুশি রাখার আয়োজন ইত্যাদি। বর্তমান শিক্ষা ব্যবস্থায় ছাত্রসমাজকে আত্মকেন্দ্রিক, স্বার্থপর ও যান্ত্রিক করে তুলেছে। জীবনের ধারণা তাদের কাছে আত্মকেন্দ্রিক হয়ে ধরা দিয়েছে। শিক্ষার সার্বিক প্রসার এবং মানবিক গুণ বিকাশের গুরুদায়িত্ব শিক্ষকদের ওপর ন্যস্ত। শিক্ষার উন্নয়ন ও দেশের উন্নতি একে-অপরের ওপর নির্ভরশীল। ছাত্র শিক্ষকের সম্পর্কের অনেক অবনতি ঘটেছে। ছাত্ররা এখন আর শিক্ষকদের আগের মতো শ্রদ্ধা করে না। এক ধরনের সামাজিক অবক্ষয় লক্ষ করা যাচ্ছে। অভিভাবক সন্তানদের এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ছাত্রদের ভালো ফলাফলের জন্য যতটা চিন্তাশীল ঠিক ততোটাই উদাসীন অভিভাবক তার সন্তানকে ভালো মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে। শ্রদ্ধাবোধ, স্নেহ-ভালোবাসা ফিকে হয়ে গেছে। শিক্ষা আজ বাণিজ্যিকিকরণে রূপ নিয়েছে। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের চেয়ে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা বেশি, প্রাইভেট স্কুল- কলেজের সংখ্যা বেশি। শিক্ষকদের সামাজিক মর্যাদা প্রতিষ্ঠা এবং স্বতন্ত্র বেতন স্কেল এখন সময়ের দাবী। সময়ের দাবীকে উপেক্ষা করা মানে হলো সময়ের চাহিদার সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করা। আর এই বিশ্বাসঘাতকতার কুফল দীর্ঘ মেয়াদী হয়। আর তাই শিক্ষকদের সামাজিক মর্যাদা প্রতিষ্ঠা এবং স্বতন্ত্র বেতন স্কেল প্রতিষ্ঠা করতে সরকারের স্বদিচ্ছাই যথেষ্ট।

আমাদের অর্থনীতির মূল চালিকা শক্তি কৃষক- শ্রমিক হলে আজ পর্যন্ত কৃষক-শ্রমিক বান্ধব কৃষিনীতি , শ্রমনীতি তৈরি হয় নি। আর যে টুকু হয়েছে সেটা কাগজে কলমেই থেকে গেছে। কৃষক-শ্রমিকের কল্যাণে প্রেয়োগ হয়নি। অথছ আমাদের মুক্তিযুদ্ধ এবং স্বাধীনতা পরবর্তী সকল গণতান্ত্রিক আন্দোলনে এই কৃষক-শ্রমিকের ভূমিকাই বেশি ছিল। শ্রমিকরা তাদের ন্যায্য পাওনা থেকে বঞ্চিত, মালিকদের শোষণ,নিপীড়ন, নির্যাতন শ্রমিকদের নিত্য সংঙ্গী। কৃষকরা তাদের ফসলের ন্যায্যমূল থেকে বঞ্চিত। কৃষিঋণ এবং কৃষি ভর্তুকি সহজলভ্য নয়। কৃষি বাজারের সিন্ডিকেটের কারণে অনেক কৃষক তাদের কৃষিজমি, ভিটেমাটি হারিয়ে ছিন্নমূল হয়েছেন, হয়েছেন বস্তিবাসী, তাদের অনেকের সন্তানরা আজ অনেকে পথ শিশু। আবার অনেক কৃষক জমিতে সার ও সেচের ব্যবস্থা করতে না পেরে আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছেন। কৃষকরা তাদের উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্যমূল্য না পেলেও আমাদেরকে অত্যাধিক অধিক দামেই চাল, ডাল, আলু, পেয়াজ, সবজি ইত্যাদি কিনে খেতে হয়।

