বিজয়ের ৫২ বছরে আমরা

রাজধানী টাইমসের সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

ত্রিশ লক্ষ শহিদ আর দুই লক্ষ মা-বোনের ইজ্জতের বিনিময়ে অর্জিত আমাদের বিজয় দিবস। ১৯৭১সালের ৭মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতা ও মুক্তির সংগ্রামের ডাক দেন। তিনি সেই দিন তর্জনী উঠিয়ে বজ্রকন্ঠে ঘোষনা দিয়েছিলেন এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম,এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম। সেই ভাষণের মধ্যেই মুক্তির অর্থাৎ আমাদের বিজয়ের বীজ নিহিত ছিল। ২৫মার্চ দিবাগত রাতে পাকিন্তানি সেনাবাহিনী পূর্ব পাকিস্তানের(পূর্ব বাংলার) জনগণের ওপর গনহত্যায় মেতে উঠে। তারা নিরস্ত্র,নিরীহ,ঘুমন্ত মানুষের ওপরে পৈচাশিকভাবে ঝাঁপিয়ে পড়ে। দীর্ঘ নয় মাসের রক্ষক্ষয়ী সংগ্রামের মধ্য দিয়ে ভারতের সামরিক সহযোগিতা ও তদানিন্তন সোভিয়েত ইউনিয়ন (রাশিয়া) কূটনৈতিক কৌশলে আমরা স্বাধীনতা অর্জন করি। আমরা একটি বিজয়,বিজয় পতাকা,একটি নতুন স্বাধীন মানচিত্র। সেই স্বাধীনতার বিজয় ১৬ডিসেম্বর। সেই দিন মানুষ শাসন-শোষণের নির্যাতনের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছিল এবং ভেবেছিল স্বাধীনতা অর্জনের মধ্য তারা তাদের মৌলিক অধিকারের নিশ্চয়তা পাবে।

বিজয়ের ৫২বছরে আমরা খাদ্যে স্বযংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছি ঠিকই কিন্তু দেশের ৭০ভাগ মানুষ দারিদ্রসীমার নিচে বাস করছে। এখনো দেশের মোট জনসংখ্যার ৩০ভাগ মানুষ দিনে এক বেলা, ৪০ভাগ মানুষ দুই বেলা, ২৭ভাগ মানুষ তিন বেলা এবং বাকী ৩ভাগ মানুষ কোন রকম জীবন ধারন করছে। শতকরা পাঁচ ভাগ মানুষের হাতে দেশের ৯৫ ভাগ সম্পদ। ২০২৩ জুন পর্যন্ত কোটিপতির সংখ্যা দাঁড়ায় ১ লাখ ১৩ হাজার ৫৫৪জন। অপর দিকে শ্রেণি বৈষম্য চরম আকার ধারণ করেছে যা হবার কথা ছিল না। বিভিন্ন সময়ে স্বৈরশাসন,ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য দেশের স্বার্থ বিরোধী চুক্তি অভ্যন্তরীন লুটপাট। বিজয়ের ৫২ বছরে আমাদেরকে নতুন করে শপথ নিতে হবে দেশ বাচঁলে আমরা বাঁচবো। স্বাধীনতার সময়ে আমাদের ভূমিহীন মানুষের সংখ্যা ছিল শতকরা ২২জন স্বাধীনতার ৫২ বছরে তার সংখ্যা দাঁড়িয়েছে শতকরা ৭৩ভাগে। যেই মানুষগুলো আজ বস্তিবাসী, ফুটপাতে, রেলস্টেশনে, লঞ্চ টার্মিনালে, পার্কে ঘুমায় সেই মানুষগুলোর একসময় ঘর ছিল, বাড়ি ছিল।

