স্বপ্নের সেতু পদ্মা এখন স্বপ্ন নয় বাস্তব। একটু একটু করে সম্পন্ন হলো বিশাল এই কর্মযজ্ঞ। হাজারো বাধাবিপত্তি পেরিয়ে বর্তমান সরকার দেশের বৃহত্তম পদ্মা সেতু প্রকল্প বাস্তবায়নে দৃঢ় প্রত্যয়ে কাজ করেছে।
স্বাধীন বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় প্রকল্পটি নিজেদেরই অর্থায়নে সম্পন্ন করার মাধ্যমে বাঙালী জাতি আবারও নিজেদের সক্ষমতার পরিচয় তুলে ধরছে বিশ্ববাসীর কাছে। বীরের জাতি বাঙালী। ‘মাথা নোয়াবার নয়’ বিশ্বের দরবারে এ সত্য আবারও উদ্ভাসিত হলো। এটি শুধু একটি সেতু নয়, উন্নত আধুনিক বাংলাদেশের আইকন। এই সেতু বদলে দেবে দেশের দক্ষিণাঞ্চলের আর্থ-সামাজিক চিত্র।
গোটা দক্ষিণাঞ্চলের চেহারা ইতোমধ্যে বদলে গেছে বহুদূর। সর্বত্র লেগেছে কর্মচাঞ্চল্য ও পরিবর্তনের হাওয়া। জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য কন্যা আধুনিক বাংলাদেশের রূপকার প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনার প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে পদ্মা সেতুর কাজ দ্রুত সম্পন্ন হয়েছে। বিশ্বজুড়ে করোনা মহামারীর ছোবলে উন্নয়ন অভিযাত্রা কিছুটা থমকে যায়। অনির্বাণ আশা, সাহস ও বিশাল কর্মযজ্ঞের ফলে ২০২২-এর ২৫ জুন চালু হচ্ছে দেশের বৃহত্তম এ সেতু। প্রধান কৃতিত্ব বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার। সার্বিক কৃতিত্ব বাংলার সকল মানুষের।
বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার হাত ধরেই ২৫ জুন “স্বপ্নের পদ্মা সেতু” উম্মোচনের মাধ্যমে দক্ষিণাঞ্চলের ২১ জেলার মানুষের ভাগ্যের উন্নয়নের দ্বার খুলবে।গতকাল শুক্রবার(২৪ জুন) এ প্রতিনিধি কে দেয়া একান্ত সাক্ষাতকালে এসব কথা বলেছেন, খুলনা-৬(কয়রা-পাইকগাছা) আসনের মাননীয় জাতীয় সংসদ সদস্য আলহাজ্ব মোঃ আক্তারুজ্জামান বাবু। ২৫ জুন পদ্মা সেতু উদ্বোধন কে সামনে রেখে সংসদ সদস্য এ প্রতিনিধি কে জানান, আজকে পদ্মা সেতুর কারণেই কেবল ২১ জেলার জনগন নয় বরং সমগ্র দক্ষিন-পশ্চিমাঞ্চলের বিচ্ছিন্ন মানুষের সকল ক্ষেত্রে রাজধানীর সাথে সংযোগ স্থাপনের একটি সেতু বন্ধন তৈরী হয়েছে। অতীতে মাওয়াতে পদ্মা নদীর উপর একটি সেতু নির্মানের দাবিতে আমরা দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন সংগ্রাম করে আসছিলাম, যে আন্দোলন সংগ্রামে সকল শ্রেনীর, সকল পেশার মানুষের বিচ্ছিন্নতা ছিল না। প্রত্যেকেরই এক সুর, এক বন্ধনে আবদ্ধ ছিলাম। শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের রেখে যাওয়া স্বপ্নকে বাস্তয়নের লক্ষে নিরলস প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। তিনি কি করে এই দক্ষিন পশ্চিমাঞ্চল সহ গোটা দেশে অনুন্নত স্থানগুলোকে উন্নয়নের ছোয়া লাগানো যায়, সেই প্রত্যয়ে নিরলস পরিশ্রম করে যাচ্ছেন।
