আসন্ন বরিশাল সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে মেয়র সাদিক আব্দুল্লাহকে মনোনয়ন বঞ্চিত করা এবং তার আপন চাচা আবুল খায়ের ওরফে খোকনের ওপর হাইকমান্ড আস্থা রাখায় স্থানীয় আওয়ামী লীগে অস্থিরতা চরমাকারে ভর করেছে। কেন্দ্রের এই সিদ্ধান্তের পরে বরিশাল মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাদিক বেশকিছু দিন নিশ্চুপ থাকলেও পরবর্তীতে তিনি মেয়র প্রার্থী চাচা খোকন সেরনিয়াবাতের পক্ষালম্বন করে রাজধানী ঢাকা থেকে ভাচুয়ালী যুক্ত হয়ে নেতাকর্মী-অনুসারীদের দিক-নির্দেশনামূলক রাখেন।
কিন্তু নেতার নির্দেশনার এক সপ্তাহেও নৌকা প্রার্থীর পক্ষে সাদিক অনুগত জেলা বা মহানগরের কোনো গুরুত্বপূর্ণ নেতাকে প্রার্থী খোকনের পক্ষে মাঠে দেখা যায়নি। বরং মনোনয়ন বঞ্চিত মেয়রপন্থীরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে সরব থেকে খোকন সেরনিবাতসহ তাকে রাজনৈতিক মাঠে শক্তি-সাহস জোগান দেওয়া বরিশাল সদর আসনের এমপি পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক শামীমের অনুসারীদের বিভিন্ন ইস্যুতে বিতর্কিত করতে মরিয়া হয়ে উঠেছে, খোড়া অজুহাতে দিচ্ছে স্ট্যাটাস। বিপরিতে খোকন সেরনিয়াবাত মাঠে আছেন ভাতিজা সাদিকবিরোধী বড় একটি অংশ নিয়ে, যারা সাবেক সিটি মেয়র প্রয়াত আওয়ামী লীগ নেতা শওকত হোসেন হিরণের অনুসারী এবং বর্তমানে পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রীর আশ্রয়-প্রশ্রয়ে রয়েছেন।
জনশ্রুতি রয়েছে, বর্তমান সিটি মেয়র সাদিক আব্দুল্লাহকে মনোনয়ন বঞ্চিত রাখা এবং সৎ-সজ্জন ব্যক্তি হিসেবে পরিচিত খোকন সেরনিয়াবাতকে আওয়ামী লীগের হাইকমান্ডে সমর্থন দেওয়ার ক্ষেত্রে পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নেপথ্যে থেকে বড় একটি ভুমিকা রাখেন। এবং দলীয় মনোনয়ন প্রাপ্তির পর খোকনকে নিয়ে প্রতিমন্ত্রী সমর্থিতরা সরব হলেও সাদিক অনুসারীরা একেবারে নিরব থাকছেন। সর্বশেষ যা প্রতীয়মাণ হয়, মঙ্গলবার খোকন সেরনিয়াবাতের গণসংযোগ কর্মসূচির মধ্য দিয়ে। এদিন দু দফা খোকন সেরনিয়াত নৌকার পক্ষে প্রচারণা চালালেও তার পাশে সাদিক অনুসারী কাউকে দেখা যায়নি, এমনকি জেলা-মহানগর আওয়ামী লীগের গুরুত্বপূর্ণ পদধারী কেউ ছিলেন না।
ফলশ্রুতিতে এই ধারণা বদ্ধমূল হয়ে ওঠে যে মনোনয়ন বঞ্চিত সাদিক আব্দুল্লাহ’র অনুসারীরা এখনও অভিমানে ক্ষুব্ধ এবং বরিশালের রাজনীতিতে তাদের নেতার প্রতিপক্ষ কারও উত্থ্যান হোক এটা মানসিক ভাবে মেনে নিতে পারছেন না। যে কারণে তারা রাজনীতির মাঠে নিস্ক্রিয় থাকলেও ফেসবুকে সরব থাকছে নৌকা প্রার্থী এবং তার কর্মী-সমর্থক বিরোধী মনভাব নিয়ে। অবশ্য এনিয়ে জলও কম ঘোলা হয়নি, বিষয়টি গড়িয়েছে কেন্দ্র অবধি।
