চোখের জলে বৃদ্ধাশ্রমে নিঃসঙ্গ ঈদ

রাজধানী টাইমসের সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

পরিবারের সবাই যখন ঈদ আনন্দে মশগুল, তখন দূর নির্জন গ্রামে প্রিয়জন ছাড়া নিভৃতে বৃদ্ধাশ্রমে চোখের জল ফেলছেন একদল মানুষ।

এ মানুষগুলোর মধ্য অনেকেই বুকভরা আশায় ছিলেন এবার ঈদে হয়তো ছেলে–মেয়ে আত্মীয়–স্বজন কেউ না কেউ আসবে। সকাল পেরিয়ে দুপুর, দুপুর পেরিয়ে সন্ধ্যা গড়ালেও কেউ খোঁজ নিতে আসেনি! গাজীপুর সদর উপজেলার হোতাপাড়া মনিপুরের বিশিয়া কুড়িবাড়ী এলাকায় গড়ে তোলা হয়েছে দেশের অন্যতম বয়স্ক পুনর্বাসন কেন্দ্র। ১৯৯৫ সালে কেন্দ্রটি প্রতিষ্ঠা করেছেন গিভেন্সী গ্রুপের কর্ণধার খতিব আব্দুল জাহিদ মুকুল।

প্রতিষ্ঠানটিতে ঠাঁই হয়েছে ৮০ জন পুরুষ ও ৭০ জন নারীর। আশ্রয়হীনদের বিনামূল্যে ভরণ-পোষণের জন্য গাজীপুর সদরের হোতাপাড়া বিশিয়া-কুড়িবাড়ি মনিপুর এলাকায় বেসরকারিভাবে গড়ে উঠেছে বয়স্ক পুনর্বাসন কেন্দ্র। শত শত অসহায় বয়স্ক মানুষের পদচারণায় ওই পূণর্বাসন কেন্দ্রটি এখন মুখরিত।স্বজনদের ভুলতে গিয়ে তারা অন্য রকম সুখ-দুঃখ নিয়ে মেতে রয়েছেন।নিবাসের অনেকেই তাদের কষ্টের কথা সাংবাদিকদের জানাতে চাননা। ছেলেদের পরিচয়, নাম পর্যন্ত গোপন রাখেন তারা। পত্রিকায় নাম ছাপা হলে সন্তানের যদি কোনো ক্ষতি হয়, সম্মানে যদি আঘাত লাগে।

বিজ্ঞাপন

রানী আহমেদ শোনালেন তাঁর জীবনের গল্প। তাঁর স্বামী ছিলেন প্রকৌশলী। আবুধাবিতে চাকরি করতেন। ২০১১ সালে অসুস্থ হয়ে মারা যান। তাঁদের দুটি মেয়ে। দুজনেরই বিয়ে হয়ে গেছে। বড় মেয়ে অস্ট্রেলিয়ায় থাকেন। ছোট মেয়ে ঢাকায় স্বামীর বাড়িতে আছেন। রাজধানীর উত্তরখান এলাকায় তাঁদের একটি বাড়ি ছিল। স্বামী অসুস্থ হওয়ার পর বাড়ি বিক্রি করে চিকিৎসা করেছেন। পরে ছোট মেয়ের ঢাকার বাড়িতে কিছুদিন ছিলেন। কিন্তু আবদ্ধ পরিবেশে থাকতে পারছিলেন না। খোঁজ নিয়ে বয়স্ক পুনর্বাসন কেন্দ্রে এসেছেন। এখানে তিনি এক বছর ধরে আছেন।বয়স্ক পুনর্বাসন কেন্দ্রের বারান্দায় একাকী বসে চোখ মুছছিলেন মমতাজ বেগম (৭০)। তাঁর বাড়ি গোপালগঞ্জ সদর থানায়। তবে এখন ঠিকানা বয়স্ক পুনর্বাসন কেন্দ্র।

