ভোলা সাত উপজেলায় ১২৯১ টি পরিবারের মধ্যে গৃহহীন ও ভূমিহীন পরিবারের মাঝে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপহার হিসাবে স্বপ্নের বাড়ি ও জমি হস্তান্তর করা হয়।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের তৃতীয় ধাপের আওতায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপহার হিসেবে ঘর পেয়েছেন সারা দেশে আরও ২৬ হাজার ২২৯টি গৃহ ও ভূমিহীন পরিবার। বৃহস্পতিবার (২১ জুলাই) গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে এসব ঘর হস্তান্তর করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিন। আর ভোলাতে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে ঘরের চাবি ও জমির কাগজ তুলে দেন ভোলার জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ তৌফিক-ই-লাহী চৌধুরীর ও জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আব্দুল মমিন টুলু।
আরও পড়ুন—শিবালয়ে অবৈধ বালুবাহী ২টি ট্রাক আটক
বৃহস্পতিবার ( ২১ জুলাই) সকালে ভোলা সদর উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে ঘর বিতরন অনুষ্ঠান উপলক্ষে প্রধম ধাপে আলোচনা অনুষ্ঠান ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে সরাসরি সম্প্রচারিত অনুষ্ঠান প্রদর্শন করা হয়।
ভোলা জেলা প্রশাসক ভোলার জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ তৌফিক-ই-লাহী চৌধুরীর সভাপত্বিতে আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আব্দুল মমিন টুলু।
প্রধান অতিথি আব্দুল মমিন টুলু বলেন,প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যদিও আবারও ক্ষমতায় থাকে তাহলে ভবিষ্যতে বাংলাদেশের একটি মানুষও গৃহহীন থাকবেনা। মানুষের জীবনযাত্রা পাল্টে যাবে। দারিদ্র বিমোচন হবে,মানুষ স্বাবলম্বী হবে।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ তৌফিক-ই-লাহী চৌধুরী বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দারিদ্র নিরসনের পথে বাংলাদেশ।এখন ভূমিহীন ও গৃহহীন মুক্ত করতে নিরলস ভাবে কাজ করে যাচ্ছে।
সরকার গৃহহীন ও ভূমিহীনদের তালিকা তৈরী করার জন্য আমরা স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে যাচাই-বাছাই করেই চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছি। তার ধারাবাহিকতায় আমরা ভোলাতে তৃতীয় পর্যায়ে ২য় ধাপে ঘর দিয়েছি ১২৯১ ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারকে।
বিশেষ উপহার হিসেবে ভোলার ১ হাজার ২ শত ৯১ ভূমিহীন, গৃহহীন ও অসহায় পরিবারকে ২ শতাংশ জমিসহ ঘর দেয়া হয়েছে। তিনি আরো বলেন, ভিক্ষুক, স্বামী পরিত্যক্তা, বিধবা, রিকসা চালক, ফেরিওয়ালা, অটোরিকশা, ভ্যান চালক, নৈশ প্রবরি, জেলে, চায়ের দোকানি, দিনমজুর, কাঠমিস্ত্রী, গৃহকর্মী, ইমামসহ বিভিন্ন ধরনের ভূমি ও গৃহহীনরা পেয়েছেন সরকারি এই ঘর। পর্যায়ক্রমে সব ভূমি ও গৃহহীনদের এ কর্মসূচির আওতায় নিয়ে আসা হবে।
সদর উপজেলার ধনিয়া ইউনিয়নের ঘর পাওয়া শাহে আলম বলেন, নদী ভাঙ্গনের ফলে অন্যর জমিতে থেকে রিকসা চালিয়ে সংসার চালাইছি। রিকসা চালিয়ে জায়গা কিনে কখনো ঘর করতে পারতাম না। নিজের ঘরে থাকা স্বপ্নের মত ছিলো। আজ শেখ হাসিনা আমার সেই স্বপ্নকে বাস্তব করেছে। যত দিন বেঁচে থাকব তত দিন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্য দোয়া করব।
ভোলার বাপ্তা ইউনিয়নের ঘর পাওয়া কাকলি রানী বলেন, নদী ভাঙ্গনের পরে কোন রকম ভাড়া করা বাসায় দুইডা সন্তান লইয়া থাকতাম। স্বামী সেলুনে কাজ করে সে টাকা ঘর ভাড়া দিয়ে সংসার চালাতে অনেক কষ্ট হতো। এখন প্রধানমন্ত্রী আমাদের ঘর দিয়েছে। এখন কিছুটা হলেও নিরাপদ আশ্রয় হইলো।নিজের ঘরে থাকব, এর থেকে আনন্দের আর কি হতে পারে। আজ আমি অনেক খুশি।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব)মামুন আল ফারুক,অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আছাদুজ্জামান,ভোলা জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ড ডিভিশন-১ এর নির্বাহী প্রকৌশলী মুহাম্মদ হাসানুজ্জামান,ভোলা এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ ইব্রাহীম খলিল ভোলা সদর উপজেলার নির্বাহী অফিসার মো:তৌহিদুল ইসলাম,ভোলা প্রেস ক্লাব সভাপতি এম হাবিবুর রহমান,ভারপ্রাপ্ত উপজেলার চেয়ারম্যান মোহাম্মদ ইউনুছ, প্যানেল মেয়র সালাউদ্দিন লিংকন, ভোলা সদর উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক নজরুল ইসলাম গোলদার প্রমুখ। অনুষ্ঠানের সঞ্চলনা করেন আবিদুল আলম।
ভোলা সদর উপজেলায় ৩২৫টি ঘর, দৌলতখান উপজেলায় ২০১টি ঘর,বোরহানউদ্দিন উপজেলায় ১০০টি ঘর,তজুমদ্দিন উপজেলায় ১৪৫ টি ঘর, লালমোহন উপজেলায় ২৯০ টি ঘর,চরফ্যাশন উপজেলায় ১৬০ টি ঘর ও মনপুরায় উপজেলায় ৭০ ঘর হস্তান্তর করা হবে ।
আশ্রয়ণ প্রকল্প-২ এর তৃতীয় ধাপে ঘরগুলোকে আরও টেকসই ও জলবায়ু সহনশীল করা হয়েছে।ভূমিহীন ও গৃহহীনদের জন্য নির্মিত দু’শতাংশ জমির উপর ২লাখ ৫৯লাখ টাকা ব্যয়ে উন্নতমানের দু’রুম বিশিষ্ট আধাপাকা টিনশেডের ঘরে রয়েছে একটি রান্নাঘর,একটি টয়লেট,কমন স্পেস ও বারান্দা। জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন ও মৌলিক শিক্ষা নিশ্চিত করা এই উদ্যোগের মূল লক্ষ্য বলে উপজেলা নির্বাহী অফিসার উল্লেখ্য করেন।
জেলায় প্রথম দ্বিতীয় ও পর্যায় তৃতীয় পর্যায়ের ১ম ধাপে ১৫৯২ টি ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারকে পুনর্বাসিত করা হয়েছে।আর তৃতীয় পর্যায়ের দ্বিতীয় ধাপে বিতরণ করা হচ্ছে ১২৯১টি।
আর টাইমস/তাসনিম