ডেঙ্গু জ্বর একটা প্রাণঘাতী মশাবাহিত রোগ। এটা সাধারণত স্ত্রী এডিস মশার কামড় থেকে সৃষ্টি হয়। জনমনে ডেঙ্গু জ্বর একটা আতঙ্কের নাম।
এ ডেঙ্গু জ্বর প্রতি বছর শত শত মানুষের প্রাণ কেড়ে নেয়। একমাত্র ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হওয়া ব্যক্তি ই উপলব্ধি করতে পারে যে, ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হলে কতটা কষ্ট ভোগ করতে হয়। পূর্বের বছরগুলোতে দেখা যায় আমাদের দেশের অনেক মানুষ ই ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেছে।
যাঁদের পরিবার থেকে কেউ একজন ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেছে তাঁদের ডেঙ্গু জ্বরের নাম টা শুনলেও হয় তো প্রাণ টা কেঁদে ওঠে। ডেঙ্গু মশার প্রবণতা সাধারণত পশ্চিম প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপপুঞ্জ এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় অঞ্চলের গ্রীষ্মমন্ডলীয় এবং উপক্রান্তীয় দেশগুলোতে দেখা যায় । এটি ক্যারিবিয়ান এবং ল্যাটিন আমেরিকার দেশগুলোতেও ছড়িয়ে পড়েছে। আমাদের দেশে ডেঙ্গু জ্বরের প্রবণতা কম বেশি প্রতি বছরই দেখা যায়।
প্রতি বছরের ন্যায় এ বছর ও জ্যামিতিক হারে মানুষ ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতামুখী হচ্ছে। মানুষ মাত্রই মরণশীল। যে কোনো সময় যে কোনো পরিস্থিতিতে মানুষ মৃত্যুবরণ করতে পারে। কিন্তু, কিছু কিছু ক্ষেত্রে আমরা সচেতন হলে মৃত্যুর হাত থেকে বেঁচে যেতে পারি। অসচেতন থেকে ইচ্ছাকৃতভাবে ই আমরা আমাদের মৃত্যুকে হাতছানি দিয়ে ডাকি। আমাদের দেশের মধ্যে ঢাকা শহরের মানুষগুলো ডেঙ্গু জ্বরে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হয়।
এর অন্যতম কারণ হলো- অসচেতনতা এবং ডেঙ্গু মশা প্রতিকারের নিয়ম না জানার অভাবে। বিভিন্ন জায়গায় পড়ে থাকা পানি ভর্তি বালতি কিংবা পঁচা পানির ড্রেন থেকে এ এসিড মশার জন্ম হয়। ঢাকা শহরে ড্রেনের অভাব নেই। বৃষ্টি হলে ড্রেনে জমে থাকা পানিতে এ মশাগুলো ডিম পেড়ে বংশবৃদ্ধি করে। ফলে মশাগুলো বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে পড়ে। এবং এর কামড়ে মানুষ ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়। ঢাকা শহরের বিভিন্ন হাসপাতালে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেশি দেখা দিলে বিভিন্ন গণমাধ্যম দ্বারা প্রচার করে এ বিষয়ে সতর্ক করা হয়। কিন্তু আমরা অনেকেই সতর্ক করার পরেও দেখা যায় অসচেতন থাকি।
ফলে দিনদিন ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বাড়তে ই থাকে। আমাদের প্রত্যেকের ই উচিত ডেঙ্গু জ্বরের ব্যাপারে সচেতন হওয়া। আমরা সচেতন না হলে নিজেরাই নিজেদের ক্ষতি ঢেকে আনবো। আমাদের সচেতন হতে হবে এবং ডেঙ্গু মশার কামড় থেকে বাঁচার জন্য বিভিন্ন পন্থা অবলম্বন করতে হবে। মশার কামড় থেকে বাঁচার জন্য পরিপূর্ণ পোশাক পরতে হবে। ত্বক যত টা সম্ভব ঢেকে রাখতে হবে। বিশেষ করে বাহিরে বের হলে।
এছাড়া ও মোটা পোশাক পরার চেষ্টা করতে হবে। এতে মশার কামড়ের ঝুঁকি অনেকটাই কমে যাবে। ডেঙ্গু মশা খুব ভোরে এবং গভীর সন্ধ্যায় সক্রিয় থাকে। এ সময় বেশি সতর্ক থাকতে হবে। তবে রাতেও কামড় দিতে পারে। এজন্য ঘরের জানালায় মশারি ব্যবহার করতে হবে। মশা নিরোধক পারমেথ্রিন মশা তাড়ায়৷ তাই এটি ব্যবহার করা যেতে পারে। মশার বংশবৃদ্ধি হ্রাস করতে হবে। বিশেষ করে বালতি বা ড্রেনে পানি জমা রয়েছে কি না সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। অর্থাৎ বালতি বা ড্রেন খোলা থাকলে ঢেকে দিতে হবে। ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হলে কয়েকটি রোগ দেখা দেয়।
সেগুলো হলো- মাত্রাতিরিক্ত জ্বর, রক্তনালী থেকে রক্ত বের হওয়া, যকৃতের বৃদ্ধি, পেটে প্রচন্ড ব্যথা, নাকও মাড়ি থেকে রক্তপাত, খিটখিটে ও অস্থির আচরণ, বমি, প্রস্রাব ও মলে রক্ত ইত্যাদি। এ লক্ষণগুলো দেখা দিলে তৎক্ষনাৎ ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে এবং চিকিৎসা গ্রহণ করতে হবে।
ডেঙ্গু জ্বরের জন্য এ যাবৎ মাত্র একটা ভ্যাকসিন অনুমোদিত হয়েছে। যা ডেঙ্গভ্যাক্সিয়া নামে পরিচিত। কিন্তু এটির সুবিধার তেমন প্রমাণ পাওয়া যায় নি। এটি ৯-৪৫ বছর বয়সী ব্যক্তিদের ১২ মাসের মধ্যে ৩ ডোজে দেওয়া হয়। বর্তমানে ডেঙ্গু জ্বরের অন্য কোনো ভ্যাকসিন নেই। তাই ডেঙ্গু জ্বরের কারণগুলোকে প্রতিরোধ ই একমাত্র প্রতিরোধ।
মো. আল-আমিন
শিক্ষার্থী : ঢাকা কলেজ, ঢাকা।