সিটি নির্বাচনের আগে এই বিরোধ মেটাতে করণীয় নির্ধারনে আওয়ামী লীগের হাইকামান্ড যখন দুশ্চিন্তার মধ্যে আছে, ঠিক সেই সময় অর্থাৎ ১ মে আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস পালনকে কেন্দ্র করে সাদিক এবং জাহিদ-খোকন সমর্থকরা পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি পালন করে রাজনীতির মাঠ যেন আরও উত্তপ্ত করে তুললেন, এমনকি দ্বন্দ্ব প্রকাশ্য রুপ দিলেন।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা বলছেন, নির্বাচনের আগে স্থানীয় রাজনীতির এই বিরোধ মেটানো না গেলে চরম খেসারত দিতে হবে আওয়ামী লীগকে। সেক্ষেত্রে বাড়তি সুবিধা পেয়ে প্রতিপক্ষ চরমোনাই, জাতীয় পার্টি এবং স্বতন্ত্র প্রার্থীরা ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থীকে এক ধরনের চ্যালেঞ্জের ভেতর ফেলে দেবে। এতে করে নৌকা প্রার্থীকে বিজয়ী করা অনেকাংশে কষ্টসাধ্য হয়ে পড়বে।
কারও কারও মতে, নির্বাচনের আগে বরিশালের আওয়ামী লীগ যদি ঐক্যবদ্ধ না হয়, তাহলে ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দল ‘ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ’ (চরমোনাই) বরিশালে অঘটন ঘটিয়ে দিতে পারে। কারণ, বিএনপির ঘাটি হিসেবে পরিচিত বরিশালে ধর্মীয় অনুভূতি এবং আবেগে ফেলে এই দলের প্রার্থী (হাতপাখা) সৈয়দ ফয়জুল করিম ভোটারদের মন কাড়তে চাইবেন। তদুপরি আওয়ামী লীগে দ্বন্দ্ব থাকলে এখান থেকেও সমর্থন তাদের পক্ষে কাজ করার ধারণা অমূলক নয়।
কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের একটি সূত্র জানায়, নিজেদের মধ্যকার অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব যে সিটি নির্বাচনে বড় প্রভাব ফেলবে এবং বিরোধীদের চাঙা করে তুলবে তার পূর্বাভাস হাইকমান্ডও পেয়েছে। যার প্রেক্ষিতে স্থানীয় আওয়ামী লীগকে কয়েক দফা মৌখিতভাবে নৌকা প্রার্থীর পক্ষে কাজ করার নির্দেশনা দিয়েছে, কিন্তু দেখা যাচ্ছে, মনোনয়ন বঞ্চিত সাদিক আব্দুল্লাহ অনুসারীরা রাগ-অভিমান এবং ক্ষোভে মাঠে নামছেন না। বরং তারা স্যোশাল মিডিয়ায় নৌকা প্রার্থীর কর্মীদের সমালোচনায় মুখিয়ে আছেন। তাছাড়া মনোনয়ন প্রাপ্তির পর কেন্দ্রীয় নেতারা খোকন সেরনিয়াবাতকে সংবর্ধনা দিলে সেখানেও বিরত থাকে জেলা-মহানগর আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা, সেটিও নজরে আছে এবং সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সব খোঁজ-খবর নিচ্ছেন বলে জানায় সূত্রটি।
অবশ্য নির্বাচন পূর্ব স্থানীয় আওয়ামী লীগে বিরোধ চাঙা হওয়া নিয়ে পর্যবেক্ষক মহল বলছে, দলীয় মনোনয়ন প্রাপ্তির পর খোকন সেরনিয়াবাত যখন প্রথম বরিশালে আসেন, তখন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি (মন্ত্রী) আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহ এবং তাঁর ছেলে সিটি মেয়র সাদিক আব্দুল্লাহ’র আগমন অভিলষনীয় ছিল। কিন্তু তারা তেমনটি করেন, এমনকি এই অংশটি ছিল প্রতিক্রিয়াহীন এবং নিশ্চুপ। ঠিক তখন পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী ও সাবেক মেয়র শওকত হোসেন হিরণ অনুসারীরা আনন্দ-উল্লাসে মেতে ওঠেন এবং এখন তাদের দখলে রয়েছে বরিশালের রাজপথ।
কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, স্থানীয় আওয়ামী লীগ সিটি নির্বাচনের পূর্বে যে বিরোধে জড়িয়ে তাতে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে নৌকার জয় ছিনিয়ে আনা সম্ভবপর হবে কী না। এক্ষেত্রে অনেকে মন্তব্য হচ্ছে- সাধারণত সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনগুলোতে প্রার্থীর পক্ষে এমপির প্রচারণায় অংশ নেওয়ার ক্ষেত্রে বাধ্যবাধকতা রয়েছে, যে অনুসারে বরিশাল সদর আসনের সাংসদ পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী বা তার সমমর্যাদার কেউ থাকতে পারছেন না। বিশেষত এখানে জেলা-মহানগর আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের অংশগ্রহণ জরুরি এবং তাদেরই প্রচার-প্রচারণাসহ সামগ্রিক কাজ এগিয়ে নিতে হবে। কিন্তু বিভাজিত আওয়ামী লীগের বড় একটি অংশ অর্থাৎ জেলা-মহানগরের নেতাকর্মীরা অভিমানে ঘরে বসে আছেন, নেতা সাদিকের নির্দেশনাও করছেন উপেক্ষা।
যদিও নৌকা প্রার্থীর পক্ষে কর্মীদের মাঠে নামতে সাদিক যে দিকনির্দেশনা দিয়েছেন, তা শুধু আইওয়াশ এবং মহানগর সাধারণ সম্পাদক পদ রক্ষার একটা কৌশল বলে মনে করছেন পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী ও খোকন সেরনিয়াবাতের কর্মী-সমর্থকরা। তাদের দাবি, গত বছরে সাদিক সিটির মেয়র হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন ঠিকই, কিন্তু ফলাফল অন্তসারশূন্য। কিন্তু তার পরেও তিনি মনোনয়ন চেয়েছেন, তার পিতা আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহ এর পক্ষে সমর্থন জুগিয়েছেন। আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার মূল্যায়নে ব্যর্থ হয়ে মনোনয়ন বঞ্চিত হয়েছেন সাদিক, কপাল খুলেছে তার আপন চাচা খোকন সেরনিয়াবাতের, যিনি এতদিন রাজনৈতিক এবং স্বজনদের কাছে অবহেলিত ছিলেন।
যদিও মনোনয়ন প্রাপ্তির পর চাচা খোকন সেরনিয়াবাত সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে বলেছিলেন, সাদিককে স্বাগত, তিনি পাশে থাকতে চাইলে তার কোনো আপত্তি নেই। কিন্তু কর্মীদের দিকনির্দেশনা এবং ঘোষণার মধ্যেই নিজেকে সীমাবদ্ধ রাখলেন আওয়ামী লীগ নেতা সাদিক, একবারের জন্যও বরিশালে আসলেন না।
অবশ্য নৌকার প্রার্থী খোকন সেরনিয়াবাতের বিরুদ্ধেও সাদিক অনুসারীদের একগুচ্ছ অভিযোগ আছে। তাদের দাবি, মনোনয়ন প্রাপ্তির পরেই পানিসম্পদ অনুসারী ছাত্র-যুব এবং আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা বরিশাল সাদিকমুক্ত হয়েছে ঘোষণা দিয়ে মিষ্টি বিতরণ শুরু করে। পাশাপাশি নেতা সাদিকের ছবিসংবলিত অনুসারীদের ব্যানার-ফেস্টুন ভাঙচুর করাসহ জামায়াত-বিএনপির কর্মীদের নিয়ে মহড়া অব্যাহত রেখেছে। তাদের এই সহিংস কর্মকান্ড প্রত্যক্ষ করে অনেক নেতাকর্মী ঘরমুখী হয়ে আছে। ফলে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলেও চরমোনাই বা জাতীয় পার্টির প্রার্থীদের নির্বাচনী মাঠের বৃহৎ একটি অংশ দখল করে রাখতে দেখা যাচ্ছে।
