জাতীয়করণ আন্দোলন এবং শিক্ষকদের সামাজিক মর্যাদা আর কত দূর?

রাজধানী টাইমসের সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

শিক্ষা তো শিক্ষাই। এখানে সরকারি-বেসরকারি কথাটাই অগনতান্ত্রিক, অযৌক্তিক, অমানবিক এবং আমাদের মুক্তিযুদ্ধের মূল্যবোধ ও আর্দশের সাথে সাংঘর্ষিক। শিক্ষা মানুষের জন্মগত মৌলিক মানেবিক অধিকার ও মানবিক গুণ। শিক্ষার সার্বিক প্রসার এবং মানবিক গুণ বিকাশের গুরুদায়িত্ব শিক্ষকদের ওপর ন্যস্ত। শিক্ষার উন্নয়ন ও দেশের উন্নতি একে-অপরের ওপর নির্ভরশীল। অর্থাৎ একই মুদ্রার এপিঠ-ওপিট। শিক্ষা হল মানুষের অন্তর্নিহিত বিশুদ্ধতার প্রকাশ বা বাস্তবায়ন। ফলে একটি উন্নত জাতি হিসেবে নিজেদের আত্মপ্রকাশ করতে একই ধারার, বিজ্ঞান ভিত্তিক, ধর্ম নিরপেক্ষ, বাস্তব জ্ঞান সমৃদ্ধ মানবিক শিক্ষার বিকল্প নেই। অথচ আমাদের দেশের শিক্ষাব্যবস্থা চার ধারায় বিভক্ত। ফলে স্বাভাবিকভাবেই দাবি ওঠে চার ধারায় শিক্ষা নয়, একই ধারায় শিক্ষা চাই । যার মধ্য পুরো জাতি একই বিশ্বাস ও জাতীয়তায় গড়ে উঠবে। শিক্ষার দায়িত্ব যাদের ওপর তারাও চার ধারায় বিভক্ত। ফলে গোটা শিক্ষাব্যবস্থায় একটা বিশৃঙ্খল পরিবেশ। এ থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতে হবে।

শিক্ষা ও শিক্ষকের মর্যাদা একে অপরের পরিপূরক এবং বর্তমান সময়ে অতিগুরুত্বপূর্ণ বিষয়। একজন শিক্ষক তিনি যিনি সমাজের বিবেক জাগিয়ে তুলেন, একজন ছাত্রের সুপ্ত প্রতিভাকে জাগ্রত করেন, তিনি সমাজ বিনির্মাণের কারিগর, তিনি সমাজ এবং জাতির প্রয়োজনে আলোর দিশারী হিসেবে পথ দেখান এবং সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার করতে সর্বদা প্রস্তুত এবং ইতিহাস সেটাই সাক্ষী দেয়। আমাদের দেশের ভাষা আন্দোল থেকে শুরু করে ৬দফা আন্দোলন, ৬৯’র গণ অভূত্থ্যান, সাধীনতা আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধ এবং স্বাধীন বাংলাদেশের সকল গণতান্ত্রিক আন্দোলনে এদেশের শিক্ষক সমাজের ভূমিকা ছিল খুবই গুরুত্বপূর্ণ। পিতা-মাতার পরই শিক্ষকের স্থান। পিতা-মাতা সন্তানকে জন্ম দেন। কিন্তু তাকে যোগ্য নাগরিক হিসেবে গড়ে তোলেন শিক্ষক। তাই বলা বলা হয়, গুরুদক্ষিণা ছাড়া শিক্ষা সম্পন্ন হয় না। বিদ্যানের কালি শহীদরের রক্তের চেয়েও পবিত্র। পৃথিবীর যে দেশ শিক্ষকদের যতো বেশি মর্যাদা দিয়েছেন সেই দেশ সভ্যতা ও জ্ঞান-বিজ্ঞানে ততো বেশি উন্নত। ইতিহাস বলে, যুগে যুগে অতি অত্যাচারী শাসকও নত শিরে গুরুর সামনে দাঁড়িয়েছেন। গুরুকে অসম্মানের দৃষ্টতা কেউ দেখাননি। চাণক্য শ্লোকে আছে, ‘এক অক্ষরদাতা গুরুকেও গুরু বলিয়া মান্য করিবে। এক অক্ষরদাতা গুরুকে যে গুরু বলিয়া মান্য করে না, সে শতবার কুকুরের যোনীতে জন্মগ্রহণ করে চন্ডালত্ব লাভ করিবে।’ ইসলামও দিয়েছে শিক্ষকেদের অসামান্য সম্মান ও মর্যাদা।

