আজ সাবেক প্রতিমন্ত্রী ও নাটোর জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা অধ্যাপক মোঃ আব্দুল কুদ্দুস এমপির ৭৭তম জন্মদিন।
১৯৪৬ সালের আজকের এইদিনে চলনবিল অধ্যুষিত নাটোরের গুরুদাসপুর উপজেলার খুবজীপুর ইউনিয়নের বিলশা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। এ উপলক্ষে সোমবার বাদ জহর গুরুদাসপুর উপজেলার শিধুলী ক্বওমী মাদ্রাসায় দলীয় নেতাকর্মিদের উদ্যোগে মো. আব্দুল কুদ্দুস এমপির দীর্ঘায়ু কামনায় বিশেষ মোনাজাত অনুষ্ঠিত হয়েছে। পরে মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের মাঝে খাবার বিতরণ করা হয় এবং রাত সাড়ে ৭টায় উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ভবনে কল্লোল ফাউন্ডেশনের আয়োজনে আব্দুল কুদ্দুস এমপির ৭৭তম জন্মদিনের কেক কাটা হয়।
এসময় কল্লোল ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক মো. মিল্টন উদ্দিন, দাতা সদস্য এমপিপুত্র আসিফ আব্দুল্লাহ বিন কুদ্দুস শোভন, অধ্যক্ষ আবু সাঈদ, উপাধ্যক্ষ আবুল কাশেম, প্রভাষক জহুরুল হক, আওয়ামীলীগ নেতা রাজকুমার কাশী, সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান মোজাম্মেল হক, শরিফুল ইসলাম শরিফ, প্রভাষক মাজেম আলী মলিন, প্রভাষক হাফিজুর রহমান, সেবক কুমার কুন্ডু, কল্লোল ফাউন্ডেশনের সাবেক সভাপতি মুক্তাদিরুল ইসলাম মিন্টু সহ অন্যান্য সদস্য ও আওয়ামীলীগের স্থানীয় নেতাকর্মিরা উপস্থিত ছিলেন।
নাটোর-৪ (গুরুদাসপুর-বড়াইগ্রাম) আসন থেকে পাঁচবারের নির্বাচিত সংসদ সদস্য অধ্যাপক মো. আব্দুল কুদ্দুসের সংগ্রামী ও বর্ণাঢ্য জীবন সম্পর্কে জানা যায়, এমপি আব্দুল কুদ্দুসের পিতা মো. হায়েতুল্লাহ সরদার পেশায় ছিলেন কৃষক ও মাতা মোছা. গুলেনুর বেগম ছিলেন গৃহিণী। মাত্র ৭ বছর বয়সে তাঁর বাবাকে হারান তিনি। সেই ছোট বেলায় পিতৃহারা ছোট শিশুটি দীর্ঘ পথপরিক্রমায় চলনবিলের অবহেলিত একটি গ্রাম থেকে উঠে এসে স্কুল গন্ডি পেরিয়ে সর্বশেষ রাজশাহী কলেজ এবং রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দর্শন এবং ইংরেজীতে স্নাতকোত্তর পাশ করেছেন।
ছাত্র রাজনীতির মাধ্যমে রাজনীতিতে হাতেখড়ি উত্তর বঙ্গের সবচেয়ে প্রবীণ ও বর্ষীয়ান এই রাজনীতিবিদের। রাজশাহী কলেজ ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৬৬ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বাঙালির মুক্তির সনদ ৬ দফার ডাকে সাড়া দিয়ে তিনি সর্বদা সোচ্চার ছিলেন। ১৯৬৮ থেকে ৭২ সাল পর্যন্ত বৃহত্তর রাজশাহী জেলা ছাত্রলীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন। ১৯৬৯ এর গনঅভূর্থানের সময় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি ছিলেন তিনি। তাঁর ডাকে সাড়া দিয়ে সেই সময় রাজশাহীর ছাত্ররা রাজপথ প্রকম্পিত রাখত। সেই গণঅভ্যুত্থানের মুখে আগরতলা মামলা প্রত্যাহার করে শেখ মুজিবকে মুক্তি দিতে বাধ্য হয় শাসকচক্র।
অধ্যাপক আব্দুল কুদ্দুস রাজশাহী অঞ্চলের মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক ছিলেন। তিনি বৃহত্তর রাজশাহী অঞ্চলের মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক ছিলেন। ১৯৭১ সালের ৭ই মার্চ বঙ্গবন্ধুর ডাকে সাড়া দিয়ে মুক্তিযুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়েন। তিনি কমান্ডার হিসেবে জীবন বাজি রেখে পাক হায়েনার বিরুদ্ধে প্রানপণে যুদ্ধ করেন দেশ স্বাধিনে অগ্রণি ভুমিকা রেখেছিলেন। যুদ্ধে তাঁর বড় ছেলে শহীদ কল্লোল পাকিস্থানী হানাদার বাহিনী কর্তৃক নিহত হয় ।