অথচ বরিশাল জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট তালুকদার মো. ইউনুস এবং মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান (বিনা প্রতিদ্বন্দ্বি) অ্যাডভোকেট একেএম জাহাঙ্গীর হোসেন সাংবাদিকদের বলেছিলেন, নৌকা আওয়ামী লীগের প্রতিক এবং তা খোদ প্রধানমন্ত্রী খোকন সেরনিয়াবাতকে দিয়েছেন, সঙ্গত কারণে তারা অর্থাৎ স্থানীয় আওয়ামী লীগ এই প্রতিকের পক্ষে কাজ করবেন। কিন্তু তাদের কথারও কোনো ফলাফল পরিলক্ষিত হয়নি, তাদের দুজনের কাউকে খোকন সেরনিয়াবাতের পক্ষে দেখা যায়নি। এনিয়ে দুই নেতার কেউ মুখ না খুললেও বিভিন্ন মাধ্যম নিশ্চিত হওয়া গেছে, সার্কিট হাউজের বিপরিত পাশে গত সপ্তাহে প্রার্থীর নির্বাচনী কার্যালয় উদ্বোধন অনুষ্ঠানে তালুকদার মো. ইউনুস এবং জাহাঙ্গীর হোসেন অংশ নিলে তাদের যথার্থ মূল্যায়ন করা হয়নি। সেক্ষেত্রে তারা চেয়ারও পাননি, বাধ্য হয়ে বসতে হয়েছে মেঝতে, অথচ তাদের সমমর্যাদার নন এমন নেতারা ছিলেন মর্যাদার আসনে। জেলা-মহানগরের দুই শীর্ষ নেতা কেন্দ্রীয় নেতাদের পায়ের কাছে বসে ছিলেন এমন কয়েকটি ছবি মার্কিং করে তা ফেসবুকে প্রতিবাদস্বরুপ লেখা দিয়ে পোস্ট করে সাদিক অনুসারী ছাত্র-যুব ও আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা।
সাদিক অনুসারী জেলা ও মহানগরের এক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, চাচা-ভাজিতার দ্বন্দ্ব মিটিয়ে স্থানীয় আওয়ামী লীগকে ঐক্যবদ্ধ করা না গেলে বিএনপির ঘাটি বরিশাল সিটি নৌকা বিপাকে পড়বে, যেটা হয়তো কেন্দ্রীয় নেতারা আঁচ করতে না পারলেও চরমোনাই আনুষ্ঠানিক প্রার্থী ঘোষণার পর কিছু ধারণা মিলেছে। তাছাড়া বিএনপি নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার ঘোষণা দিলেও স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মাঠে আছেন সাবেক প্রয়াত মেয়র বিএনপি নেতা আহসান হাবিব কামালের ছেলে কামরুল আহসান রূপন, যদিও বিএনপি এই নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে না। তবে কামালের ছেলে যদি প্রার্থী হন তাহলে বিএনপির তার পক্ষে প্রকাশ্যে কাজ করলেও ভেতরে ভেতরে আওয়ামী লীগের প্রার্থীর ভরাডুবি তরান্বিত করতে চাইবে। সেক্ষেত্রে তারা হাতপাখার প্রার্থীর পক্ষে অবস্থান নেওয়ার বিষয়টি স্বাভাবিকভাবে দেখছে পর্যবেক্ষক মহল, এমনকি বিএনপির বড় একটি অংশ জাতীয় পার্টির ইকবাল হোসেন তাপসকে নিরব সমর্থন দেওয়ার বিষয়টিও আলোচনায় প্রাধান্য পাচ্ছে।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে, তাহলে সাদিক অনুসারী জেলা-মহানগর আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের কী ভুমিকা থাকবে এই নির্বাচনে এবং আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব মেটাতে কেন্দ্র গুরুত্ব দেবে কী। এই প্রশ্নের উত্তর জানতে কেন্দ্রীয় একাধিক নেতারা (যারা দক্ষিণাঞ্চল রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত) সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলেও তাদের কাউকে পাওয়া যায়নি।
