প্রমত্তা পদ্মানদীতে সেতু নির্মান হওয়ায় নদীগর্ভে বেশীরভাগ জায়গায় বিশাল বিশাল অঞ্চল জুড়ে চর পড়ে গেছে। এতে নদীতেও ব্যাপক নাব্যতা সংকট দেখা দিয়েছে। এর ফলে পদ্মানদীর সাথে সংযোগ সব খালে পানি না আসায় শাখা নদী ও খালগুলো শুকিয়ে মৃত রূপে পরিনত হয়েছে।
দেশের অন্যতম প্রধান নদী পদ্মায় শুষ্ক মৌসুমে পানি একেবারেই কমে যাচ্ছে। এতে পদ্মা নদীর অববাহিকায় থাকা মুন্সীগঞ্জ জেলার শ্রীনগর ও লৌহজং উপজেলাসহ নদীর তীরবর্তী অঞ্চল মরুভূমিতে পরিণত হচ্ছে। এক সময়ের প্রমত্তা পদ্মা শুকিয়ে বিভিন্ন জায়গায় এখন মরা খালে পরিণত হয়েছে। পদ্মায় পানি কমে যাওয়ায় এ অঞ্চলের ওপর দিয়ে প্রবাহমান পদ্মার সংযোগ নদী ও খাল গুলোও শুকিয়ে গেছে। এতে এ অঞ্চলে যেমন তাপমাত্রা বাড়ছে তেমনি কর্মসংস্থান হারাচ্ছেন জেলেরা। পদ্মা বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান নদী।
এক সময় এ এলাকার মানুষের জীবন-জীবিকা চলতো এ নদীকে কেন্দ্র করে। ১৯৭৫ সালে ভারতের গঙ্গা নদীর উজানে ফারাক্কা বাঁধ নির্মাণ করে ভারত সরকার। এরপর থেকে পদ্মা নদীতে পানির স্বাভাবিক প্রবাহ বন্ধ হয়ে যায়। বদলে যায় পদ্মা। শুষ্ক মৌসুমে পানির অভাবে পদ্মানদীর গর্ভের অনেক অঞ্চল ধূ-ধূ মরুভূমিতে পরিণত হয়। আবার বর্ষা মৌসুমে ভারত ফারাক্কা বাঁধ খুলে দিলে পদ্মার তীরবর্তী গ্রাম ও শহর নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায়।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ঢাকার দোহার, মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগর ও লৌহজং উপজেলার অঞ্চলে পদ্মানদীগর্ভে বিশাল বিশাল এলাকা জুড়ে চর পড়ে ধু-ধু মরুভুমি রূপ নিয়েছে। শ্রীনগরে বাঘড়া ও ভাগ্যকুল ইউনিয়ের পদ্মানদীতে সংযোগ থাকা শ্রীনগর ও দোহার সীমান্তের সাইন পুকুর খাল, বাঘড়া বাজার বড় খাল, বাঘড়া বেপারী খাল, শিকদার বাড়ী খাল, নয়াবাড়ী খাল, নাগর নন্দী খাল, ভাগ্যকুল বড় খাল ও লৌহজং উপজেলার শিমুলিয়া খাল, কান্দিপাড়া খাল, খড়িয়ায় উৎপত্তিস্থল শ্রীনগর গোয়ালীমান্দ্রাখাল, তালতলা ডহুরী খালসহ আরো একাধিক খাল এখন পানিশূন্য হয়ে মৃতের রূপ নিয়েছে। এছাড়াও স্থানীয়রা একাধিক খাল মাটি ভরাট করে দখল করে নেয়। তাছাড়া অনেক খাল কালের গর্ভে বিলিন হয়ে গিয়েছে।
জানা যায়, একসময় এই সবখাল দিয়ে বড় বড় লঞ্চ, স্টিমার, ছোট খাল গুলো দিয়ে ঘাসি, গয়না ও ডিঙ্গি নৌকা চলাচল করত। আর এই এলাকার লোকজন ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে লঞ্চ ও স্টিমার যোগে মালামাল আনা নেয়াসহ যাতায়াত করতো। খাল গুলো পানির অভাবে শুকিয়ে ছোট আকারে হওয়ায় এখন আর আগের মত কোন কিছু চলাচল করতে পারছে না।
পদ্মানদীর পাড়ের বাসিন্দারা জানান, পদ্মানদী দিন দিন পানিশূন্য হয়ে যাচ্ছে। শুষ্ক মৌসুমে মাইলের পর মাইল বালুচর জেগে উঠছে। শ্রীনগর উপজেলার বাঘড়া ও ভাগ্যকুল ইউনিয়নের বিশাল অঞ্চলে শুকনো চর জেগে উঠেছে। পদ্মাসেতুর বেশ কয়েকটি পিলারের নিচে চর জেগে উঠেছে। নদীতে মাছ নেই, জেলেরা নৌকা দিয়ে জাল টেনে নিজেদের খাবারের মাছও জোগাড় করতে পারছেন না। ফলে পদ্মা নির্ভর জেলেদের জীবিকা এখন হুমকির মুখে।
বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড মুন্সীগঞ্জ উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী(অতিরিক্ত দায়িত্ব) মোঃ রকিবুল ইসলাম বলেন, নদীর সংযোগস্থলে খালের মুখে পলি পড়ে খালগুলো বন্ধ হয়ে যাওয়া খালগুলো পানিশূন্য। আবার বর্ষা মৌসুমে পানি এসে পানির স্রোতের মুখে বসবাসকারীদের বাড়ীঘর ভেঙ্গে যায়।বালিগাঁও ডহুরী খাল ও ইছামতিনদীর মুখ বন্ধ হয়ে গেছে। কর্তৃপক্ষ একযোগে খাল গুলো সংস্কার করলে খালগুলো সচল থাকবে।