রাজশাহীর তানোরে প্রচন্ড ঠান্ডার সঙ্গে হিমেল হাওয়া ও ভারী কুয়াশায় জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। বিশেষ ছিন্নমূল ও নিম্ন আয়ের মানুষ পড়েছেন চরম বিপাকে। এদিকে হাসপাতালে বাড়ছে ঠান্ডা জনিত রোগীর সংখ্যা এর মধ্যে শিশুদের সংখ্যা বেশী। অন্যদিকে শীতকালীন সবজি ও বোরোর বীজতলা ক্ষতির মূখে পড়েছে।
তানোর পৌর সদরের শীতলিপাড়া মহল্লার বাসিন্দা মৎস্যজীবী আব্দুল মজিদ ওরফে বিশু (৪৫) বলেন, ঝিরিঝিরি বাতাসের সঙ্গে ভারী কুয়াশা ও প্রচন্ড শরীর সহ্য করতে পারছে না,মাছ ধরার জন্য বিলের পানিতে নামতেই পারিনি, জাল ফেলাতো পরের কথা।
তিনি বলেন, গত সোমবার দুপুরের পর বিলে মাছ ধরতে যায়, তবে নৌকা থেকে পানিতে নামামাত্র ঠান্ডায় জবুতবু হয়ে পড়ি ঠান্ডা সহ্য করতে না পেরে মাছ না ধরেই বাড়িতে ফিরে আসতে হয়।
তিনি বলেন, ঝিরিঝিরি বাতাস ও অসহ্য ঠান্ডার কারণে গত সোমবার থেকে বৃহস্প্রতিবার পর্যন্ত তারা বিলে মাছ ধরতে পারেনি।
মৎস্যজীবী আজিজুর জানান, মাছ না ধরতে পারলে সংসার চলে না। গত মঙ্গলবার হাটের দিন ছিল তবে মাছ না ধরতে পারায় বাজার করা হয়নি। গত কদিন ধরে দিনভর মেঘাচ্ছন্ন আকাশ সূর্যের দেখা মিলেনি, সঙ্গে ঝিরিঝিরি বাতাস ও প্রচন্ড ঠান্ডা।তবে গত বৃহস্পতিবার দুপুরের পর কিছু সময়ের জন্য সূর্যের আলো দেখা গেলেও বাতাসের কারনে তাপমাত্রা গায়ে লাগেনি। এতে অসহায় দীনমজুর ও ছিন্নমুল জনগোষ্ঠী চরম বেকায়দায় পড়েছে।
জানা গেছে, গত মঙ্গলবার বাংলাদেশ রাজশাহীতে সর্বনিম্ন তামপাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১৩.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং বৃহস্প্রতিবার তাপমাত্রা ছিল ৯ ডিগ্রীর কিছুটা উপরে। গত কয়েক দিন ঘরের বাইরে মানুষের চলাচল তুলনামূলক অনেক কম ছিল। তবে অটো চালকরা বাধ্য হয়ে বের হলেও লোকজনের চলাফেরা না থাকায় তেমন ভাড়া মারতে পারেনি না। একান্ত প্রয়োজন ব্যতিত কেউ ঘর থেকে বের হয়নি। ঘন কুয়াশার কারণে যানবাহনগুলোও গতি কমিয়ে দিনের বেলাতেও হেটলাইট জ্বালিয়ে চলাচল করেছে।
অটো চালক আব্দুল ওহাব বলেন, গত তিনদিন অসহ্য প্রচন্ড যার কারণে সন্ধ্যার আগেই বাড়ি ফিরতে হচ্ছে। সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত সূর্যের দেখা না মেলায় তেমন ভাড়া হচ্ছে না। কিন্ত্ত মাথায় কিস্তির বোঝা, তাই বাধ্য হয়ে কনকনে ঠাণ্ডার মধ্যে ভাড়া মারছেন।
কৃষি শ্রমিক মোস্তফা বলেন, মাঠে মাঠে আলুখেতে পরিচর্যা চলছে। সকালে জমিতে যেতে হচ্ছে ঠান্ডা থেকে বাঁচতে একাধিক মোটা কাপড় পরেও রক্ষা হচ্ছে না। গরমের সময় যেমন ঘামে শরীর ভিজে যায়, ঠিক একইভাবে ঘন কুয়াশা ও বাতাসে জামা কাপড় ভিজে যাচ্ছে।
সংশ্লিষ্ট আবহাওয়াবিদরা বলছে, ঠাণ্ডা বাতাসের কারণে দিনের বেলা সর্বোচ্চ তাপমাত্রাও শরীরে লাগছে না। ঘন কুয়াশার সঙ্গে ঝিরিঝিরি বাতাসের দাপটে কাঁপছে উত্তর জনপদের মানুষ। জানুয়ারি মাসে একাধিক শৈত্যপ্রবাহের ইঙ্গিত দিয়েছে আবহওয়া অফিস।
রাজশাহী আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের জৈষ্ঠ পর্যবেক্ষক লতিফা হেলেন জানান,গত ডিসেম্বরে প্রথম দফার মৃদু শৈত্যপ্রবাহ কেটেছে। জানুয়ারি প্রথম দিনে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। যেটা তুলনামূলক বেশি। আর দ্বিতীয় দিনে তাপমাত্রা নেমে ১১ দশমিকের ঘরে। মঙ্গলবার ১৩ এর ঘরে থাকলেও শীতের অনুভূতি বাতাস ও ঘন কুয়াশার কারণে বেশি। সামনে তাপমাত্রা আরও নিচে নামবে বলেও জানান তিনি।