১১ ডিসেম্বর ঐতিহাসিক তানোর দিবস

রাজধানী টাইমসের সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

১১ ডিসেম্বর রোববার ঐতিহাসিক তানোর দিবস। ডিসেম্বর মাসের ১১ তারিখের কথা মনে হলে রাজশাহীর তানোরের মানুষের হৃদয়ের স্মৃতিপটে ভেসে ওঠে কাঁন্নার রোল।

১৯৭৩ সালের ১১ই ডিসেম্বর তৎকালিন সরকার প্রগতিশীল কৃষক আন্দোলনের (বাংলাদেশ সাম্যবাদী দল এম.এল) রাজশাহী জেলার তানোর থানার গোল্লাপাড়া বাজারের গোডাউনের পার্শ্বে এরাদ আলী, এমদাদুল হক মুন্টু মাষ্টার ও রশিদসহ হতভাগ্য ৪৪ বিপ্লবী শহীদ নেতাকর্মীকে নির্মমভাবে হত্যা করে রাতের আঁধারেই গণকবর দেয়। এরপর থেকেই ঐতিহাসিক এই দিনটি পালনে প্রতিবছরই কয়েকটি সংগঠন ও রাজনৈতিক দল স্বল্প পরিসরে নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে শহীদদের স্মরণে দিবসটি উদযাপন করে থাকেন।

পাঁচন্দর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান জামাল উদ্দিন সরকার ঘটনার বিবরণ দিয়ে জানান, ১৯৭৩ সালে হঠাৎ করেই সরকারের রক্ষীবাহিনীর নজিরবিহীন বৈরী আচরণ ও রিলিফ কমিটির চেয়ারম্যান-মেম্বারদের দৌরাত্ন ছাড়াও জোতদার মজুদদারের দৌরাত্ন্য শুরু হয়। রিলিফ কমিটির দায়িত্ব প্রাপ্তরা নির্দ্বিধায় রিলিফের টিন, কম্বল, চাল, গমসহ টাকা আত্নসাৎ করে রাতারাতি আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হয়ে যেতে থাকে। এছাড়াও জোতদার মজুদদারের অত্যাচারে আবার মানুষ হারাতে বসে সর্বস্ব। রক্ষিবাহিনী ও মজুতদার জোতদারের অসৎ উর্পাজনে নেমে আসে বরেন্দ্র এলাকার খেঁটে খাওয়া কৃষক সমাজের মাঝে হাহাকার।

বিজ্ঞাপন

এসময় রাজশাহী জেলার তানোর, গোদাগাড়ী ও পবা থানাসহ নওগাঁ জেলার মান্দা থানায় প্রগতিশীল কৃষক আন্দোলনের বিল্পবী নেতা এরাদ আলী ও এমদাদুল হক মন্টু মাষ্টারের নেতৃত্বে গড়ে উঠে অন্যায়ের বিরুদ্ধে গণপ্রতিরোধ। রিলিফ পাচারকালে অত্র এলাকার বহু চেয়ারম্যান-মেম্বাররা ধরা পড়ে কৃষক জনতার হাতে। গণ-আদালতে তাদের বিচার করা হয়। জোতদার ও মজুদারের গোলার ধান নামিয়ে বিতরণ করা হয় হত দরিদ্র জনতার মাঝে।

এছাড়াও জোতদার ও মজুদারের বেনামী রাখা জমি ও খাস জমি বিতরণ করা হয় ভূমিহীনদের মাঝে। ওই সময়ের সরকার দলীয় নেতাদের দৌরাত্ন ও রক্ষিবাহিনীর নজিরবিহীন লুটপাট, ধর্ষণসহ বিভিন্ন অত্যাচারের বিরুদ্ধে আবার স্বাধীনতা সংগ্রামের সৈনিক এরাদ আলী ও ৭১ সালের রনাঙ্গনের কমান্ডার এমদাদুল হক বাবু ছাড়াও মন্টু মাষ্টারের নেতৃত্বে গড়ে ওঠে সশস্ত্র প্রতিরোধ। তখন স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে বাঁচার পথ পায় বরেন্দ্রবাসিরা। প্রবীণ কৃষক এ নেতা বলেন, কৃষক আন্দোলনের বিল্পবী নেতা এরাদ আলী ১৯৬৯ সালে ম্যাট্রিক পরিক্ষায় পাশ করে কলেজে ভর্তি হয়ে ছাত্র জীবনে ১৯৭১ সালে মুক্তিযোদ্ধার সৈনিক হয়ে যুদ্ধ করে ছিলেন।

