রাজশাহীতে আবারও বাড়তে শুরু করেছে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ। দীর্ঘ বিরতির পর বৃহস্পতিবার করোনায় আক্রন্ত হয়ে একজনের মৃত্যু হয়েছে।
গত বৃহস্পতিবার থেকে শুক্রবার পর্যন্ত রাজশাহীতে ১৮জনের শরীরে করোনা শনাক্ত হয়েছে। রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের তথ্যমতে, রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আরটিপিসিআর ল্যাবে বৃহস্পতিবার রাজশাহীর ৬৮ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়।
এর মধ্যে ১৮ জনের শরীরে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। শনাক্তের হার ২৮ দশমিক ৫৭ শতাংশ। বিশেষ করে গত ২৬ জুন থেকে রাজশাহীতে ফের করোনাভাইরাস শনাক্ত হতে শুরু করে। রাজশাহীতে হঠাৎ করে করোনার সংক্রমণ বাড়ার পেছনের কারণ হিসাবে মানুষের অসচেতনতাকে দায়ি করা হচ্ছে। করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার পর রাজশাহীর মানুষ ভুলেই গেছে মাস্ক পরা, হাত ধোয়া ও গণজামায়ের বিষয়টি।
এরআগে, রাজশাহী সারাদেশের মধ্যে করোনার হটস্পটে পরিণত হয়েছিল। করোনায় মৃত্যু ঊঠেছিল ২৫জন পযন্ত। সেখান থেকে উত্তোরণ করতে অনেকটা বেগ পেতে হয়েছে রাজশাহীর মানুষকে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার পর থেকে মানুষ করোনার বিষয়টি একেবারে ভুলে যেতে বসেছিল। কিন্তু গত ২৬জুনের পর থেকে আবারো করোনা ভাইরাসের সংক্রমন বাড়ায় রাজশাহীবাসীকে ভাবিয়ে তুলেছে। ভাবিয়ে তুলেছে স্থানীয় প্রশাসনকেও। তবে করোনার সংক্রমন বাড়লেও মানুষের মধ্যে দেখা মিলছে না সচেতনতা।
এমনকি স্থানীয় প্রশাসন থেকেও মানুষকে উদ্বুদ্ধ করার জন্য তেমন কোনো উদ্যোগ নিতে দেখা যাচ্ছে না। এতে আবারো রাজশাহী করোনার হটস্পট হতে যাচ্ছে বলেও মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। তবে চিকিৎসকরা বলছেন, এখনই যদি যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া না হয়, তাহলে পরিস্থিতি সামাল দেয়া মুশকিল হয়ে দাঁড়াবে। সরকারের পক্ষে আবারো মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। কিন্তু রাজশাহীতে ৯০ভাগ মানুষ মাস্ক ছাড়াই রাস্তা-ঘাটে ঘুরছেন, দোকানপাটে করছেন কেনাকাটা। যানবাহন থেকে শুরু করে কোথায় লোকজন মাস্ক ব্যবহার করছেন। বলাই যায়, মাস্ক ব্যবহারে মানুষের মধ্যে এক ধরনের উদাসিনতা দেখা যাচ্ছে।
এদিকে, রাজশাহী বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সূত্র অনুযায়ী, গত বুধবার রাজশাহী বিভাগে করোনার সংক্রমণের হার ছিলো ১৯ দশমিক ১৫ শতাংশ। মোট ১২৪ জনের নমুনা পরীক্ষায় ১২ জন করোনা পজিটিভ হয়েছেন। এরমধ্যে সর্বোচ্চ রাজশাহী জেলায় শনাক্ত হয়েছে। ৪৭ জনের নমুনা পরীক্ষায় ৯ জনের করোনা শনাক্ত হয়। এছাড়া চাঁপাইনবাবগঞ্জে ১১ জনের মধ্যে ২ জন, জয়পুরহাটে ৬৬ জনের বিপরীতে একজন করোনা শনাক্ত হয়েছেন।
গত মঙ্গলবার রাজশাহী জেলায় করোনা শনাক্তের হার ছিলো ১৬ দশমিক ৩৬ শতাংশ। এদিন মোট ৫৫ জনের নমুনা পরীক্ষার বিপরীতে ৯ জনের করোনা শনাক্ত হয়। আর আগের দিন সোমবার ২৪ ঘন্টায় ৪৬ জনের নমুনা পরীক্ষায় ২ জনের করোনা শনাক্ত হয়। যেদিন সংক্রমের হার ছিলো ৪ দশমিক ৩৫। তবে ২৬জুনের আগে করোনা শনাক্ত প্রায় দিন শূণ্যের কোটায় ছিল। গত মে মাসে করোনা শনাক্ত না হওয়া ও নমুনা পরীক্ষা না থাকায় রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের করোনা পরীক্ষার ল্যাবটিও বন্ধ ঘোষণা করা হয়।
এমনকি রামেক হাসপাতালে যে করোনার ওয়ার্ড ছিল সেটিও সাধারণ রোগিদের জন্য ছেড়ে দেয়া হয়। এছাড়াও রাজশাহীতে যে সবস্থানে করোনা পরীক্ষার বুথ ছিল সেগুলো বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। এখন রাজশাহী মেডিকেল কলেজ ছাড়া আর কোথাও করোনার নমুনা সংগ্রহ করা হয় না। কিন্তু গত বৃহস্পতিবার করোনায় একজনের মৃত্যু ও শনাক্তের হার বেড়ে যাওয়ায় ভাবিয়ে তুলেছে রামেক হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে। তবে কর্তৃপক্ষ বলছে, এখানো করোনার তেমন সংক্রমণ নেই। সংক্রমণ বাড়লে আবারো যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হবে।
রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম ইয়াজদানী জানান, সংক্রমণ বিবেচনায় ৩০ নম্বর ওয়ার্ডকে করোনা রোগিদের জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে। তবে যেহেতু এখনো করোনা রোগি ভর্তি হয়নি, তাই সাধারণ রোগিদের জন্যই ওয়ার্ডটি ব্যবহার করা হচ্ছে। তবে উদ্ভুত পরিস্থিতি বিবেচনায় সকল প্রস্তুতি তাদের আছে।
রাজশাহী সিভিল সার্জন ডা. আবু সাঈদ মোহাম্মদ ফারুক জানান, করোনায় আক্রান্তরা প্রত্যেকেই সুস্থ আছেন। তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হচ্ছে। তারা বাসায় আইসোলেশনে রয়েছেন। তবে সংক্রমণের আবারও উর্ধ্বমুখিনতা নতুন শঙ্কা তৈরি করেছে।
একারণে সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মানতে বলা হচ্ছে। করোনা টেস্টেও আগ্রহী করা হচ্ছে। তবে রাজশাহীতে ভ্যাকসিনেশন কার্যক্রম জোরদার করায় পরিস্থিতি খুব বেশি অবনতির শঙ্কা আপাতত দেখা যাচ্ছে না।