তিন ছেলে ও দুই মেয়ের এই মা চোখ মুছতে মুছতে বললেন, ‘ঈদে খাবারের তো অভাব নাই। কিন্তু একটাই দুঃখ, আপন মানুষগুলা থাইকাও কাছে নাই। জীবনে এ রকম পরিণতি হবে, জানা ছিল না।মমতাজ বেগম বলেন, তিন ছেলের মধ্যে ছোট ছেলে সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যান। এর কিছুদিনের মধ্যে মারা যান স্বামীও। দুই ছেলের মধ্যে ছোটজন মাঝে মধ্যে খবর নেন। মেয়েদের বিয়ে হয়েছে। তাঁরা স্বামী-সন্তান নিয়ে ব্যস্ত। দুই বছর আগে বড় ছেলে তাঁকে বয়স্ক পুনর্বাসন কেন্দ্রে রেখে যান। চোখে অনেকটাই কম দেখেন তসিরুন নেসা (৭০)। দৃষ্টিশক্তি কমে গেলেও তাঁর চোখের পানি শেষ হয়নি। বয়স্ক পুনর্বাসন কেন্দ্রের বারান্দায় বেঞ্চে বসে তিনি বললেন, ‘অনেকেই ছিল সংসারে। এখনো হয়তো অনেকেই আছে। তবে আমার কাছে কেউ নেই। আমি একদম একা। কারও দোষ নেই। আমার ভাগ্যের দোষ।

পুনর্বাসন কেন্দ্রের এক কর্মীর কাছ থেকে জানা গেল, তসিরুন নেসার বাড়ি নরসিংদীর রায়পুরায়। তিন বছর ধরে বয়স্ক পুনর্বাসন কেন্দ্রে থাকছেন। সন্তানেরা কেউ তাঁর খবর নেন না। চোখের সমস্যাসহ শারীরিক বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত তিনি। বয়স্ক পুনর্বাসন কেন্দ্রের পশ্চিম দিকে বারান্দার শেষ মাথায় রান্নাঘরের পাশে চেয়ারে বসেছিলেন লুৎফা বেগম (৫৬)। ঈদ কেমন কাটালেন, এমন প্রশ্নে তাঁর জবাব, ‘খুব ভালো কাটাইছি। খাওয়াদাওয়া হইছে। সবই ঠিক আছে। কিন্তু আত্মীয়-পরিজন কারও সঙ্গে দেখা করার ভাগ্য নেই। কেউ আর দেখা করে না। লুৎফা বেগম বলেন, স্বামী রোগাক্রান্ত হয়ে মারা যান। এরপর দুই ছেলেমেয়ের মৃত্যু হয় প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার আগে। স্বামীর বাড়ির লোকজন শ্বশুরবাড়ি থেকে তাঁকে বের করে দেন। বাবার বাড়িতেও ঠাঁই পাননি তিনি।

বিজ্ঞাপন

পরে বয়স্ক পুনর্বাসন কেন্দ্রে এসেছেন।বৃষ্টিস্নাত বিকেলে বয়স্ক পুরুষদের থাকার বহুতল ভবনের নিচতলার বারান্দায় চুপচাপ বসে থাকতে দেখা যায় নূর মোহাম্মদকে (৭৫)। তাঁর দুই ছেলে ও চার মেয়ে ছেলেমেয়েরা তাঁকে কাছে রাখতে চান না। নূর মোহাম্মদ বলেন, ‘গরু কোরবানি দেওয়া হয়েছিল। ঈদের নামাজও হয়েছে। সবাই মিলে একসঙ্গে নামাজ আদায় করেছি। বেশ ভালোই আনন্দ হয়েছে। তবে সবাইকে ছেড়ে যেমন আনন্দ পাওয়ার কথা, তেমনই।বয়স্ক পুনর্বাসন কেন্দ্রে ঈদের দিন বয়স্ক পুরুষ ছিলেন ৯৫ জন। বয়স্ক নারী ৭৩ জন।