৪৮বছরের শাসন-শোষণের মধ্য দিয়ে সেই মানুষগুলো আজ সর্বহারা,বস্তিবাসী,উধবাস্তু। দেশে বর্তমানে বেকারের সংখ্যা ২৫ লাখ। একটি দেশের উন্নতির প্রথম ও প্রধান হাতিয়ার হলো তার শিক্ষা। ৫২বছরের শাসন-শোষণে শিক্ষা এখনো সক্ষমতা অর্জন করতে পারেনি। দেশে চার ধারার শিক্ষা ব্যবস্থা বিদ্যমান। আমাদের দেশের শিক্ষার সার্বিক চিত্রটা এখনো পিরামিড আকৃত্রির। টাকা যার শিক্ষা তার। তার প্রমাণ অসংখ্য প্রাইভেট স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিকেল কলেজ। ৫২ বছরে এখনো শিক্ষকদের সামাজিক মর্যাদা প্রতিষ্ঠিত হয়নি। ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলগুলোকে আমাদের মূল ধারার শিক্ষার সাথে যুক্ত করতে হবে। তা না হলে ওরা আমাদের সংস্কৃতি থেকে হারিয়ে যাবে।

বিজ্ঞাপন

আমাদের জাতীয় দিবসগুলো কোন তারিখে কোন দিবস,জাতীয় কবি কে ইত্যাদি সম্পর্কে ওরা প্রায় অজ্ঞ। অথচ ওরা আমাদের দেশের সন্তান। এই লজ্জা মা-বাবাসহ দেশের প্রতিটি জনগণের। শিক্ষা ও উন্নয়নে মাতৃভাষা বাংলাকে যেভাবে মূল্যায়ন করা দরকার তা আমাদের এখানে অনেক পিছিয়ে। স্বদেশের মাটি ও মানুষের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ, তাদের প্রতি দায়বদ্ধতার চেতনা গড়ে ওঠে মাতৃভাষার মাধ্যমে। আমাদের স্বাস্থ্যখাতের চিত্র কিছুটা ভিন্ন। ৪৮ বছরে আমাদের বেশ কিছু বিস্ময়কর সাফল্য এসেছে। বর্তমানে শিশু মৃত্যুর হার প্রায় ৪০এ দাঁড়িয়েছে (লাইফ বার্থ ১০০০)। আগে টিকার আওতায় কতজনকে আনা যেত তার হিসাব না পাওয় গেলেও বর্তমানে তা ৯৫ভাগে উন্নীত হয়েছে। আমরা এখন পলিও মুক্ত। ডায়রিয়া জনিত মৃত্যুর হার ১% দাঁড়িয়েছে। মাতৃ মৃত্যুর হার ৭০০ থেকে এখন ২৫০ (প্রতি ১লাখ লাইফ বার্থের বেলায়)। গড় আয়ু ৫০ থেকে ৬৮-৭০ বছরের উপরে পৌছেছে। শিশু জন্মের হার ৬.৮৫থেকে ২.৩০ এসে দাঁড়িয়েছে। জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ২.৬৭থেকে ১.৪০তে দাঁড়িয়েছে। সার্বিক স্বাস্থ্যসেবা সাধারণ মানুষের আওতার বাইরে। পর্যাপ্ত চিকিৎসক ও অবকাঠামো নেই। আবার যা আছে তারও যথাযথ ব্যবহার হচ্ছে না।

চিকিৎসকরা বিনা ফিতে চিকিৎসা দিতে রাজি নন। চিকিৎসকরা এখন সম্পূর্ণ বাণিজ্যিক, ৫০টাকার ওষুধ লেখতে ১০০০টকার পরিক্ষা করান। আবার কোন কোন ক্ষেত্রে চিকিৎসকরা প্রেসক্রিপশনে রচনা লিখে ফেলেন। অপুষ্টির শিকার ৫০ভাগের উপরে। ভেজাল ও মেয়াদ উর্ত্তীন ওষুধে সয়লাভ আমাদের বাজার। স্বাস্থ্যসেবা ঔষধ কোম্পানী ও চিকিৎসকদের নিকট বন্দী। সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীদের কারসাজি । সাধারণ মানুষের পকেট কেটে আমাদের দেশে থেকে প্রতি বছর গড়ে পাচার হচ্ছে ৬৪ হাজার কোটি টাকা। গ্লোবাল ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেগ্রিটির সর্বশেষ প্রতিবেদনে এই তথ্য তুলে ধরা হয়েছে।

৫২ বছরে আমাদের রাজনীতিতে মৌলিক কোন পরিবর্তন আসেনি । দেশের রাজনীতি ক্রমাগত বিনিয়োগ বা ব্যবসা হয়ে যাচ্ছে বর্তমান সংসদ সদস্যদের মধ্যে ৮০ভাগই ব্যবসায়ী। বিশ্বে একমাত্র আমাদের দেশেই মনোনয়ন কেনা যায়। বিল পরিশোধ না করার এক অদ্ভুদ সংস্কৃতি চালু হয়েছে। এ ক্ষেত্রে মন্ত্রি,বিভিন্ন বিভাগের সরকারি আমলা, রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান, আধা স্বায়িত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান কেই বাদ নেই। ব্যাংকের ঋণখেলাপীরা এবং কালো টাকার মালিকরা এখানে অবাধ স্বাধীনতা ভোগ করেন। খেলাপী ঋণের পরিমাণ দেড় লাখ কোটি টাকা এবং কালো টাকার পরিমান-১৩২লাখ ৫৩হাজার ৫০০কোটি টাক। সরকারি চাকরিতে ক্ষমতাসীন দলের লোকদের চাকরি দিতে গিয়ে প্রশাসনকে সম্পূর্ণ এলোমেলো করে ফেলা হয়েছে। ঘুস, দুর্নীতি আজকে ওপেন সিক্রেট হয়ে গেছে। ঘুষকে এখন বলা কাজের গতি। ২১ ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে পালিত হচ্ছে ঠিকই কিন্তু মাতৃভাষার উৎকর্ষ সাধনের ব্যাপারে প্রয়োজনীয় যেসব উদ্যোগ গ্রহণ করা উচিত ছিল তার প্রয়োজনীয় কোন উদ্যোগই গ্রহণ করা হয়নি। যা আত্মদান,আন্দোলন বা অঙ্গিকারকে প্রশ্নবিদ্ধ করে।

বিজ্ঞাপন

আমরা যদি আমাদের ক্রমবর্ধমান বৈষম্য এবং লুটপাট ও দুর্নীতিকে বন্ধ করতে বা ঠেকাতে না পারি তবে নির্ঘাত দেশে আমবশ্যার করাল ছায়া নেমে আসবে। আমরা দুজন প্রেসিডেন্টকে হত্যা করেছি,কারাগারের অন্ধপ্রকোষ্টে বন্দি মুক্তিযুদ্ধের চার নেতাকে হত্যা করেছি। বিগত সরকারের সময়ে রাজাকাররা পেয়েছে মন্ত্রীত্ব,গাড়িতে উঠেছে জাতীয় পতাকা আর মুক্তিযোদ্ধারা পেয়েছে লাঠিপেঠা। এ বড় লজ্জা! দেশের ৬৩ জেলায় সবকটি আদালতে একত্রে বোমা হামলা চালানো হয়েছে। এতে এজলাসেই দুজন বিচারকের প্রাণহানি ঘটেছে। একজন অর্থমন্ত্রি ও আরো বেশ কয়েকজন উর্ধ্বতন রাজনীতিবীদের হত্যাকান্ডের বিচার আজও হয়নি। মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে এদেশের মানুষ আশা করেছিল দেশ স্বাধীন হবার পর দেশে অর্থনৈতিক ও সামাজিক মুক্তি আসবে। রাষ্ট্র হবে একটি কল্যাণ রাষ্ট্র যেখানে সকল নাগরিকের দাবী পূরণের চেষ্টা থাকবে। কিন্তু আজকে যারা কোটি টাকার মালিক সেই দিন তাঁদের পরিবারের কেউ মুক্তিযুদ্ধে শহিদ হয়নি,জীবন দেয়নি,সেই দিন যারা জীবন দিয়ে শহিদ হয়েছেন তারা সবাই ছিলেন শ্রমিক,কৃষক ও সাধারণ পরিবারের সদস্য। আজ তারা অবহেলিত অসমাদৃত।দেশের আদালতগুলোতে বিচারাধীন মামলার সংখ্যা প্রায় ৩০লাখের উপরে। এই বিলম্বের কারণে বিপুল সংখ্যক বিচাপ্রার্থী ন্যায্য বিচার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। টেকসই অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য আমাদেরকে নতুন নতুন বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন,নতুন নতুন গ্যাসক্ষেত্র অনুসন্ধান, নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহার এবং সর্বপোরি নিরাপত্তার বিষয়ে কোন ছাড় না দিয়ে পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মামের ব্যাপারে গুরুত্ব দিতে হবে। ১৯৭২ সালেই বাংলাদেশ পারমাণু শক্তির ব্যাপারে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং সম্ভামনাময় একটি দেশ ছিল। তখন ঢাকায় দক্ষ ও যোগ্য পরমাণু বিজ্ঞানীরা ছিলেন।

রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার অভাব আর দীর্ঘ সামরিক শাসনের কারণে আমাদের সেইসব মেধাবী বিজ্ঞানীরা তাদের মেধাকে কাজে লাগাতে পারে নি। অদ্যবধি আমাদের শাসনধারা সুষ্ঠু রূপ নিতে পারেনি। নজরদারি ও সময়োচিত হস্তক্ষেপের অভাবে সরকারি খাস জমি,রেলওয়ের জমি, নদীর তীর,সরকারি বিভিন্ন ভবন দুর্বৃত্ত ও প্রভাবশালীদের দখলে চলে যাচ্ছে,বেদখল হচ্ছে ঢাকাসহ প্রায় সকল শহরের ফুটপাত ও ওভারব্রীজ। স্বাধীনতার সময় আমাদের নৌ-পথ ছিল ২৪হাজার কিলোমিটার আর স্বাধীনতার ৪৮বছরে দখল,অযত্ন এবং অবহেলায় তা এসে ৬হাজার কিলোমিটারে। এর পিছনে বড় কারণ ঘুষ,দুর্নীতি, দলীয়করণ ও স্বজনপ্রীতি। রাজনীতিবীদ, ব্যবসায়ী, গাড়ি কিংবা জ্বালনিী তেলের ডিলার এবং দাতার সবাই বেশি বেশি সড়ক নির্মাণের জন্য মহাব্যাকুল। অথচ সড়ক নির্মাণে আবাদী জমির পরিমাণ হ্রাস পাচ্ছে এবং জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হচ্ছে কিন্তু আমাদের জন্য সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ নৌ-পথ ও রেলপথ সম্প্রসারণে কারো কোন ভূমিকা নেই। এই বিষয়ে বামপন্থীরা কথা বললেও ক্ষতাসীনরা তা আমলে নেয় না। এই সংস্কৃতি থেকে আমাদের বেড়িয়ে আসতে হবে । তবেই স্বাধীনতা, বিজয় সফল ও স্বার্থক হবে। আমাদের দেশের নারীরা দেশে বিদেশে উভয় ক্ষেত্রে অবদান রাখছে। ২০১১সালে আন্তর্জাতিক রপ্তানীর ক্ষেত্রে জাহাজ রপ্তানীর জন্য যিনি পুরস্কৃত হয়েছেন তিনি একজন নারী।

সরকারি মালামাল কেনা কাটার ক্ষেত্রে চলছে অবাধ অনিয়ম ও দুর্নীতি। অর্থনীতির ক্ষেত্রে রয়েছে আমাদের ছয়টি চ্যালেঞ্জ ; মুদ্রাস্ফীতি, জ্বালানী ব্যবহারের ক্ষেত্রে মূল্যের ভারসাম্য রক্ষা,মুদ্রনীতি ও অর্থনীতির ক্ষেত্রে ভারসাম্য বজায় রাখা,বিদেশি বিনিয়োগের ক্ষেত্রে উদ্ভুত সমস্যা,ঋণখেলাপীদের মোকাবেলা ও অবকাঠামোর উন্নয়ন সাধন। এসব চ্যালেঞ্জের সাথে খাদ্য নিরাপত্তা ও নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্যবৃদ্ধি বিষয়টি যুক্ত হওয়া দরকার। ইতোমধ্যে চালের মূল্যবৃদ্ধি এ যাবৎকালের ইতিহাসে সর্বোচ্চ পর্যায় নিয়ে পৌঁছেছে। ইতোমধ্যে পেঁয়াজের দাম ডবল সেঞ্চুরী হাকিয়েছে।