শিক্ষকদের সাহাবায়ে কেরামের মধ্যে ছিলো ব্যাপক সমাদৃত। হযরত আবু হুরায়ারা রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বর্ণনা করেন, ‘তোমরা জ্ঞান অর্জন করো এবং জ্ঞান অর্জনের জন্যে আদব শিষ্টাচার শিখো। তাকে সম্মান করো যার থেকে তোমরা জ্ঞান অর্জন করো।’ সুতরাং যারা নিকট থেকে জ্ঞান অর্জন করা হয় তিনিই আমাদের শিক্ষক।

বিজ্ঞাপন

জাতি গঠন এবং উন্নয়নের শ্রেষ্ঠ মাধ্যম হলো শিক্ষা আর শিক্ষা সম্পর্কিত বিষয়গুলো হলো শিক্ষক, শিক্ষার্থী, শিক্ষাঙ্গন, শিক্ষা ব্যবস্থাপনা, শিক্ষার পরিবেশ ইত্যাদি। তবে এ প্রসঙ্গে শিক্ষকের ভূমিকাই মূখ্য। কেননা শিক্ষকই হচ্ছেন শিক্ষা ব্যবস্থার মূল চালিকাশক্তি। শিক্ষকতা কেবল চাকুরি নয় বরং একটি মহান পেশা। একজন আদর্শ শিক্ষক জানেন তার চলার পথ কতটা কণ্টকাকীর্ণ এবং ভবিষ্যৎ বিড়ম্বনাময়, তবুও তিনি হৃদয়ের টানে এই সুকঠিন জীবিকার পথ বেছে নেন। এজন্যে তাকে জীবনব্যাপী সংগ্রাম করতে হলেও তিনি আদর্শচ্যুত হন না। সর্বদা ন্যায়নীতির প্রশ্নে তিনি আপোষহীন। শিক্ষক মানুষ গড়ার কারিগর_এ নামেই আখ্যায়িত। শিক্ষা নিকেতন তার কর্মশালা। তিনি শিক্ষার্থীর মনন, মেধা ও আত্মশক্তির বিকাশ পরিশীলন ও উন্নয়ন প্রসার সাধনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। সমাজ গঠনে, দেশের শিক্ষা-সংস্কৃতির উন্নয়নে দেশের সাধারণ মানুষের ভাগ্যোন্নয়নে বিশ্ব দরবারে নিজ দেশের গৌরবময় অবস্থান তুলে ধরতে একজন আদর্শ শিক্ষকের অবদান একজন রাষ্ট্রনায়ক, রাজনীতিবিদ, অর্থনীতিবিদ বা সমাজনেতার চেয়ে কোনো অংশে কম নয়। একজন শিক্ষক তিনি একজন রাষ্ট্রনায়ক, রাজনীতিবিদ, অর্থনীতিবিদ, চিকিৎসক, প্রকৌশলী, শিল্পী, আইনজীবীসহ নানা শ্রেণি-পেশার মানুষের শিক্ষক। অর্থাৎ তিনি কারিগর। তিনি সকলেরই শ্রদ্ধা ও সম্মানের পাত্র। তাই বলা যায়, একজন আদর্শ শিক্ষক দেশের শ্রেষ্ঠ সন্তান ও শ্রেষ্ঠ মানুষদের মধ্যে অন্যতম।

