নানা উৎসব উদ্দীপনার মধ্যে দিয়ে রাজবাড়ীর পাংশা উপজেলার বাহাদুরপুর ইউনিয়নের বীরবিক্রম খবিরুজ্জামান উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে প্রতি বছরের ন্যায় এবারও শুরু হয়েছে ১৫ দিনব্যাপী আশ্বিন-সংক্রান্তি গাশ্বির মেলা। মেলাটি ১৫ অক্টোবর থেকে শুরু হয়ে আগামী ৩০ অক্টোবর পর্যন্ত চলবে।
মেলা উপলক্ষে এসব গ্রামে আত্মীয়-স্বজনদের দাওয়াত দেয়ার রীতি চালু আছে। অন্য সময় না এলেও এই এলাকার প্রতিটি পরিবারে বিবাহিত মেয়েদের মেলা উপলক্ষে বাপের বাড়ি বেড়ানোর রেওয়াজ রয়েছে। এছাড়া এলাকার চাকরিজীবী ও পেশাজীবীরা যারা বাইরে থাকেন, তারা সারা বছর মেলা উপলক্ষে গ্রামের বাড়িতে আসার অপেক্ষায় থাকেন।
মেলায় নানা ধরণের স্টলসহ শিশুদের বিনোদনের জন্য রয়েছে সার্কাস নাগরদোলা নৌকা দোলা এবং বড়দের জন্য রয়েছে জাদু খেলা ও হোন্ডা খেলা।
১৫ দিনব্যাপী ব্যতিক্রমী এ মেলায় রকমারি পণ্য, নানা প্রজাতি আর হাতের কারুকাজ বিভিন্ন ধরনের পালঙ্ক দর্শনার্থীদের দৃষ্টি কাড়ছে। মেলা ঘিরে উৎসবের আমেজ সৃষ্টি হয়েছে পুরো এলাকায়। তবে সবকিছু ছাপিয়ে আকর্ষণীয় হয়ে উঠেছে মেলায় বসা মিষ্টির দোকান ।
মেলা উপলক্ষে প্রায় ছোট্ট বড় কয়েক শত দোকান বসেছে। এসবের মধ্যে রয়েছে ফার্নিচার, মিষ্টির দোকান ও খেলনার দোকান রয়েছে। দোকানগুলোতে পাওয়া যাচ্ছে সাঁজ বাতাসা, তালের পাখা, মাটি, লোহা ও বাঁশের তৈরি নানা গৃহস্থালি সামগ্রী।
এছাড়া রয়েছে চুড়ি-ফিতা, শরবত, খেলনা, ইলেক্ট্রনিক সামগ্রী থেকে শুরু করে লাখ টাকা দামের খাট।
মেলাটি আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করেন বাহাদুরপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোঃ সজিব হোসেন।
এই মেলা প্রসঙ্গে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান মোঃ সজিব হোসেন বলেন, ১০০ বছরের অধিক সময় ধরে স্থানীয় জনগণ এই মেলাটির আয়োজন করে আসছে। মেলায় কোন প্রকার অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা নেই বলে স্থানীয় চেয়ারম্যানরা জানান।
বাহাদুরপুর গ্রামের গনি মিয়া বলেন, জন্মের পর থেকে গাশ্বির মেলার নাম শুনতেছি। বাপ-দাদার হাত ধরে মেলায় যাওয়া শুরু। আমার এখন বয়স ৪৫। এ মেলা আমাদের এলাকার ঐতিহ্য। বিভিন্ন স্থান থেকে আরও তিনদিন আগে থেকে আত্মীয়-স্বজন হাজির হয়েছেন।
পাংশা মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মাসুদুর রহমান বলেন, মেলার সুস্থ পরিবেশ বজায় রাখতে পুলিশের পক্ষ থেকে সব ধরনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
পাংশা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মাদ আলী বলেন, মেলায় শান্তি -শৃঙ্খলা বজায় রাখার পাশাপাশি অসামাজিক কার্যকলাপ ও অশ্লীলতা বন্ধে মেলা কমিটিকে কঠোর নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এর ব্যত্যয় ঘটলে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখতে উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
তবে আশেপাশের কয়েকটি ইউনিয়নের কয়েক হাজার স্থানীয় জনতার মধ্যে মেলাকে ঘিরে ব্যাপক উৎসব-উদ্দীপনা লক্ষ্য করা যায়।