লাল ও গোলাপী রঙে সেজেছে গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার লিচুর বাগান গুলো। জৈষ্ঠ্যের রসালো মৌসুমী ফল লিচুর পাইকারি ব্যবসায়ীরা দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ভিড় করছে শ্রীপুরের বিভিন্ন গ্রামের লিচুর বাগান গুলোতে।
চলতি বছর শ্রীপুর উপজেলার মাওনা, তেলিহাটি , গাজীপুর, কাওরাইদ, রাজাবাড়ি ও প্রহলাদপুর ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রামে বাণিজ্যিক ভাবে ৭২৮ হেক্টর জমিতে লিচুর চাষ হয়েছে বলে কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে। শ্রীপুরে রসালো ফল লিচুর ফলন ভালো হয় ও বাগানগুলো আয়তনে অনেক বড়। এসব গ্রাম থেকে সংগৃহীত লিচু কয়েক কোটি টাকায় বিক্রি হয় বলে জানা গেছে। সরজমিনে ঘুরে দেখা যায়, শ্রীপুর পৌর এলাকা ও তেলিহাটি ইউনিয়নের টেপিরবাড়ী গ্রামে লিচুর বাগান ঘিরে এক সাজসাজ রব বিরাজ করছে। লিচু নিয়ে প্রতিটি বাড়িতেই চলছে উৎসব।
লিচু ঘিরে এলাকা সর্বত্রই এখন আলোচনা। কে কত টাকার লিচু বিক্রি করেছে। লিচু গাছের সবুজ পাতার ফাঁকে ফাঁকে উঁকি দিচ্ছে থোকায় থোকায় ঝুলে থাকা লাল ও গোলাপী রঙের লিচু। গ্রামগুলো যেন সেজেছে গোলাপী রঙে।
শ্রীপুরে তিন ধরনের গোলাপী, কদমী ও পাতি লিচুর চাষ হয়। স্থানীয় বাজার গুলোতে প্রতিটি ভালো মানের লিচু বিক্রি হচ্ছে তিন টাকায়। শ্রীপুরের লিচুর চাহিদা অন্যান্য জেলায় কদর বেশি থাকায় প্রতি বছরই এ উপজেলাজুড়ে সম্প্রসারণ হচ্ছে লিচু চাষ। এখানে আবাদ হচ্ছে ‘চায়না-৩ বোম্বাই ও পাতি লিচু।
শ্রীপুর পৌরসভার কেওয়া পূর্ব খন্ড গ্রামের লিচু চাষি কাজল বলেন, এবার প্রাকৃতিক দুর্যোগের ক্ষতিগ্রস্ত না হওয়ায় এবার লিচুর বাম্পার ফলন হয়েছে। দামও বেশি পাওয়ার আশা করছেন চাষিরা। তিনি দেশীয় ‘চায়না-৩’ জাতের লিচু গাছ লাগিয়েছেন। তার ‘চায়না-৩’ জাতসহ অন্যান্য ১২০টি লিচু গাছ রয়েছে। তিনি গত বছর লক্ষাধিক টাকার লিচু বিক্রি করেছিলেন। চলতি বছর লিচু বিক্রি করে আয় করেন ১ লাখ ৬০ হাজার টাকার।
উপজেলার টেপির বাড়ি গ্রামের চাষি কামাল মৃধা বলেন, ফলনের দিক দিয়ে এবার লিচুর বাম্পার ফলন হয়েছে। বাগানে উৎপাদিত লিচু কৃষক ও ব্যবসায়ীরা বাগান থেকে সংগ্রহ করে বিক্রির জন্য নিয়ে যান স্থানীয় বাজারগুলোতে। তবে অনেকে ভালো দাম পাওয়ার আশায় চলে যান রাজধানীতেও। জ্যৈষ্ঠ মাস পুরোটা সময়ই লিচু পাওয়া যায়। এবার অন্যান্য সময়ের চেয়ে ভালো ফলন ও দাম পাওয়া যাচ্ছে।
লিচুর পাইকারি ব্যবসায়ী সেনু মিয়া বলেন, শ্রীপুরের লিচুর গুণগত মান ভালো ও রসালো হওয়ায় রাজধানী ঢাকায় এর ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। তাই বাগান থেকে সংগৃহীত লিচু ঢাকা ও তার আশপাশের এলাকায় সরবরাহ করে থাকি।
শ্রীপুর উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কৃষি কর্মকর্তা সুমাইয়া সুলতানা বন্যা বলেন, এবার বৃষ্টি কম হওয়ায় উৎপাদন কিছুটা কম হলেও লিচুর ফলন কিন্তু ভালো হয়েছে। আমরা কয়েক বছর ধরে স্থানীয় কৃষকদের লিচু চাষ সম্প্রসারণে উদ্বুদ্ধ করায় প্রতিনিয়ত বাণিজ্যিকভাবে বাড়ছে লিচু চাষ।