একই সিলেবাস এবং কারিকুলাম ও নিয়মনীতি মেনে সরকারি শিক্ষকরা প্রারম্ভিক বেতন স্কেল ১৬০০০ টাকা এবং এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের প্রারম্ভিক বেতন স্কেল ১২৫০০টাকা, সরকারি শিক্ষকরা চিকিৎসা ভাতা ১৫০০টাকা, এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের চিকিৎসা ভাতা ৫০০টাক, সরকারিদের মূল বেতনের ১০০% , এমপিওভুক্তদের মূল বেতনের ২৫%, বাড়ি ভাড়া মূল বেতনের ৪৫-৪০% এমপিওভুক্তদের শুধুমাত্র ১০০০টাকা। সরকারিদের ক্ষেত্রে মূল বেতনের ৯০% এর ৩০০গুণ, এমপিওভুক্তদের মূল বেতনের ৭৫ গুণ., সরকারিদের ক্ষেত্রে অবসরকালীন মাসিক ভাতা মূল বেতনের ৯০% ও চিকিৎসা ভাতা এমপিওভুক্তদের কোন সুবিধা নেই। অবসর সুবিধার জন্য সরকারিদের কোন চাঁদা জমাদিতে হয় না, এমপিওভুক্তদের মূল বেতনের ৬%দিতে হয়। সরকারিদের সুবিধাজনক স্থানে বদলির সুযোগ পান কিন্তু এমপিওভুক্তদের বদলির কোন সুযোগ নাই। যেন বেসরকারি শিক্ষকদের জন্য দ্রব্যমূল্য তুলনামূলকভাবে কম এবং চিকিৎসা সেবা ও বাড়িভাড়া অনেক সহজলভ্য। চাকরিতে যোগদান থেকে শুরু করে অবসরজীবন পর্যন্ত পদে পদে বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন তারা। আরো একটি দুঃখজনক বিষয় হলো হলো এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা এখনো তারা অনুদানের চেকের মাধ্যমে মাসিক বেতন পেয়ে থাকেন। অনুদান কোন সম্মানের বিষয় হতে পারে না। আজকের দিনে আমাদের দেশে কোথাও কি ১০০০টাকায় বাড়ি ভাড়া এবং ৫০০টাকায় চিকিৎসা সেবা পাওয়া সম্ভব ?এই প্রশ্ন জাতির বিবেকের কাছে রেখে গেলাম। শিক্ষকদের জাতীয় করণের মধ্য দিয়ে শুধু শিক্ষকরাই নন সমগ্র জাতি এর সুফল ভোগ করবে। আমাদের উন্নয়ন ও উন্নতি স্থায়ী হবে। শিক্ষাই যে উন্নতির একমাত্র মাধ্যম তা আমরা সর্বশেষ জাপানের দিকে তাকালেই বুঝি। ২য় বিশ্বযুদ্ধে জাপান যখন ধ্বংসপ্রাপ্ত হয় তখন জাপান সেই ধ্বংসপ্রাপ্ত অবস্থান থেকে ঘুরে দাঁড়ানোর জন্য শিক্ষাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে পরিকল্পনা করে এবং সেই অনুযায়ী শিক্ষা ব্যবস্থা পরিচালনা করে জাপান আজকে উন্নত বিশ্বের উন্নত দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম একটি।

আগের যুগে শিক্ষকের মর্যাদা যে কত উচুঁমানের এবং সম্মানের ছিলো তা শিক্ষকের মর্যাদা কবিতাটি থেকেই সহজেই অনুমেয়। কবিতাটির বিষয়বস্তু এ রকম, দিলি্লর এক মৌলভী (শিক্ষক) বাদশাহ আলমগীরের পুত্রকে পড়াতেন। একদিন প্রভাতে বাদশাহ লক্ষ্য করলেন, তাঁর পুত্র শিক্ষকের পায়ে পানি ঢালছেন আর শিক্ষক নিজেই তাঁর পা পরিষ্কার করছেন। এই ঘটনা প্রত্যক্ষ করার পর বাদশাহ দূত মারফত ওই শিক্ষককে কেল্লাতে ডেকে নিয়ে যান (যদিও ওই শিক্ষক খুব ভয়ে ছিলেন)। তারপর বাদশাহ ওই শিক্ষককে বললেন, আমার পুত্র আপনার নিকট থেকে তো সৌজন্য না শিখে বেয়াদবি আর গুরুজনের প্রতি অবহেলা করা শিখেছে। কারণ সেদিন প্রভাতে দেখলাম আমার পুত্র আপনার পায়ে পানি ঢেলে দিচ্ছে আর আপনি নিজেই আপনার পা পরিষ্কার করছিলেন। আমার পুত্র কেনো পানি ঢালার পাশাপাশি আপনার পা ধুয়ে দিলো না_এ কথা স্মরণ করলে মনে ব্যথা পাই। বাদশাহর মুখ থেকে এ কথা শোনার পর ওই শিক্ষক অত্যন্ত উচ্ছ্বাসের সাথে বলেন, ‘আজ হতে চির উন্নত হলো শিক্ষাগুরুর শির, সত্যিই বাদশাহ তুমি মহান, উদার বাদশাহ আলমগীর।’ ‘ওস্তাদে প্রণাম করো পিতা হস্তে বাড়ে দোসর জনম দিলা হিত সে আম্বার।’ এভাবেই মধ্যযুগের অন্যতম কবি শাহ মুহম্মদ সগীরের কবিতায় উঠে এসেছে শিক্ষকের মর্যাদা। তাদের দেয়া শিক্ষায় একজন মানুষ প্রকৃত মানুষ হয়ে উঠে। শিক্ষকের দেখানো পথই আমাদের পাথেয়। তার জ্ঞানেই আমরা ভালো-মন্দের পার্থক্য নির্ণয় করি।

