বিপণনের উদ্দেশ্যে কোনো উন্মুক্ত স্থান, চা-বাগানের ছড়া বা নদীর তলদেশ থেকে বালু বা মাটি উত্তোলন করা যাবে না। এছাড়াও সেতু, কালভার্ট, ড্যাম, ব্যারাজ, বাঁধ, সড়ক, মহাসড়ক, বন, রেললাইন ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ সরকারি-বেসরকারি স্থাপনা অথবা আবাসিক এলাকা থেকে বালু ও মাটি উত্তোলন নিষিদ্ধ থাকলেও রংপুর মহানগরীর হাজীরহাট থানা এলাকায় ঘাঘট নদী থেকে প্রায় ১০টি স্পটে অবাধে চলছে বালু উত্তোলন।
স্থানীয়রা বলছেন, অনেকটা প্রশাসনকে ম্যানেজ করেই এসব স্পট থেকে দিনের পর দিন চলছে বালু উত্তোলন। মাঝে মাঝে অভিযান চালিয়ে বন্ধ করা হলেও রাত পোহাতেই আবারো চালু হয় এ উৎসব। বালু ব্যবসায়ীদের কিছু বলতে গেলেই হুমকি দেন, দেখান নানা ভয়। তারা বলেন, আমরা নদী কিনে ব্যবসা করছি।
সরেজমিনে দেখা যায়, রংপুর মহানগরীর হাজীরহাট থানা এলাকার আওতাধীন ১নং ওয়ার্ডের মন্থনা এলাকার ঘাঘট নদীতে একসাথে রয়েছে ৪টি বালুর স্পট, এছাড়াও ২নং ওয়ার্ডে পূর্ব গিলাবাড়ি এলাকায় রয়েছে ২টি, ১০নং ওয়ার্ডের কুটিপাড়া এলাকায় রয়েছে ১টি ও হাজীরহাট থানা এলাকার বিভিন্ন স্থানে রয়েছে আরো ৩টি বালুর স্পট। এসব স্পট থেকে অবাধে উত্তোলন করা হচ্ছে বালু। বালু তুলতে তুলতে ঘাঘট নদীর চেহারা পাল্টে দিয়েছে তারা।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, এসব স্পট থেকে টাকা পান হাজীরহাট থানার পুলিশ সদস্য, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মী, কিছু অসাধু সাংবাদিকসহ অনেকেই। তাই কোনো কিছুতেই বন্ধ হচ্ছে না বালু উত্তোলন।
এদিকে, ঘাঘট নদীতে মেশিন বসিয়ে দীর্ঘদিন ধরে নির্বিকারে বালু উত্তোলন করার ফলে নদীর পানি প্রবাহ কমে যাওয়াসহ বিভিন্ন স্থানে ভাঙন সৃষ্টি হয়েছে। একই সঙ্গে কৃষি জমি ও বসতভিটাও পড়েছে হুমকির মুখে। পাশপাশি মেশিনের বিকট শব্দে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে আশপাশের মানুষেরা। এ বিষয়ে প্রশাসনকে জানিয়েও কোন প্রতিকার পাননি সাধারণ মানুষেরা। আর যত্রতত্র ভাবে বালু উত্তোলনের ফলে রাস্তাঘাট ও বাঁধ নষ্ট হয়ে একদিকে যেমন চলাচলে অযোগ্য হয়ে পড়েছে অন্যদিকে ধুলা স্তুপ পড়ে গেছে। এসব ধুলার কারণে বাসা-বাড়িতে থাকার অযোগ্য পরিবেশ হয়ে পড়েছে। অনেকেই এসব ধুলা বালির মধ্যে চলাচল করায় নানা ধরনের শ্বাসকষ্ট জনিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছে।
একজন বালু ব্যবসায়ীর সাথে কথা হলে তিনি বলেন, আমি জমি কিনে নদী থেকে বালু উত্তোলন করছি। নদীর জমি কিভাবে বিক্রি হচ্ছে? জানতে চাইলে তিনি বলেন, কতজন আছে বিক্রি করার। আমি বালু তুলছি আপনাদের সমস্যা কোথায়?
বালু উত্তোলনের বিষয়ে কথা হলে রংপুর সিটি কর্পোরেশনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মাহমুদুল হাসান মৃধা বলেন, বালু উত্তোলনের সাথে জড়িত কাউকে ছাড় দেয়া হবে না। এ বিষয়ে আমি খুব শ্রীঘই অভিযান পরিচালনা করবো।