ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাণিজ্যিক শাখায় পরিণত হয়েছে সাত কলেজ

0

ঢাবির অধিভুক্ত সরকারি সাত কলেজের অনিয়মিত শিক্ষার্থীদের পুনঃভর্তি ও পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে দ্বিগুণ জরিমানার বিধান রেখে নোটিশ প্রকাশ করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

সোমবার (৭ অক্টোবর) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক বাহালুল হক চৌধুরী স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ২০২৩ সনের ১ম, ২য় এবং ৩য় বর্ষের নিয়মিত, অনিয়মিত, মানোন্নয়ন পরীক্ষায় যেসকল শিক্ষার্থী শিক্ষাবর্ষের মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ায় অনিয়মিত হিসেবে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে ইচ্ছুক। তাদের আবেদনের প্রেক্ষিতে ডিনস কমিটির সভায় ১০, ০০০ (দশ হাজার টাকা) হারে জরিমানার বিধান রেখে তাদের পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে বলা হয়েছে।

নোটিশটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশিত হওয়ার পরে এর কঠোর সমালোচনা করছেন এসব কলেজের অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীরা।

সোহরাওয়ার্দী কলেজের আনার্স চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী অপূর্ব বলেন, শিক্ষাবর্ষের মেয়াদ উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের জরিমানা দিয়ে পরীক্ষায় অনিয়মিত অংশগ্রহণে ৫ হাজার টাকা থেকে হুট করে জরিমানার হার ১০ হাজার টাকা করে নিলো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। সাথে প্রতি বছরে ১ গুণ হারে বৃদ্ধি। সেই সাথে ফরম পূরণ এর ফি টাকা + পুন:ভর্তি ফি, সেশন ফি টাকাও দিতে হবে। যার কারণে বলা চলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাণিজ্যিক শাখায় পরিণত হয়েছে সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা। তীব্র সমালোচনা!! শিক্ষাবর্ষ মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ার পেছনে দায়ী কারা?

তিনি আরও বলেন, একজন শিক্ষার্থীর শিক্ষাবর্ষের মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ার পরে কেন পাস করে বের হতে পারলো না। তার দায়ভার কি কলেজ শিক্ষক ও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের উপর বার্তায় না?? প্রতিবছর ডিপার্টমেন্ট ভিত্তিক গণহারে এক দুই সাবজেক্টে ফেল করানো হয়। সাত কলেজে অধ্যক্ষরা ডিন’স মিটিংয়ে উপস্থিত থেকে কি ধরনের সিদ্ধান্ত নেয়? তারা কি বোবা কোন কথা বলেন না? যদি বলেই থাকে তাহলে ঢাবি কিভাবে এমন সব সিদ্ধান্ত নিতে পারে?

একজন শিক্ষার্থীর রেজিষ্ট্রেশনের মেয়াদ শেষ হলে অনিয়মিত পরীক্ষায় বসতে দিতে হবে জরিমানা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের যে বাণিজ্যিক হিসাব তা বুঝতে হবে। এক বছর মেয়াদ উত্তীর্ণ হলে ১০ হাজার টাকা, দুই বছর হলে ২০ হাজার টাকা, তিন বছর হলে ৩০ হাজার টাকা। সেই সাথে ফরম পূরণ ফি টাকা + সেশন ফি ও পুন:ভর্তি ফি টাকা।

আনার্স পড়ুয়া আরেক শিক্ষার্থী বলেন, ঢাবির বাণিজ্যিক শাখা সাত কলেজে ব্যবসায়িক পণ্য হচ্ছে শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীদের নন-কলেজিয়েট ও ডিস-লেজিয়েট পদ্ধতি। ফরম পূরণের সময় শিক্ষার্থীদের এই ফাঁদে ফেলে জরিমানা আদায় করে নিচ্ছে ঢাবি। নন-কলেজিয়েট ফি ১৫০০ টাকা!! ডিস কলেজিয়েট ফরম পূরণ করতে পারবে না।

তিনি আরও বলেন, অনিয়মিত তো এখান থেকে তৈরি হয়! ফলাফল মেয়াদ উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীদের জন্য নিয়ম- কানুন ও জরিমানা পদ্ধতি। সঠিক সময়ে পরীক্ষা না নিলে সেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের জরিমানা, জবাবদিহিতা কেন নাই?

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মো. ইব্রাহিম মুরাদ নামের একজন শিক্ষার্থী লিখেছেন, মানি ইজ বিজনেস, বিজনেস ইস সেভেন কলেজ, ইম্প্রুভমেন্ট ইজ মানি, মানি ইজ নম্বর।

আকবর নামে চতুর্থ বর্ষের এক শিক্ষার্থী লিখেছেন, এই ধরনের বিজ্ঞপ্তি দেওয়া জন্য আর কোন সময় পাননি। এই ধরনের বিজ্ঞপ্তি ফরম বিলাপ শুরু করার আগে দেওয়া দরকার ছিলো। প্রতি বছর নতুন নিয়ম বানিয়ে শিক্ষার্থীদের উপর চাপিয়ে দেওয়া একটা বৈষম্য ছাড়া আর কিছু না। একজন শিক্ষার্থী ইমপ্রুভমেন্ট দিবে তার জন্য ২২০০ টাকা করে নেওয়া হচ্ছে। তার পরে আবার দ্বিতীয় মেয়াদ বাড়িয়ে আবার নতুন নিয়ম করে চাপিয়ে দেওয়া হল। সত্যি এখন ভাবনার বিষয় দাঁড়িয়েছে। ১০ হাজার টাকা জরিমানা তাই বলে?

কেউ কেউ লিখছেন বাণিজ্য সেন্টার, প্রহসন, বিজনেস প্যার্টান, ফলো টু ফলো নামে অভিহিত করছেন।

এদিকে জরিমানার পরিমাণ দ্বিগুণ বৃদ্ধির বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মো. বাহারুল হক চৌধুরীর সাথে মুঠোফোনে একাধিক বার যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

উল্লেখ্য, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত সরকারি সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের রেজিষ্ট্রেশনের মেয়াদ ৬ বছর। গতবছরও ৫০০০ টাকা জরিমানার বিধান রেখে সাত কলেজের অনিয়মিত শিক্ষার্থীদের পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ দিয়েছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

 

এ সম্পর্কিত আরও খবর