অনুন্নত বাংলাদেশকে উন্নয়নশীল করা, আর উন্নয়নশীল বাংলাদেশকে একটি উন্নত রাষ্ট্রের তালিকায় নিয়ে যাওয়ার জন্য জননেত্রী হাসিনার যে নিরালস পরিশ্রম ও প্রচেষ্টা, সেই প্রচেষ্টার আরেকটি ধাপ সূচিত হলো এই পদ্মা সেতুর মাধ্যমে।পদ্মা সেতুর ফলে দক্ষিন-পশ্চিমাঞ্চলে যাতায়াতও সার্বিক উন্নয়ন বিষয়ে জানতে চাইলে সংসদ সদস্য জানান, ২৫ জুন পদ্মা সেতুর উদ্বোধনের মধ্যে দিয়ে পদ্মা সেতুর মাধ্যমে দেশের দক্ষিন-পশ্চিমাঞ্চলের জীবনযাত্রার মান সম্পূর্ন বদলে যাবে। এই দ্বার উম্মুক্তের সাথে সাথে গোটা বাংলাদেশে জিডিপি বৃদ্ধি পাবে ২ শতাংশ।
পদ্মার এপার ওপারের বিছিন্ন যোগাযোগে সহজলজ্য আসবে। মাত্র সাড়ে ৩ হতে ৪ ঘন্টায় রাজধীনিতে পৌচ্ছানো যাবে। জীবনের ঝুকি নিয়ে নদী পারাপার, ফেরিতে ভোগান্তি আর পোহাতে তবে না। সেতু উম্মোচনের ফলে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি, বাড়বে কর্মসংস্থান। বিশ্বের সর্ববৃহৎ ম্যানগ্রোভ সুন্দরবনকে কেন্দ্র করে ট্যুরিজম বিকাশ লাভ করবে। দেশি-বিদেশি বহু পর্যটক সুন্দরবন দেখতে আসবে।এ অঞ্চলে প্রচুর গ্যাসের মজুদ আছে। পদ্মা সেতুর ফলে এ অঞ্চলের গ্যাস অনুসন্ধানের পথ সুগম হবে। দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের কৃষকরা লাভবান হবে। মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ম্য কমবে।
কৃষকরা তাদের উৎপাদিত পণ্য দেশের যেকোনো স্থানে বিক্রি করার সুযোগ এবং ন্যায্য মূল্য দুই’ই পাবে। বিশেষ করে কয়রা এবং পাইকগাছার বহু চিংড়ী এবং তরমুজ চাষী চিংড়ী মাছ এবং তরমুজ কোন মধ্যস্বত্বভোগী ছাড়াই রাজধানী ঢাকাসহ দেশের অন্যান্য স্থানে বিক্রি করে আর্থিকভাবে লাভবান হবে।
সর্বোপরি, সংসদ সদস্য আক্তারুজ্জামান বাবু জানান,এই সেতু নির্মানে এপারের অর্থাৎ দক্ষিণাঞ্চলের ২১ জেলার মানুষের যোগাযোগের ব্যবস্থার উন্নতিকরণ ছাড়াও শিল্পায়ন, বিনিয়োগ, আমদানী-রপ্তানীরসহ বানিজ্যিক ভাবে বিশাল অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি ঘটবে, পাশাপাশি বেকারত্বের বিপরীতে সৃষ্টি হবে নতুন নতুন সম্ভবনাময় কর্মসংস্থান। একই সাথে পদ্মা সেতুর কারণে মোংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দর, ইপিজেডসহ স্থল বন্দর বেনাপোল ও ভোমরা হতে দেশে আমদানি-রপ্তানীতে বিনিয়োগ বাড়বে। পদ্মা সেতুর কারনে কেবল দেশের দক্ষিন-পশ্চিমাঞ্চলে অর্থনৈতিক প্রসারতায় নতুন নতুন সম্ভবনা সৃষ্টি হবে, যা ইতিবাচক মাইল ফলক হিসাবে কাজ করবে।
উন্নয়নের যে যোগসূত্র তা কেবল জননেত্রী শেখ হাসিনাই আমাদের দেখিয়েছে। সুতরাং আগামী ২০২৩ সালে যে নির্বাচন আসছে, সেই নির্বাচনে শেখ হাসিনার সরকার ক্ষমতায় এনে বাংলার মানুষের ভাগ্যের উন্নয়নসহ অনুন্নত বাংলাকে উন্নত রাষ্ট্রে পরিনত করার জন্য তার হাতকে আরো শক্তিশালী করতে হবে।
কারণ জননেত্রী শেখ হাসিনার হাতকে শক্তিশালী করতে পারলে বাংলা একদিন সোনার বাংলায় পরিনত হবে। ২৫ জুন দেশের দক্ষিন-পশ্চিমঞ্চালের মানুষের জন্য একটি একটি ঐতিহাসিক মুহুর্ত, একটি স্বরণীয় দিন, যা দেশের দক্ষিন-পশ্চিমঞ্চালের মানুষসহ সারা দেশের মানুষ মনে রাখবে।