মানিকগঞ্জ-২ আসনের হরিরামপুর উপজেলা চত্বর সংলগ্ন আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকার প্রার্থী মমতাজ বেগম এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী জেলা আওয়ামীলীগের অর্থ বিষয়ক সম্পাদক দেওয়ান জাহিদ আহমেদ টুলু ( ট্রাক প্রতীক) এর নির্বাচনী ক্যাংম্প পাশাপাশি হওয়ায় নেতাকর্মীদের মাঝে চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে।
রবিবার ( ২৪ ডিসেম্বর) বিকেলের দিকে এবং সন্ধ্যায় দুই দফায় উভয় গ্রুপের মধ্যে হামলা ও মারধরের ঘটনার পর থেকে এ উত্তেজনা আরো বাড়ছে বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন।
সোমবার (২৫ ডিসেম্বর) দুপুরে উপজেলা চত্ত্বরে মমতাজ বেগমের সমর্থকরা আওয়ামী লীগ অফিসের সামনে গতকালের হামলার ঘটনায় প্রতিবাদ সভা করেছে। সভায় জেলা আওয়ামী লীগের যুব ও ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদক আবিদ হাসান বিপ্লব বক্তব্য রাখেন। তিনি বলেন, স্বতন্ত্র প্রার্থীর সমর্থকরা তাকে পিস্তল বের করে হুমকী প্রদশর্ন করেছে। এ বিষয়ে জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা বরাবর অভিযোগ করা হয়েছে।
অপরদিকে স্বতন্ত্র প্রার্থী জাহিদ আহমেদ টুলুর সমর্থক হরিরামপুর উপজেলা চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামীলীগের ত্রান ও সমাজ কল্যান সম্পাদক দেওয়ান সাইদুর রহমানের নেতৃত্বে একটি মিছিল উপজেলা চত্বর প্রদক্ষণ করে।
সোমবার সরেজমিনে দেখা গেছে উভয় গ্রুপের নেতাকর্মীরা খন্ড খন্ড মিছিল নিয়ে জড়ো হচ্ছে। বিরাজ করছে থমথমে অবস্থা। যে কোন সময় ঘটতে পারে বড় ধরনের সংঘাত। এ দিকে উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা ও পুলিশ বাহিনী শক্ত অবস্থান নিয়েছে।পরিস্থিতি শান্ত ও সতর্ক করতে হরিরামপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো: শাহরিয়ার রহমান, সহকারী কমিশনার ভূমি তাপসী রাবেয়া ও ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ( ওসি) শাহ নুর এ আলম নেতাদের সাথে কথা বলে পরিস্থিতি শান্ত রাখার চেষ্ঠা করে যাচ্ছেন।তবে এ বিষয়ে সাংবাদিকদের সাথে উপজেলা ও পুলিশ প্রশাসনের কোন কর্মকর্তারা বক্তব্য দিতে রাজি হননি।
সকাল ৭ টা থেকে দুইগ্রুপের নেতা-কর্মীরা মুখোমুখি অবস্থানে থেকে বিভিন্ন উত্তেজনাকর শ্লোগান দিয়ে একটানা অবস্থান করে বিকাল ৫টা পর্যন্ত।বিকাল ৫টার পর উত্তেজনা কিছুটা কমে আসলেও রাতে যে কোন অপ্রীতিকর ঘটনার আশংকার এলাকাবাসী।
গত রাতে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মমতাজ বেগমের সমর্থকদের বিরুদ্ধে স্বতন্ত্র প্রার্থী জাহিদ আহমেদ টুলুর সমর্থকদের মারধর করার অভিযোগ করে টুলু সমর্থকেরা। এ হামলায় স্বতন্ত্র প্রার্থীর ছয়জন সমর্থক আহত হয়েছেন।
ঐ ঘটনায উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সাইদুর রহমান দাবি করেন, সংসদ সদস্য ও নৌকার প্রার্থী মমতাজ বেগমের সমর্থকেরা এই হামলা করেছে। অন্যদিকে জেলা আওয়ামী লীগের যুব ও ক্রীড়া সম্পাদক আবিদ হাসান উল্টো অভিযোগ করেন, দলের স্বতন্ত্র প্রার্থী জাহিদ আহমেদ টুলুর সমর্থকেরা তাকে পিস্তল বের করে ভয়ভীতিসহ হত্যার হুমকি দিয়েছেন।
রবিবার বিকেল চারটার দিকে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান দেওয়ান সাইদুর রহমানের ছেলে নবীনূর দেওয়ানের নেতৃত্বে পাঁচ থেকে ছয়জন পিস্তল বের করে জেলা আওয়ামী লীগের যুব ও ক্রীড়া সম্পাদক আবিদ হাসান বিপ্লবকে ভয়-ভীতিসহ হত্যার হুমকি দেয়। এ সময় স্বতন্ত্র প্রার্থীর সমর্থকদের সঙ্গে মমতাজ বেগমের সমর্থকদের সঙ্গে হট্টগোল বাধে।
এ ঘটনার প্রতিবাদে সন্ধ্যার দিকে উপজেলা আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে প্রতিবাদ মিছিল বের করা হয়। এ সময় উত্তেজনা সৃষ্টি হলে পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এ ঘটনার পর সন্ধ্যার দিকে হরিরামপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার ও সহকারী রিটানিং কর্মকর্তার কাছে একটি লিখিত অভিযোগ করেন নৌকা প্রার্থীর সমর্থক আবিদ হাসান বিপ্লব।
অন্যদিকে রবিবার সন্ধ্যায় উপজেলা চত্বরে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মমতাজ বেগমের পক্ষে ৪০ থেকে ৫০ জন নেতা-কর্মী ও সমর্থকেরা মিছিল বের করেন। মিছিল শেষে পুনরায় ওসি ও সহকারী কমিশনার (ভূমি)উপস্থিতিতে স্বতন্ত্র প্রার্থী জাহিদ আহম্মেদ টুলুর নেতাকর্মীদের ওপর হামলা করেন।
এ সময় যুবলীগ কর্মী আফজাল হোসেন, লিটন ভূইয়া, মাসুদ রানা এবং স্বেচ্ছাসেবক লীগের কর্মী হৃদয় আহমেদ, অভি সূত্রধর ও মিঠুন সরকার আহত হয়। এর মধ্যে হৃদয় আহমেদকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে।
