জীবনের ঝুকি নিয়ে প্রতিদিনই মোংলার মামার ঘাট নামের স্থান থেকে ট্রলারে চড়ে হাজার হাজার মানুষ নদী পার হচ্ছেন । ঘাটে অপেক্ষমান যাত্রী নিয়ে গাদাগাদি করে পার হতে দেখা যায় নদী পারাপারের ট্রলার গুলোকে। অতিরিক্ত যাত্রী বোঝাইয়ের কারনে মুহুর্তের মধ্যেই ঘটে যেতে পারে যেকোনো দূর্ঘটনা। প্রশাসনের নাকের ডগা দিয়ে অতিরিক্ত যাত্রী নিয়ে নদী পারাপার করছে এসকল ট্রলার চালকেরা।
মোংলা নদীটি মোংলা শহরটিকে দুটি অংশে পৃথক করেছে। উত্তর অংশে রয়েছে সব কল কারখানা, বাস স্টান্ড, ইপিজেড, বন্দর প্রভিতি। আর দক্ষিন অংশে রয়েছে মোংলাসহ পাশাপাশি অন্যান্য উপজেলার জনগনের বসবাস, পৌরসভা, উপজেলা প্রভিতি। এ দুই প্রান্তের মানুষদের তাই অপর প্রান্তে যাওয়া আসার দরুন পারাপার হতে হয় মামার ঘাট নামক একটি স্থান থেকে। নদী পারাপারের জন্য রয়েছে ট্রলার। যাতে ট্রলার প্রতি যাত্রী পারাপারের মাত্রা রয়েছে সর্বোচ্চ ১৫ জন করে।
কিন্তু যাত্রীদের মাত্রাতিরিক্ত চাপকে কাজে লাগিয়ে অনিয়মকে নিয়ম বানিয়ে মাঝিরা বাড়িয়ে তোলে যাত্রীদের জীবনের ঝুকি। কল কারখানাগুলো, বিশেষ করে মোংলা ইপিজেড খোলা ও বন্ধ হবার সময়গুলো যথাক্রমে সকাল ও সন্ধ্যায় সে সংখ্যা ৯০ জন ছাড়িয়ে যায় ট্রলার প্রতি। যাত্রীরদের চাপে ট্রলার গুলোতে পা রাখার যায়গা থাকে না সে সময়। একটু ধাক্কা লাগলেই নদীতে পড়ে যেতে পারে যাত্রীরা। অতিরিক্ত যাত্রির ভারে তলিয়ে যেতে পারে যাত্রীসহ ডুবু ডুবু ট্রলারগুলো। প্রায়ই ট্রলারে ট্রলারে ধাক্কা লেগে অনেক সময় ঘটে দূর্ঘটনাও। বলছিলেন যাত্রীরা।
সরেজমিনে গিয়ে কথা হয় একজন ইপিজেড কর্মী ফাতেমা আক্তারের সাথে। তিনি বলেন, সকাল সকাল বাড়ি থেকে বের হতে হয় তাকে। তা না হলে নদীর ঘাটে যাত্রীদের ভীড়ে ঠেলাঠেলি করে নদী পার হতে বিশাল কষ্ট হয়ে যায় তার। যার কারনে তার কর্মস্থলে পৌছাতে অনেক সময় দেরী হয়ে যায়। খেয়ার ট্রলারে চড়তে যাত্রীদের ভীড়ের মধ্যে সারিবদ্ধভাবে দাড়িয়ে ৫০ গজের মত পথ আধা ঘন্টারও বেশী ধরে অতিক্রম করতে হয়। তারপর ভয়ে ভয়ে ট্রলারে চড়ে নদী পার হতে হয়। কারন মাঝিরা তার মতো অনেক যাত্রীদের ট্রলারে তুলে পা রাখার যায়গা পর্যন্ত খালি রাখে না। তিনি আরো বলেন, একটি মাত্র ঘাট থেকে হাজার হাজার মানুষদের পারাপারের ব্যাপারটা আমাদের জন্য খুবই কষ্টকর। বিশেষ এই সময়গুলোর জন্য নদী পারাপারে যদি মোংলায় অন্যান্য ঘাটগুলো ব্যাবহার করা হতো এবং স্বাভাবিক সংখ্যক যাত্রী পারাপার করতো ট্রলারগুলো, তাহলে এমন দুর্ভোগ পোহাতে হতো না আমাদের। গত সপ্তাহে ট্রলারের ধাক্কায় ঘাটের কাছে তিনি সহ অন্তত ১০ জন নদীতে পড়ে যান। ঘাটের কাছে ছিটকে পড়ায় তেমন বড় দুর্ঘটনা ঘটেনি।
এদিন মোংলা থেকে ঢাকা যাচ্ছিলেন নুসরাত আক্তার। তিনি বলেন, তিনি যে গাড়িতে চড়ে ঢাকা যাবেন তার টিকিট তিনি একদিন আগে কেটে রেখেছিলেন। সকাল সাড়ে সাতটায় গাড়িটি ঢাকার উদ্দেশ্যে ছেড়ে যাবার কথা থাকলেও তার পৌছানো অনেকটা অনিশ্চিত হয়ে পড়েছিলো। কারন সকালে নদী পার হতে গিয়ে তাকে পড়তে হয় চরম বিপাকে। ভীড়ের মধ্যে আধাঘন্টা ঠেলাঠেলি করে ট্রলার পর্যন্ত পৌছানো ও ট্রলারভর্তি যাত্রীদের সাথে ভয়ে ভয়ে নদী পার হন তিনি। কিন্তু ট্রলারে ট্রলারে ধাক্কা লেগে নিজেকে সামলাতে গিয়ে হাত থেকে নদীতে পড়ে যায় লাগেজ। তিনি আক্ষেপ করে বলেন, এভাবে নদী পার হওয়ার অভিজ্ঞতা ভোলার নয়। এতো যাত্রী নিয়ে ডুবু ডুবু ট্রলার গুলো চলছে, ভাবা যায় না।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন ঘাট সংশ্লিষ্ট বলেন, ইপিজেড চলাকালীন সময়ে সর্বোচ্চ ৩০ জন ও অন্যান্য সময়ে ১৫ জন যাত্রী নিয়ে নদী পারাপারের কথা থাকলেও সকালে ও সন্ধ্যায় সেটা আর ঠিক রাখা যায় না। তিনি কারন উল্লেখ করে বলেন, এ সময় গুলোতে কল কারখানা গুলো চালু ও বন্ধ হবার কারণে কারো কারো থাকে বাড়ি ফেরার তাড়া, কারোবা কর্মস্থলে যাবার। এজন্য যাত্রীরাও ব্যস্ত হয়ে পড়ে আগেভাগে গন্তব্যে পৌছানোর। আর এ সৃুযোগে ঝুকি থাকলেও উপার্যন বেশী হয় তাদের।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাহী অফিসার দীপংকর দাশ বলেন, এ বিষয়টি নিয়ে কতৃপক্ষ সম্প্রতি কাজ শুরু করে দিয়েছে। মোংলা পোর্ট পৌরসভার মাধ্যমে দুপারে নির্মান করা হবে বিকল্প ঘাট। নদীর উত্তর পারে একটি বিকল্প ঘাট নির্মান করা হচ্ছে। এবং দক্ষিন পারেও তৈরি করা হবে অপর একটি ঘাট। এতে এ সমস্যা থেকে সর্বসাধারণ দ্রুতই মুক্তি পাবে বলে মনে করেন এ কর্মকর্তা।