রাজনীতি থেকে শুরু করে সবক্ষেত্রে আমরা সিন্ডিকেটের মধ্যে আবদ্ধ হয়ে আছি। সমগ্র দেশ সিন্ডিকেটদের নিকট জিম্মি। আমরা একবার জলন্ত উননে আরেকবার উপ্তত্ত কড়াইতে ভাজা হচ্ছি। আমাদের মনে রাখতে হবে ছায়ার জন্য বটবৃক্ষের জুড়ি নেই সত্যি কিন্তু এর নিচে অন্য কোন গাছ বেড়ে ওঠা আমাদের বিজয় দিবস আজ অনেক ক্ষেত্রেই উপেক্ষিত। শুধু ২৬মার্চ ও ১৬ডিসেম্বর আসলেই শুরু হয় নানান আয়োজন। বিজয়ের ৫২বছরে এসেও আমারা বিজয়টাকে খুঁজছি। একদিন যে মানুষটা বুকে আশা নিয়ে মুক্তিযুদ্ধে গিয়েছিল বিজয়ের ৫২বছরে তার আশা এতোটুকু পূরণ হয়নি। তখন একজন শ্রমিক যে বেতন পেত তা দিয়ে ২মন চাল কেনা যেত এবং ৫জনের সংসারে অন্যান্য খরচ বহণ করা যেত। কিন্তু আজকে একজন শ্রমিক যা বেতন পায় তা দিয়ে ৫জনের সংসার চলে না। আদমজীর মালিক নিজের দেশে অর্থ পাচারের পরও সেই আদমজীর লাভ দিয়ে তিনটি কারখানা তৈরি করেন কিন্তু বিজয়ের ৩০ বছরের মধ্যে এসে আদমজী লোকসানী প্রতিষ্ঠান হতে হতে অবশেষে প্রতিষ্ঠানটিকে বন্ধ করে দেওয়া হলো। একটি স্বাধীন দেশের মেয়েরা দেহ বিক্রী করে জীবন ধারণের পথ বেছে নিয়েছে। এর নাম কি বিজয় ?