বিজ্ঞাপন

শিক্ষকের চোখেই আমরা জগৎ দেখি। মানব সভ্যতা বিনির্মাণে শিক্ষক সমাজের রয়েছে বড় অবদান। আর এজন্যেই যুগে যুগে শিক্ষকদের সম্মান ও মর্যাদা সবার উপরে। তাঁকে সম্মান করো যার থেকে তোমরা জ্ঞান অর্জন করো।’ মহান সৃষ্টিকর্তাই তাঁদের মর্যদার মুকুট পড়িয়েছেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি অনুষ্ঠানে যোগ দিতে গেলে তাঁরই বাংলা বিভাগের শিক্ষক ড. নীলিমা ইব্রাহীমকে দূর থেকে দেখতে পেয়ে সকল প্রটোকল ভেঙ্গে ছুটে গেলেন তাঁর কাছে এবং পা ছুঁয়ে সালাম করলেন এবং আশীর্বাদ নিলেন। সম্মানিত শিক্ষকদের মর্যাদা দিতে বঙ্গবন্ধু এভাবে শিখিয়েছেন তাঁর সন্তানদের।

আর এখনকার দিনে শিক্ষকের ওপর হামলা চালানো, তাদেরকে হুমকি প্রদান ও হত্যা করা এবং লাঞ্ছনা করার ঘটনা যেনো নিত্য-নৈমত্তিক বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। শিক্ষকদের ওপর হামলা চালানো, তাদেরকে হত্যা করা, হুমকি দেয়া এবং লাঞ্ছনা করা যে নিঃসন্দেহে লজ্জাজনক এবং এ লজ্জা যে গোটা জাতির লজ্জা তা বলা বাহুল্য। এদেশে অনেক শিক্ষক হত্যাসহ অনেকবার শিক্ষকদেও উপর হামলা চালানো এবং তাদেরকে বার বার লঞ্ছনার শিকার হতে হলেও এখন পর্যন্ত বেশিরভাগ ঘটনারই বিচার হয়নি। ফলে অপরাধীরা এ ধরনের জঘন্য কর্মকান্ড ঘটাতে উৎসাহী হয়ে উঠছে_যা জাতির জন্যে চমর আশনি সংকেত। আমাদের মুক্তিযুদ্ধ থেকে শুরু করে পরবর্তীতে এরশাদবিরোধী আন্দোলনসহ দেশের সম্পদ রক্ষা আন্দোলনসহ প্রতিটি গণআন্দোলনে শিক্ষকদের ভূমিকা ছিলো অগ্রগণ্য। দেশ ও জাতির স্বার্থেই শিক্ষকদের সামাজিক মর্যাদা প্রতিষ্ঠার বিকল্প নেই। পৃথিবীর অন্যান্য দেশে শিক্ষকদের সামাজিক মর্যাদা প্রতিষ্ঠিত থাকলেও বাংলাদেশে এর লেসমাত্র নেই। শিক্ষকদের মর্যাদা ক্ষুণ্ন হওয়ার পেছনে মূলত তিনটি কারণ দায়ী। প্রথমত সন্তানদের সামনে অভিভাবকদের নীতিবাচক সমালোচনা। দ্বিতীয়ত শিক্ষকদের ব্যক্তিকেন্দ্রিকতা। যার ফলে শিক্ষকরা এখন আর আগের মতো মনপ্রাণ উজার করে দিয়ে পাঠদান করেন না। আর তৃতীয়ত শিক্ষকদের পেশার সামাজিক স্বীকৃতি ও সামাজিক মর্যাদা নেই। এই বিষয়গুলো থেকে বেরিয়ে আসতে না পারলে শিক্ষকদের মর্যাদা প্রতিষ্ঠিত করা সম্ভব নয় এবং শিক্ষারও উন্নয়ন সম্ভব নয়। তাই কর্তৃপক্ষের নিকট আবেদন শিক্ষকদের মর্যাদা প্রতিষ্ঠিত করার লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন।

