ফরিদপুরের সদরপুরে ১৯ জন মুক্তিযোদ্ধার ভাতা, সনদ, স্মার্ট কার্ড না দেওয়া ও মন্ত্রনালয়ে নানা অভিযোগ করে হয়রানি করায় শতাধিক মুক্তিযোদ্ধা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে উপজেলায় পরিষদ সম্মেলন কক্ষে তারা ফরিদপুর-৪ আসনের এমপি ও যুবলীগের প্রেসিডিয়ম সদস্য মজিবুর রহমান চৌধুরী নিক্সনের উপস্থিতিতে ক্ষোভ প্রকাশ ও নির্বাহী অফিসারে মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে একটি অভিযোগ পত্র প্রদান করেন।
এমপি মুক্তিযোদ্ধাদের সমস্যা সমাধানে সর্বোচ্চ সহযোগীতার আশ্বাস দেন।এ সময় মুক্তিযোদ্ধারা জানায়, পার্শ্ববর্তী ভাঙ্গা উপজেলা থেকে নাজমুল কবির মনির নামে একজন কথিত মুক্তিযোদ্ধা মাইগ্রেশনের মাধ্যমে সদরপুরে আসে। মনির ও তার সহযোগী কয়েক জন বিভিন্ন সময় স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধাদের নামে মন্ত্রনালয়ে অভিযোগ দিয়ে হয়রানি করে যাচ্ছে। আমরা মনির গংদের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছি।
উপজেলা সাবেক মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার এ. গফফার মিয়া বলেন, মনির ভাঙ্গা থেকে ভুয়া কাগজাদি দিয়ে সদরপুরে জাতীয় পরিচয় পত্র করেছে। উক্ত পরিচয় পত্রে তার ঠিকানা উপজেলার সদরপুর ইউনিয়নের চর ব্রাহ্মমন্দি। কিন্তু তিনি ভাঙ্গা থানার ব্রাহ্মন্দির বাসিন্দা। তিনি এখনো পরিবার নিয়ে ভাঙ্গা উপজেলার পৈতিক বাড়িতে বসবাস করেন।
মুক্তিযোদ্ধাদের অভিযোগের ভিত্তিতে উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তার সাথে কথা হলে তিনি জানান, মনির ২০১৬ সালে মাইগ্রেড করে সদরপুরের ভোটার হয়েছেন। তখন নির্বাচন কর্মকর্তা অন্য একজন ছিলেন।
কোন ব্যাক্তির ভোটার ট্রেনেসফার করতে হলে সংশ্লিষ্ঠ উপজেলায় তার নিজেস্ব বাড়ি, জমি, বিদ্যুৎ বিলের কাগজসহ অনেক গুরুত্বপূর্ন কাগজের নির্বাচন কমিশনকে দিতে হবে। তারপর নির্বাচন কমিশন যাচাই-বাছাই করার পর কাগজাদি সঠিক হলে ভোটর হতে পারবে।
চর ব্রাহ্মন্দি ৯ নংওয়ার্ডে ইউপি সদস্য আবু সাইদদের সাথে কথা হলে তিনি সাংবাদিকদের জানান, মনির প্রায় দুই বছর আগে এখানে একটি ঘর নির্মাণ করেছে। এখানে তিনি ও তার পরিবার-পরিজন কেউ থাকেন না।
উপজেলা নির্বাচন কমিশনের তথ্য মতে মনির ২০১৬ সালে সদরপুরের ভোটর হয়।মুক্তিযোদ্ধারা আরও জানায়, এক গ্রুপ ৫ ও অন্য গ্রুপ ৭ জন মুক্তিযোদ্ধার বিরুদ্ধে নাজমুল কবির মনির গংরা ২০১৯ সালে অমুক্তিযোদ্ধা হিসেবে অভিযোগ দায়ের করে।
উক্ত অভিযোগের বরাদ দিয়ে জামুকা ১২ জন মুক্তিযোদ্ধার গেজেট, লাল মুক্তিবার্তা ও সনদ বাতিলের সুপারিস করে। মুক্তিযোদ্ধাদের হাই কোর্টের আপিলে তাদের গেজেট, লাল মুক্তিবার্তা ও সনদ বহাল রেখে যথারীতি ভাতা প্রদানে আদেশ দেন। যার মামলা নং-৩৮৫০ ও ৩৮৫১/২০১৯। হাই কোর্টে রায় বহাল থাকা অবস্থায় মনির গংরা বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ অব্যাহত রেখেছে। যার ফলে মুক্তিযোদ্ধারা এখনো ভাতা, সনদ ও স্মার্ট কার্ড পাননি।
মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাছাই কমিটিতে ২৬ জন মুক্তিযোদ্ধার নামে প্রধান মন্ত্রীর বরাদ্দকৃত বীর নিবাস নির্মাণে সুপারিশ করে। তার মধ্যে ৫ জনের নামে বরাদ্দকৃত ঘর নির্মাণের কাজ মনির গংরা অভিযোগ করে বন্ধ করে দিয়েছে। ভারতীয় তালিকাভুক্ত বীর মুক্তিযোদ্ধা আঃ রব মিয়া খবর শুনে সদরপুর মুক্তিযোদ্ধা সংসদের মধ্যে স্টোক করে মারা যান। এ ছাড়া বীর মুক্তিযোদ্ধা আঃ জলিল ও শেখ আঃ মালেক একই কারনে মারা মারা যান। অপর ৭ জন মুক্তিযোদ্ধা সনদ ও স্মার্ট কার্ড আটক রাখা হয়।
এ ব্যাপারে অভিযুক্ত নাজমুল কবির মনিরের সাথে কথা হলে তিনি জনান, তৎকালিন জেলা প্রশাসকের নির্দেশে উপজেলা সমাজসেবা অফিসার ও মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার আমার বিরুদ্ধে করা অভিযোগের বিষয়টি তদন্ত করেছে। তারা এই অভিযোগের কোন সত্যতা পায়নি। ভোটার আইডি কার্ডে বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি জানান, বর্তমান ইউপি সদস্য সাইদকে আমি ভোট না দেয়ায় তিনি আমার বিরুদ্ধে মিথ্যাচার করেছে। আমি ২০১৬ সালের আগেই ব্রাহ্মন্দিতে থাকছি।