স্বপ্ন নিয়ে ২০১৬ সালে বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজ থেকে সরকারি বাঙলা কলেজে এসেছিলেন। ৭ বছরের কর্মজীবনে বিদায় নিলেন অশ্রুসিক্ত চোখে।
নিজে কাঁদলেন, অন্যদেরও কাঁদালেন।প্রাণপ্রিয় কর্মস্থান সরকারি বাঙলা কলেজ, বাংলা বিভাগের সকল শিক্ষিকা, কর্মকর্তা, শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে অশ্রুসিক্ত চোখে বিদায় নিলেন সরকারি বাঙলা কলেজের বাংলা বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক নাজনীন সুলতানা।
ঘড়িতে সময় সকাল ১১টা, ফুলের আবরণে সজ্জিত টেবিল, রুমভর্তি শিক্ষার্থী। উদ্দেশ্য ‘বিদায় দেওয়া’। জীবনের কঠিন সময়ের হলো‘বিদায়’নেওয়া। তবে এ বিদায় কর্মজীবনে ইতি টানার। যেকোন বিদায় বেদনার। সহকর্মী আর শিক্ষার্থীদের চোখের জলে বিদায়। অশ্রুসিক্ত নয়ন আর বেদনাবিধুর অনুভূতিতে এদিনে তিনি বুঝলেন, শিক্ষার্থী-সহকর্মীরা তাঁকে কতটা ভালোবাসেন!
বাংলা বিভাগের প্রাক্তন ও বর্তমান শিক্ষার্থীদের তত্ত্বাবধানে বুধবার (২২ মার্চ) বিভাগীয় প্রধানের ‘বিদায় সংবর্ধনা’ আয়োজিত হয়। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন একই বিভাগের অধ্যাপক সায়মা ফিরোজ । প্রধান অতিথি ছিলেন বাঙলা কলেজ অধ্যক্ষ প্রফেসর ড. ফেরদৌসী খান ও বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সরকারি বাঙলা কলেজ উপাধ্যক্ষ প্রফেসর মো: জাহাঙ্গীর হোসেন, সরকারি বাঙলা কলেজ শিক্ষক পরিষদের সম্পাদক প্রফেসর মিটুল চৌধুরী।
আয়োজনের শুরুতেই কলেজ শিক্ষার্থী সাইফুল ইসলাম রাজু উপস্থাপনায় ছাত্র-ছাত্রীরা একে একে বিদায়ী শিক্ষককে নিয়ে স্মৃতিচারণ করেন। তাদের বক্তব্যে উঠে আসে প্রিয় শিক্ষককে বলতে ‘না’ পারা অব্যক্ত কথা।
বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী জাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘নিয়মের ধারাবাহিকতায় অনেকে আসবেন-যাবেন, তবে নাজনীন ম্যাম সবার চেয়ে আলাদা হয়ে থাকবেন। এই বিভাগ অন্যান্যগুলোর চেয়ে অবহেলিত থাকলেও, উনি দায়িত্বে আসার পরই অবকাঠামো খাতে বেশকিছু উন্নতি লক্ষ করা গেছে। কলেজ ফান্ড ছাড়াও তিনি বিভিন্ন সোর্স থেকে অবকাঠামো উন্নয়নে কাজ করে গেছেন। আমরা আশা করছি, সামনেও উনার অবর্তমানে এই ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকবে।’
বিভাগের এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘‘এই বিভাগের উন্নয়ন-অগ্রগতির নেপথ্যের কারিগর নাজনীন ম্যাম । শিক্ষার্থীদের যেকোনও দাবিতে তাঁর কাছে নির্ধিদায় যাওয়া যেত। কখনও নিরাশ করেননি তিনি। ম্যামকে শেষ বেলা একটা কথা-ই বলবো, আমরা আপনাকে অনেক ভালোবাসি।’’
এর আগে, সহকর্মীদের স্মৃতিচারণে উঠে আসে অধ্যাপক নাজনীন সুলতানা বর্ণাঢ্য ক্যারিয়ারের কথা। অনেক শিক্ষক ‘বিদায়’ বলতে গিয়ে কাঁন্নায় ভেঙে পড়েন। এমন সময় নিজেকে ধরে রাখতে পারেননি খোদ বিভাগীয় প্রধান। বিদায়ী বক্তব্যে তিনিও স্বীকার করেন, এই ভালোবাসার কাছে আজীবন ঋণী।, ‘চলার পথে যখন দেখা হবে, ভেবে নিও আমিও তোমাদের একজন ছিলাম’।
এত সুন্দর ‘সংবর্ধনা’ আয়োজনে অধ্যাপক নাজনীন সুলতানা ম্যাম আয়োজকদের ধন্যবাদ জানান। এ ছাড়া, সহকর্মীদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আপনারদের এই ভালোবাসা ভুলবার নয়’।
বিদায় বলতে যদিও কষ্ট হয়, তবুও বিদায় বলে দিতেই হয়। সর্বশেষে বিভাগের সকল শিক্ষক-শিক্ষার্থীর সঙ্গে ফটোসেশনে অংশ নিয়ে বিদায় নেন বিভাগীয় প্রধান।
আর টাইমস/এস এইচ