পৃথিবীর অন্যান্য দেশের তুলনায় আমাদের দেশের শিক্ষকদের বেতন কাঠামো সর্বনিন্মপর্যায়ে এবং সামাজিক মর্যাদাহীন। কমনওয়েলথের সুপারিশ অনুযায়ী দেশের জাতীয় বাজেটের ২৫ ভাগ শিক্ষা খাতে বরাদ্দের কথা থাকলেও কোনো সরকারই তা আমলে নেয় না। প্রতি বাজেটেই সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন বাড়লেও অভাগা বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা বাড়েনি। বর্তমানে যা পাচ্ছে সেটা বিভিন্ন সময়ে শিক্ষকদের আন্দোলনের ফসল। সরকার শিক্ষকদের শ্রেণীকক্ষ ত্যাগ করে রাজপথে নেমে আসার পথ সুগম করে দিচ্ছে। হয় শিক্ষকদের স্বতন্ত্র বেতন স্কেল এবং সামাজিক মর্যাদা প্রতিষ্ঠিত করুন, না হয় সব বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দিন। এভাবে শিক্ষকদের আর নির্যাতন করবেন না। দেশের টাকা নেই এটা প্রতারণামূলক বক্তব্য। যদি টাকাই না থাকে তবে এত দুর্নীতি লুটপাট হয় কোথা থেকে? বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীসহ গোটা শিক্ষাব্যবস্থায় যে সংকট চলছে আমরা তার আশু সমাধান চাই। দেশ গঠনে ও জনমত গঠনে শিক্ষকদের অবদান সর্বোচ্চ। শিক্ষকদের সামাজিক মর্যাদা প্রতিষ্ঠা এবং স্বতন্ত্র বেতন কাঠামো এখন সময়ের দাবি। আর এ বিষয়ে সরকারের সদিচ্ছাই যথেষ্ট। এ সরকারের শেষ সময়েও যদি বেসরকারি শিক্ষকরা কিছুই না পান তবে সেটা দুঃখজনক বটে।