তবে নামপ্রকাশ না করার শর্তে একজন জানিয়েছেন, আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহ তাঁর ছেলেকে মনোনয়ন পাইয়ে দিতে জোর সুপারিশ রেখেছিলেন। এবং তিনি মনোনয়ন বোর্ডের সভায়ও প্রধানমন্ত্রীর কাছে অনুরোধ রেখেছিলেন তার রাজনীতি ধরে রাখতে ছেলে সাদিককে মনোনয়ন দেওয়া জরুরি। কিন্তু আ’লীগ সভানেত্রী তা শোনেননি, বরং বরিশাল সিটিতে খোকন সেরনিয়াবাতের হাতে নৌকা তুলে দিয়েছেন এবং স্থানীয় আওয়ামী লীগকে এর পক্ষে কাজ করতে বলেছেন। কিন্তু নৌকা প্রার্থীকে তারা কোনো প্রকার সহযোগিতা করছেন না, বরঞ্চ তাঁকে কি ভাবে বিপদে ফেলে যায় সেই পরিকল্পনা আটছেন কেউ কেউ। আবার কেউ কেউ খোকন সমর্থিতদের বিতর্কিত করতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন, দিচ্ছেন ফেসবুকে নেতিবাচক পোস্ট। এই বিষয়গুলো প্রধানমন্ত্রী পর্যবেক্ষণ করছেন, তিনি হয়তো নির্বাচন পূর্ব কোনো কঠোর সিদ্ধান্ত দেবেন।
এমতাবস্থায় মন্তব্য এসেছে, অপরিচিত মুখ খোকন সেরনিবাত সৎ-পরিচ্ছন্ন মানুষ, তাঁকে নির্বাচিত করতে শওকত হোসেন হিরণপন্থী আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা মাঠে নামলেও তাদের মধ্যে পদধারীর সংখ্যা খুব কম, যারা এতদিন বরিশালের রাজনীতিতে কোনঠাসা ছিলেন। ফলে শক্তি-সাহস নিয়ে বিরোধীদের সামনে দাঁড়ানোর তাদের জন্য অনেকটা চ্যালেঞ্জিং হয়ে পড়বে, কারণ এই এই মুহূর্তে ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থীকে নৌকার বিপরিতে শক্তিশালী ভাবা হচ্ছে। অবশ্য এনিয়ে শহরময় নানা আলোচনাও শোনা যায়।
এক্ষেত্রে রাজনৈতিক বোদ্ধাদের অভিমত হচ্ছে, সাদিক সিটি নির্বাচন করছেন না, কিন্তু তিনি আওয়ামী লীগের গুরুত্বপূর্ণ একটি পদ বহন করছেন এবং বরিশাল মহানগর আওয়ামী লীগের নিয়ন্ত্রক। তাছাড়া তার পিতা এমপি আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হলেও সাদিক এখানেও আধিপত্য বিস্তার করে আসছিলেন। এক কথায় বলা চলে, পিতা-পুত্রের দিকনির্দেশনায় চলে বরিশাল আওয়ামী লীগ। সেখানে প্রার্থীর পক্ষে এই দুজনের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করে কর্মীদের ঐক্যবদ্ধ করা নৌকাকে জয় দিতে দৈবশক্তি হিসেবে কাজ করবে। কারণ সিটি নির্বাচনে অংশ নিয়ে বিএনপির শক্তশালী প্রার্থী অ্যাডভোকেট মজিবর রহমান সরোয়ারকে পরাজিত করার অভিজ্ঞতা সাদিকের রয়েছে। সেক্ষেত্রে তার অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগালে নৌকার জয় ত্বরান্বিত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি রয়েছে। তবে হিতে বিপরিত হলে বাড়তি সুবিধা নেবে প্রতিদ্বন্দ্বি প্রার্থীরা, সেই সাথে নৌকা ডোবারও উদাহরণ তৈরি হতে পারে, যেমনটি হয়েছিল ২০১৩ সালে আওয়ামী লীগের শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বি শওকত হোসেন হিরণের ক্ষেত্রে।
সেই নির্বাচনে দলীয় ঘরনার প্রতিপক্ষ শিবিরের প্রশ্রয়ে যুবলীগ নেতা খান মামুন হয়েছিলেন স্বতন্ত্র প্রার্থী। তিনিই হিরণের নির্বাচনী কফিনে শেষ পেরাকটি পুঁতে দিয়েছিলেন, বিপরিতে বিএনপির প্রার্থী আহসান হাবিব কামালের জয় অনেকটা সহজতর হয়ে ওঠে। এবারেও কী ২০১৩ সালের নির্বাচনের মতো কিছু অপেক্ষা করছে আওয়ামী লীগের জন্য, এমন প্রশ্ন কান পাতলেই শোনা যাচ্ছে।