বরিশালে ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে উঠেছে ডায়াগনস্টিক সেন্টার। এসব প্রতিষ্ঠানে রোগী আনতে মাসিক বেতনে নিয়োগ দেয়া হয় দালালদের। আর ডাক্তারদের যোগসাজসেই হাসপাতালে দাপিয়ে বেড়ায় তারা। এমন তথ্য উঠে এসেছে অনুসন্ধানে। ভুক্তভোগীদের দাবি, অসাধু ডাক্তার আর তাদের দালালদের কাছে জিম্মি সবাই।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বরিশাল জেনারেল হাসপাতালে ডাক্তার দেখানো শেষ হতে না হতেই রোগীদের পিছু নেয় দালাল চক্রের সদস্যরা। উদ্দেশ্য ডায়াগনস্টিক সেন্টারে নিয়ে রোগীদের পরীক্ষা করানো। এমন দৃশ্য দেখে পিছু নেয়া হয় তাদের।
এরপর জানতে চাইলে প্রথমে অস্বীকার করলেও পরে রোগীদের চাপে সবকিছু স্বীকার করে দালাল চক্রের এক মহিলা সদস্য। ডায়াগনস্টিক সেন্টার থেকে নিয়োগপ্রাপ্ত রাবেয়া জানান, মাসিক ৭ হাজার টাকা বেতনে কাজ করছেন তিনি। তাদের বড় একটি দল আছে।
সবাই এক হয়ে কাজ করেন তারা। বরিশাল জেনারেল হাসপাতালের সামনে ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোতে রোগী নিয়ে যায় তারা। এ হাসপাতালের কতিপয় চিকিৎসকদের যোগসাজশে জিম্মি রোগীরা।
রোগীরা বলেন, প্রতিটি ডাক্তারের রুমের সামনে দালাল চক্রের সদস্য ভরা। ডাক্তার দেখিয়ে বের হতে দেরি তাদের আমাদের ঘিরে ধরতে দেরি নেই।
জোর করে নিয়ে গিয়ে দালালরা ডাক্তারের দেয়া বিভিন্ন পরীক্ষা ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলো দিয়ে করায়। অনেক সময় ডাক্তাররাও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের নাম বলে দেয়।
এদিকে জেনারেল হাসপাতালের ভেতর দুইজন ডাক্তারের চেম্বারের সামনে দালাল চক্রের সদস্যদের সক্রিয় ভূমিকায় দেখা গেছে। জানতে চাইলে হাসপাতালের সহকারী রেজিস্ট্রার (সার্জারি) ডা. খালিদ মাহমুদ বলেন, কে দালাল আমি জানি না। আমি টেস্ট দেই রোগীরা করে নিয়ে আসে।হাসপাতালে কনসালটেন্ট (অর্থোপেডিক্স) ডা. মো. মাহমুদ উল্লাহ মাহিন বলেন, আমি রুমে বসে রোগী দেখি বাইরে কী হয়, বলতে পারব না।
তবে তাদের দুজনের রুমের ডায়াগনস্টিক সেন্টারের বিভিন্ন কাগজপত্র দেখা গেছ। শুধু জেনারেল হাসপাতালে সামনে নয়, নামসর্বস্ব অবৈধ ডায়াগনস্টিকের ছড়াছড়ি শহরের অলিতে-গলিতে।
অভিযোগ আছে, প্রতিষ্ঠিত ল্যাবের নাম দিয়ে অনেকেই ভুয়া প্রতিষ্ঠান খুলে প্রতারণা করছে রোগীদের সাথে। বাধ রোড ডায়াগনস্টিক অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি কাজী মিরাজ মাহমুদ বলেন, শের ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৬১ জন সরকারি কর্মচারী সরাসরি দালালি পেশায় জড়িত।
তারা রোগী বাগিয়ে বিভিন্ন ডায়াগনস্টিক সেন্টারে নিয়ে যায়। আমরা তালিকা করে প্রশাসনের কাছে জমা দিয়েছি। মেডিনোভা মেডিকেল সার্ভিসেস লিমিটেডের ম্যানেজার ছানোয়ার হোসেন বলেন, আমাদের প্রতিষ্ঠানের নামের আগে শুধু সাউথ লাগিয়ে এটাই আসল মেডিনোভা এমন কথা ছড়িয়ে রোগীদের সাথে প্রতারণা করা হচ্ছে। আমি প্রশাসনের কাছে আবেদন করেছি। এখন দেখছি কবে তারা ব্যবস্থা নেয়।
অবৈধ ডায়াগনস্টিক সেন্টারের তালিকা করে জমা দেয়া হয়েছে বলে জানায় বরিশাল ডায়াগনস্টিক অ্যান্ড হাসপাতাল অনার্স অ্যাসোসিয়েশনের নেতারা।
আর দ্রুতই অবৈধ ডায়াগনস্টিক সেন্টার,দালাল ও যোগসাজশে জড়িত ডাক্তারদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে জানায় স্বাস্থ্য বিভাগ।বরিশাল ডায়াগনস্টিক অ্যান্ড হাসপাতাল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি কাজী মফিজুল ইসলাম কামাল বলেন, আমরা বৈধ ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোর নাম প্রশাসনের কাছে জমা দিয়েছি। এখন তাদের ব্যবস্থা গ্রহণের পালা।
বরিশাল স্বাস্থ্য বিভাগের পরিচালক ডা. মো. হুমায়ুন শাহীন খান বলেন, বর্তমানে বরিশাল নগরীতে নিবন্ধিত ডায়াগনস্টিক সেন্টার আছে ১১০টি। এরমধ্যে কাগজপত্র নবায়নের জন্য আবেদন করেছে ৩৪টি। আর জেলার ১০ উপজেলায় নিবন্ধিত ডায়াগনস্টিক সেন্টার আছে ১৪০টি। আমরা দালাল ও অবৈধ ডায়াগনস্টিক সেন্টারের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেব।