ভার্সিটিতে যাওয়ার জন্য বের হলাম।বাইকে উঠব তখন মা কল দিল।বললাম—
-আসসালামু আলাইকুম আম্মু।
-ওয়ালাইকুম আসসালাম। বাবা কেমন আছিস?
-আলহামদুলিল্লাহ ভালো। তুমি কেমন আছ?
-আমিও ভালো আছি। গ্রামে আসবি কবে?
-আজকে বিকালে লঞ্চে ওঠব
– কোথাও কি যাচ্ছিস?
-হুম,ভার্সিটিতে যাচ্ছি ।
-আজকে নাফিসা আসবে।
– তো আমি কি করতে পারি?
-তুই ভার্সিটি থেকে আসার সময় তোর বাসায় নিয়ে আছিস।তারপর একসাথে গ্রামে চলে আসবি।
-মা আমি নাফিসাকে নিয়ে আসতে পারব না। আর তাছাড়া তুমি তো ভালো করেই জানো আমি আন্টির বাসায় কখনো যাব না।
-তোর যাওয়া লাগবে না।
-তাহলে।
-নাফিসার বাবা তোর ভার্সিটিতে নাফিসাকে নামিয়ে দিয়ে যাবে ।তুই বাবা কষ্ট করে নিয়ে আছিস।
-ঠিক আছে নিয়ে আসব।
• আম্মুর সাথে কথা বলে ভার্সিটিতে চলে আসলাম। ডিপার্টমেন্টর সামনে বাইকটা রেখে বটতলার দিকে গেলাম। বন্ধু নাঈম বসে আছে। আমাকে দেখে বলতে লাগল;
-তুই ক্যাম্পাসে দ্রুত আসতে পারিস না?
-পারি তো।
-তা হলে আসিস না কেনো?
-ঘুম থেকে উঠতে পারি না।
-তুই ফজরের নামাজ পড়ছিস?
-হুম,নামাজ পড়ে একটু না ঘুমালে শরীর ভালো থাকে না।
-তাই বলে আজকের দিনেও দেরিতে আসবি!
-কেন, আজকে আবার কি হলো?
-আজকে ভার্সিটি বন্ধ হয়ে যাবে।সবাই একসাথে আড্ডা দিব। আবার কত দিন পর দেখা হবে। এখন চল আড্ডায় যাই।
-হুম চল।
• বন্ধুদের সাথে আড্ডায় বসে পরলাম। এর ভিতরে আঙ্কেল এসে নাফিসাকে দিয়ে গেল। কখন যে দুপুর হয়ে গেল বুঝতেই পারলাম না। বন্ধুদের থেকে বিদায় নিয়ে বাসায় চলে আসলাম। এর ভিতরে নাফিসা আমার সাথে কোনো কথা বলল না।আমিও আর নিজ থেকে কথা বললাম না। বাইক থেকে নেমে যখন বাসায় ঢুকলাম তখন নাফিসা বললো—
-এটা কি বাসা?
-বাসা নয়তো কী!
-ছিঃ কি নোংরা! ভাইয়া তুমি কীভাবে থাকো!
-কী ভাবে আর থাকবো! যেভাবে মানুষ থাকে আমিও সে-ই ভাবে থাকি।
-তুমি আগের মতোই অগোছালো রয়ে গেছ।একটুও বদলাওনি।
-আরে একসময় সব ঠিক হয়ে যাবে।এখন তুমি গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নাও। আমি বাহির থেকে খাবার নিয়ে আসছি।তারপর বিকালে গ্রামের উদ্দেশ্যে রওনা দিব
-খাবার আনার জন্য তোমার কোথাও যাওয়া লাগবে না। আমি রান্না করব।আর তাছাড়া আমি বাহিরের খাবার খেতে পারি না।
-তুমি পারবে না। শুধু শুধু কষ্ট করবে।
-আমি পারব। তুমি যাও ফ্রেশ হয়ে নাও।
• নাফিসা রান্নাঘর ঢুকে গেল। কিছুক্ষণের ভিতরে রান্না শেষ করে ফেলল। দুজনে একসাথে দুপুরের খাবার খেয়ে নিলাম। বিকেলে গ্রামের উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম। লঞ্চে উঠব তখন নাফিসা বলল—
-মাসুম ভাইয়া।
-কিছু বলবে?
-হুমম।
-বলো
-আমার লঞ্চে যেতে ভালো লাগে না।
-তা হলে কি ভাবে যাবে।
-চলো না তোমার বাইকে করে যাই।
-না না, কি বলো। এত দূরের রাস্তা বাইক চালিয়ে যাওয়াটা খুব রিস্ক হবে।
-চলো না, প্লিজ ভাইয়া!
আমি কি যে করব ভেবে পাচ্ছি না।অনেকক্ষণ ভেবে ঠিক করলাম বাইকে করে যাব। বললাম—
-চলো তা হলে।
-সত্যি?(!)
-হুমম।
নাফিসার মুখে হাসি ফুটে ওঠল।আমার পিছনে বসে আছে। আমি বাসার উদ্দেশ্য রওনা হয়ে গেলাম। শহরের কোলাহল যুক্ত পরিবেশ থেকে অনেক দিন পর বের হলাম। খুব ভালো লাগছে। রাস্তার চারপাশে গাছপালা। কিছু কুঁড়ে ঘর দেখা যাচ্ছে। আজকের বিকালের পরিবেশটা খুবই সুন্দর লাগছে। পেছন থেকে নাফিসা এটা ওটা জিজ্ঞাসা করতে লাগল। আমি উত্তর দিচ্ছি।
অনেকটা পথ যাওয়ার পর বিশাল বড়ো ব্রিজ পড়ে। নাফিসা বলল—
-এখানে একটু দাঁড়াও।
আমি বাইক ব্রেক করলাম। সাথে সাথে পেছন থেকে নাফিসা নেমে গেল। সূর্য তার নিজ গতিতে আলো দিয়ে অন্ধকারের ভিতরে ডুব দেওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে। কিছুক্ষণ পরেই সূর্য তার গন্তব্যে চলে যাবে। সন্ধ্যা নেমে আসবে।
নাফিসা বলল—
– খুব সুন্দর না পরিবেশটা?(!)
– হুমম।
– দেখছো, তুমি যদি লঞ্চে যেতে তা হলে এত সুন্দর পরিবেশটা দেখতে পারতে?
আমি চুপ করে আছি। কিছু বলছি না। তখন নাফিসা আবার বলল—
-তুমি সব সময় এমন মুখ করে থাকো কেন?
-কেমন?
-এইযে কোনো হাসি নেই।
-কে বলছে হাসি নেই।
-তুমি কেমন যেন!
-ধুর!
-তুমি কি বিরক্ত হচ্ছ?
-না,এখন চলো।আমাদের অনেকটা পথ যেতে হবে।
-আর একটু থাকি না।
-না,এখন চলো।
-তুমি একটা!
-কিছু বললে?
-না কিছু না।চলো যাওয়া যাক।
আবার বাইক চালাতে লাগলাম। কিছুদূর আসার পর বারোহাটি থানা পড়ে। সেখানে এসে বাজারের ভিতরে দাঁড়ালাম। তখন….
২য় পর্ব আসছে,,,,,,,