আজ সমাজে চরম বিশৃঙ্খলা বিরাজ করছে। খুন, ধর্ষণ, নির্যাতন, অপহরণ, হত্যা- আত্মহত্যা বেড়েছে চন্তার অধিক। পায়ুপথে বাতাস ঢুকিয়ে শ্রমিক হত্যা, ঘুমন্ত অবস্থায় স্ত্রীকে গলা কেটে হত্যা, ঘুম থেকে তুলে নিয়ে নিজের সন্তানকে হত্যা করেছে বাবা ইত্যাদি। শিশু ও নারী ধর্ষণ, শিশু ও নারী নির্যাতন, ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট, ব্যাংক লুটপাট, বিদেশে অর্থ পাচার, ট্যাক্স ফাঁকি, সীমাহীন দুর্নীতি ও অনিয়ম ইত্যাদি।কোথায় নিরাপদ আমরা? যেন সর্বত্র অনিরাপদের চাদরে আমরা ঢাকা পড়ে আছি। কী ঘরে, কী বাইরে। অনিরপাদ জীবনযাপনে বাধ্য হচ্ছেন দেশের সাধারণ মানুষ। দেশে প্রতিদিন গড়ে প্রায় ৩০ জন আত্মহত্যা করে জীবনের বিষাদ থেকে মুক্তি নেয় যা একটি স্বাধীন দেশে কোন ভাবেই কাম্য নয়। যে নারীরা দেশের জন্য জীবন বাজী রেখে অস্ত্র ধরলো, জীবন দিলো, সম্ভ্রম হরালো সেই নারীরা আজ ধর্ষিত হচ্ছে অহরহ। বাংলাদেশে প্রতি ১ লাখ নারীর মধ্যে প্রায় ১০ জন ধর্ষণের শিকার হন। শিশু ধর্ষণ বেড়েছে ৩১ শতাংশ। এক বছরে হাজারেরও বেশি কন্যাশিশু ধর্ষণের শিকার। তার ওপর আছে গুজব, সাম্প্রদায়িক হামলা, ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের অজুহাতে হামলা-মামলা, অগ্নিসংযোগ, নির্যাতন, লুটপাট ইত্যাদি।

২০০১ সাল থেকে ২০২২ পর্যন্ত গত ২১ বছরে সংখ্যালঘু হিন্দুদের ওপর সাম্প্রদায়িক হামলা হয়েছে পাঁচ হাজারের ওপরে। গত ৫০ বছরে দেশে হিন্দু জনসংখ্যা কমেছে ৭৫লাখ। বিচার বর্হিভুত হত্যাকান্ড বৃদ্ধি পেয়েছে। বিচারের দীর্ঘ সূত্রতা বিচারপ্রার্থীর ব্যয় বৃদ্ধি একধরণের হতাশা সৃষ্টি করে। জনজীবনে নিরাপত্তাহীনতা, বিচার না চাওয়ার সংস্কৃতি আমাদের প্রতিষ্ঠানগুলো পুরোপুরি অকার্যকর হওয়ার কথাই বলে। স্বাধীনতার ৫২ বছর পেরিয়ে আমাদের রাষ্ট্র যখন আরও শক্তিশালী হওয়ার কথা, তখন সমস্বরে সবাই বলছে , আমাদের কোনো ভরসা নেই। আমরা রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর কোনো আস্থা রাখতে পারছি না। বর্তমান বিচারব্যবস্থায় সারা দেশে বিচারপ্রার্থীদের সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। দেশের প্রতিটি আদালতে মামলার স্তূপ জমে থাকায় বিচারকরা সেসব মামলা নিষ্পত্তি করতে হিমশিম খাচ্ছেন। আইনজীবী ছাড়াও বিভিন্ন সময়ে বিচারপ্রার্থীদের আদালত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের শরণাপন্ন হতে হয় এবং বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তাদের হয়রানির মুখে পড়তে হয়। আদালত থেকে একটি রায়ের কপি তোলাসহ বিভিন্ন কাজে সাধারণ বিচারপ্রার্থীদের হয়রানির খবর সর্বজনবিদিত। তাছাড়া রায়ের কপিগুলো যথাযথ স্থানে যথাসময়ে প্রেরণ করার কাজটিও আদালত কর্মচারীরা যথারীতি করেন না বলে অভিযোগ পাওয়া যায়।

কাজের স্বচ্ছতা, জবাবদিহি এবং দায়িত্ব ও কর্তব্যের প্রতি অবহেলা অবজ্ঞা যেন অলিখিত নিয়মে পরিণত হয়েছে।সমাজব্যবস্থায় নতুন জন্ম নেয়া গ্যাং কালচার পরিবার, সমাজ এবং জাতীয় জীবনে অনৈতিক চর্চা, অনিয়মের প্রাধান্য আর রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়নেরই ফসল। এই গ্যাং কালচার বিপজ্জনক হারে মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে তা এখন আমাদের জন্য বিষফোড়া। আজকের তরুণ যুবসমাজ অন্যায়ের বিরুদ্ধে লড়াই না করে, অন্যায় করে এবং নোংরা ঘেঁটে ঘেঁটে আনন্দ খোঁজার চেষ্টায় অবরিত। প্রতিদিনই খুন হচ্ছে,ধর্ষিত হচ্ছে প্রতিনিয়ত ইভটিজিংয়ের মাত্রা বেড়ে যাচ্ছে শিশু ও নারী নির্যাতনের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে হুহু করে কিন্তু বিচারের আওতায় এবং বিচার হচ্চে না সেই অনুপাতে। শাসক দলের দীর্ঘ দিনের ক্ষমতার অনৈতিক চর্চার মধ্য দিয়ে দেশের বর্তমান এই অবস্থা। আমাদের সমাজ প্রতিনিয়তই জানান দিচ্ছে,সমাজের অবক্ষয়ের ঘটনা দিয়ে। সামাজিক সংগ্রাম না থাকলে উন্নত চরিত্র গঠিত হয় না। তারা ভুলে গেছে জীবনের সজ্ঞা। মনে রাখা দরকার, দেশটা আমাদের সবার। অনাগত ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য দেশটা সুন্দর করে সাজিয়ে রাখার দায়িত্বও আমাদের। যেখানে তারা বেড়ে উঠবে মনুষ্যত্ব মূল্যবোধ আর নৈতিকতা নিয়ে।

মানুষের আত্মপরিচয় এবং মর্যাদার বাহ্যিক রূপ হচ্ছে সংস্কৃতি, সাহিত্য, ঐতিহ্য । জীবনকে সহজ, সুন্দর রাখতে মন্দের বিরুদ্ধে মানুষের যে সংগ্রাম তাই জীবনের সংস্কৃতি, সাহিত্য, ঐতিহ্য । জীবনসংগ্রাম সমাজ চালিয়ে নেবার বাস্তব ব্যবস্থা , মানবসম্পদ, আচার-ব্যবহার, ধ্যানধাররণা, সাহিত্য, সংগীত, চারুকলা, ধর্ম, উৎসব, খাদ্য, ক্রিয়া, মানবিকতা, জ্ঞানের উৎকর্ষ। যদি আরও ব্যাপকভাবে দেখতে যাই তাহলে সংস্কৃতি হচ্ছে মানুষের জ্ঞান,আচার-আচরণ, বিশ্বাস, নীতিবোধ, রীতিবোধ,চিরাচরিত্র প্রথা, সমষ্টিগত মনোভাব ও জাতীয় অর্জন। আজকের ছাত্র-যুবকরা নোংরা-কুৎসিত সাহিত্য,মদ,ড্রাগ,জুয়ার আসরের প্রমত্তায় মত্ত। মানুষের জীবনের সংঙ্গে জীব-জন্তুর জীবনের পার্থক্য যখনই শুরু হয়েছে তখনই মানব জীবনে এসেছে সভ্যতা,সং¯কৃতি ও রুচিসম্মত জীবনের বাঁচার পথ। তাই আমরা দেখি মানব সভ্যতার যাঁরা শ্রেষ্ঠ সন্তান তাঁরা নীতি ও আর্দশের ঝান্ডা বহণ করতে গিয়ে মৃত্যুবরণ করেছেন কিন্তু যে কোন ভাবে বেঁচে থাকার জন্য অসম্মানের জীবন গ্রহণ করেননি। আপনি বাঁচলে বাপের নাম এটা এখনকার চরিত্র গঠনের মূলমন্ত্র হয়ে দাঁড়িয়েছ এবং বর্তমান সমাজপতিদের আনুকূল্যেই এটা ঘটেছে। যেন-তেন প্রকারণে নিজেরটা গোছাতে হবে,এই মনোভাব নিয়ে কখনো বড় চরিত্র গঠিত হতে পারেনা । চরিত্র দুই ধরনের হবে-হয় অন্যায় করবো,অন্যায়ের সাথে আপোষ রফাধফা করে নিজেরটা গোছাতে চাইবো অথবা অন্যায়ের বিরুদ্ধে আপোসহীন সংগ্রাম চালাবো। দ্বিতীয়টা ভুলে গিয়ে আমরা এখন প্রথমটার চর্চাই করছি। আনন্দও দুই ধরনের । অন্যায়ের বিরুদ্ধে লড়াই করে আনন্দ অথবা অন্যায় করে আনন্দ এবং নোংরা ঘেঁটে ঘেঁটে আনন্দ।

