লালমনিরহাটের গ্রামীণ প্রাচীনতম ঐতিহ্যবাহী কামার শিল্প নানা সংকটে আজ প্রায় বিলুপ্তির পথে। প্রয়োজনীয় উপকরণের অভাব, কারিগরদের মজুরী বৃদ্ধি, তৈরি পণ্যসামগ্রী বিক্রয় মূল্য কম, কয়লার মূল্য বৃদ্ধি, বিদেশ থেকে বড় বড় ব্যবসায়ীদের স্টীল সামগ্রী আমদানি সহ চরম আর্থিক সংকট ও উৎপাদিত পণ্যের চাহিদা কম থাকায় ও বিভিন্ন প্রতিকুলতার কারণে জেলার কামার শিল্প প্রায় বিলুপ্তির পথে। তবে কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে এখন তাদের ব্যস্ততা অনেক বেড়েছে।
জানা যায়, আর মাত্র কয়েকদিন পরেই পবিত্র কোরবানীর ঈদ আর এই ঈদকে সামনে রেখে ব্যস্ত সময় পার করছেন লালমনিরহাট জেলার কামার শিল্পীরা। কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে এখন দম ফেলারও সময় নেই কামার পাড়ার শিল্পীদের। দিনরাত সমান তালে লোহার টুং টাং শব্দে মুখরিত হয়ে উঠেছে জেলা শহরের প্রতিটি উপজেলার কামার শিল্পগন। এখনও প্রায় ৫ শতাধিক কামার পরিবার খেয়ে না খেয়ে পৈতিক পেশা ধরে রেখেছে। সারা বছর অলস সময় পার করলেও কোরবানীর ঈদ আসলেই অধিক শ্রম দিয়ে বেশি আয়ের স্বপ্ন দেখে কামার পরিবার গুলো। কিন্তু কয়লা ও লোহার দাম বেশি হওয়ায় সেই স্বপ্ন ভেস্তে যেতে বসেছে। ছুরি, বটিসহ লোহার সরঞ্জামাদি তৈরিরে ব্যায় বেশি হলেও উপযুক্ত মূল্যে ক্রেতারা তা ক্রয় করবে কিনা তা নিয়ে কিছুটা চিন্তিত।
কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে কামার শিল্পীরা দা, বটি, চাকু, দাসা, চাপাতিসহ বিভিন্ন সরঞ্জামাদি তৈরি করতে এখন ব্যস্থ সময় পার করছেন।
স্থানীয় বাজার থেকে লোহা কিনে সেগুলো আগুনে পুড়ে দা, বঁটি, চাপাতি, চাকুসহ বিভিন্ন জিনিসপত্র তৈরি করে বাজারজাত করছেন। ছুরি ১০০ থেকে ৩০০ টাকা, দা আকৃতির সরঞ্জাম ২০০ থেকে ৯০০ টাকা, হাড় কোপানোর চাপাতি ৫০০ থেকে ১২০০ টাকা। তবে লোহার আকৃতির কারণে এর দাম কম বেশি হয়ে থাকে। এছাড়া পুরোনো দা, বটি, ছুড়ি শান দিতে বা লবণ-পানি দিতে ৫০ টাকা থেকে ১০০ টাকা পর্যন্ত নেওয়া হয়ে থাকে। নতুন আধুনিক অনেক সরঞ্জাম আসাতে আমাদের ক্রেতা আগের থেকে অনেক কমে গেছে। এসব ব্যবহার্য জিনিস স্থানীয় চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি দেশের বিভিন্ন স্থানে পাইকারি ব্যবসায়ীরা নিয়ে যাচ্ছেন। বর্তমান আধুনিক যন্ত্রাংশের প্রভাবে
কামার শিল্পের দুর্দিন।
কামার শিল্পী রাজ্জাক আলী বলেন, বংশ পরসপর আমরা এই কাজ করে আসছি। আমাদের পূর্ব পুরুষরা এ কাজ করতেন। আগে দেখতাম সারা বছর আমার বাব দাদারা এই কাজ নিয়ে ব্যস্ত থাকতো কিন্তু এখন সারা বছর তেমন কোনো কাজ না থাকলেও কোরবানির ঈদ আসলে আমাদের কাজের চাহিদা কিছুটা বেড়ে যায়।
কামার শিল্পী আলী হোসেন, শহর আলী বলেন, বাপ-দাদার পেশা ধরে রাখলেও চাহিদানুযায়ী সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। পশুর হাট গুলোয় ঈদের আমেজ থাকলেও এখনও কামারদের দোকানে মানুষের পদচারণা নেই বললেই চলে। তবে শেষ মুহুর্তে কোরবানীর মাংস কাটার সরঞ্জাম কিনতে কামারদের কাছে ভিড় জমাবে মানুষ এমন আশায় বুক বেঁধে আছে কামার পরিবার গুলো।
এ বিষয়ে সদর উপজেলার বিডিআরহাট খোলার কামার শিল্পি জেলহাস হোসেন বলেন, এক সময় কামারদের যে কদর ছিল বর্তমানে তা আর নেই। মেশিনের সাহায্যে বর্তমানে আধুনিক যন্ত্রপাতি তৈরি হচ্ছে ফলে আমাদের তৈরি যন্ত্রপাতির প্রতি মানুষ আকর্ষণ হারাচ্ছে। হয়তোবা এক সময় এই পেশা আর থাকবে না। তবে কুরবানির ঈদের সময় আমরা একটু আশাবাদী হই।