রাঙ্গুনিয়ায় শতাধিক মাদ্রাসার একটিতেও নেই শহীদ মিনার

রাজধানী টাইমসের সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনের ৭১ বছরেও চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া উপজেলার শতাধিক মাদ্রাসার একটিতেও নির্মাণ হয়নি শহীদ মিনার। তাই ভাষা সৈনিকদের প্রতি ভালোবাসা থাকলেও ফুল দিয়ে শহীদদের স্মৃতির প্রতি সম্মান জানাতে পারেনি রাঙ্গুনিয়ার শতাধিক মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা।

তবে,আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে একুশের বিশেষ দিনে ভাষা সৈনিকদের প্রতি ভালোবাসার অর্ঘ্য জানাতে মুষ্টিমেয় কয়েকটি মাদ্রাসায় নাম মাত্র দোয়ার মধ্যদিয়ে মাতৃভাষা দিবস পালন করেছে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।

সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, উপজেলার সবক’টি মাদ্রাসার ক্যাম্পাসে কোথাও শহীদ মিনারের চিহ্ন নেই। তবে ২১ ফেব্রুয়ারি উপলক্ষে কয়েকটি মাদ্রাসায় নামকাওয়াস্তে অনুষ্ঠান পালন করা হলেও অধিকাংশ মাদ্রাসা ওই দিন বন্ধ থাকতে দেখা যায়।

বিজ্ঞাপন

উপজেলা শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা যায়, রাঙ্গুনিয়া উপজেলায় মোট ১৫ (এমপিওভুক্ত) মাদ্রাসা আছে। এছাড়া ২০ টি ইবতেদায়ীসহ কওমী এবং ননএমপিও ভুক্ত শতাধিক মাদ্রাসা রয়েছে। এসব মাদ্রাসার একটিতেও কোনো শহীদ মিনার নেই।

উপজেলার মাদ্রাসার মধ্যে সবচেয়ে পুরনো ও সর্বোচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রাঙ্গুনিয়া আলমশাহ পাড়া কামিল বিশ্ববিদ্যালয় মাদ্রাসা। এটি ১৯৩৮ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এই মাদ্রাসাটি উপজেলার একমাত্র (মাস্টার্স সমমান) কামিল মাদ্রাসা। এছাড়া ১৯৩৬ সালে প্রতিষ্ঠিত হওয়া রাঙ্গুনিয়া নুরুল উলুম মাদ্রাসা। যা উপজেলার দ্বিতীয় কামিল মাদ্রাসা। এবং পোমরা জামেউল উলুম ফাযিল মাদ্রাসা (১৯৩০), জামেয়া নঈমিয়া তৈয়্যবিয়া ফাযিল মাদ্রাসা (১৯৭৪), মাদ্রাসা-এ তৈয়্যবিয়া অদুদিয়া সুন্নিয়া ফাযিল মাদ্রাসা (১৯৭৭), রানীরহাট আল আমিন হামেদিয়া ফাযিল মাদ্রাসা বর্তমানে ফাযিল (স্নাতক সমমান) মাদ্রাসা রয়েছে। এর বাইরে ১৯৭৫ সালে প্রতিষ্ঠিত মরিয়মনগর ইসলামিয়া আলিম মাদ্রাসা, বেতাগীর রহমানিয়া মাদ্রাসা, উত্তর পদুয়া মদিনাতুল উলুম মাদ্রাসা, দঃ শিলক তৈয়বিয়া নুরিয়া সাত্তারিয়া মাদ্রাসা, সোনারগাঁও দাখিল মাদ্রাসা, সরফভাটার হযরত আবদুল কাদের জিলানি মাদ্রাসা, হযরত খাদিজা (রাঃ) মাদ্রাসা, আহমদিয়া ইসলামিয়া দাখিল মাদ্রাসা ও শিলক মিনাগাজির টিলা মতিউল উলুম মাদ্রাসা (এমপিওভুক্ত) রয়েছে। এসব মাদ্রাসার একটিতেও কোনো শহীদ মিনার নেই।

অথচ, যে ভাষার জন্য বুকের তাজা রক্ত দিয়ে শহীদ হয়েছেন বাংলার দামাল ছেলেরা, সেই মাতৃভাষা বাংলা এখনও প্রাতিষ্ঠানিকভাবে উপেক্ষিত রাঙ্গুনিয়ার মাদ্রাসাগুলোয়। যে জাতি ভাষার জন্য রক্ত দেয়, সেই জাতির দেশে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার নেই?! অবশ্য এ জন্য প্রতিষ্ঠান পরিচালনা কমিটি ও প্রতিষ্ঠান প্রধানদের উদাসীনতাকে দায়ী করেন স্থানীয় শিক্ষাবিদরা।

বিজ্ঞাপন

আলমশাহ পাড়া কামিল মাদ্রাসার দশম শ্রেণির ছাত্র তৌহিদুল ইসলাম জানান, শহীদ মিনার না থাকায় ফুল দিয়ে সম্মান জানাতে পারেনা এই মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা। তবে ভাষা শহীদদের আত্মার মাগফেরাত কামনায় দোয়া করা হয়। শহীদ মিনার থাকলে ফুল দিয়ে শহীদদের সম্মান জানানো যেত।

