স্বপ্নের পদ্মা সেতু দিয়ে যানবাহন চলাচল শুরু হওয়ার পর ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কে পরিবহনের সংখ্যা কয়েকগুন বৃদ্ধি পেয়েছে। ঢাকা থেকে যাত্রীনিয়ে সর্বোচ্চ সাড়ে তিন ঘন্টার মধ্যে বরিশালে আসছে বিলাসবহুল পরিবহন।
তবে ঈদ যাত্রা নিরাপদ করতে ভাঙ্গা থেকে বরিশাল পর্যন্ত এক্সপ্রেসওয়েসহ ফোরলেন না হওয়া পর্যন্ত মহাসড়কে থ্রি-হুইলারসহ কমগতির যান চলাচল বন্ধের দাবি জানিয়েছেন পরিবহন চালক ও শ্রমিকরা। এতে করে মহাসড়কে যানজটসহ দুর্ঘটনার সংখ্যা কমে আসবে বলেও উল্লেখ করেছেন পরিবহন সংশ্লিষ্টরা।
অপরদিকে আসন্ন ঈদ যাত্রা নিরাপদ করতে মহাসড়কে বেপরোয়াগতির থ্রি-হুইলার চলাচল নিয়ন্ত্রন করাসহ মহাসড়কের পাশে থ্রি-হুইলারের পার্কিং বন্ধে কঠোর অবস্থানে নেমেছেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা।
এনিয়ে গত ৩ জুলাই বরিশাল বাস মালিক ও শ্রমিকদের সাথে সমন্বয় সভা করেছেন পুলিশের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। বরিশাল কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালস্থ জেলা বাস মালিক গ্রুপের কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সভায় সভাপতিত্ব করেন মেট্রোপলিটন পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার শেখ মোহাম্মদ সেলিম। সভা শেষে তিনি বলেন, পদ্মা সেতু চালুর পর বরিশালে যানবাহনের চাঁপ বেড়েছে তিনগুন। এমতাবস্থায় আসন্ন ঈদ-উল আযহায় ঘরে ফেরা মানুষদের যাত্রা নির্বিঘ্নে করতে সভায় নানা সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে। এরমধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ন হচ্ছে মেট্রোপলিটন এলাকার মহাসড়কে থ্রি-হুইলার পার্কিং করতে না দেয়া। কারন হিসেবে তিনি বলেন, ঢাকাসহ উত্তরাঞ্চল থেকে বরিশালে আসা যানবাহনের কারনে এসব থ্রি-হুইলার যানবাহন দুর্ঘটনার মুখে পরার সম্ভাবনা রয়েছে। ঈদ করতে এসে যাতে কারো প্রাণহানি না হয় কিংবা থ্রি-হুইলারের কারণে তীব্র যানজটের সৃষ্টি না হয় সেদিকে কঠোর নজরদারি রাখা হবে।
অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার বলেন, অন্যান্য সিদ্ধান্তের মধ্যে রয়েছে যাত্রী পূর্ণ করে টার্মিনাল থেকে গাড়ি বের করতে হবে, কাউন্টার ব্যতিত কোথাও টিকিট বিক্রি করা যাবেনা, অতিরিক্ত যাত্রীবহন করা যাবে না, অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করা যাবেনা এবং নিজস্ব স্বেচ্ছাসেবী থাকতে হবে।
বৃহস্পতিবের বিকাল চারটার দিকে ঢাকার সায়েদাবাদ থেকে বরিশাল এসে পরিবহন চালক মোখলেসুর রহমান বলেন, পদ্মা সেতুর কারণে ঢাকা-বরিশাল রুটে ফেরিযুগের অবসান হয়েছে। এখন থেকে আর কাউকে ফেরিঘাটের অসহনীয় ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে না। তবে যাত্রা নিরাপদ করতে এখন প্রয়োজন ভাঙ্গা থেকে বরিশাল হয়ে কুয়াকাটা পর্যন্ত মহাসড়ক থেকে থ্রি-হুইলার যেমন, অটোরিকসা, ব্যাটারিচালিত ভ্যান, সিএনজি, মাহিন্দ্রা, নছিমন, করিমন, টমটম চলাচল বন্ধ করা। আর এগুলো চলাচল বন্ধ হলে পরিবহন চালকরা নিশ্চিন্তে নির্বিঘেœ গাড়ি চালাতে পারবেন। তিনি আরও বলেন, মহাসড়কে যতো দুর্ঘটনা ঘটে তার বেশিরভাগের ক্ষেত্রে রয়েছে স্বল্পগতি এবং থ্রি-হুইলারের কারণ। আর এসব স্বল্পগতির যানের চালকরা তেমন একটা দক্ষও নন।