দেশ স্বাধীন হবার পর তিনি (১৯৭২-৭৪) পর্যন্ত রাজশাহী কলেজ ছাত্র সংসদের নির্বাচিত ভিপি হন। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু কে হত্যার পর তৎকালীন শাসক গোষ্ঠী রাজশাহী জেলায় যে ব্যক্তিকে সর্ব প্রথম গ্রেফতার করেন তিনি হলেন আব্দুল কুদ্দুস ( ১৯৭৫ এর ১৭ই আগষ্ট) খুনিচক্র তাঁকে কারাগারে নিক্ষিপ্ত করে। দীর্ঘ ৫ বছর কারাভোগ করেছেন তবু ঘাতকদের কাছে মাথানত করেন নাই। কারাগারে থাকা অবস্থায় রাজশাহী জেলা আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক নির্বাচিত হন ।
১৯৮২-৮৬ সাল পর্যন্ত রাজশাহী জেলা আওয়ামীলীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারন সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। রাজশাহী মহানগর গঠিত হলে ১৯৮৬-১৯৯০ পর্যন্ত তিনি রাজশাহী মহানগর আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। সামরিক শাসকের অবসানের পর ১৯৯১ সালের জাতীয় নির্বাচনে তিনি প্রথমবারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।
তার নির্বাচনী এলাকা ৬১,নাটোর-৪ (বড়াইগ্রাম ও গুরুদাসপুর) আসনে সর্বমোট ৭বার দলীয় মনোনয়ন পান আওয়ামী লীগের প্রার্থী, বঙ্গবন্ধুর স্নেহাশিস সহযোদ্ধা মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম এই সংগঠক একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নৌকা প্রতিকে ২লাখ ৮৬ হাজার ২৬২ ভোট পেয়ে টানা ৩য় বার ও সর্বমোট ৫ম বারের মতো বিজয়ী হয়েছেন।
বর্তমানে তিনি নাটোর -৪ (বড়াইগ্রাম-গুরুদাসপুর) আসনের সংসদ সদস্য এবং নাটোর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্বে রয়েছেন। তাঁর একমাত্র কন্যা অ্যাডভোকেট কোহেলী কুদ্দুস মুক্তি, সে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাস্টার্স ও প্রাইম ইউনিভার্সিটি থেকে এলএলএম ডিগ্রী অর্জন করেছেন।
অ্যাডভোকেট কোহেলী কুদ্দুস মুক্তি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সম্পাদক, বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক কার্যনির্বাহী সদস্য, বর্তমানে বাংলাদেশ যুব মহিলা লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি ও জয় বাংলা ইয়ুথ এ্যাওয়ার্ড-২০১৭ বিজয়ী সংগঠন “কল্লোল ফাউন্ডেশন” এর প্রতিষ্ঠাতা।
তার একমাত্র ছেলে আসিফ আব্দুল্লাহ বীন কুদ্দুস শোভন সে স্ট্যামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমবিএ ডিগ্রী অর্জন করেছেন এবং কল্লোল ফাউন্ডেশন এর প্রতিষ্ঠাতা দ্বাতা সদস্য এবং বর্তমানে তিনি তার পিতার আদর্শে পথ ধরে সমাজের কল্যান মুলক কাজে নিজেকে নিয়োজিত রেখেছেন ।
৬০ বছরের বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবনে তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী জেলা, মহানগর ও বিভাগের ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও আওয়ামী লীগের সভাপতিসহ গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন পদে দায়িত্ব পালন করেছেন।
কর্মজীবন কৃষির সাথে যুক্ত আব্দুল কুদ্দুস রাজনীতির সঙ্গে সক্রিয় ভাবে যুক্ত আছেন। পরিবারের পক্ষথেকে তার জন্য নাটোরসহ দেশবাসির কাছেদোয়া চেয়েছেন।