অসাংবিধানিক ভাবে সংবিধান সংশোধন করা হয়েছে কয়েক বার। অনেকগুলো কালো আইন রচিত হয়েছে এদেশের মানুষকে শোষণ করার জন্য। আমাদের বিজয় আজ হুমকীর মুখে। রাজনীতিতে ধর্মের ব্যবহার আজ বিজয়কে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। আমাদের বিজয় আজ অনেকটাই পরজয়ের শৃঙ্খলে বন্ধি। দেশের শাসকগোষ্ঠী বিদেশি বেনিয়া,প্রভূদের নিকট গিয়ে ক্ষমতায় আসীন হওয়া নিশ্চিত করে। এটা স্বাধীনতা ও শহিদদের রক্তের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করা। প্রতিটি নিঃশ্বাসে কিনতে ইচ্ছে হয় বাঁচার পথ অথচ দেখছি মৃত্যুর হাতছানি। কোথাও কোন নিরাপত্তা নেই। বিজয়ের ৫২বছরেও দেখতে হচ্ছে হাঁটে,মাঠে,ঘাটে জয়নুল আবেদিনের আঁকা দুর্ভিক্ষ পীড়িত মুমূর্ষ ছবিগুলোর বাস্তব ক্রেষ্ট। কোথাও কোন প্রতিবাদ নেই। মনে হয় যুদ্ধের বাজারে আছি। দ্রব্যমূল্যের চরম উর্ধ্বগতি,বাজারে কোন স্থিতিশীলতা নেই। পাল্লা দিয়ে বৃদ্ধি পাচ্ছে জ্বালানি ও পরিবহন খরচ। সমস্ত দেশটাকে কয়েকটা সিন্ডিকেটে ভাগ করে রাখা হয়েছে। অসাধু ব্যবসায়ীরা খাদ্যে বিষ মিশাচ্ছে। শুধু তাই নয় কোন কোন ক্ষেত্রে ফরমালিন,প্রিজারভেটিভসহ আরো বিষাক্ত কেমিকেল মিশিয়ে তা অবাধে তুলে দিচ্ছে ক্রেতাদের হাতে। যা স্বাস্থ্য এবং প্রজনন স্বাস্থ্যের জন্য হুমকী। যেন তা দেখার কেউ নেই। আমরা সাধারণরা খুবই অসহায়। নির্বাচনে ভোট প্রদান করার অধিকারও কেড়ে নেওয়া হয়েছে। সেই দিন দলমত ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সাড়ে সাত কোটি মানুষ এক কাতারে এসে দাঁড়িয়েছিল। বিজয়ের ৪৮বছরে এসে যখন পত্রিকার পাতা খুললে দেখি কোন এলাকার এক মুক্তিযোদ্ধা চা বিক্রি করে,কুলিগিড়ি করে,রিকসা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করছে। তখন আহত হই,নিজেকে অপরাধী মনে হয়। জীবিত অবস্থায় একজন মুক্তিযোদ্ধা যদি তার প্রাপ্য সম্মান টুকু না পায় এবং মৃত্যুর পরে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দাফন! এ পাওয়া আর না পাওয়ার মধ্যে তফাৎ কতটুকু ?

মুক্তিযুদ্ধের সময় মানুষের চোখে যে স্বপ্ন ছিল বিজয়ের ৫২বছরে এসে তা দুঃপ্নে পরিণত হয়েছে। টেন্ডরবাজি, ছিনতাই, অপহরণ, হত্যা, খুন, ধর্ষণ, গুম কয়েকগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। গ্যাস,বিদ্যুৎ ,পানির সংকট এবং যানজটের কারণে মানুষের ভোগান্তি চরমে। তিস্তা,ফরাক্কা চুক্তির সুরাহা আজও হয় নি। তেল,গ্যাস,বন্দর ,সমুদ্রসীমা ও কয়লার মত জাতীয় সম্পদ মুনাফা লোভী সামাজ্যবাদী-বহুজাতিক কোম্পানীসমূহের হাতে তুলে দেবার পাকা বন্ধোবস্ত হচ্ছে। মাঝে মাঝে মনে হয় সরকার এবং আইন প্রয়োগকারী সংস্থার চেয়েও দখলদার ও সিন্ডিকেটের হাত অনেক বেশি শক্তিশালী। আমাদের সংস্কৃতি অপসংস্কৃতির বেড়াজালে আবদ্ধ। এই অপসংস্কৃতির চর্চা থেকে তরুণ সমাজকে বেরিয়ে আসতে হবে। পাঠ্যপুস্তকে বৃটিশবিরোধী আন্দোলন থেকে শুরু করে মুক্তিযুদ্ধ এবং দেশ স্বাধীনতা পরবর্তী সকল গণতান্ত্রিক আন্দোলনের প্রকৃত ও সঠিক ইতিহাস তুলে ধরতে হবে।মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক ব্যাপক নাটক ও চলচ্চিত্র নির্মাণের মধ্য দিয়ে তরুণ এবং যুব সমাজের মধ্যে দেশপ্রেমের জাগরণ ঘটাতে হবে। মুক্তিযুদ্ধের চিঠিগুলোর ব্যাপক প্রচার ও প্রসার ঘটাতে হবে। খেলাধুলার ক্ষেত্রে চলছে স্বজনপ্রীতি আবার কোন কোন ক্ষেত্রে নারী কেলেংকারী,অর্থ লুটপাট। “ গত ১০ বছরে লাশ হয়ে ফিরেছে ২৮হাজার নারী কর্মী।” একজন নয় ,দশজন নয়,একশতও নয়,এক হাজারও নয় ২৭ হাজার। ২৭ হাজার এই সংখ্যাটি আমাদের জন্য যেমন অনেক বেশি উদ্বেগের ঠিক তেমনি উৎকন্ঠারও। এই মানুষগুলো নিজেদের ভাগ্য বদলাতেজীববনমান উন্নয়নের জন্য রাষ্ট্রের রেমিট্যান্স বৃদ্ধিতে সহায়সম্বল বিক্রি করে কিংবা মহাজনী চওড়া সুদে পাড়ি দিয়েছিলেন প্রবাসে কিন্তু কেন তারাই ফিরছেন লাশ হয়ে। পরিবার তখন অনিশ্চিৎ ভবিষ্যতের দিকে , চোখে মুখে শুধুই ধূসর বালুচর। এই লাশ বহন করা যেমন পরিবারের জন্য কষ্টের তেমনি কষ্টের রাষ্ট্রের অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য। প্রবাসী শ্রমিকরা শুধু নিজের ভাগ্যই বদল করে না , দেশের অর্থনীতির চাকাও সচল রাখতে আবশ্যকীয় এবং সক্রিয় ভূমিকা পালন করে। এই সংখ্যা যদি নারী কর্মীদের হয় তবে পুরুষ কর্মীদের সংখ্যা হয়তো আরো অনেক বেশি হবে। এই লাশগুলো কোন ভাবেই আমাদের কাম্য নয়।

