ভাটি অঞ্চলে এবার শুকনো মৌসুমের রাজত্ব দীর্ঘতম হওয়ায়,নিয়ম থেকে অতিরিক্ত সময় হাওরের পাদদেশে গবাদিপশুরা কাঁচা গ্রাস খাওয়ার ফলে,গো খাদ্যের সাশ্রয় হয়েছে।
সুনামগঞ্জের তাহিরপুরের হাওর, বাওর, নদী নালায় সাভাবিক নিয়মেই বৈশাখ মাসের শেষ সপ্তাহেই থইথই জল কানায় কানায় পরিপূর্ণ থাকে মাঠ জমিনে ৮-১০ হাত উপরে তাকে জল।এসময় গৃহ পালিত গবাদিপশু গুলোকে গোয়াল ঘরেই বন্দী রাখতে হয়। গরু গুলোকে দিতে হয় তোলা খাবার, খর, কোটা বন। এ ভাবেই ৬ মাস তোলা খাবার খাওয়াতে হয় গবাদিপশুগুলোকে। আর এসব খাবার পানি আসার আগেই পর্যাপ্ত পরিমাণে (খের, বন, কোটা নামক) সংগ্রহ করে রাখতে হয়। গো খাদ্য সচরাচর হাটে বাজারে ক্রয় বিক্রয় হয়। যদি হয় নির্দিষ্ট সময়ে, আর এ-সবের সংকট হলে পালনকারী পড়ে যান বিপাকে। তাই তাঁরা পূর্বে থেকে গো- খাদ্য সংগ্রহে মজুদ রাখেন।
কিন্তু এবার প্রকৃতি ব্যতিক্রম প্রত্যয় ঘটিয়ে, শুকনো মৌসুমকে দীর্ঘতম সময় দেওয়ার ফলে, মুক্ত বিহঙ্গে হাওরের মাঠে জমিনে গরু বিচরণ করে (পুরো জৈষ্ঠ্য মাস,) তাজা কাঁচা গ্রাস আহার করে প্রায় একমাস অতিক্রম করায়, গো খাদ্যের সাশ্রয় হয়েছে বলে ধারণা করছেন স্থানীয় কৃষকরা।
তাহিরপুর উপজেলার বড়দল গ্রামের সানজব উস্তার বলেন, আমরা নিন্মাঞ্চলে বসবাস করি, জল আর স্থল, দু ঋতুর অনুশাসন- অনুকরণের মধ্যে সীমাবদ্ধ আমাদের জীবন। ছয় মাস পরপর ক্ষমতার পালা বদল হয় দুই ঋতুর । জল আসলে শুকনো মৌসুমের পরাজয়। বৈশাখী সোনালী ফসল কাটতে, না কাটতেই, তলিয়ে শুরু রতবদল। কিন্তু এবছর এর ব্যতিক্রম ঘটেছে। এত লম্বা শুকনো মৌসুম আগে কখনো আমি দেখিনি। এ মৌসুম দীর্ঘ সময় হওয়ার ফলে, একদিকে লাভ হয়েছে, গবাদিপশু গরু, ছাগল, মহিষ ভেড়ার, প্রাকৃতিক কাঁচা গ্রাস খেতে পারছে।
হাওরের পাদদেশে গজে উঠেছে সবুজ বীথি। পাকাঁ ধানের অবশিষ্টাংশ থেকে ( ডেমী ধান পেকেছে) আর এসব ধান গরীব দুঃখী শ্রমিকরা কাটতে পেড়ে সুখের ছোঁয়া লেগেছে তাদের জীবনে। অন্যদিকে গবাদিপশু গরু মহিষী বেড়া রাখাল বিহীন স্বাধীন ভাবে চলা ফেরা করে পছন্দের খাবার খেতে পারছে বলে, একমাসের খাবার সাশ্রয় হয়েছে পালনকারী বা খামারীর। গৃহস্থ চিন্তা মুক্ত ভাবে দিবস অতি বাহিত করেন। সন্ধ্যার