এরপর তৎকালিন সরকারের অন্যায় অত্যাচারের বিরুদ্ধে তার নেতৃত্বে তানোরে গড়ে ওঠে সশস্ত্র কৃষক জনতার গণ অভ্যুত্থান। তবে তা দমনে তৎকালিন সরকার আধিকার আদায়ে অটল সশস্ত্র কৃষক জনতার গণ অভ্যুত্থানের নেতাদের উপর শুরু করে অমানবিক অত্যাচার। ওই নেতাদের বাড়ি-ঘর ছাড়াও গ্রামকে গ্রাম জ্বালিয়ে দেয়া হয়। বহু মা-বোন ধর্ষিত হয়।এছাড়াও তাদের আত্যাচারে অনেক মানুষ পঙ্গুত্ব বরণ করে।

বিজ্ঞাপন

তাদের অসহনীয় অত্যাচারের পরেও সারা দেশের অত্যাচারিকে হার মানিয়ে শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করে সশস্ত্র কৃষক জনতার গণ অভ্যুত্থানের নেতারা। এরপর আন্দোলন দমাতে নামানো হয় তৎকালিন সরকারের সেনাবাহিনী। ওই সেনা কর্মকর্তাদের পাঠানো হয় সশস্ত্র কৃষক জনতার গণঅভ্যুত্থান ঠেকাতে। কয়েকটি লড়াইয়ের পর ১৯৭৩ সালে ১০ ডিসেম্বর নওগাঁ জেলার মান্দা থানার তেতুলিয়ার লড়াইয়ে ধরা হয় সশস্ত্র কৃষক জনতার গণ অভ্যুত্থানের তানোরের ৩৭ জন নেতা-কর্মীকে।

এছাড়াও ওই একই দিনে রাজশাহীর তানোর থানার শিবনদীর পশ্চিম পাড়ে বাতাসপুর গ্রামে ধরা হয় কৃষক আন্দোলনের শীর্ষ স্থানীয় বিল্পবী ১১ জন নেতাকে। আর মান্দা থানায় যাদের ধরা হয় তাদেরকে মান্দা থানার কালিসাবা সেনা ক্যাম্পে নেয়া হয় এবং তানোরের ১১ জনকে তানোর ডাকবাংলো সেনা ক্যাম্পে আটক রাখা হয়। এসময় ক্যাম্পে তাদের ওপর নির্মমভাবে অত্যাচার ও নির্যাতন করে সামরিক ক্যাডাররা।

ওই সময়ের দায়িত্বরত রাজশাহী ক্যান্টনমেন্ট অবস্থিত সেকেন্ড ইন কমান্ড জিয়াউর রহমান নিজে মেজর হাফিজকে সাথে নিয়ে বন্দীদের দেখতে আসে। তারা ওই বন্দীদের মধ্যে এরাদ আলী, মন্টু মাষ্টারসহ রশিদের সাথে প্রায় ঘন্টাব্যাপী রুদ্ধদার আলাপ করেন। শেষে বন্দীদের মধ্যে মাত্র ৪ জনকে কারাগারে পাঠিয়ে ১১ ডিসেম্বর রাজশাহী জেলার তানোর থানার গোল্লাপাড়া বাজারের গোডাউনের পার্শ্বে বিল্পবী ৪৪ নেতা-কর্মীকে অমানবিক নির্মম নির্যাতনে হত্যা করে গণকবর দেয়। এই মর্মান্তিক লোমহর্ষক ঘটনার মাইল ফলক হিসাবে আজ ১১ ডিসেম্বর তানোর দিবস হিসেবে ইতিহাসের পাতায় কালো অধ্যায় হয়ে থাকে।

পরে ওই শহীদদের স্মৃতি অমর করে রাখতে তানোর থানার গোল্লাপাড়া বাজারের গোডাউনের পার্শ্বে প্রগতিশীল কৃষক আন্দোলনের (বাংলাদেশ সাম্যবাদী দল এম এল) উদ্যোগে শহীদ মিনার নির্মাণ করা হয়েছে। তাদের স্মৃতি চারণে দলের নেতা-কর্মী ও স্বজনরা ১১ ডিসেম্বর পুষ্প অর্পণ ও শহীদদের আত্নার মাগফেরাৎ কামনার জন্য হাজির হন। তবে স্থানীয়দের অভিযোগ, প্রতিবছরই ১১ ডিসেম্বর আসার ১ থেকে ২ দিন আগে ওই স্মৃতিম্ভবটি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার মাধ্যমে স্মৃতিচারণ করার মানসে বর্ণিল সাজে। আর বছরের বাকি মাসগুলো ওই স্থানটি পরিণত হয় গরু-ছাগলের বিচরণ ভূমিতে। সে সঙ্গে লোকজন খোলা জায়গা হিসেবে এখানে ময়লা-আবর্জনা ফেলা আর প্রাকৃতিক কার্যাদি সম্পন্ন করে।

তারা আরও জানান, দেশ স্বাধীন হওয়ার পর পালাবদলের রাজনীতির স্রোতধারায় একে একে প্রগতিশীল চিন্তাচেতনার রাজনৈতিক সরকার হয়ে ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়। কিন্তু হতভাগ্য সেই প্রগতিশীল কৃষক আন্দোলনের ৪৪ নেতাকর্মীর গণকবরের স্থানটি রক্ষণাবেক্ষণের কোনো উদ্যোগ নেয়া হয়নি। কেবল বছরে শুধু একটি দিন (১১ ডিসেম্বর) সাম্যবাদী দলের নেতাকর্মীরাই ফুলেল শুভেচ্ছার মাধ্যমে তানোর দিবস উদযাপন করতে দেখা যায়। কিন্তু ক্ষমতাসীন কোনো সরকার এই মর্মান্তিক ও লোমহর্ষক ঘটনার মাইলফলক হিসেবে ইতিহাসের পাতায় গাঁথা থাকলেও যথাযথ মর্যাদায় রাষ্ট্রীয়ভাবে দিবসটি উদযাপনের জন্য কোনো উদ্যোগ আজও নেয়নি।

তবে ঐতিহাসিক এ দিবসটি রাষ্ট্রীয়ভাবে উদযাপনের জন্য স্থানীয় সাম্যবাদী দলের নেতাকর্মীরা বার বার সরকারের কাছে দাবি জানিয়ে আসছেন। কিন্তু অদ্যাবধি তা বাস্তবায়ন হয়নি বলে তারা জানান

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল rajdhanitimes24.com এ লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয়- মতামত, সাহিত্য, ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার ছবিসহ লেখাটি পাঠিয়ে দিন rajdhanitimes24@gmail.com  এই ঠিকানায়।

শীর্ষ সংবাদ:
কাউখালীতে বাড়ছে অপমৃত্যুর প্রবণতা তিন প্রার্থী আওয়ামী লীগের,ভোট দেওয়া নিয়ে ভীতিতে ভোটাররা নরসিংদী রাত পোহালেই নরসিংদীর দুই উপজেলায় ভোট কুমিল্লার নাঙ্গলকোট উপজেলার নির্বাচন স্থগিত গোদাগাড়ী উপজেলা নির্বাচনে দ্বিমুখী লড়াই,এগিয়ে জাহাঙ্গীর রোহিঙ্গাদের জন্য তহবিল সংগ্রহে আইওএমকে প্রধানমন্ত্রীর আহ্বান পদত্যাগ করলো ন্যাশনাল ব্যাংকের পর্ষদ, নতুন পর্ষদ গঠন ঝড় ও বজ্রপাতে মা-ছেলেসহ ৯ জনের মৃত্যু বিশ্বব্যাপী ক্যাম্পাসে ক্যাম্পাসে ছড়িয়ে পড়ছে ইসরায়েলবিরোধী বিক্ষোভ ঢাকাসহ ২৫ জেলায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ আজ রোহিঙ্গাদের ফেরাতে বাংলাদেশের পাশে আছে ইউরোপ : পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলছে শনিবার থেকে রাণীশংকৈল উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে প্রতীক পেলেন প্রার্থীরা, জমে উঠলো নির্বাচন গুইমারায় সর্বজনীন পেনশন স্কিমে অন্তর্ভুক্ত হলেন ইউএনও’র সহধর্মিণী ও বড় ভাই ভূরুঙ্গামারী উপজেলা পরিষদ নির্বাচন: পদে ১২ প্রার্থীর মনোনয়ন জমা শ্রেষ্ঠ মাদ্রাসা অধ্যক্ষ নির্বাচিত হলেন মুফতি মাও: মুজির উদ্দিন মিল্টন সমাদ্দার ৩ দিনের রিমান্ডে নির্বাচনের প্রস্তুতি ও প্রচারণা দেখতে আ.লীগকে বিজেপির আমন্ত্রণ উপজেলা নির্বাচন: আরও ৬৬ জনকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত বিএনপি’র প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত অফিসার পরিচয়ে টাকা হাতিয়ে নেওয়া যুবক গ্রেপ্তার