আমাদের সাহিত্য, সংস্কৃতি, ইতিহাস, ঐহিত্য তরুণ,যুবসমাজ তথা দেশবাসীর সামনে ভুলভাবে তুলে ধারার চেষ্টা করছে এক শ্রেণির সুবিধাভোগী এবং সুবিধালোভী মানুষ। তারা সমাজের সাধারণ মানুষকে একবার জলন্ত উননে ঝাপ দিতে বলছে আরেকবার টগবগে উত্তপ্ত করাইয়ে ঝাপ দিতে উৎসাহিত করছে। অপসংস্কৃতি চর্চায় মানুষকে উৎসাহিত করা হচ্ছে নানান দিক থেকে। মানুষ তার সংগ্রামকে ভুলে গিয়ে শুধু স্বার্থসিদ্ধির নেশায় নিজেকে আবদ্ধ রাখতে ব্যস্থ। তাদেরকে ভুলিয়ে রাখা প্রত্যেকে আমরা পরের তরে। মাদকের থাবায় নাস্তানাবুদ একটি প্রজন্ম। শহর থেকে গ্রামাঞ্চল-সর্বত্রই নেশা এখন হাতের নাগালে। গত এক যুগে এর বিস্তার আশঙ্কাজনকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। বছরে মাদক খাতে লেনদেন হয় ৬০ হাজার কোটি টাকা। বিশ্বব্যাংক বলছে, শুধু ঢাকায়ই এক বছরে ১৮ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছে৷ সারাদেশের শহরাঞ্চলে মারা গেছে ৮০ হাজার । এর মধ্যে বায়ূ দূষণজনিত কারণে মারা যান প্রায় ৪৬ হাজার এবং পানি, অপর্যাপ্ত স্যানিটেশন ও স্বাস্থ্য বিধিসংক্রান্ত কারণে মারা গেছে প্রায় ৩৪ হাজার মানুষ ৷

বায়ু, পানি ও পরিবেশ দূষণে বছরে ক্ষতির পরিমাণ ৪২ হাজার কোটি টাকা, যা মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ২.৭ ভাগ৷ শুধুমাত্র বায়ু দূষণে ক্ষতি হয় ২০ হাজার কোটি টাকা৷ দূষণের সবচেয়ে বেশি শিকার হয় শিশুরা ৷ পরিবেশ দূষণে ঢাকার অবস্থান প্রথম। নদী দূষণ, নদী দখল, খাল দূষণ, খাল দখল, বণ উজার, পাহাড় কেটে মাটি দখল ইত্যাদি এখন নিত্যনৈমত্তিক ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। পাল্লা দিয়ে বাড়ছে শব্দ দূষণ। শব্দ দূষণের কারণে সুস্থ স্বাভাবিক জীবন ব্যহত হচ্ছে। শব্দ দূষণের কারণে স্ট্রোক, হার্ট অ্যাটাক, মানসিক অসুখ এবং ভয়বহ শ্রবণ সমস্যার পরিমাণ অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। শুধু তাই নয় এর কারণে শ্রবণ প্রতিবন্ধীর সংখ্যাও বৃদ্ধি পাচ্ছে অস্বাভাবিক হারে। স্বাস্থ্য খাতে প্রভুত উন্নয়ন সাধিত হলেও কিছু অনিয়ম –দুর্নীতির, কর্মকর্তা কর্মচারীদের অবহলো, অযত্ন, দালালদের দৌরাত্ব এবং কিছু চিকিৎসকদের অপেশাদারিত্ব আচরণের কারণে স্বাস্থ্যখাতে বিশৃঙ্খলা দেখা যায়। দেশে এখনো ৪০ভাগের উপরে শিশু পুষ্টিহীনতার শিকার। দক্ষিণ এশিয়া স্বাস্থ্য খাতে সবচেয়ে কম ব্যয় করে বাংলাদেশ।

