নওগাঁ জেলার বরেন্দ্র অঞ্চল সাপাহার উপজেলায় জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে পানির অভাবের কারণে ধান চাষ ব্যাহত হলে প্রায় এক দশক যাবত জমির মালিকগন অপেক্ষাকৃত কম পানি ব্যবহারের মাধ্যমে বিভিন্ন জাতের আম উৎপাদন শুরু করে। ধান চাষের চেয়ে আম চাষ অধিক সাশ্রয়ী ও লাভজনক হওয়ায় কৃষকরা ধানের পরিবর্তে আম চাষেই অধিক আগ্রহী হয়েছে।
এরই ধারাবাহিকতায় নওগাঁ জেলার বরেন্দ্র এই অঞ্চলে আম উৎপাদনে দিন দিন বেড়েই চলেছে। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে, এ বছর নওগাঁয় ২৯ হাজার ৪৭৫ হেক্টর জমিতে আমচাষ হয়েছে। যার মধ্যে সাপাহার উপজেলায় ১০ হাজার হেক্টর জমিতে আম চাষ হচ্ছে।
আমের চাহিদা বেশি থাকায় বাজারে বাড়তে থাকে আমের দাম। ধান চাষের চেয়ে আম চাষে ঝুঁকি কম থাকায় কৃষকরা ধানের জমিগুলোকে আম বাগানে পরিণত করতে শুরু করে এবং এই উপজেলার আম চাষের সাফল্য ছড়িয়ে পড়ে পুরো জেলায়।
নওগাঁর সাপাহারের বরেন্দ্র এই অঞ্চলে উৎপাদিত সুস্বাদু ও উন্নত জাতের আমের কদর দেশ ছড়িয়ে বিদেশে এবং পাশাপাশি বেড়েছে ব্যাপক চাহিদা। নওগাঁর সাপাহার উপজেলা ইতিমধ্যেই সারাদেশে আমের রাজধানী হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে। বর্তমানে এই উপজেলা থেকে প্রতি বছরে প্রায় ১৫০০কোটি টাকার আম বানিজ্য হয়।
সরেজমিনে এলাকার বিভিন্ন আমবাগান ঘুরে দেখা যায়, আমবাগানের প্রায় প্রতিটি গাছেই ঝুলে আছে নানা জাতের আম। উল্লেখযোগ্য আম গুলো হচ্ছে গুটি, আশ্বিনা, গোপালভোগ, হিমসাগর, আম্রপালী, হাড়িভাঙ্গা,খিরসাপাত, কাটিমন সহ নানান জাতের আম। তবে এই অঞ্চলে সবচেয়ে বেশি চাষ হচ্ছে আম্রপালী জাতের আম। এই জাতের আম সুমিষ্ট ও কৃষকেরা দাম ভালো পাবার ফলে প্রায় ৭৫শতাংশ আম্রপালী জাতের আম চাষ করা হয়েছে।
উপজেলা কৃষি অফিসার মনিরুজ্জামান টকি জানান, চলতি বছরে এই উপজেলায় প্রায় ১০ হাজার হেক্টর জমিতে আমচাষ হচ্ছে। শেষ পর্যন্ত আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে ১লক্ষ ৩০ হাজার মেট্রিকটন আম উৎপাদন সম্ভাবনা করা হচ্ছে ।
উপজেলার মদন শিং গ্রামের আম চাষী আশরাফুল হক জানান, আগে আমরা রাজশাহী কিংবা চাঁপাইনবাবগঞ্জের আম কিনে খেতাম। এখন সাপাহারের আম কিনতে দেশের বহু এলাকা মানুষ আমাদের এলাকায় আসে।এখন চারিদিকে শুধু আমবাগান যা বাণিজ্যিকভাবে চাষ শুরু হয়েছে।
সাপাহার উপজেলা আমচাষি সমিতির সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান বলেন, এবার দীর্ঘ সময় খরার কবলে পড়ায় আম বাগানে পানির সংকট থাকলেও পরবর্তীতে বৃষ্টির মধ্যে দিয়ে তা কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হয়েছে চাষীগন এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে ১২শ থেকে ১৫শ কোটি টাকার আম বাণিজ্যের সম্ভাবনা আছে। যার ফলে গড় উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা গত বছরের সাথে তুলনা করা হয়েছে।