রংপুরের পীরগাছায় এক ছাত্রীকে উক্ত্যক্ত করার প্রতিবাদে প্রধান শিক্ষককে মারপিটের অভিযোগ পাওয়া গেছে। আহত প্রধান শিক্ষক, তার বাবা ও ভাতিজা বর্তমান উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসার জন্য ভর্তি আছে। ঘটনাটি বুধবার সকাল ৯টার দিকে উপজেলার কান্দি ইউনিয়নের চাপড়া গ্রামের।
এ বিষয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব নিম্ন-মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ওই গ্রামের মুনছুর আলীর ছেলে আমিনুল ইসলাম বাদি হয়ে উপজেলার হরিদেব গ্রামের ১। মোঃ শামীম মিয়া (১৬), পিতা- মোঃ মহর আলী, ২। মোঃ আরিফ মিয়া (১৭), পিতা- মোঃ আছর আলী, ৩। মোঃ মহর আলী (৪৫), ৪। মোঃ সোহরাব মিয়া (৫২), ৫। মোঃ আকবার আলী (৪৮), সকলের পিতা- মৃত কাঞ্চিয়া শেখ, ৬। মোছাঃ শাহীনুর বেগম (৩৮), স্বামী- মোঃ মহর আলী নামে থানায় অভিযোগ দায়ের করেন।
অভিযোগে জানা যায়, এক মাস পূর্বে তাকে ১নং আসামী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব নিম্ন-মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ৬ষ্ঠ শ্রেণীর নিয়িমিত ছাত্রী ও চাপড়া গ্রামের রুহুল ইসলামের মেয়ে রুহানী আক্তার (১৩)কে প্রেমের প্রস্তাব দিয়ে ব্যর্থ হওয়ার পর হতে তার সহযোগি অপর ২নং আসামী ও অজ্ঞাতনামা ৩/৪ জন বখাটে যুবকসহ উক্ত ছাত্রীকে বিদ্যালয়ে আসা-যাওয়ার পথে অশ্লীল কথাবার্তা ও অঙ্গভঙ্গি করিয়া যৌন হয়রানী করতে থাকলে উক্ত ছাত্রী ও ছাত্রীর পিতা-মাতা বিদ্যালয়ে এসে বিষয়টি প্রধান শিক্ষক আমিনুল ইসলামকে জানায়।
পরে প্রধান শিক্ষক হিসাবে বিষয়টি বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটিকে জানালে এবং ম্যানেজিং কমিটির সদস্যদের পরামর্শে ১নং ও ২নং আসামীসহ তাদের অভিভাবক বর্ণিত অপর ৩নং, ৪নং, ৫নং ও ৬নং আসামীকে প্রধান শিক্ষকের অফিসে ডেকে এনে জানায় এবং ১নং ও ২নং আসামীকে সতর্ক করে দেয় এবং উক্ত ছাত্রীকে যৌন হয়রানী করা হতে বিরত থাকার জন্য অনুরোধ করি।
তারপরও ১নং ও ২নং আসামী ক্ষান্ত না হয়ে তাদের সহযোগি অজ্ঞাতনামা বখাটে যুবকরাসহ উক্ত ছাত্রীকে বিদ্যালয়ে আসা-যাওয়ার পথে যৌন হয়রানী করতে থাকলে বিষয়টি স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গকে প্রধান শিক্ষক জানায় এবং ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি সাপেক্ষে এব্যাপারে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য প্রস্তুতি নিতে থাকে। এতে সকল আসামী ক্ষিপ্ত হইয়া ওঠে এবং প্রধান শিক্ষক ও তার পরিবারের লোকজনকে খুন-জখমের হুমকী ধামকী প্রদানসহ ক্ষতিসাধনের জন্য সময় ও সুযোগ খুঁজে। এই পরিস্থিতিতে ঘটনার দিন ২৯/০৬/২০২২ইং তারিখ সকাল ৯টার দিকে প্রধান শিক্ষকের পিতা মুনছুর আলী (৭০)কে প্রয়োজনীয় কাজে স্থানীয় বালারদিঘি বাজারে যাওয়ার উদ্দেশ্যে বাড়ি থেকে বাহির হয়ে হরিদেব গ্রামে পৌছলে পূর্ব হতে ওৎপেতে থাকা বর্ণিত আসামীরা হাতে ধারালো ছোরা, লাঠি, লোহার রড ইত্যাদি নিয়ে প্রধান শিক্ষকের পিতাকে আটক করে এবং ৩নং আসামী তার পিতাকে বলে, তোর ছেলে খুব বাড়াবাড়ি করছে। তাই আজ তোকে উচিৎ শিক্ষা দেব।
এই কথা বলার পর ৩নং আসামীর হুকুমে অপরাপর আসামীরা লাঠি ও লোহার রড দিয়ে তার পিতাকে এলোপাথারীভাবে মারপিট করতে থাকে। আসামীরা তার পিতাকে মারপিট করতে থাকাকালে ঘটনার সংবাদ পেয়ে প্রধান শিক্ষক ও তার ভাতিজা মজনু মিয়া দ্রুত ঘটনাস্থলে গিয়ে আসামীদের হাত হতে তার পিতাকে রক্ষার চেষ্টা চালাতে থাকে। তখন আসামীরা তাদেরকেও আক্রমন করিয়া মারপিট করতে থাকে।
মারপিটের একপর্যায়ে ১নং আসামী তার হাতে থাকা ধারালো ছোরা দিয়া হত্যার উদ্দেশ্যে স্বজোরে চোট মেরে তার ভাতিজা মজনু মিয়ার মাথার উপরে সামনের দিকে গুরুতর রক্তাক্ত হাড় কাটা জখম করে এবং ৬নং আসামী লাঠি দিয়ে একাধিক ডাং মারিয়া উক্ত ভাতিজার বুক, পিঠ, দুই হাত, দুই পা’সহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে ছেলা ও ফোলা জখম করে।
একই সময়ে ২নং আসামী হত্যার উদ্দেশ্যে তার দুই হাত দিয়ে তার গলা চিপিয়া ধরিয়া শ্বাসরুদ্ধ করার চেষ্টা চালায়। মারপিটের একপর্যায়ে ৩নং আসামী সুযোগ বুঝে তার পরিধেয় শার্টের উপরে পকেট হতে বিদ্যালয়ের আসবাবপত্র মেরামতের জন্য রক্ষিত নগদ ৫৫,২০০/- টাকা বের করে নেয় এবং ৪নং আসামী আমার ডান হাতে থাকা একটি কালো রং এর রেকসিনের হ্যান্ড ব্যাগ কেড়ে নেয়।
এ বিষয়ে পীরগাছা থানা অফিসার ইনচার্জ সরেস চন্দ্র বলেন, এ বিষয়ে একটা অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।