যদি আমরা বরাদ্দকৃত অর্থ এবং সরঞ্জামের সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করতে পারি তবে আমরা খেলাধুলার ক্ষেত্রে কাঙ্খিত ফলাফল লাভ করতে পারব। এতোকিছুর পরও বিজয়ের ৫২বছরে এসে আমারা আশার আলোও দেখছি। আমাদের দেশ হবে সোনার বাংলাদেশ। হারানো গৌরবকে ফিরে পাব। এই ৫২বছরে আমাদের অনেক উন্নতি হয়েছ,অনেক উন্নতি আমাদের চোখের সামনে দৃশ্যমান তা অস্বীকার করার কোন উপায় নেই। খেলাধুলার ক্ষেত্রে আমরা আশানুরূপ ফল না পেলেও অনেক উন্নতি হয়েছে। আমাদের আন্তর্জাতিক মানের গলফার আছেন,দাবারু আছেন, শূটার আছেন,তীরোন্দাজ আছেন ইত্যাদি। খেলাধুলার অন্যন্য ক্ষেত্রেও আমরা এগিয়ে যাচ্ছি। যদি আমরা বরাদ্দকৃত অর্থ এবং সরঞ্জামের সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করতে পারি তবে আমরা খেলাধুলার ক্ষেত্রে কাঙ্খিত ফলাফল লাভ করতে পারব। ফাইন আর্টসের ক্ষেত্রে বিভিন্ন দেশে আন্তর্জাতিক পুরষ্কার পাচ্ছে, দেশের বিভিন্ন চলচিত্র বিভিন্ন সময়ে আন্তর্জাতিক পুরষ্কার ও ভূয়সী প্রশংসা অর্জন করেছে। হিমায়িত খাদ্য রপ্তানী, পোশাক শিল্প,চামড়া শিল্প,চা প্রভৃতি ক্ষেত্রে আমরা আমাদের সাফল ধরে রেখেছি। সুখের খবর হলো এই আমরা এখন বিদেশে জাহাজ ও সিমেন্ট রপ্তানী করছি। আমাদের তরুণ সমাজের মাঝে দেশপ্রেম ও জাতীয় চেতনা জেগে উঠেছে। সবচেয়ে খুশির খবর হলো ইতোমধ্যে আমরা ভূ-উপগ্রহে আমাদের নিজস্ব স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করেছি। মুক্তিযুদ্ধে আমাদের বিজয় যেমন কোন দলের ছিলনা, ছিল সব মানুষের। বিজয়ের ৫২বছরের দেশটাকে গড়তে হবে তেমনি সব মানুষের জন্যে, কোন ব্যক্তি,দল বা গোষ্ঠীর স্বার্থে নয়। লক্ষ প্রাণের বিনিময়ে যা পেয়েছি তা ধরে রাখার শক্তি ও সামর্থ্য আমাদের আছে। আমাদের তরুণ ও যুব সমাজ অনেক বেশি ত্যাগ করতে প্রস্তুত ইতিহাস তার সাক্ষ্য বহণ করে। কোন কিছুর বিনিময়ে সেই ইতিহাসকে কালিমা লেপন করা যাবে না। মুক্তিযুদ্ধের চেতনার ভিত্তিতে আমারা আমাদের সোনার বাংলা কে গড়ে তুলব। সেখানে পরাজিত শক্তির কোন স্থান হবে না।