৫২ বছরে যে নেতিবাচক দিকগুলো তৈরি হয়েছে দেশ, জাতি ও জনগণের উন্নয়ন, উন্নতি এবং নিরাপ্তার জন্য তার আশু সমাধান প্রয়োজন। রাষ্ট্রের প্রতিটি সেক্টরে কাজের সুষ্ঠ পরিবেশ, কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে পারলেই নেতিবাচক দিকগুলোর পরিবর্তন সম্ভব বলে মনে করেন। যে কোন দেশের অর্থনৈতিক তথা সার্বিক উন্নয়নের প্রধান প্রতিবন্ধকতা হচ্ছে ঘুষ, দুর্নীতি। আমাদের দেশেও তাই। আর এই ঘুষ দুর্নীতি বন্ধ করতে পারলেই বাজার সিন্ডিকেট রোধ করা সম্ভব, ন্যায় বিচার পাওয়া সম্ভব, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব, স্বাধীনতার প্রকৃত স্বাদ গ্রহণ করা সম্ভব। খেলাপী ঋণ আদায় সম্ভব, কালো টাকা উদ্ধার করা সম্ভব, বিদেশে টাকা পাচার রোধ করা সম্ভব এবং সেই সাথে সম্ভব পাচার করার ফিরিয়ে আনা। ৫২ বছরের নেতিবাচক দিকগুলোকে আমরা যদি কঠোরভাবে প্রতিহত করতে পারি তবে আমাদের উন্নয়ন ও উন্নতি দীর্ঘস্থায়ী হতো। আমরা সমৃদ্ধ বাংলাদেশ, উন্নত বাংলাদেশ গড়ে তুলতে পারবো। আমরাই পারি আমাদের দেশকে সোনার বাংলা গড়তে। একই ধারার স্যাকুলার, বিজ্ঞান ভিত্তিক যুক্তি নির্ভর, মাতৃভাষা ভিত্তিক শিক্ষার ব্যাপক প্রসার এবং উন্নয়ন ঘটাতে হবে। মানুষের চেতনার উন্নয়ন ও দেশপ্রেমকে সমৃদ্ধ করার জন্য সুস্থধারার সাহিত্য, সংস্কৃতি, নাটক, সিনেমা,মুক্তিযুদের ইতিহাসসহ সকল গণতান্ত্রিক আন্দোলনের সঠিক ইতিহাসের ব্যাপক প্রসার ঘটাতে হবে।