শিক্ষা সভ্যতার ধারক-বাহক। শিক্ষা সমাজ ও সভ্যতার বিবেক। আর এই বিবেক তৈরির কারিগর হলেন শিক্ষক। যাঁরা সর্বজন সমাদৃত এবং পূজনীয়।পানি ছাড়া যেমন মাছ বাঁচতে পারেনা তেমনি শিক্ষক ছাড়াও শিক্ষা আলোকিত হতে পারে না। যেভাবেই বলি না কেন সমাজ,সভ্যতা, অর্থনীতি এবং রাজনৈতিক অগ্রগতিতে শিক্ষা এবং শিক্ষকের ভূমিকাই মুখ্য।রাষ্ট্রপ্রধান থেকে শুরু করে মন্ত্রী,এমপি,ডাক্তার,প্রকৌশলী,আইনজীবী,শিল্পী,সাহিত্যিক, সাংবাদিকসহ সকল ক্ষেত্রেই রয়েছে শিক্ষকের জ্ঞান বিতরন। তাই শিক্ষক কে পশ্চাদে রেখে দেশের কোন অগ্রগতিই সম্ভব নয়। পৃথিবীর সকল দেশেই শিক্ষকরা মর্যাদাসম্পূণ,সর্বজন সমাদৃত। শুধুমাত্র ব্যতিক্রম দেখি আমাদের দেশে। আমাদের দেশেই শিক্ষকরা অবহেলিত,মর্যাদাহীন। মাঝে মধ্যে আমাদের দেশের শিক্ষকরা রাষ্ট্রীয় হামলার শিকারও হয় কথায় মর্যাদা থাকলেও কার্যক্ষেত্রে শিক্ষকতা মর্যাদাহীন পেশা। শ্রেণিকক্ষের বাহিরে শিক্ষকদের মূল্যায়ন সীমিত পরিসরে। মোদ্দাকথা শিক্ষকরা বঞ্চনা,অবহেলা আর অমর্যাদার শিকার। এরকম অবহেলিত,মর্যাদাহীন শিক্ষক সমাজ দিয়ে মর্যাদাশীল জাতি গঠন কল্পনাতেও সম্ভব নয়।শিক্ষকরা যখন তাঁদের বাঁচা-মরার অধিকার প্রশ্নে রাজপথে আন্দোলনে তখনই শিক্ষকদের নেমে আসে রাষ্ট্রযন্ত্রের অমানবিক নির্যাতন।

সমস্ত বিবেক যেন স্তম্ভিত। সবাই যেন প্রতিবাদের ভাষা হারিয়ে ফেলে। বিভিন্ন সময়ে আমরা দেখি শিক্ষকদের আন্দোলনে শিক্ষকদের উপরে লাঠিচার্চ করা হয়, তখনও জাতি হিসেবে আমরা নির্বোধের মতো চেয়ে থাকি। শিক্ষক হিসেবে আমরা কতটা অবহেলিত। শিক্ষকদের সামাজিক মর্যাদা প্রতিষ্ঠা করার সময় এসেছে। জাতিকে শক্ত মেরুদন্ডের উপর দাঁড় করাতে হলে শিক্ষা এবং শিক্ষকের সামাজিক মর্যাদা প্রতিষ্ঠার বিকল্প নেই। কারিগর যদি মেধাবী এবং দক্ষ না হয় তাহলে তার উৎপাদনও আশানুরূপ হবে না। শিক্ষকদের সামাজিক মর্যাদা প্রতিষ্ঠার মধ্য মেধাবীদেরকে এই পেশায় আকৃষ্ট করতে না পারলে উন্নত দেশ ও জাতি গঠন কখনই সম্ভব নয়। জার্মনিতে একজন শিক্ষককে চ্যান্সেলর পদমর্যাদা দেওয়া হয়। পৃথিবীর প্রায় সকল দেশেই শিক্ষকদের বেতন এবং সামাজিক মর্যাদা রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী এবং প্রধান বিচারপতির পরবর্তী স্থান।

বেসরকারি শিক্ষকরা এই থেকে মুক্তি চায় এবং রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ হস্তক্ষেপ কামনা করে। আজকের বাজার মূল্যে শিক্ষকদের অবস্থা নূণ আনতে পান্থা ফুরোনোর মতো। শিক্ষকদের স্বতন্ত্র বেতন স্কেল নামক একটি মূলা ঝুলছে গত দশ বছর ধরে। শিক্ষা এবং শিক্ষকদের সুযোগ-সুবিধা (অধিকারের) কথা আসলেই আমাদের অর্থমন্ত্রী বলেন টাকা নাই । আসলেই টাকার কনো সংকট নেই সংকট মানসিকতার। হল মার্কের চার হাজার কোটি টাকা,ডেসটিনির প্রায় কয়েক হাজর কোটি টাকা বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে পাচার হওয়া অর্থ, ঋন খেলাপি এবং কালো টাকার পরিমান আমাদের বাজেটের তিন ভাগের একভাগ, গত দশ বছরে শুধুমাত্র চালের বাজার থেকে দেশীয় লুটেরা হাতিয়ে নিয়েছে প্রায় ১০লাখ কোটি টাকা। গত ১৬ বছরে দেশ থেকে পাচার হয়ে গেছে অন্তত ১১ লাখ কোটি টাকা।

যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনভিত্তিক গবেষণাপ্রতিষ্ঠান গ্লোবাল ফিন্যানশিয়াল ইন্টিগ্রিটির (জিএফআই) প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করে এ তথ্য পাওয়া গেছে। বর্তমানে বাংলাদেশ থেকে বছরে গড়ে ৬৪ হাজার কোটি টাকা পাচার হয়ে যায়।এই টাকা উদ্ধার করতে পারলে গোটা দেশের অর্থনীতির চিত্র পাল্টে যাবে। শিক্ষাই একমাত্র মাধ্যম যেখানে এক টাকা বিনিয়োগ করলে দশ টাকা ফেরত পাওয় যায়। এদেশে শিক্ষা খাতে রাষ্ট্রের পর্যাপ্ত বিনিয়োগ না থাকার একটি কারণ হলো রাষ্ট্রের কর্তাব্যক্তিদের সন্তানরা এদেশে পড়াশুনা করে না। বিট্রিশদের মতো আমাদের স্বাধীন দেশের সরকারগুলোও দেশের মানুষকে শোষন এবং কেরানি তৈরি করার জন্য যতটুকু শিক্ষার প্রয়োজন ততটুকুই দিচ্ছে। শিক্ষা এবং শিক্ষকদের উন্নতি না হলে কোন ভাবেই আমরা মধ্যম আয়ের দেশ ,উন্নত দেশের মানদন্ড অর্জন করতে পারবো না।

 

সুধীর বরণ মাঝি, হাইমচর, চাঁদপুর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল rajdhanitimes24.com এ লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয়- মতামত, সাহিত্য, ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার ছবিসহ লেখাটি পাঠিয়ে দিন rajdhanitimes24@gmail.com  এই ঠিকানায়।

শীর্ষ সংবাদ:
ডিবি কার্যালয়ে হেফাজত নেতা মামুনুল হক যশোরে ভোট বর্জনের আহ্বানে বিএনপির লিফলেট বিতরণ নরসিংদীর মাধবদীর মাদক সম্রাজ্ঞী মায়া বেগম ইয়াবা ও ফেন্সিডিলসহ গ্রেপ্তার, জনমনে স্বস্তি শ্রীনগর উপজেলা ছাত্রলীগের উদ্যাগে কাপ-পিরিচ প্রতিকের বিশাল মিছিল অবশেষে শুরু হলো রাজশাহীর কেন্দ্রীয় শহিদ মিনার নির্মাণ কাজ শেরপুরে ৫ আন্তঃজেলা গরু চোর গ্রেপ্তার শ্রীপুরে বজ্রপাতে নারীর মৃত্যু চলন্ত বাসে আগুন, ৮ জনের মৃত্যু ৮০ কিমি বেগে ঝড়ের পূর্বাভাস যেসব এলাকায় ১৫ ঘণ্টা গ্যাস থাকবে না আজ আমের সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীদের ব্যাপারে সজাগ থাকার পরামর্শ কৃষিমন্ত্রীর বাগেরহাটে স্কুল ছাত্রীকে ধর্ষণ চেষ্টার প্রতিবাদ করায় হামলা, পিতাসহ আহত-৪ খাগড়াছড়িতে স্বর্ণালঙ্কারের লোভে শাশুড়িকে হত্যা, জামাই গ্রেপ্তার লালমোহনে স্বামী-স্ত্রীর লড়াই ১০ হাজারের বেশি বাংলাদেশিকে ফেরত পাঠাবে যুক্তরাজ্য কাউখালীতে মাছ-মাংসসহ নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যর দাম সাধারণ ক্রেতাদের নাগালের বাইরে কুমিল্লায় বাস নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খাদে, ৫ জন নিহত যমুনা টিভিতে প্রচারিত সংবাদের বিরুদ্ধে সচেতন এবং সাধারণ শিক্ষক সমাজ ব্যানারে মানববন্ধন নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল অনুষদ ও বিভাগ ছাত্রলীগের কমিটি বিলুপ্তি  প্লাস্টিক বর্জ্যের বিনিময়ে পরিবেশ বান্ধব গাছ উপহার দিলো ঐক্য-বন্ধন