রাজশাহীতে বিশ^ ভালবাসা দিবস ও বসন্ত বরণের ফুলে আগুন ধরে গেছে। অনেকটা ঘটা করেই বিশ^ ভালবাসা দিবস ও বসন্ত বরণ উদযাপন উপলক্ষে রাজশাহীতে প্রস্তুতি নিয়েছে বিনোদন প্রেমি যুবক-যুবতী, তরুণ তরুণীসহ শ্রেণি পেশার মানুষ। কিন্তু এ দিনটি আসলেই ভালবাসা প্রদর্শনের ফুলের দাম বেড়ে যায়। এবারও তার ব্যক্রিম হয়নি।
এবারো বিশ^ ভালবাসা দিবস ও বসন্ত বরণের ফুলের দাম আকাশ ছোঁয়া। এতে ফুল ক্রেতারা অনেকটা বেকায়দায় পড়লেও কয়েক কোটি টাকার ব্যবসা করছেন ব্যবসায়ীরা। দাম যাই হোক, যে যার সাধ্যমত আগেই ফুল কিনে উপহার দিচ্ছেন প্রিয়জনকে।
রাজশাহীর সাহেব বাজার ঘুরে দেখা যায়, প্রতিটি ফুলের দোকানে যুবক-যুবতী তরুণ-তরুনীসহ শ্রেণি পেশার মানুষের ভীড়। নিজেদের পছন্দ মত ফুল কিনছেন সবাই। কেউ কিনছেন গোলাপ, কেউ কিনছেন জারবেরা। আবার কেউ কিনছেন রজনীগন্ধার স্টিক, কেউ বা ফুলের মালা। বিশেষ করে এ দিনে গোলাপের চাহিদাই বেশি থাকে।
এবারো তার ব্যতিক্রম হয়নি। এবারো গোলাপের চাহিদা রয়েছে। প্রতিটি ফুলের দোকানে গোলাপ ফুল বিক্রি হচ্ছে বেশি। গোলাপের সাথে বেশি বিক্রি হচ্ছে ফুলের মালাও। অনেকেই আগের দিনই ফুলের মালা ও গোলাপ কিনে নিয়ে গেছেন। কারণ দুটি দিবস এক সাথে হওয়ায় ফুলের দাম বরাবরই বেশি হয়। দুদিন আগে ফুলের দাম কম থাকলেও বিশ^ ভালবাসা দিবসে গোলাপের দাম আর এক দফা বেড়ে যায়। তাই আগেই ফুল কিনে সংরক্ষেণে রেখেছেন অনেকেই।
ফুল বিক্রেতাদের সাথে কথা বলে জানা যায়, তিন ধরনের গোলাপ এবার বাজারে পাওয়া যাচ্ছে। এরমধ্যে লাল গোলাপ ৫০ থেকে ৬০টাকা, হলুদ গোলাপ ৭০ থেকে ৮০ টাকা, সাদা গোলাপ ৮০ থেকে ৯০ টাকা, জারবেরা ৫০ থেকে ৬০ টাকা, রজনীগন্ধার স্টিক ৪৫ থেকে ৫০টাকা, গাজরার মালা ১৫০ টাকা, বিভিন্ন ফুল দিয়ে সাজানো ফুলের মালা ২৮০ থেকে ৩শ’ টাকা দামে বিক্রি হচ্ছে। যদিও ফুলের চাহিদার দিক থেকে গোলাপ ও মালা বেশি বিক্রি হতে দেখা যাচ্ছে। যুবতী বা তরুণদের প্রথম পছন্দই ফুলের গাজরা মালা ও লাল গোলাপ। যার কারণে এবার ফুলের মালা ও গোলাপের দাম গত বছরের চেয়ে বেশি। এছাড়াও ফুলের তোড়া সাড়ে ৪শ’ থেকে ৫শ’ টাকার নিচে মিলছে না।
ফুল কিনতে আসা নগরীর হেঁতেমখাঁ এলাকার তরুণী শায়লা জানান, আমি ভালবাসা দিবসে আমার আপনজন যেমন বড় ভাই বাবা মাকে ফুল উপহার দেই। এবারো উপহার হিসাবে ফুল কিনতে আসেছি। কিন্তু এবার গত বছরের চেয়ে একটি গোলাপের দাম ১০ টাকা বেশি। তারপরও ফুল কিনলাম বাবা মাকে দেয়ার জন্য। মিথিলা নামে যুবতী জানান, বছরে একবার ফুল কিনি স্বামীকে দেয়ার জন্য। এবার গোলাপের দাম বেশি।
তাই বেশি না কিনে ৫টি ফুল কিনেছি। মিথিলার সাথে থাকা তরুণী আজমিরা বলেন, প্রিয় মানুষকে একটি গোলাপ উপহার দেবে তাই বাজারে এসেছি। কিন্তু গোলাপের যে দাম তাতে আমাদের মত সাধারণ পরিবারের মেয়েদের গোলাপ কিনা কষ্টসাধ্য ব্যাপার।
নগরীর সাহেববাজার এলাকার ফুল ব্যবসায়ী হানিফ জানান, এবার ফুলের চাহিদা বেশি। চাহিদা বেশি হওয়ার কারণে দামও একটু বেশি। তিনি বলেন, পাইকারীভাবে গোলাপ ফুল কিনতে হয়েছে প্রতি পিস ৩৫ টাকা। একশ ফুল নিলে সেখানে পাওয়া যায় ৮৫ থেকে ৯০টি। যার কারণে একটি গোলাপ ৫০ টাকার নিচে বিক্রি করলে কোনো লাভ হবে না। তিনি বলেন, এবার আগে অর্ডার দিয়ে চাহিদামত আমরা ফুল পাইনি। যে ফুল পেয়েছি তার মধ্যে অনেক নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। তিনি আরো বলেন, দাম বেশি হলেও এবার ব্যবসা ভাল হচ্ছে।
গিফট ফুল কর্ণারের মালিক সুশিল বলেন, ৩৫ বছর থেকে আমি এখানে ফুলের ব্যবসা করি। ফুলের এমন দাম কখনো দেখিনি। এবারই প্রথম ফুলের দাম এতো বেশি। তিনি বলেন, এবার রাজশাহীতে সাড়ে ৫ থেকে ৬ কোটি টাকার ফুল আমদানি হয়েছে। ফুলগুলো ব্যবসায়ীরা বিক্রিও করে ফেলেছে। বর্তমান যে ফুল আছে তা ভালবাসা দিবসে শেষ হয়ে যাবে। ভালবাসা দিবসে অনেকেই ফুল পাবে না। কারণ ফুলের চাহিদা বেশি কিন্তু যোগান কম।
তিনি বলেন, মোকামে আগে যে দাম দিয়ে আমরা ফুল কিনতাম এখন তার চেয়ে অনেক বেশি দামে আগে অর্ডার দিয়ে আমরা ফুল পাচ্ছি না।