আজকের বাস্তবতায় প্রতিটি গ্রামে একটি করে আধুনিক লাইব্রেরী এবং বিজ্ঞান ক্লাব নির্মাণ করা প্রয়োজন। রাষ্ট্র এবং উন্নয়নের স্বার্থে সংবাদপত্র এবং সংবাদকর্মীদের স্বাধীনতা দিতে হবে। গুজব এবং উসকানি বন্ধে রাষ্ট্রকে কঠোর হতে হবে। রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়ান বন্ধ করা, জনগণের স্বদিচ্ছা, সচেতনতার আইনের সঠিক ও যথাযথ প্রয়োগ, জনকল্যাণমুখী শিক্ষানীতি, কৃষিনীতি, শ্রম নীতি, স্বাস্থ্যনীতি প্রণয়ন , কালো আইন বালিত, আইনকে তার নিজস্ব গতিতে চলতে দেওয়া, সততা ও নিষ্ঠার সাথে দায়িত্ব ও কর্তব্য পালন করা, মাদক ব্যবসাকে কঠোর হস্তে দমন করা, জবাবদিহি নিশ্চিৎ করা, শিক্ষা, ক্রীড়া ও সংস্কৃতির ক্ষেত্রে রাজনৈতিক বিবেচনায় নিয়োগ না দিয়ে মেধাবী এবং উপযুক্তদের নিয়োগ দিতে হবে, যে কোন মূল্যে ঘুষ-দুর্নীতি রোধ করতে হবে। দেশের অর্থনীতি উন্নয়ন ও উন্নতিকে গতিশীল রাখতে কালো টাকা উদ্ধার, ঋণখেলাপী টাকা উদ্ধার এবং পাচারকৃত টাকা ফেরত আনতে রাষ্ট্রকে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ এবং সেই সাথে বাস্তবায়ন করতে হবে। পরিকল্পনা করতে হবে কল্যাণমুখী, সুদূরপ্রসারী, দীর্ঘস্থায়ী অবকাঠামো নির্মাণে অধিক গুরুত্ব দিতে হবে এবং তার সাথে অন্যান্য দেশের সাথে ব্যয় সামঞ্জস্য রাখতে হবে। ব্যয় সংকোচনের জন্য ব্যক্তি স্বার্থের উর্ধ্বে ওঠে কাজ করতে হবে। যারা সম্পদের সঠিক হিসাব দিতে না পারবে তাদের সম্পদকে বাজেয়াপ্ত করে রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা দিতে হবে। প্রাবাসী রেমিট্যান্স যোদ্ধাদের প্রবাসে জীবনমানের নিরাপত্তা বিধানে দূতাবাসগুলো আরও কার্যকর ভূমিকা পালন করতে হবে। তাদের সমস্যাকে দূতাবাসের কর্মকর্তা কর্মচারী নিজেদের সমস্যা মণে করতে হবে। দেশটাকে ভালোবাসতে হবে নিজের সন্তানের মতো, নিজের পিতামাতার মতো। সন্তান বা পিতামাতার অসুখ কিংবা কোন দুর্ঘটনায় যেমন অস্থির হয়ে পরি তার মঙ্গলের জন্য দেশের জন্যও ঠিক সেইভাবে ভাবতে হবে।

 

সুধীর বরণ মাঝি, শিক্ষক
হাইমচর সরকারি মহাবিদ্যালয়, হাইমচর, চাঁদপুর।

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল rajdhanitimes24.com এ লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয়- মতামত, সাহিত্য, ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার ছবিসহ লেখাটি পাঠিয়ে দিন rajdhanitimes24@gmail.com  এই ঠিকানায়।

শীর্ষ সংবাদ:
নিয়ামতপুর উপজেলা পরিষদ নির্বাচন: আপিলের মাধ্যমে প্রার্থিতা ফিরে পেলেন ২ জন রাণীশংকৈলে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারের ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার মাটিরাঙ্গা উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে জমে উঠেছে প্রার্থীদের প্রচারনা উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকবে: ইসি আলমগীর ২ মে পর্যন্ত দেশের সব প্রাথমিক বিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা সব রেকর্ড পিছনে ফেলে মৌসুমের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায় এতিমখানার অনুদান থেকে সমাজসেবা কর্মকর্তার ঘুষের ভিডিও ভাইরাল বৃষ্টির জন্য মোনাজাতে মুসল্লিদের অঝোরে কান্না ১৭ ঘন্টা পর নিখোঁজ শ্রমিকের লাশ উদ্ধার কেন্দ্রের নির্দেশে গোয়ালন্দে বিদ্যালয়ে বৃক্ষরোপণ কর্মসূচির উদ্বোধন উপাচার্যের অপসারণ চেয়ে এক দফা দাবি কুবি শিক্ষক সমিতির নির্বাচনের মাঠে অনড় থাকায় বহিষ্কার হলেন ইউনিয়ন বিএনপির আহবায়ক এপ্রিলের ২৬ দিনে রেমিট্যান্স এসেছে ১৬৮ কোটি ডলার রোববার থেকে ফের তিন দিনের হিট অ্যালাট জার্রি! শ্রীনগরে বৃষ্টির জন্য ইসতেস্কার নামাজ আদায় গোয়ালন্দ বাজারে উপজেলা ছাত্রলীগের শরবত বিতরণ বাকৃবির সেরা ৫ গবেষককে অ্যাওয়ার্ড প্রদান হিটস্ট্রোকে শিক্ষকের মৃত্যু গোয়ালন্দে বৃষ্টির জন্য অঝোরে কাঁদলেন মুসুল্লিরা মতলবে বৃষ্টির জন্য ইস্তিসকা নামাজ আদায়