আদালতে মামলা চলমান থাকাবস্থায় কোনও প্রকার পূর্ব নোটিশ ছাড়াই বাড়িঘর উচ্ছেদের অভিযোগ উঠেছে। এছাড়াও লুটপাট করা হয়েছে পুকুরের মাছ ও ছাগল-মুরগি। বাড়িঘর গুড়িয়ে উচ্ছেদের ফলে এসএসসি পরীক্ষার্থী মেয়ে নিয়ে খোলা আকাশের নীচে মানবেতর জীবনযাপন করছে একটি পরিবার।
পাবনার আটঘরিয়া উপজেলার মাজপাড়া ইউনিয়নের আরপি বাজারের কচুয়ারামপুর গ্রামে ঘটেছে এ ঘটনা।
শনিবার (১৭ সেপ্টেম্বর) দুপুরে উচ্ছেদকৃত ভিটের ওপর এক সংবাদ সম্মেলনে এসব অভিযোগ করে ভুক্তভোগী পরিবার।
লিখিত অভিযোগে ভুক্তভোগী আব্দুল জলিল বলেন, ‘১৯৪৩ সালে জে.এল নং-৪ খতিয়ান, আর.এস নং-৩৫, আরএস দাগ নং-১১০২ এর ০.১৮ শতাংশ জমি কেনার পর উত্তরাধিকার সূত্রে আমরা এই জমির ওপর বসবাস করে আসছি। প্রায় ৮০ বছর ধরে কেউ কোনোদিন এই জমি নিয়ে মামলা বা ঝামেলা করেনি। গত ২০ জুলাই উপজেলা ভূমি অফিসের মাধ্যমে জানতে পারি, একই এলাকার এই জমির আরেক উত্তরাধিকার কায়েম উদ্দিনের ছেলে গাজীউর রহমানের লোকজন একটি বাটোয়ারা মামলা দায়ের করেছে। পরবর্তীতে আমরা আইনজীবীর শরণাপন্ন হই। তার আগেই দ্রুত ওই মামলার একপক্ষীয় ডিগ্রী পায় গাজীউরের লোকজন। এর বিরুদ্ধে আমরা গত ২৩ আগস্ট আপিল করি এবং গত ১৫ সেপ্টেম্বর আপিল শুনানির জন্য দিন ধার্য ছিল।’
পরিবারের সদস্যরা বলেন, ‘আপিল শুনানির আগেই গত ১২ সেপ্টেম্বর হঠাৎ করে দুই গাড়ি পুলিশ, পাবনা কোর্টের লোকজন ও গাজীউর রহমানের ছেলে মাসুম, মাসদুল, তাদের আত্মীয় তুফান ও আশরাফুলসহ শতাধিক সন্ত্রাসীদের সঙ্গে নিয়ে এসে ঘরবাড়ি ভাঙচুর শুরু করে। এসময় তাদেরকে বাধা দিলে পরিবারের লোকজনকে আটকিয়ে রাখে। তাদের কাছে বাড়ি ভাঙচুরের নোটিশ আছে কিনা জানতে চাইলেও তা দেখাতেও ব্যর্থ হয়। আশপাশের লোকজন এগিয়ে আসলেও পুলিশ ও ভাড়াটিয়া সন্ত্রাসীরা তাদের বের করে দেয়। ৩টি থাকার ঘর, গোয়ালঘর, রান্না ঘরসহ ৬টি ঘর গুড়িয়ে দেয়। এসময় আমাদের আটকিয়ে ও ভয়ভীতি দেখিয়ে ৮-১০টা ছাগল ও বাড়িতে থাকা স্বর্ণালংকার ও নগদ ৩ লাখ টাকা ছিনে নিয়ে যায়। এমনকি দু’টি পুকুরের মাছও তারা লুট করে নিয়ে যায়।
ভুক্তভোগী আব্দুল জলিল বলেন, ‘আমার মেয়ে এবার এসএসসি পরীক্ষা দিচ্ছে। আমার মাথা গোজার মতো ঠাঁইও নেই। ছেলেমেয়েদের নিয়ে কোথায় যাবো? কোথায় কি করবো বুঝতে পারছি না। আমার সম্পূর্ণ কাগজপত্র ঠিক আছে, শুধু একপক্ষীয় বাটোয়ারা ডিগ্রি নিয়ে এসে আপিল শুনানির আগেই নোটিশ ছাড়া কেন আমাকে এভাবে পথে বসাল তার বিচার চাই।’
অভিযুক্ত গাজীউর রহমানের ছেলে মাসুম হোসেন বলেন, ‘আমরা আইন অনুযায়ী উচ্ছেদ করেছি। আমার পুকুরের মাছ আমরা নিয়ে এসেছি, তাতে কি হয়েছে। আমরা কোনও ছাগল লুট করিনি, আমরা হাট থেকে ছাগল কিনে এনে জবাই করে খেয়েছি। যা করেছে সব কোর্ট করেছে, আপনারা কোর্টের কাছে যান।’
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও দায়িত্বপ্রাপ্ত সহকারী কমিশনার (ভূমি) মাকসুদা আক্তার মাসু বলেন, ‘এখানে আমাদের কোনও সম্পৃক্ততা নেই। এটা কোর্ট থেকে করেছে এবং ডিসি অফিসের ম্যাজিস্ট্রেট এসেছিল। অবশ্যই নোটিশ দিয়ে করেছে। তবে এসএসসি পরীক্ষার্থীর বিষয়টি আমি স্থানীয় চেয়ারম্যানের মাধ্যমে ব্যবস্থা নিয়েছি। আর মাছ ও ছাগল লুটের বিষয়ে ব্যক্তিগত, তাদেরকে এ বিষয়ে মামলা করতে হবে।’
আটঘরিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন রাজধানী টাইমস কে বলেন, ‘এটা কোর্ট থেকে করেছে। পুলিশ শুধুমাত্র তাদেরকে সহযোগিতা করেছে। নোটিশের মাধ্যমেই উচ্ছেদ হয়েছে। কিন্তু মাছ ও ছাগল লুটের বিষয়ে থানায় কেউ লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন নি। অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’