আহমেদ হানিফ
বাংলাদেশ ষড়ঋতুর দেশ।ছয়টি ঋতু পালাক্রমে সাজিয়ে দিয়ে যায় অপরূপ সৌন্দর্যের বাংলাদেশকে।কোকিলের কুহুতান কিংবা কাশফুলের শরতের বন্দনায় উঠে আসে রূপসী বাংলার কথা।বাংলার আইল পথ ধরে এগিয়ে গেলেই হতবিহ্বল হয়ে পড়তে হয় বাংলার চিরাচরিত রূপ দেখে।বাংলায় ঋতুর পালা বদলের সাক্ষী হয়ে রয় নানান রঙের সাজ কিংবা ঢঙের আবরণে।তেমনি বাংলার জনপদে পৌষ ও মাঘ মাসে আসে শীত।বাংলার রূপবৈচিত্র্যে অন্যান্য ঋতুর চাইতে এই ঋতুর উপস্থিতি জনমনে ভয়ের সঞ্চার করে।
শীতকালে প্রকৃতির তার রুক্ষ সাজে আর্বিভাব হয়, চারপাশে বিষন্নতা বিরাজ করে। কচি কোমলতার আবেশিত পত্রগুলো বুড়িয়ে গিয়ে ঝরে পড়ে সঙ্গীসাথীদের নিয়ে। কুয়াশার কাপনে নিজেকে জড়িয়ে বিচ্ছেদের সুর রচনা করে চিরসুখীদের মনে।পাতাহীন গাছগুলো মনে হয় শূন্যে তাকিয়ে বসন্তের অপেক্ষায় দিন অতিবাহিত করে।শীত নিয়ে মানুষের মনে ভয়ের সঞ্চার হওয়ার কারণ হলো অসহনীয় ঠান্ডার প্রকোপ।শীতকাল মানেই হাড়কাঁপানো ঠাণ্ডায় নিজেকে আবেশিত করে রাখা।অনেক সহায়সম্বলওয়ালা মানুষের নজরে শীত আনন্দের উপলক্ষ্য নিয়ে এলেও সম্বলহীন মানুষের জন্য শীত সবসময় কষ্টের ও না পাওয়ার।শীতের বাতাসে নেমে আসে শৈত্যপ্রবাহ। শীতের রিক্ততায় ছেয়ে যায় মানব মনের প্রশান্তি, মানুষের মননে চিন্তার রেখাপাত ঘটে।
শীতের অসহনীয় ঠান্ডা থেকে বাঁচার জন্য খুঁজতে থাকে নিরাপদ আবাস। এত কষ্টের পরেও কৃষক মনে একটুও হলেও খুশির উপলক্ষ্য আনে শীতের নতুন ফসল। তবুও বিনয়ী আচরণে বলছি মাঘের সন্ন্যাসী পালিয়ে যা-
পালিয়ে গিয়ে আসতে দে বসন্ত।বসন্তের আমেজে রিক্ত মনে আবারো প্রাণের সঞ্চার হবে।
পথশিশুর বদনে কাপড় নেই-
রাস্তায় শুয়ে থাকা পথশিশু জানে শীতের কাপড়হীন সময় গুলো কাটানো কত কষ্টের।রাতের বেলায় জবুথবু হয়ে শুয়ে থাকতে হয় ময়লা ও ছেঁড়া কাঁথার নিচে।কয়েক জায়গার ছিদ্র গুলো অনাদরেই থাকে আর তীব্রতার সাক্ষী হয়ে উঠে অর্ধনগ্ন শরীরটা।সকালে ময়লার স্তূপে আগুন জ্বালিয়ে আগুনে শরীর গরম করার ব্যর্থচেষ্টার মধ্যেও মানেনা তার স্বাস্থ্য ঝুঁকির বিষয়টা।মানবিক মানুষের দ্বারে দ্বারে হাত বাড়িয়ে দিয়ে আকুতি জানায় একটা গরম কাপড়ের।এমন কষ্টের সময় গুলোতে মাঘের সন্ন্যাসী তুই কিভাবে থাকিস বল?