কেন্দ্রের হোস্টেল সুপারভাইজার হাবিবা খন্দকার জানান, নিবাসীদের অনেককে তাঁদের পরিবারের লোকজন ঈদের দিন বাড়ি নিয়ে যান। তাঁদের ছুটি দেওয়া হয়। গাজীপুর সদর উপজেলার হোতাপাড়া মনিপুর এলাকায় গিভেন্সী গ্রুপের কর্ণধার খতিব আব্দুল জাহিদ মুকুল ১৯৯৫ সালে প্রতিষ্ঠা করেছেন অসহায় প্রবীণদের জীবনের শেষ ঠিকানা ‌‘বয়স্ক পুনর্বাসন কেন্দ্র’। প্রতিষ্ঠানটিতে বর্তমানে ৮০ জন পুরুষ ও ৭০ জন নারী রয়েছেন। যাদের অনেকেরই সন্তান দেশের বিভিন্ন পেশায় প্রতিষ্ঠিত।

বয়স্ক পুনর্বাসন কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা খতিব আব্দুল জাহিদ মুকুল বলেন, সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে আমাদের অনেকেই সামাজিক মূল্যবোধ হারিয়ে ফেলেছি। সন্তান অনেক সময় তার বৃদ্ধ পিতা-মাতাকে অবজ্ঞা করছেন, তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করছেন। তেমনি অনেক অসহায় বাবা ও মা শেষ জীবনে এখানে কাটাচ্ছেন। তাদের সবার জীবনের গল্পটা কষ্টের। নতুন প্রজন্মের কাছে প্রত্যাশা থাকবে কোনো বাবা ও মায়ের স্থান যেন বৃদ্ধাশ্রমে না হয়।

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল rajdhanitimes24.com এ লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয়- মতামত, সাহিত্য, ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার ছবিসহ লেখাটি পাঠিয়ে দিন rajdhanitimes24@gmail.com  এই ঠিকানায়।

শীর্ষ সংবাদ:
বিশ্বব্যাপী ক্যাম্পাসে ক্যাম্পাসে ছড়িয়ে পড়ছে ইসরায়েলবিরোধী বিক্ষোভ ঢাকাসহ ২৫ জেলায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ আজ রোহিঙ্গাদের ফেরাতে বাংলাদেশের পাশে আছে ইউরোপ : পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলছে শনিবার থেকে রাণীশংকৈল উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে প্রতীক পেলেন প্রার্থীরা, জমে উঠলো নির্বাচন গুইমারায় সর্বজনীন পেনশন স্কিমে অন্তর্ভুক্ত হলেন ইউএনও’র সহধর্মিণী ও বড় ভাই ভূরুঙ্গামারী উপজেলা পরিষদ নির্বাচন: পদে ১২ প্রার্থীর মনোনয়ন জমা শ্রেষ্ঠ মাদ্রাসা অধ্যক্ষ নির্বাচিত হলেন মুফতি মাও: মুজির উদ্দিন মিল্টন সমাদ্দার ৩ দিনের রিমান্ডে নির্বাচনের প্রস্তুতি ও প্রচারণা দেখতে আ.লীগকে বিজেপির আমন্ত্রণ উপজেলা নির্বাচন: আরও ৬৬ জনকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত বিএনপি’র প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত অফিসার পরিচয়ে টাকা হাতিয়ে নেওয়া যুবক গ্রেপ্তার গরমে মানুষকে স্বস্তি দিতে গোয়ালন্দ ফায়ার সার্ভিসের শরবত বিতরণ ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিন-ইসরায়েল সমর্থকদের সংঘর্ষ আদালতের নিষেধাজ্ঞা অগ্রাহ্য: দুমকির ইউএনও’কে লিগ্যাল নোটিশ হবিগঞ্জে হত্যা মামলায় ৭ জনের মৃত্যুদণ্ড রাজশাহীতে ৫২ বছরের মধ্যে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড যশোরের ভৈরব নদে পাওয়া বস্তাবন্দি মৃতদেহের পরিচয় সনাক্ত নরসিংদীতে নগদের ৬০ লাখ টাকা ছিনতাইয়ের ঘটনায় ৩ জন গ্রেপ্তার শেবাচিম হাসপাতাল র্যাবের অভিযানে দালাল চক্রের ২৫ সদস্য আটক