১৯৯৭ সালের ১ ফেব্রুয়ারি পাইকগাছা পৌরসভা হিসেবে স্বীকৃতি পাবার পর পর্যায়ক্রমে ‘গ’ থেকে ‘খ’ এবং ‘খ’ থেকে ‘ক’ অর্থাৎ প্রথম শ্রেণীর পৌরসভা হিসেবে গৌরব অর্জন করতে পেরেছে। তবে প্রথম শ্রেণীর পৌরসভা হিসেবে কাঙ্ক্ষিত উন্নয়ন দীর্ঘ দু’যুগেও এখানে হয়নি।নামেই শুধু প্রথম শ্রেণি, সুবিধা পাচ্ছে না ‘গ’ শ্রেণীর। পাইকগাছা পৌরসভায় নাগরিক সেবার মান অনেক ইউনিয়নের চেয়েও নগণ্য বলে দাবি পৌর শহরে বসবাসকারীদের।
শুরু থেকেই আজ অবধি একেবারে অপরিকল্পিতভাবেই গড়ে ওঠা পাইকগাছা পৌর শহরের রাস্তাঘাট, ড্রেন কোন কিছুই পরিকল্পিতভাবে নির্মাণ করা হয়নি বললেও ভুল হবে না। পৌর কর্তৃপক্ষের দায়সারাভাব ও যথাযথ তদারকি ছাড়াও রয়েছে জনসচেতনতার অভাব। ফলে শহরের সর্বত্রই নোংরা-আবর্জনায় এক অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ বিরাজ করছে। অনেক আবাসিক এলাকায় যাতায়াতের রাস্তার জায়গাটুকুও রাখা হয়নি। যত্রতত্র যানবাহন চলাচলের কারণে গোটা শহরজুড়ে এক ঘিঞ্জি অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, পৌর বাসষ্ট্যান্ড জিরোপয়েন্ট থেকে পৌরবাজারই মূলত: পাইকগাছা পৌর শহরের প্রাণকেন্দ্র। পৌর ও উপজেলা পরিষদের যাবতীয় অফিস-আদালত, ব্যাংক-বীমা ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ প্রায় সবকিছুই এটুকু সীমানার মধ্যেই অবস্থিত। শিবসা নদীর পাড়ে গড়ে ওঠা ছোট্ট এ শহরের প্রধান সড়কের দু’ধারে বাস পার্কিং এবং দোকানীরা ইচ্ছেমত দোকানের বিভিন্ন মালামাল রেখে ফুটপাত দখল করে রেখেছে। গ্রীলের ওয়ার্কশপ, কাঠের ফার্নিচার ও মোটরসাইকেল, ভ্যান-রিক্সা-বাইসাইকেল গ্যারেজ মেকানিকরা এক প্রকার রাস্তার উপরে যানবাহন রেখেই মেরামতের কাজ সারছেন। পৌরবাজারের সন্নিকটে (ডাকবাংলোর উত্তর পাশে) বটতলা এলাকায় রাস্তার উপরে ট্রাক-পিকাপ রেখে রড-সিমেন্ট লোড-আনলোড করা হচ্ছে। অথচ পৌর কর্তৃপক্ষ স্রেফ দায়সারাভাবে মাইকিং করে রাস্তার উপর গাড়ি রেখে মালামাল লোড-আনলোড না করার জন্য নির্দেশ দিয়েই ক্ষ্যান্ত রয়েছে।
শহরের কোথাও পর্যাপ্ত ড্রেনেজ ব্যবস্থা নেই। তাছাড়া পাইকগাছা মহিলা কলেজের পিছনে ফসিয়ার রহমান সড়কটির বেহাল দশা। সড়কটি দিয়ে যান চলাচল তো দূরের কথা পায়ে হেঁটে চলাচলের উপযোগী নেই। অথচ ওই রাস্তার দুই সাইডের কম প্রয়োজন বা কোন প্রয়োজন নেই, এমন স্থানেও সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ড কাউন্সিলর রবি শংকর মন্ডল ব্যক্তিগত স্বার্থে সরকারি অর্থ ব্যয়ে রাস্তা করেছেন। গুরুতর খারাপ রাস্তা সংস্কারের জন্য সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর কবিতা রানী দাস প্রজেক্ট দিলে তা বন্ধ করেছেন রবি শংকর মন্ডল বলে পৌর সভার ইঞ্জিনিয়ার জানান। তাছাড়া পৌরসভার একমাত্র পাবলিক লাইব্রেরী উন্নয়নের নামে লটারির ব্যবস্থা করে টাকা আয় করলেও লাইব্রেরীর উন্নয়ন কাজে ব্যয় করা হয়নি বলে অভিযোগ রয়েছে।
পরিকল্পিত উন্নয়ন দেখতে আর যেটুকু ড্রেন হয়েছে তাও মাসের পর মাস ড্রেনগুলো পরিষ্কার করা হয় না। বর্ষাকাল এলেই শহরের মধ্যে অধিকাংশ জায়গায় পানি জমে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। পৌর শহরে বেশ কয়েকটি ডাস্টবিন রয়েছে। তবে যথাযথ রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে রাস্তার উপরেই ময়লা-আবর্জনা ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকছে।
উল্লেখ্য, অতিসম্প্রতি উপকূলীয় শহর জলবায়ু (সিটিসিআরপি) প্রকল্পের আওতায় পাইকগাছা পৌরসভার সহিষ্ণ অনুকূলে প্রায় ১৩০ কোটি টাকা বরাদ্দ সংক্রান্ত বিষয়ে বাংলাদেশ সরকার এবং এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (এডিবি) এর মধ্যে চুক্তি সম্পন্ন হয়েছে। পৌর মেয়র সেলিম জাহাঙ্গীর বলেন, ২০২৩ সাল থেকে ২০২৯ সালের জুনের মধ্যে বরাদ্দকৃত অর্থ ব্যয় করতে হবে। বরাদ্দকৃত এ অর্থ দিয়ে পর্যায়ক্রমে রাস্তা- ড্রেন, সাইক্লোন শেল্টার, বাস টার্মিনাল, ব্রিজ, কালভার্ট, সুপার মার্কেট, কমিউনিটি সেন্টার, বস্তি উন্নয়ন, পার্ক উন্নয়ন গণসৌচাগার নির্মাণ, গরু হাট স্থাপন, স্ট্রীট লাইট ও বোর্ড ল্যান্ডিং স্টেশন স্থাপনসহ পৌরসভার বিভিন্ন ধরণের অবকাঠামোগত উন্নয়ন করা হবে। প্রকল্পের কাজ শেষ হলে পৌরবাসী তাদের কাংখিত সেবা পাবে বলে পৌর কর্তৃপক্ষ জানান। তবে ইতিমধ্যে উন্নয়ন কাজগুলো টেন্ডার এর মাধ্যমে না করে কোটেশন বিজ্ঞপ্তির মধ্যে করার কারণে অনিয়ম ও দুর্নীতি হচ্ছে বলে সচেতন মহল জানান।