আকৃতি, উৎপত্তি, জাতিসত্তা, সংস্কৃতি ও ধর্মনির্বিশেষে সকল সম্প্রদায়ের মানুষের মর্যাদা ও স্বার্থ সমুন্নত রাখা আমাদের কর্তব্য।

 

 সুধীর বরণ মাঝি, শিক্ষক, হাইমচর সরকারি মহাবিদ্যালয়, হাইমচর-চাঁদপুর।

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল rajdhanitimes24.com এ লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয়- মতামত, সাহিত্য, ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার ছবিসহ লেখাটি পাঠিয়ে দিন rajdhanitimes24@gmail.com  এই ঠিকানায়।

শীর্ষ সংবাদ:
বিশ্বব্যাপী ক্যাম্পাসে ক্যাম্পাসে ছড়িয়ে পড়ছে ইসরায়েলবিরোধী বিক্ষোভ ঢাকাসহ ২৫ জেলায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ আজ রোহিঙ্গাদের ফেরাতে বাংলাদেশের পাশে আছে ইউরোপ : পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলছে শনিবার থেকে রাণীশংকৈল উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে প্রতীক পেলেন প্রার্থীরা, জমে উঠলো নির্বাচন গুইমারায় সর্বজনীন পেনশন স্কিমে অন্তর্ভুক্ত হলেন ইউএনও’র সহধর্মিণী ও বড় ভাই ভূরুঙ্গামারী উপজেলা পরিষদ নির্বাচন: পদে ১২ প্রার্থীর মনোনয়ন জমা শ্রেষ্ঠ মাদ্রাসা অধ্যক্ষ নির্বাচিত হলেন মুফতি মাও: মুজির উদ্দিন মিল্টন সমাদ্দার ৩ দিনের রিমান্ডে নির্বাচনের প্রস্তুতি ও প্রচারণা দেখতে আ.লীগকে বিজেপির আমন্ত্রণ উপজেলা নির্বাচন: আরও ৬৬ জনকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত বিএনপি’র প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত অফিসার পরিচয়ে টাকা হাতিয়ে নেওয়া যুবক গ্রেপ্তার গরমে মানুষকে স্বস্তি দিতে গোয়ালন্দ ফায়ার সার্ভিসের শরবত বিতরণ ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিন-ইসরায়েল সমর্থকদের সংঘর্ষ আদালতের নিষেধাজ্ঞা অগ্রাহ্য: দুমকির ইউএনও’কে লিগ্যাল নোটিশ হবিগঞ্জে হত্যা মামলায় ৭ জনের মৃত্যুদণ্ড রাজশাহীতে ৫২ বছরের মধ্যে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড যশোরের ভৈরব নদে পাওয়া বস্তাবন্দি মৃতদেহের পরিচয় সনাক্ত নরসিংদীতে নগদের ৬০ লাখ টাকা ছিনতাইয়ের ঘটনায় ৩ জন গ্রেপ্তার শেবাচিম হাসপাতাল র্যাবের অভিযানে দালাল চক্রের ২৫ সদস্য আটক