রাজশাহীর তানোরের আলুচাষিরা লোকসানের বোঝা মাথায় নিয়ে আলু চাষ করে সিন্ডিকেট চক্রের কারণে ফের লোকসানের মুখে পড়েছে।
এ বছর প্রতি বিঘায় ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা লোকসান হচ্ছে। কৃষকেরা বলছে, আলু উত্তোলনের ভরা মৌসুমে সিন্ডিকেট চক্রের কারসাজির কারণে বাজারে আলুর হঠাৎ দরপতন হয়েছে। কারণ এক সপ্তাহ আগেও জমি থেকে আলু ১৮ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে। অথচ এখন জমি থেকে প্রতি আলু বিক্রি হচ্ছে সাড়ে ১১ থেকে ১২ টাকায়।
জানা গেছে, জমির ইজারা মুল্য, সেচ, চাষ, সার- কীটনাশক, পরিবহন ও শ্রমিকের মজুরি বৃদ্ধির কারণে এবার আলুর উৎপাদন খরচ বেড়েছে। এছাড়াও এবার প্রতি বিঘায় গড়ে ১০ বস্তা করে আলু কম হচ্ছে। এতে এবার প্রতি কেজি আলুর উৎপাদন খরচ হচ্ছে প্রায় সাড়ে ১২ টাকা। অপরদিকে সিন্ডিকেটের কারণে এখানো বহিরাগত ব্যবসায়ীরা আলু কিনতে না আশায় তার প্রভাব পড়েছে বাজারে। উপজেলার পাঁচন্দর ইউপির চিমনা গ্রামের প্রসিদ্ধ আলু চাষি লুৎফর রহমান বলেন, প্রতিবছর তিনি ৯০ বিঘা জমিতে আলু চাষ করেন।
তবে গত মৌসুমে আগাম আলু বিক্রি করায় লোকসান কিছুটা কম হয়েছিল। কিন্ত্ত লাভের আশায় লোকসানের বোঝা মাথায় নিয়ে এবারও ৭৫ বিঘা জমিতে আলু চাষ করেছি, আলু তোলাও শুরু হয়েছে। প্রতি বিঘায় প্রায় ৫৫ হাজার টাকা খরচ ও গড়ে ১০ বস্তা করে আলু কম উৎপাদন হয়েছে, এবং বর্তমান বাজারে বিক্রি করলে প্রতি বিঘায় গড়ে প্রায় ১২ হাজার টাকা করে লোকসান হবে। উপজেলার
চান্দুড়িয়া ইউপির গাগরন্দ গ্রামের আলু চাষি গোলাম রাব্বানী জানান, গত মৌসুমে ১২০ বিঘা জমিতে আলু চাষ করে তার প্রায় ৩ লাখ টাকা লোকসান হয়।
কিন্ত্ত লাভের আশায় এবারো একই পরিমান জমিতে আলু চাষ করেছেন।তবে বর্তমান বাজার দরে আলু বিক্রি করলে
তাকে প্রায় ২৫ লাখ টাকা লোকসান গুনতে হবে। মাহবুর রহমান মিঠু জানান, তিনি গত বছর ১৩৫ বিঘা জমিতে আলু চাষ করে প্রায় ১০ লাখ টাকা লোকসান দিয়েছেন। এবার লাভের আশায় একই পরিমান জমিতে আলু চাষ করেছেন। কিন্ত্ত বাজারে যে দাম তাতে আলু বিক্রি করলে এবারো উৎপাদন খরচ উঠবে না।
উপজেলার চাঁন্দুড়িয়া ইউপির গাগরন্দ গ্রামের আলু চাষি মোসলেম আলী জানান, গতবছর তিনি ৩০ বিঘা জমিতে আলু চাষ করে প্রায় ৩ লাখ টাকা লোকসান হয়েছে। এবারও ৩০ বিঘা জমিতে আলুর চাষ করেছি। বর্তমান বাজার দরে আলু বিক্রি করলে ৩০ বিঘায় প্রায় সাড়ে ৪ লাখ টাকা লোকসান হবে। তিনি বলেন, হিমাগার মালিক ও ফড়িয়া মধ্যস্বত্ত্বভোগী সিন্ডিকেট চক্রের কারণে তাদের পথে বসার উপক্রম হয়েছে।
এবিষয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সাইফুল্লাহ আহম্মেদ জানান, এবার উপজেলায় ১৩ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে আলু চাষ হয়েছে, যা দেশের তৃতীয়। নিয়মিত মনিটরিং করার জন্য রোগবালাই কম ছিল। তিনি বলেন, দাম নির্ধারণ বা নিয়ন্ত্রণ করা তো কৃষি অফিসের কাজ না। এজন্য বিপণন বিভাগ রয়েছে। তবে বাজারে যে দাম আছে হিমাগারে রাখলে পরে দাম পাবে বলে তিনি মনে করেন।