তফসিল ঘোষণার পর দুইদিন মাইকিং করে মনোনয়ন ফরম বিক্রিও করা হয়। ফরম বিক্রি ও জমা নেওয়ার পর হঠাৎ বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির নির্বাচনই বন্ধ করে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে পাবনা সদর উপজেলার দুবলিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আনোয়ার হোসেনের বিরুদ্ধে।
এ বিষয়ে প্রতিকার চেয়ে সম্প্রতি পাবনা জেলা প্রশাসক, জেলা শিক্ষা অফিস ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন বিদ্যালয়ের বেশ কয়েকজন অভিভাবক ও প্রার্থীরা।
সেই অভিযোগে তারা বলেন, ‘গত ১১ ডিসেম্বর ম্যানেজিং কমিটির নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয়। তফসিল অনুযায়ী-মনোনয়নপত্র সংগ্রহ ও জমা দেয়ার শেষ তারিখ ছিল ১৪ ডিসেম্বর। যাচাই-বাছাই শেষে চূড়ান্ত প্রার্থীদের নাম প্রকাশ করা করা হয় ১৪ ডিসেম্বর। প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ তারিখ ১৮ ডিসেম্বর। আর ভোট গ্রহণের তারিখ ছিল চলতি মাসের ২৯ ডিসেম্বর। কিন্তু প্রার্থিতা প্রকাশের দিনে কারও সঙ্গে কোনো আলোচনা না করেই নির্বাচন স্থগিত করে ফের এডহক কমিটি গঠনের নির্দেশ দেন প্রধান শিক্ষক আনোয়ার হোসেন।’
তারা আরো বলেন, ‘প্রধান শিক্ষক ব্যক্তিগত স্বার্থ হাসিলের উদ্দেশে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এতে জমা দেওয়া প্রার্থী ও অভিভাবকদের মাঝে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
২০১৮ সালের পর বিদ্যালয়ে পূর্ণাঙ্গ কমিটি নেই। কমিটি না থাকায় প্রধান শিক্ষক আনোয়ার হোসেন সীমাহীন দুর্নীতি-অনিয়ম স্বেচ্ছাচারিতার সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত। যেটা ইতোমধ্যেই উঠে এসেছে।
বিদ্যালয়ের জায়গায় গোয়ালঘর নির্মাণের খবর মিডিয়াতে প্রকাশ হলে সেটি সরিয়ে নেন। এছাড়াও সিনিয়র শিক্ষককে লাঞ্ছিত, শিক্ষকদের বাড়ি ভাড়া, চিকিৎসা ভাতা ও উৎসব ভাতা না দেয়াসহ একাধিক দুর্নীতি-অনিয়মের কারণে গত ১৩ নভেম্বর পাবনা প্রেসক্লাব মিলনায়তনে সকল শিক্ষক সাংবাদিক সম্মেলন করেন।’
বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির অভিভাবক সদস্য পদে মনোনয়নপত্র উত্তোলনকারী মনিরুজ্জামান খান বলেন, বিদ্যালয় কারও চোখ রাঙানি কারও হুমকি-ধামকিতে চলবে না। সমস্ত আয় ব্যায়ের একটা হিসাব থাকা দরকার। সেখানে শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ নেই। নানা-দুর্নীতি ও সমস্যায় জর্জরিত হয়ে আছে। দীর্ঘদিন ধরে সেখানে ম্যানেজিং কমিটির নির্বাচনও হয় না। শিক্ষার একটি ভালো পরিবেশ ফিরিয়ে আনতেই নির্বাচনের জন্য ফরম জমা দিয়েছিলাম। কিন্তু হঠাৎ করে শুনতে পাই প্রধান শিক্ষক নিজেই নির্বাচন বন্ধ করে দিয়েছেন। বিষয়টি নিয়ে আমরা ইউএনও স্যার ও শিক্ষা অফিসের স্যারদের নিকট দেখা করে একটি লিখিত অভিযোগ জমা দিয়েছি। প্রধান শিক্ষকের বিচার দাবি করে দ্রুত স্কুলের নির্বাচন দেওয়া হোক।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন অভিভাবক বলেন, বিদ্যালয়ের ভালো একটি ম্যানেজিং কমিটি হওয়া দরকার। যার মাধ্যমে বিদ্যালয়ের হারানো ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে পারবে।
নির্বাচনে প্রিজাইডিং অফিসার ও উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার হাফিজুর রহমান বলেন, ‘১০ম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের অভিভাবকদের ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্তি না করেই ভোটার তালিকা প্রকাশ করা হয়েছিল। কিন্তু ১০ শ্রেণির ভোটারদের অন্তর্ভুক্তি না করে নির্বাচন করা আইন ও বিধি বহির্ভূত। এজন্য আমি ইউএনও স্যারের মাধ্যমে নির্বাচন বন্ধ করা নির্দেশ দেওয়ার পর প্রধান শিক্ষক এটি বিদ্যালয়ের নির্বাচন সংশ্লিষ্ট সকলকে জানিয়ে দিয়েছেন।’
ভোটার তালিকা প্রকাশের আগে তফসিল এবং প্রধান শিক্ষক এই ধরনের বড় ভুল কিভাবে করলেন? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘এডহক কমিটির মেয়াদ শেষের ৮০ দিন পূর্বে ভোটার তালিকা এবং ৩০ দিন পূর্বে নির্বাচন করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। কিন্তু আমি তফসিল ঘোষণার পর নিয়ম অনুযায়ী যখন ভোটার তালিকা চেয়েছি তখন প্রধান শিক্ষক তালিকা জমা দিয়েছেন। তালিকায় ১০ শ্রেণির ভোটারদের অন্তর্ভুক্তি না করা প্রধান শিক্ষকের স্পষ্ট গাফলতি। তবে তিনি দাবি করেছেন- বিষয়টি তিনি জানতেন না। তার ভুল হয়েছে। বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হবে।’
এ বিষয়ে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আনোয়ার হোসেনের মুঠোফোনে যোগাযোগ করে তার মন্তব্য পাওয়া সম্ভব হয়নি।
পাবনা সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তাহমিদা আক্তার বলেন, বিদ্যালয়ের অভিভাবক সদস্যরা একটি লিখিত অভিযোগ আমার অফিসে জমা দিয়েছেন। ‘বিষয়টি সম্পর্কে আমি পুরোপুরি জানি না। এ বিষয়ে স্কুলের প্রধান শিক্ষক, শিক্ষা অফিসার ও সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে পুরোটা জেনে এবং আমার উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়ে এই বিষয়ে মন্তব্য করতে পারব। তার আগে এই বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে পারব না।’
অভিযোগ পাওয়ার বিষয়টি স্বীকার করে পাবনা জেলা শিক্ষা অফিসার রোস্তম আলী হেলালী বলেন, ‘আমি চিঠি পেয়েছি কিন্তু চিঠিটা এখনও পড়িনি। আমি অভিযোগটি পড়ার পর এবং আইনগত দিকগুলো বিবেচনা করে পরবর্তীতে বিস্তারিত জানানো সম্ভব হবে।’