বিয়ের পর থেকেই শেরপুর জেলার শ্রীবরদী উপজেলার খোশালপুর গ্রামের মনিরার উপর চলে আসছিল নির্যাতন। স্বামী রোজগার না করে নানাভাবে চালানো হতো নির্যাতন। ফলে ১৭ বছরেও সংসারে সুখের দেখা না পেয়ে মনিরা অবশেষে বাবার বাড়ীতে চলে আসে। এদিকে স্ত্রী বাড়ীতে না ফেরায় ক্ষিপ্ত হয়ে স্বামী মিন্টু মিয়া বোরকা পড়ে ধারালো অস্ত্র হাতে হামলা চালিয়ে কুপিয়ে স্ত্রী, শাশুড়ি ও জেঠা শ্বশুরকে খুন করে এবং আহত করে শ্বশুরসহ আরো তিনজনকে। এ যেন হায়েনার হিংস্রতা কেও হার মানায়।
এদিকে এ ঘটনার পরপরই পুলিশসহ অন্যান্য আইন শৃঙ্খলাবাহীনির সদস্যরা ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে মরদেহ উদ্ধারসহ অভিযুক্ত আসামীকে গ্রেফতারের জন্য মাঠে নামেন।শুক্রবার সকালে খুনি মিন্টুকে হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত দা ও একটি চাকুসহ গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
বৃহস্পতিবার (২৩ জুন) রাত সাড়ে ৮টায় দিকে উপজেলার কাকিলাকুড়া ইউনিয়নের খোশালপুর পুটল গ্রামে এই ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় নিহতরা হলেন—মাহমুদ গাজী (৬৫), শেফালী বেগম (৬০) ও তার মেয়ে মনিরা বেগম (৪০)। আহতরা হলেন—বাচ্চুনী বেগম (৫২), শেফালীর স্বামী মনু মিয়া (৭৫) ও তার ছেলে শাহাদাৎ হোসেন (৪০)। মাহমুদ গাজী মনু মিয়ার ভাই।
প্রত্যক্ষদর্শীর বরাত দিয়ে পুলিশ জানায়, মিন্টু মিয়াই এ নারকীয় হত্যাকাণ্ড চালিয়েছে। এ ঘটনায় এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসছে। ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী এ হত্যাকান্ডের দৃষ্টান্ত মূলক ও সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি করেন।
জানা যায় মনিরা বেগম উপজেলার কাকিলাকুড়া ইউনিয়নের পটল গ্রামের মনু মিয়ার বড় মেয়ে। ১৭ বছর আগে পাশ্ববর্তী গেরামারা গ্রামের আব্দুল হাইয়ের ছেলে মিন্টু মিয়ার সাথে তার বিয়ে হয়। তাদের ঘরে এক ছেলে ও এক মেয়ে সন্তান রয়েছে। কিন্তু মিন্টুর আয় রোজগার না থাকায় তাদের সংসারে ঝগড়া লেগেই থাকতো। অভাবের সংসারে স্বামীর নির্যাতনে অতিষ্ঠ হয়ে অবশেষে গত ২রা রমজান দুই সন্তানকে সাথে নিয়ে বাপের বাড়ী চলে আসে মনিরা।
পরবর্তীতে স্ত্রী-সন্তানরা বাড়ীতে না ফেরায় ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে মিন্টু। বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে আটটার দিকে বোরকা পড়ে শশুর বাড়ীত ঢুকে অস্ত্র হাতে হামলা চালায় মিন্টু। কেউ বুঝে উঠার আগেই ক্ষুব্দ মিন্টু মিয়া প্রথমে তার স্ত্রীকে কুপিয়ে ঘটনাস্থলেই খুন করে। এরপর একে একে শশুর মনুমিয়া, শাশুরী শেফালী, জেঠা শশুর মাহমুদ হাজী, শ্যালক শাহাদৎসহ ৬ জনকে কুপিয়ে আহত করে। আহতদের হাসপাতালে নেয়ার পর শাশুরী শেফালী ও জেঠা শশুর মাহমুদ হাজী মারা যান। আশঙ্কা জনক অবস্থায় অপর তিনজনকে ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয়েছে।
কাকিলাকুড়া ইউনিয়ন চেয়ারম্যান মো: হামিদুল্লাহ তালুকদার বলেন, তাদের পারিবারিক কলহের বিষয়টি জানা ছিল না। কিন্তু এমন নারকীয় ঘটনায় আমরা হতবাক।
শেরপুরের পুলিশ হাসান নাহিদ চৌধুরীসহ জেলা পুলিশের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঘটান্থল পরিদর্শন করেন। পুলিশ সুপার বলেন, এ ঘটনার সাথে জড়িত ব্যক্তি কোনভাবেই রেহাই পাবে না।
শ্রীবরদী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বিপ্লব কুমার বিশ্বাস জানান, আমরা সারারাত বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালাই। অবশেষে আমরা পুটল গ্রাম থেকে খুনি মিন্টুকে হত্যাকান্ডের সাথে ব্যবহৃত দা ও একটি চাকুসহ গ্রেফতার করেছি। আমরা তার বিরুদ্ধে মামলা গ্রহণ সহ পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা নিচ্ছি।