করোনা মহামারীতে সারাবিশ্ব অনেকটা থমকে থাকায়, পুরো বছরটাই ওলটপালট করে দিয়েছে এ ভাইরাস। তেমনাবস্থায় বাংলাদেশে করোনাভাইরাস সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতি এবং মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে যাবার প্রেক্ষাপটে ২০২০ সালের এইসএসসি পরীক্ষা অটোপাসের সিদ্ধান্ত নেয় সরকার । ১২ লাখ ১৯ হাজার জন অটোপাস শিক্ষার্থীর মধ্যে আমি একজন।
অটোপাস দেওয়ার পর মাথায় চেপে বসে বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ার চিন্তা কিন্তু করোনা ভাইরাস সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতি থাকায় বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষাও স্থগতি হয়ে যায়। করোনা সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতি না থামায় দেশের বিভিন্ন সময় সরকার লকডাউন ঘোষণা করেন। লকডাউনের মধ্য জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় অনার্স (সম্মান) ১ম বর্ষের ভর্তির জন্য বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়।
বিজ্ঞপ্তিটি পাওয়ার পর বন্ধুরা সবাই কে কোথায় অনার্স (সম্মান) ১ম বর্ষে ভর্তি হইবে এ নিয়ে আমাদের গ্রামের ফুটবল মাঠে আলাপ আলোচনা মধ্যে আমি চুয়াডাঙ্গা সরকারি কলেজে ভর্তি হবার সিদ্ধান্ত জানায়।
চুয়াডাঙ্গা সরকারি কলেজে আবেদন করার তিন দিন পর আবেদনের টাকা জমা দেওয়ার জন্য চার বন্ধু অটোগাড়িতে চেপে সকাল ৮ টায় কলেজের উদ্দেশ্যে রওনা হলাম। কলেজে আবেদনের টাকা জমা দেওয়া শেষে কলেজের চারপাশে একটু ঘুরে দেখছিলাম, হঠাৎ মায়াবী কণ্ঠে বললো আপনি কী সবুজ ? হঠাৎ এরকম একটি প্রশ্ন শুনে পিছনে তাকিয়ে দেখি বোরকা পড়া একটি মেয়ে! আমি মনে মনে ভাবলাম মেয়েটি আমার নাম জানলো কি করে ।
— কি হলো?(মেয়েটি)
-> কে আপনি?
— আমার উওরটা এখনো পাইনি
-> মেয়ে রাগি মনে হচ্ছে ( মনে মনে কথা গুলো বললাম)
— এভাবে হা করে তাকিয়ে কি দেখছিস? কথা বলছেন না কেনো?
-> হ্যাঁ।
— কী হ্যাঁ?
-> হ্যাঁ আমি সবুজ। কথাটা বলা শেষ না হতেই যেন আমার উপর বোমা বর্ষণ শুরু হয়ে গেল। পিঠের উপর একের পর এক কিল ঘুসি পড়তেই আছে। চিনি না জানি না কোথাকার কোন মেয়ে আমার সাথে এরকম করছে আমিতো পুরাই বিষ্মিত হয়ে গেলাম । কলেজের সবাই আমার দিকে এমন ভাবে তাকিয়ে আছে যেন চিড়িয়াখানা থেকে কোন জন্তু জানোয়ার এসেছে কলেজ প্রাঙ্গণে। কিছুক্ষণ কিল ঘুসি খাওয়ার পর মেয়েটাকে জিজ্ঞেস করলাম,
-> কে আপনি? আর আমার সাথে এরকম করছেন কেন?
— আমাকে চিনিস না? ও! তা চিনবি কেনো! এতো দিনে মনে হয় অনেক গার্লফ্রেন্ড ঝুটায় ফেলছিস তাই হয়তো আমাকে চিনতে পারছিস না।(কাঁদো কাঁদো কণ্ঠে কথা গুলো বললো)
-> আজব তো !! কে আপনি আর এসব কি বলছেন? তুই তুই করে কথা বলছেন কেনো? আর কেনইবা আমি আপনাকে মনে রাখতে যাব?