আগে গরু গোয়ালে নিজ থেকেই চলে আসে। একটু সমস্যা হয়েছে কীটপতঙ্গের উপদ্রপ বেড়েছে, ফাতকামরি, মশা, মাছি,সহ বিভিন্ন প্রজাতির প্রাণী বংশ বিস্তার ঘটায়,এর প্রভাব বেশি । আর যোগাযোগের কিছুটা সমস্যা হয়েছে, জল কিছু কেদা মিশ্রিত হওয়ার কারণে । এর ফলে, নব বধুর নাইওর যাওয়া হল না জৈষ্ঠ্য মাসে।
সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার নদ নদী হাওর বাওর, টিলা, ছড়া, খাল, বিল সব মিলিয়ে সুন্দরের রানী। অতিবৃষ্টি আর উজানের ঢল, ভারতের চেরাপুঞ্জিতে নেই জল। দুই মিলিয়ে নিন্মাঞ্চলের নদী, খাল, বিলে নেই পানি।নদী জোয়ার বিহীন থাকার কারণে, শনি, মাটিয়ান, আলী, গুরমা, পালই, সংসার, মহালিয়াসহ সব কয়টি ছোট বড় হাওরে প্রবেশ করেনি এখন পর্যন্ত পানি। যার কারণে কাঁচা গ্রাস তরুলতা পুনরায় গজিয়ে উঠেছে হাওরের বুকে সেজেছে সবুজের ধরনী।
এ জৈষ্ঠ্য মাসে হাওরের বুকে গবাদীপশু গরু আর কাঁচা গ্রাসের মিলন দৃশ্য উপলব্ধি করার মত। জনশূর্ণ হাওরে গবাদিপশুর বিচরণে জমে উঠেছে হাওরের প্রান।
তাহিরপুর উপজেলা প্রাণী সম্পদ অফিস সূত্রে জানা যায়, ৫১হাজার ২শত ৩৭টি গবাদি পশু, ছাগল ভেড়া বাদে গরুর রয়েছে। প্রতিদিন একেকটি গরুর খাবার লাগে ১কেজি ৭গ্রাম (খর কোটা) গো- খাদ্য । ছয় মাসে এ-সব গবাদিপশুর গো খাদ্যের প্রয়োজন ১৫হাজার ৬ শত ৭৮ কেজি মেঃটন। কিন্তু এবছর প্রকৃতি অনুকূল থাকার ফলে দীর্ঘ (এক মাস) কাঁচা গ্রাস মাঠে খাওয়ায়, প্রায় ২হাজার ৬ শত১৩ মেঃটন গো খাদ্য সাশ্রয় । এর ফলে সংগ্রহ করা গো-খাদ্য সাশ্রয় হয়েছে। এ কারণে গো খাদ্যের সংকট মুক্ত এবছর ।
তাহিরপুর উপজেলার প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা হাবিবুর রহমান বলেন, প্রকৃতি অনুকূলে থাকার ফলে, নির্দিষ্ট সময় থেকে (প্রায় এক মাস) হাওর মাঠে কাঁচা গ্রাস খেতে পারায় ,৫১হাজার ২শত ৩৭টি গরুসহ বিভিন্ন গবাদিপশু। এ ফলে পালনকারীদের গো খাদ্য সংকট দেখা দিবে না,আশা করছি।
এর পরেও যদি প্রাকৃতিক দুর্যোগের হানায় গো -খাদ্য নষ্ট হয়ে সংকট সৃষ্টি হয়। তাহলে উর্ধতন কর্মকর্তাকে অবহিত করণের মাধ্যমে গো খাদ্যের ব্যবস্তা করা হবে। এছাড়াও গবাদিপশু সুস্থ রাখতে, পর্যাপ্ত পরিমাণে বেক সিন দেওয়া হচ্ছে ।