পালিয়ে যা বড় মানুষের লোকালয়ে যেখানে অজস্র অর্থ ব্যয়ে শীতের মোকাবিলা করে।
পাহাড়ি জনপদে একটু উষ্ণতার অভাব-
পাহাড়ের সৌন্দর্যে আমরা বিভোর হয়ে নানান পদের লেখনির আয়োজন করলেও পাহাড়ের মানুষের কষ্টের কথাগুলো অগোচরেই থেকে যায়।পাহাড়ে যে কি পরিমাণ শীত পড়ে তা একমাত্র পাহাড়ের মানুষ গুলোই বলতে পারবে। সকালে কুয়াশার জন্য মিলিয়ে যায় এক পাহাড় হতে অন্য পাহাড়ের দূরত্ব।কুয়াশা ও প্রচণ্ড শীতের কারণে কাজও করতে পারেনা অনেক মানুষ।শীতের কালে স্বাস্থ্যগত নানা রকম ঝুঁকির মধ্যে কাটাতে হয় পাহাড়ের মানুষ গুলো।সমতলের মানুষের মতো পায়না তারা নানান ঢঙের শীতের প্রসাধনী।হাত ও পায়ের ফাটলের মাধ্যমে জানান দেয় অভাবনীয় কষ্টের চিত্রপট।
এই পাহাড়ি জনপদে প্রচুর শীত পড়লেও সে তুলনায় গরম কাপড়ের অভাব পরিলক্ষিত হয়,তাইতো পাহাড়ে একটু উষ্ণতার বড্ড অভাব পরিলক্ষিত।
বুড়ো মায়ের ঘরহীন অবস্থান-
জমিরন আমার এলাকার এক ঘরহীন বৃদ্ধ মানুষ।অন্যের কাছারি ও বারান্দায় কাটাতে হচ্ছে শীতের এই সময় গুলো।প্রচণ্ড শীতের প্রকোপে থরথর করে কেঁপে উঠলে খর কান্না ধরে রাখতে পারে না।বারবার আকুতি করে বলে বাজান আমারো একটা সোয়েটার কিন্না দেস না,বড্ড শীতে রাইত্তে ঘুমাইতে পারিনা।সারা রাইত আগুন জ্বালিয়ে থাকন লগে ঘুমাবার পারিনা বাপ।এই দুখিনী মায়ের কষ্ট লাগবের জন্য হলেও দূরে চলে যা মাঘের সন্ন্যাসী।
মাঘের সন্ন্যাসী পালিয়ে যা-
এই জনপদে কতক মানুষের বড্ড বেশি সম্পদ থাকলেও তারা কোনো ভাবেই সহযোগিতা করে না দুঃখে জর্জরিত অসহায় মানুষকে।এই
জনপদে ত্রাণের টাকা বাগিয়ে নিয়ে নেতা আরো বড়লোক হয়ে উঠে,এই নগরে দুখিনী মায়ের কষ্টের কোনো চিন্তা নেই।এই জনপদে প্রকাশ্যে মানুষের জুলুম হলেও মানুষগুলো চুপ করেই থাকতে হয়।এই খানে পাহাড়ে সন্ত্রাসী আছে বলে বলে তাদের কাছে কেউ পৌঁছায় না।এখানে নতশিরে অবস্থান করা মানুষ গুলোই শীতে কষ্ট পাচ্ছে তাই মাঘের সন্ন্যাসী তুই পালিয়ে যা।
মাঘের সন্ন্যাসী তোর আসার সময়-
যখন এই জনপদের মানুষ গুলো পরশ্রীকাতর হবে,অন্যের কষ্টে নিজেকে বিলিয়ে দিবে তখন আসিস।যখন অভাগী দুখিনী মা থাকার মতো একটা ছোট্টো ঘর পাবে,বদনে জামার আবরণে ফুরফুরে মেজাজে থাকবে পথশিশু তখন আসিস।পাহাড়ের মানুষগুলোর দুয়ারে যখন সম্প্রীতির গীত গাইতে গাইতে মানুষ যাবে গরম কাপড় নিয়ে তখনই তোর আসার সময়। মনে থাকবে তো?