— (কিছু বললো না। শুধু কেমন যেন একটা ফোপানোর আওয়াজ পাওয়া গেল) একটু পর মেয়েটি বোরকার মুখটা খুলতে শুরু করল।,,
আরে এতো মাইশা…..। স্কুলে পড়ার সময় যে মেয়েকে সবচাইতে বেশি পছন্দ করেছিলাম। কিন্তু
কখনো কথা বলার সাহস হয়নি। কারণ, ভীতু হওয়ায় এতো রাগী মেয়ের সাথে ভালোবাসার কথা বলার সাহস পায় নাই। তবে বিভিন্ন ভাবে বুঝাতে চেষ্টা করতাম যে আমি তাকে প্রচন্ড ভালোবাসি । মাইশা সেটা বুঝত কিনা জানি না।
এভাবেই চলতে থাকে বহুদিন কিন্তু সাহস পেতাম না তোকে ভালোবাসি কথাটা শেয়ার করার । মাইশাকে প্রপোজ করার জন্য একদিন মাইশাকে একসাথে বাড়ি যাওয়ার জন্য অনুরোধ করলাম । অনুরোধের পর আমি আর মাইশা একসাথে বাড়ি যাওয়ার জন্য মাইশাকে ডাক দিলাম । হঠাৎ আমার একটা বন্ধু বললো মাইশাকে আমি প্রচন্ড ভালোবাসি তুই একটু আমার কথা বলিস। মনটা ভেঙ্গে চুরমার করে দিলো একটি কথায়, মনটা গম্ভীর করে বললাম ,
-> মাইশা ….
— কী?
-> আমি চলে গেলাম তুই আই …
— এই শোন,তুই না আমার সাথে কি যেনো বলার জন্য একসাথে যাইতে চাইলি। দাঁড়া্,,,মাইশা পিছন থেকে ডাকছে। কিন্তু কে শোনে কার কথা।
এসএসসি পরীক্ষা সামনে চলে আসায় সবাই পড়াশোনা নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। পরীক্ষা শেষ হবার পর মাইশার সাথেও কোন যোগাযোগ হয়নি। সবাই যার যার পড়াশোনা নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ে । জীবন চাকা ঘুরতে ঘুরতে মোড় বদলে যাওয়াটা স্বাভাবিক। আজ দু বছর পর মাইশার সাথে এভাবে দেখা হয়ে যাবে ভাবতেই পারিনি। মাইশা আগের চেয়ে আরও অনেক সুন্দর হয়ে গেছে। মনে হলো রাগটা ঠিক তেমনই আছে একটুও পরিবর্তন হয় নি। সারা মুখই যেন মায়ায় আচ্ছন্ন হয়ে গেছে।
— কিরে এখনো হা করে আছিস? আমাকে চিনতে পারলি না? আমি মাইশা।
-> হ্যাঁ চিনেছি্তো । কেমন আছিস?
— বাহ! অনেক খোঁজ খবর রাখিস আমার। এতো দিন পর যানতে চাইলি কেমন আছি।
-> (কোন উওর দিতে পারলাম না)
— এই,,, (মাইশা হালকা করে একটু ধাক্কা দিল)
-> হুমম।
— এই কলেজে ভর্তি হইবি নাকি।
->হুমম
— চল
-> কোথায়?
— একদম চুপ। কোন কথা বলবি না।
-> (আবার চুপ হয়ে গেলাম) কোন কিছু জিজ্ঞেস না করেই আমাকে হোটেলে নিয়ে গেলো ।
হোটেলের বিলটা মাইশাই দিলো। আমি আর কোন জোরাজোরি করলাম না। কারণ, মাইশার প্রচন্ড রাগী, বিল দেওয়ার কথা বললে না জানি আমার কিল ঘুসি শুরু হয়ে যাবে।
-> তুই এখানেই একটু বস আমি বাহির থেকে ঘুরে আসি ।
— আচ্ছা যা।
-> বাহিরে এসে প্রাণ ভরে নিঃশ্বাস নিয়ে এসে দেখি হোটলের এক কোণায় বসে মাইশা কি যেন ভাবছে। আবারও ভেসে ওঠলো মায়া ভরা সেই মুখ। ভাবনার নির্বিতে থাকা চোখের সেই অপূর্ব চাহনি। অনেকক্ষণ যাবত এভাবে তাকিয়ে থাকার পর………!