হেমন্ত, এ-ই হেমন্ত। একটু দাঁড়াবে? আমি পিছনে তাকিয়ে দেখি, অবন্তী আমার দিকে এগিয়ে আসছে।কাছে এসে বললঃ “তোমার সাথে আমার কিছু কথা আছে? আমি চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছি।কোন কথা বলছি না।
” চল আমরা একটু সামনে গিয়ে বসি।
অবন্তী আমার উত্তরের অপেক্ষা না করে কৃষ্ণচূড়া গাছের নিচে বসল।আমি কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকলাম। ভাবছি কি করব।পরবর্তীতে সিন্ধান্ত নিলাম আজকে যা হবে সামনা-সামনি হবে।
একটু দূরত্ব রেখে অবন্তীর পাশে বসলাম।
হেমন্তের এরকম ব্যবহারে অবন্তীর মনে খুবই দুঃখ পেল। তবে প্রকাশ করল না।
নিরবতা ভেঙে অবন্তী কথা শুরু করল।বলল- তুমি আমার সাথে কথা বলছো না কেন?
-ভালো লাগছে না। তাই কথা বলছি না।
-আমি কিন্তু খুব রাগ করছি।
-কেন?
অবন্তী শুধু কষ্টই পাচ্ছে হেমন্তের কথা শুনে।কিছুক্ষণের ভিতরে চোখ থেকে পানে পরে যেতে পারে।অনেক কষ্টে চোখের পানি বন্ধ করে বলল -তুমি আমাকে এতদিন মেসেজ দিতে,কল করতে, চিঠি পাঠাতে, এখন পাঠাচ্ছ না কেন?
-আমি অনেক ভেবে একটা সিন্ধান্ত নিয়েছি।
-কি সিন্ধান্ত নিলে?
-অবশেষ অনেক ভেবে দেখলাম। তোমার সঙ্গে আসলেই আমার কোন গল্প নেই। ক্ষয়ে যাওয়া ডানার প্রজাপতির গল্প, পদ্ম পাতার গল্প বা পাল ছাড়া নৌকার গল্প নেই। বিয়ের গল্প নেই।নেই কোন মানুষ কিংবা স্বপ্নের গল্পও।তবুও সবশেষে স্বপ্নের কাছে হেরে যাই আমরা।কেনেনা স্বপ্নই হচ্ছে মানুষের গন্তব্য আবার স্বপ্নেই আধার।
অবন্তীর চোখ থেকে কয়েক ফোঁটা পানি ঝড়ে পরল।কিন্তু হেমন্ত দেখলো না। বলল – এভাবে কেন বলছ?
-তোমার সাথে আমার যে গল্প সে তো পরাজিত এক মানুষের গল্প, অতৃপ্ত এক আত্মার গল্প, বিষঘ্ন এক হৃদয়ের গল্প।
-দয়াকরে করে এভাবে বল না।
-কি ভাবে বলব। তুমিই বলে দেও। সত্যি করে আমার কিছু প্রশ্নের উত্তর দিবে?
-বল!
-আমি তোমাকে ভালোবাসার কথা বলেছিলাম?
-হুম।
-আমি তোমাকে চিঠি বা মেসেজ দিয়েছিলাম?
-হুম।
-আমি তোমার পিছনে পিছনে ঘুরেছিলাম?
-হুম।
-তুমি আমাকে অবহেলা করেছিলে?
একথার উত্তর দিতে গিয়ে অবন্তীর মুখ থেকে কথা বের হল না।চুপ করে রইল।আবার হেমন্ত বলল-
তোমাকে আমি কিছুদিন আগে চিঠি পাঠিয়েছি।সেখানে লেখা ছিল,”আমি তোমার প্রিয় পার্কের পুকুর পারে বসে আছি।চলে আসিও।আমার মনের ঘরে তোমাকে যত্ন করে রাখিব।তোমাকে আমি বিয়ে করতে চাই।আসো,আজ একবার আসো।আমি আজকে সারাদিন সারারাত তোমার অপেক্ষায় থাকব।কিন্তু তুমি আসোনি।আমি সারাদিন এমনকি সারারাত তোমার অপেক্ষায় ছিলাম। তুমি আসোনি।
-অবন্তীর মুখ দিয়ে কোন কথা বের হলো না।শুধু চোখ দিয়ে পানি ঝড়তে লাগল।
হেমন্ত বলল- তুমি কখনো আমার চিঠিগুলো পড়েছ?
-না।
-বাহ, দারুণ বলেছ।তোমার জন্য খুবই যত্নে করা আমার অনুভূতিগুলো চিঠিতে লিখে দিতাম। তুমি সেগুলো পড়া তো দূরের কথা একটু খুলেও দেখনি।
যাক সে কথা।তোমার সাথে কথা বলতে বলতে অনেক সময় হয়ে গেল। তোমার সাথে আমার যাবে না।তাই আজ হাড়িয়ে গেলাম আমার জগতে। চলে গেলাম আমার মনের মরুভূমিতে।যেখানে কোন ভালোবাসা নেই।তবে ভালো থাকার ঔষধ আছে।আজ থেকে আমি মরুভূমি হয়ে গেলাম। মরুভূমিতে যেমন পানি নেই তেমনি আমার হৃদয়ে ভালোবাসা নেই। ভালো থেক।
একথা বলে আমি চলে আসলাম। উদ্দেশ্য এ শহর ছেড়ে অন্য মায়াহীন শহরে।যেখানে অবন্তী নামের কোন ছায়া, মায়াবী কেউ থাকবে।
হেমন্ত চলে যাচ্ছে। চেয়ে আছে অবন্তী। তার কোন শক্তি নেই আজকে হেমন্তকে আটকাবার। কান্না করতে করতে বাসায় গেল। তার ব্যাগ থেকে কয়েকদিন আগে আশা চিঠিটা বের করল। চিঠির উপরে কোন নাম দেওয়া নেই।চিঠিটা খুলে অবন্তী পড়তে লাগল। হেমন্ত যা যা বলেছে সব ঠিক।অবন্তী এতদিনের সব চিঠি বের করে পড়তে লাগল। যখন সব চিঠি পড়া শেষ হল।তখন তার কাছে মনে হল,”ইস যদি আগে চিঠিগুলো পড়ত।
অবন্তী এখন আর ঘর থেকে বের হয় না।সারাদিন ঘরের ভিতরে থাকে।রুম সব সময় অন্ধকার করে রাখে।অন্ধকার তার আপন সঙ্গী।