উপজেলার মরিয়ম নগর ইসলামিয়া মাদ্রাসা অধ্যক্ষ হাফেজ মাওলানা মুহাম্মদ মঈনুদ্দিন কুতুবী বলেন, ‘রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবীতে আন্দোলন করতে গিয়ে শহীদ হয়েছে অনেক ছাত্রছাত্রী। এ জন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান তথা মাদ্রাসাগুলোতে শহীদের চেতনার প্রতীক হিসেবে অবশ্যই শহীদ মিনার থাকা প্রয়োজন।’

তিনি আরও বলেন, ‘মাদ্রাসা শিক্ষাবোর্ডের শহীদ মিনার নির্মাণে কোনো নির্দেশনা আছে কিনা বিষয়টি খতিয়ে দেখবো। তবে, শহীদ মিনারে পুষ্প অর্পণ না করলেও ২১ ফেব্রুয়ারি ভাষা শহীদের স্মরণে মাদ্রাসার হল রুমে আলোচনা ও দোয়া মাহফিলের আয়োজনসহ তাঁদের আত্মার মাগফিরাত কামনায় মোনাজাত পাঠ করা হয়।’

এ বিষয়ে রাঙ্গুনিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান ও বীর মুক্তিযোদ্ধা বাবু স্বজন কুমার তালুকদার বলেন, ‘বাঙালি চেতনা ও আমাদের জাতিসত্তার প্রথম উন্মেষ ঘটে ভাষা আন্দোলনের মাধ্যমে। ভাষা আন্দোলনের ৭০ বছর ও স্বাধীনতার ৫০ বছরেও উপজেলার মাদ্রাসাগুলোতে শহীদ মিনার নেই, এটি আমাদের জন্য লজ্জাজনক। কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান অনুমোদনের শর্তের মধ্যে শহীদ মিনার নির্মাণ বাধ্যতামূলক হওয়া উচিত বলে আমি মনে করি।’

উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা নুরুল ইসলাম চৌধুরী জানান, মাদ্রাসাগুলোতে শহীদ মিনার থাকাটা জরুরি। শহীদ মিনার না থাকায় ভাষার মাসে অত্যন্ত সমস্যায় পড়তে হয়। ভাষাশহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করতে পারে না শিক্ষার্থীরা। তবে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নির্মাণ সংশ্নিষ্ট কাজ দেখে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর। আমরা বিষয়টি শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরসহ সংশ্নিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানাব। পাশাপাশি মাদ্রাসার প্রধান ও পরিচালনা কমিটিকেও বিষয়টি জানানো হবে।

এব্যপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আতাউল গণি ওসমানী বলেন, ভাষা শহীদদের পরিচয় জানতে ও তাদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার থাকা আবশ্যক। যে সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার নেই সেই সকল প্রতিষ্ঠানে মিনার নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হবে। পাশাপাশি সরকারি-বেসরকারিভাবে ভাষার মর্যাদা প্রতিষ্ঠা করার জন্য শহীদ মিনার নির্মাণে সকলকে এগিয়ে আসতে হবে।’

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল rajdhanitimes24.com এ লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয়- মতামত, সাহিত্য, ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার ছবিসহ লেখাটি পাঠিয়ে দিন rajdhanitimes24@gmail.com  এই ঠিকানায়।

শীর্ষ সংবাদ:
ভূরুঙ্গামারীতে মোবাইল কিনে না দেওয়ায় গলায় ফাঁস দিয়ে ৬ষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রীর আত্মহত্যা কাউখালীতে রাত পোহালেই উপজেলা পরিষদ নির্বাচন রাত পোহালেই শেরপুরের দুই উপজেলায় ভোট মতলব উত্তরে সাজাপ্রাপ্ত আসামি ১৭ বছর পর আটক ইরানের প্রেসিডেন্টের মৃত্যুর খবরে বেড়েছে তেলের দাম কচুয়ায় প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে উপবৃত্তির টাকা আত্মসাতের অভিযোগ সাতক্ষীরার আম দেশের গন্ডি পেরিয়ে এখন ইউরোপে লালমোহনে দুদকের উদ্যোগে ২য় পর্বের বিতর্ক প্রতিযোগিতা সম্পন্ন ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসির মরদেহ উদ্ধার ভোলায় ষষ্ঠ ধাপে ভোটগ্রহণ আগামীকাল ডিবি কার্যালয়ে হেফাজত নেতা মামুনুল হক যশোরে ভোট বর্জনের আহ্বানে বিএনপির লিফলেট বিতরণ নরসিংদীর মাধবদীর মাদক সম্রাজ্ঞী মায়া বেগম ইয়াবা ও ফেন্সিডিলসহ গ্রেপ্তার, জনমনে স্বস্তি শ্রীনগর উপজেলা ছাত্রলীগের উদ্যাগে কাপ-পিরিচ প্রতিকের বিশাল মিছিল অবশেষে শুরু হলো রাজশাহীর কেন্দ্রীয় শহিদ মিনার নির্মাণ কাজ শেরপুরে ৫ আন্তঃজেলা গরু চোর গ্রেপ্তার শ্রীপুরে বজ্রপাতে নারীর মৃত্যু চলন্ত বাসে আগুন, ৮ জনের মৃত্যু ৮০ কিমি বেগে ঝড়ের পূর্বাভাস যেসব এলাকায় ১৫ ঘণ্টা গ্যাস থাকবে না আজ