অপর পরিবহনের চালক শাহিন তালুকদার বলেন, থ্রি-হুইলারের সাথে মহাসড়কের পাশে গড়ে ওঠা হাট-বাজার দোকানপাটগুলো অপসারণ করা জরুরি হয়ে পরেছে। তিনি আরও বলেন, পদ্মা সেতু দিয়ে যানচলাচলের প্রথমদিন থেকেই ঢাকা থেকে বরিশাল হয়ে কুয়াকাটা পর্যন্ত মহাসড়কে যানবাহনের চাপ কয়েকগুন বৃদ্ধি পেয়েছে। আর ভাঙ্গার পর থেকে কুয়াকাটা পর্যন্ত মহাসড়কজুড়ে থ্রি-হুইলার যানবাহন অবাধে চলাচল করছে, ফলে নির্বিঘ্নে গাড়ি চালানো সম্ভব হয়না। এছাড়া সড়কের পাশে থাকা হাট-বাজার দোকানপাট আরও চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। আবার অনেক জায়গায় দেখা যায় মহাসড়কের পাশ ঘেষেই গাছ কেটে ফেলে রেখেছেন স্ব-মিলের মালিকরা। এককথায় ভাঙ্গা থেকে বরিশাল হয়ে কুয়াকাটা পর্যন্ত মহাসড়কটি অনেকটা বিপদজনক।
একাধিক বাস শ্রমিকরা বলেন, শুধু মহাসড়কের পাশে বাজার আর থ্রি-হুইলারের কারণে বরিশাল শহরের কাশিপুর গড়িয়ারপাড়, রহমতপুর, উজিরপুরের ইচলাদি, জয়শ্রী, গৌরনদীর বাটাজোর, মাহিলারা, গৌরনদী বাসষ্ট্যান্ড, টরকী, বার্থী, ভূরঘাটা, মাদারীপুরের কালকিনি, মস্তফাপুর, রাজৈর, টেকেরহাট, ভাঙ্গা বাজার এলাকা পার হতে তীব্র যানজটের পাশাপাশি ভোগান্তির শেষ থাকেনা। আবার বরিশাল থেকে কুয়াকাটা পর্যন্ত যেতে নথুল্লাবাদ থেকে বিশ্ববিদ্যালয় ও বাকেরগঞ্জ বাসষ্ট্যান্ডে চরম ভোগান্তি পোহাতে হয়।
অন্তরা পরিবহনের চালক রিজভী আহমেদ বলেন, মহাসড়কে যারা থ্রি-হুইলার চালান তাদের যে আচরণটি সব চেয়ে ভয়ের, সেটি হলো-আকস্মিক যানবাহন ঘুরিয়ে ফেলা, সড়কের মাঝে চলে আসা নয়তো সাইডলেন থেকে আকস্মিক মহাসড়কে উঠে আসা এবং যেখানে সেখানে কোন সিগন্যাল বাতি না জ্বালিয়ে হঠাত করে থামিয়ে যাত্রী ওঠানো কিংবা নামানো হয়। আর এ সময় পরিবহন চালকরা আকস্মিক ব্রেক দিলে গতিতে থাকা গাড়িটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে। একইভাবে বাজার এলাকায় মানুষজন আপনমনে যে যার মতো রাস্তা পার হওয়ার কারণে প্রায়ই দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছেন।
সরেজমিনে দেখা গেছে, বরিশাল থেকে কুয়াকাটাগামী মহাসড়কের বাকেরগঞ্জ উপজেলার ব্যস্ততম বাসস্টান্ড এলাকার মহাসড়ক ঘেঁষে দোকান ঘর নির্মান করে চড়া মূল্যে ভাড়া দিয়ে আসছেন কতিপয় প্রভাবশালীরা। একইভাবে ফুটপাত দখল করে রেখেছে ভ্রাম্যমান হকাররা। ফুটপাত ও রাস্তা দখলের কারনে বাকেরগঞ্জ পৌর শহরের প্রবেশপথ সদররোডসহ প্রতিটি মোড়ে প্রতিনিয়ত যানজট লেগেই রয়েছে। পাশাপাশি মহাসড়কের ওপর থ্রি-হুইলারের স্টান্ড বানিয়ে মহাসড়কটি দখল করে রাখা হয়েছে। ফলে জেলা ও আন্তঃজেলা বাস চলাচলে ব্যাপক বাঁধাগ্রস্থ হতে হচ্ছে।
বরিশাল জেলা বাস মালিক গ্রুপের দপ্তর সম্পাদক অমল চন্দ্র দাস বলেন, নসিমন, করিমনসহ মহাসড়কে আতঙ্কের নামই হচ্ছে থ্রি-হুইলারগুলো। এগুলো চলাচল বন্ধ না হলে দুর্ঘটনা বাড়বে। আর এখন তো বরিশাল-ঢাকা রুটে উচ্চ গতি সম্পন্ন বিলাসবহুল গাড়ির সংখ্যা বেড়েছে, এর সংখ্যা আরও বাড়বে। তাই এখন সময় এগুলো মহাসড়ক দিয়ে উঠিয়ে দেওয়ার।